ক্রিকেটারদের আত্মজীবনী : ক্রিকেটজীবনের ভিতর-বাহির



শেহজাদ আমান, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ক্রিকেটারদের বইয়ের প্রচ্ছদ

ক্রিকেটারদের বইয়ের প্রচ্ছদ

  • Font increase
  • Font Decrease

ক্রিকেটারদের জীবনী বা আত্মজীবনীতে শুধু ক্রিকেট নিয়েই যে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের কথা বা স্মৃতিচারণ থাকে তা না। মাঠের বাইরের বিভিন্ন বিচিত্র ও আগ্রহোদ্দীপক ব্যাপার-স্যাপার এবং তাদের ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন বিষয়-আশয়ও উঠে আসে বইগুলোতে। যা পড়ে পাঠকেরা চমৎকৃত হন। অনেক কিছু জানতে পারেন প্রিয় ক্রিকেটার সম্পর্কে। যেমন, পাকিস্তানী ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদি যে খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচ-পাঁচটি বছর কমিয়ে নিয়েছিলেন, অথবা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার মঈন আলীকে যে অস্ট্রেলিয়ার এক খেলোয়াড় স্লেজিং করে ‘ওসামা’ নামে ডেকেছিলেন, এরকম কিছু চমকপ্রদ তথ্য হয়তো কেবল ক্রিকেটারদের আত্মজীবনীতেই পাওয়া যেতে পারে। আবার, ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে পুনরায় যুবরাজ সিংয়ের ক্রিকেটে ফিরে আসার হৃদয়স্পর্শী কাহিনীর কথাই ধরুন না! সেই কাহিনী বিস্তারিত পাওয়া যাবে যুবরাজের আত্মজীবনীতেই।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563363767974.jpg
ক্রিকেটারদের বর্ণিল জীবনের শৈল্পিক আখ্যান তাদের জীবনীগ্রন্থগুলো ◢

 

যখন ক্রিকেটার নিজেই নিজের ক্রিকেট ও ব্যক্তিজীবনের কাহিনীটা লেখেন, সেটাকে বলা হয় ক্রিকেটারদের আত্মজীবনী। সেখানেও ক্রিকেটার কোনো লেখক বা ক্রীড়া সাংবাদিকের সাহায্য নিয়ে যৌথভাবে বইটি লিখতে পারেন। কিন্তু যখন অন্য কোনো লেখক একেবারে আলাদাভাবে একজন বরেণ্য ক্রিকেটারের জীবনকাহিনী পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন, যেখানে সাধারণত সেই নির্দিষ্টি ক্রিকেটারের সরাসরি কোনো সংস্রব বা ভূমিকা থাকে না, সেটাকে বলে ক্রিকেটারদের জীবনী। তবে, সেক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটার যদি বেঁচে থাকেন, বইটি লিখতে বা বইয়ের বিষয়বস্তু নির্বাচনে তাঁর অনুমতির দরকার হয়। সরাসরি ক্রিকেটারদের আত্মজীবনীর সংখ্যাই বেশি। তবে, বেশ কিছু অসাধারণ জীবনীগ্রন্থ, যেমন সুনীল গাভাস্কারের ‘সানি ডেজ’ (১৯৭৭), ইমরান খানের ‘ইমরান খান’ (২০০৯) বা মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে ‘মাশরাফি’র মতো দারুণ কিছু জীবনীগ্রন্থও আমরা পেয়েছি লেখকদের হাতে।

ক্রিকেটারদের আত্মজীবনীর ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি স্পিনার জিম লেকারের ‘স্পিনিং রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ বইটিকে অগ্রপথিক ধরা হয়। ১৯৫১ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। এরপরের কোনো ক্রিকেটারের আত্মজীবনীগ্রন্থের লেখকও জিম লেকারই। ১৯৬০ সালে তিনি প্রকাশ করেন দ্বিতীয় আত্মজীবনী ‘ওভার টু মি।’ এরপর ৬০’র দশক ও ৭০’র দশকে অল্পবিস্তর প্রকাশিত হতে থাকে বেশ কিছু আত্মজীবনী। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৭ সালে খেলোয়াড় থাকা অবস্থাতেই ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কারকে নিয়ে ‘সানি ডেজ’ এবং ১৯৮৩ সালে ইমরান খানের স্বনামে (ইমরান) তাঁর জীবনীগ্রন্থ বের হয়। তবে, নব্বইয়ের দশকে এসে, মানে ১৯৯০ সালের পর থেকে এধরনের আত্মজীবনী ও জীবনীগ্রন্থের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অনেক সাবেক ক্রিকেটার, এমনকি তখনও খেলছিলেন এমন কিছু ক্রিকেটারও এসময় তাঁদের আত্মজীবনী প্রকাশ করেন।

এসময়ই প্রকাশিত হয় ব্রায়ান লারার ‘বিটিং দ্য ফিল্ড’ (১৯৯৫), ওয়াসিম আকরামের ‘ওয়াসিম’ (১৯৯৮), রিচি বেনোর ‘অ্যানিথিং বাট অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ (১৯৯৮), অ্যালান ডোনাল্ডের ‘হোয়াইট লাইটনিং’ (১৯৯৯)। ২০০০ সালের পরের সময়কালে এই সংখ্যাটা বাড়তে থাকে আরো। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের ‘দ্য ডেফিনিটিভ অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০০), ইয়ান বোথামের ‘মাই অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০০), শেন ওয়ার্নের ‘মাই অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০২), ডেনিস লিলির ‘মিনেস : দ্য অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০৩), বাসিল ডি অলিভিয়েরার ‘ক্রিকেট অ্যান্ড কনস্পিরেসি : দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ (২০০৪), কপিল দেবের ‘স্ট্রেইট ফ্রম দ্য হার্ট’ (২০০৪), স্টিভ ওয়াহর ‘আউট অব মাই কমফোর্ট জোন’ (২০০৬), অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ‘ট্রু কালারস’ (২০০৮), ইমরান খানের ‘ইমরান খান’ (২০০৯), শোয়েব আখতারের ‘কন্ট্রোভার্শিয়ালি ইয়োরস’ (২০১১), যুবরাজ সিংয়ের ‘দ্য টেস্ট অব মাই লাইফ : ফ্রম ক্রিকেট টু ক্যান্সার অ্যান্ড ব্যাক’ (২০১২), শচীন টেন্ডুলকারের ‘প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে’ (২০১৪), এবি ডি ভিলিয়ার্সের ‘দ্য অটোবায়োগ্রাফি’ (২০১৬), সৌরভ গাঙ্গুলির ‘এ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ (২০১৮), ভিভিএস লক্ষ্মণের ‘টুএইটি ওয়ান অ্যান্ড বিয়ন্ড’ (২০১৮)-এর মতো অসংখ্য আলোচিত ও পাঠকপ্রিয় জীবনী বা আত্মজীবনী প্রকাশিত হয় এই সময়কালে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563363833752.jpg
মাশরাফির বিন মুর্তজার জীবনীগ্রন্থ ‘মাশরাফি’ ◢



বাংলাদেশের বরেণ্য ক্রিকেটারদের নিয়ে জীবনী বা আত্মজীবনী লেখার ইতিহাস যদিও অল্পদিনের, তবে ইতোমধ্যে টুকটাক করে এগোচ্ছে। কিন্তু কোনো ক্রিকেটারের সরাসরি আত্মজীবনী এখনো বের হয়নি। গুণী কিছু ক্রীড়া সাংবাদিক লিখতে শুরু করছেন ক্রিকেটারদের জীবনীগ্রন্থ। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের ‘মাশরাফি’ ও মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদের ‘মানুষ মাশরাফি’। তবে, এধরনের বইয়ের সংখ্যা বাংলাদেশে এখনো অপ্রতুল।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563363940018.jpg
শহীদ আফ্রিদির বিতর্কিত আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জার’ ◢

 

আত্মজীবনী বা জীবনীগ্রন্থগুলো দর্শক ও ভক্তদের সাথে ক্রিকেটারদের বন্ধনকে করে আরো জোরালো। ভক্তদের আরো কাছে নিয়ে আসে ক্রিকেটারদের। ক্রিকেট জীবন এবং ব্যক্তিজীবন, একটা মানুষের দুটো জীবন যে হতে পারে একেবারে আলাদা, তা জানা যায় এই বইগুলোর মাধ্যমেই। কখনো কখনো আত্মজীবনী বা জীবনীগ্রন্থগুলো থেকে বেরিয়ে আসে এমন সব বিস্ফোরক তথ্য যা সৃষ্টি করে তুমুল বিতর্ক। এতে জড়িত হন আরো অনেকেই, পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলতে শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের সমসাময়িক অনেক ক্রিকেটাররাও। তেমন বিতর্কই সৃষ্টি হয়েছিল, সাবেক পাকিস্তানী অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদির আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জার’ প্রকাশের পর। বইটিতে ভারতীয় ওপেনার গৌতম গম্ভীরকে ব্যক্তিগত শত্রু হিসেবে তুলে ধরে ব্যক্তিত্বহীন আখ্যায়িত করেন আফ্রিদি। গম্ভীর প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে আফ্রিদি যেন সমালোচনার বন্যা বইয়ে দেন। গম্ভীরকে অসুস্থ মানসিকতার উল্লেখ করে ক্রিকেটের কলঙ্ক বলতেও দ্বিধা করেননি তিনি। জবাবে, গৌতম গম্ভীরও পরে ছেড়ে কথা বলেননি। তিনি টুইট করে বলেন, ‘আফ্রিদি, তুমি এত উচ্ছল মানুষ! সে যাক গে, আমরা চিকিৎসার জন্য এখনো পাকিস্তানিদের ভিসা অনুমোদন দিই। আমি ব্যক্তিগতভাবে তোমাকে একজন মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাব।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563363989504.jpg
ইংলিশ ক্রিকেটার মঈন আলীর আত্মজীবনী ‘মঈন’ ◢



এরকমই বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিয়েছিল ২০১৮-তে প্রকাশিত ইংলিশ ক্রিকেটার মঈন আলীর আত্মজীবনী ‘মঈন’। এতে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন। মঈন জানিয়েছেন ২০১৫ অ্যাশেজ সিরিজ চলাকালীন এক অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটার তাঁকে ‘ওসামা’ বলে ডেকেছিলেন। ৩১ বছর বয়সী ইংরেজ অরাউন্ডার জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া ওই অ্যাশেজ সিরিজ তাঁর জন্য খুবই ভালো গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে ওই সিরিজে অত্যন্ত রাগিয়ে দিয়েছিল একটি দুঃখজনক ঘটনা। ক্রিকেট মাঠে তিনি কোনোদিন অতটা রেগে যাননি বলে জানিয়েছেন তিনি। কার্ডিফে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে আট নম্বরে নেমে ব্যাটে গুরুত্বপূর্ণ ৭৭ রান যোগ করেছিলেন। সেই সঙ্গে বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন ৫টি উইকেট। কিন্তু মঈনের দাবি, ওই ম্যাচেই তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেন’-এর সাথে তুলনা করে ‘ওসামা’ নামে ডেকেছিলেন এক অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটার। শুনে চোখ-মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল তার। পরে তিনি দলের কয়েকজনকে বিষয়টা জানিয়েওছিলেন। সেই কথা পৌঁছেছিল ইংল্যান্ডের কোচ ট্রেভর বেলিসের কানেও। বেলিস তা জানিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয় কোচ ডারেল লেম্যানকে।
লেম্যান ওই অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটারকে ডেকে ওই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিলেন। কিন্তু সে নাকি তখন তা অস্বীকার করে জানিয়েছিল, ‘ওসামা’ নয়, মঈনকে মাঠে তিনি ‘পার্টটাইমার’ বলেছিলেন। কিন্তু মঈন বলেন, ‘পার্টটাইমার’ আর ‘ওসামা’ এই কথাদুটি এতটাই আলাদা যে গুলিয়ে যাওয়াটা অসম্ভব।

ঠিক তেমনি, অনেক রকম বিতর্ক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল ইয়ান বোথাম, সুনীল গাভাস্কার থেকে শুরু করে অল্প ক’ বছর হলো সাবেক হওয়া শোয়েব আখতার ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের আত্মজীবনীও। তবে আত্মজীবনী বা জীবনীগ্রন্থগুলো শুধু যে বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দেয়, তা নয়। এখানে উঠে আসে অনেক সুন্দর ও চমকপ্রদ তথ্য, যা না ইতোপূর্বে কখনো কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, আর না ক্রিকেটার নিজের মুখে বলেছেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563364046993.jpg
সৌরভ গাঙ্গুলির আত্মজীবনী ‘আ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ ◢

 

যেমন, ‘আ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ বইতে সৌরভ তুলে ধরেছিলেন এক মজার তথ্য। তখনও ভারতের অধিনায়কত্ব করছিলেন সৌরভ। সেসময় দুর্গাপুজোর সময়ে ঠাকুর দেখতে গিয়ে সর্দার সাজতে হয়েছিল তাকে। মেকআপ আর্টিস্টকে বাড়িতে ডেকে ভদ্রস্থ ও বিশ্বাসযোগ্য লুক তৈরি করা হয়। পরে রাস্তায় বেরিয়ে বাবুঘাটে আসতেই পুলিশ আধিকারিক চিনে ফেলেন সৌরভকে। তবে তাঁর অনুরোধে বিষয়টি গোপনই রাখেন ওই পুলিশ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563364106152.jpg
ভিভিএস লক্ষ্মণের আত্মজীবনী ‘টুএইটিওয়ান অ্যান্ড বিয়ন্ড’ ◢



তেমনি, ‘টুএইটিওয়ান অ্যান্ড বিয়ন্ড’ বইতে ভারতের সাবেক সফল টেস্ট ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষণ তুলে ধরেছেন ব্যতিক্রমী এক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। সালটা ছিল ২০০৮। ভারত সফরে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। দিল্লিতে সিরিজের তৃতীয় টেস্টই ছিল লক্ষ্মণের শততম টেস্ট ম্যাচ। লক্ষ্মণ তাঁর বইতে জানিয়েছেন সেই টেস্ট শেষ হওয়ার পরই স্টেডিয়াম থেকে হোটেল পর্যন্ত ভারতীয় দলের টিমবাস চালিয়েছিলেন ধোনি। লক্ষ্মণ লিখেছেন, ধোনিকে বাস চালাতে দেখেও তাঁর ঘটনাটা সত্যি বলে বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ তখন তিনি ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন। অধিনায়ক টিম-বাস চালাচ্ছেন, এরকম ভাবনাটাই তার আগে কখনো কারো মাথায় আসেনি বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মণ। তবে, লক্ষণ মনে করেন, ধোনি এরকমই। কে কী মনে করল, পাত্তা দেয় না। করে যায় নিজের কাজটাই!

ক্রিকেটারদের জীবনী বা আত্মজীবনী শুধু একজন ক্রিকেটারের জীবন নিয়েই নয়, কখনো কখনো তা হয়ে ওঠে একটি দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের কোনো একসময়ের দর্পণ। তা পড়ে বোঝা যায়, ওই দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি ও অবকাঠামোর অবস্থাও। তাই এধরনের একেকটা বই আক্ষরিক অর্থেই ‘ক্রিকেট জ্ঞানের আধার’। আর সৃষ্টিশীলতার দিক থেকে বা সৃষ্টিশীল কাজ হিসেবেই কি ক্রিকেটারদের আত্মজীবনী বা জীবনীমূলক বইগুলো পিছিয়ে আছে? স্রেফ সেই সাত দশক আগে জিম লেকারের ‘স্পিনিং রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ অথবা সাম্প্রতিক অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ‘ট্রু কালারস’ ও সৌরভ গাঙ্গুলির ‘আ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ বইগুলোর নামগুলোর দিকেই খেয়াল করুন না! বই পড়েন এবং ক্রিকেট সম্পর্কে ধারণা রাখেন, এমন সব মানুষের নজর সহজেই কেড়ে নেয় এই সৃষ্টিশীল নামগুলো। আর ভেতরের লেখার উপাদানও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঠিক করা হয় অনেক চিন্তা-ভাবনা করে বা অন্যান্য লেখকদের সাহায্য নিয়ে। তাই তো, শিল্পকর্ম হিসেবে সেগুলো ভালোই আকর্ষণ করে রস-অনুসন্ধানী ক্রিকেটামোদী পাঠকদের।

এই জীবনীগ্রন্থগুলো দারুণ সহায়ক ও অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে আগামীদিনের ক্রিকেটারদের জন্য। দুঃসময় ও স্বাস্থ্যগত মহাসংকটকে অতিক্রম করে কিভাবে ক্রিকেটে ফেরা ও টিকে থাকা যায়, তা তারা জানতে পারবে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও যুবরাজ সিংয়ের মতো ক্রিকেটারের জীবনী বা আত্মজীবনী পড়েই।

উল্লেখ করতে হচ্ছে, বাংলাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি ক্রিকেটার এবং জাতীয় দলের বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার জীবনীগ্রন্থ ‘মাশরাফি’র কথা। বইয়ে লেখক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের সাথে এক সাক্ষাৎকারে সত্যিকার বীর কারা, সেই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, সব সময় বলি, বীর হলেন মুক্তিযোদ্ধারা। আরে ভাই, তারা জীবন দিয়েছেন। জীবন যাবে জেনেই ফ্রন্টে গেছেন দেশের জন্য। আমরা কী করি? খুব বাজেভাবে বলি—টাকা নেই, পারফর্ম করি। অভিনেতা, গায়কের মতো আমরাও পারফর্মিং আর্ট করি। এরচেয়ে এক ইঞ্চি বেশিও কিছু না। মুক্তিযোদ্ধারা গুলির সামনে এইজন্য দাঁড়ায় নাই যে জিতলে টাকা পাবে। কাদের সঙ্গে কাদের তুলনা রে! ক্রিকেটে বীর কেউ থেকে থাকলে রকিবুল হাসান, শহীদ জুয়েলরা। রকিবুল ভাই ব্যাটে জয় বাংলা লিখে খেলতে নেমেছিলেন, অনেক বড় কাজ। তার চেয়েও বড় কাজ, বাবার বন্দুক নিয়ে ফ্রন্টে চলে গিয়েছিলেন। শহীদ জুয়েল ক্রিকেট রেখে ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দিয়েছিলেন। এটাই হলো বীরত্ব। ফাস্ট বোলিং সামলানার মধ্যে রোমান্টিসিজম আছে, ডিউটি আছে; বীরত্ব নেই।’

একজন ক্রিকেটার হয়েও মাশরাফির জীবনবোধ যে অসাধারণ, অনন্য যে তার দেশপ্রেম, এই বিষয়টাই তো ফুটে উঠেছে মাশরাফির কথনে! ক্রিকেটারাও যে মানুষ, মানুষ হিসেবে তাদের অনেকেরই যে চমৎকার জীবনদর্শন রয়েছে, রয়েছে সুন্দর কিছু চিন্তা, সেসব এভাবেই অনেক সময় প্রকাশিত হয় তাঁদের জীবনী বা আত্মজীবনীতে। তাই তো, এসব বই ক্রিকেটারদেরকে নিয়ে আসে ভক্তদের আরো কাছে। বইগুলোর মাহাত্ম্য এখানেই!

 

আরো পড়ুন
সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ ফাইনালের সাক্ষী লর্ডস

   

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;