জীবিকার তাগিদে পদ্মায় নির্ঘুম রাত কাটে জেলেদের
জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল পদ্মায় নির্ঘুম রাত কাটান রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ, পাংশা ও সদর উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার জেলে। তাদের কাছে বন্যা, ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস বলে কিছুই নেই। তাই সামান্য রোজগারের আশায় জীবন বাজি রেখে মাছ ধরতে যান তারা। নদীর স্রোতের শেওলার মতো সারারাত পদ্মার বুকে ভেসে বেড়ান তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর কূলে সারি সারি ছোট নৌকা বাঁধা। নৌকার ওপর মাছ ধরার নানা সরঞ্জাম। কেউ কেউ মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সন্ধ্যা নামতেই তারা ছোট ছোট নৌকা আর হারিকেনের নিভুনিভু আলোয় মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। রাতে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে অনেকে কূলে ফিরতে পারেন, আবার অনেকে পারেন না। নদীর উত্তাল ঢেউয়ের শব্দে চাপা পড়ে তাদের জীবন। কিন্তু মাছ ধরতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে হাজার হাজার জেলের।
জেলেদের অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও আমাদের জীবিকার বিকল্প ব্যবস্থা করেনি। তাহলে আমরা পরিবারের ভরণপোষণ কিভাবে করবো। তবে সরকারিভাবে প্রতিবছর জেলেদের যে সহযোগিতা করা হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
নদীর কূলে কয়েকজন জেলে বার্তা২৪.কম-র এই প্রতিবেদককে জানান, ঝুঁকি জেনেও জীবিকার তাগিদেই তাদের মাছ ধরতে যেতে হয়। সারা রাত জেগে তারা মাছ ধরেন, আর সকালে ওই মাছ বিক্রি করে যে টাকা পান সেটা দিয়েই তাদের সংসার চলে। তবে মাছ বিক্রির টাকায় সংসার না চলায় অনেকেই দিনে অন্য কাজ করেন।
গোয়ালন্দের চর-দৌলতদিয়া গ্রামের জেলে আরমান খাঁ ও নুর ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রাতে উত্তাল পদ্মা জীবনের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু কী করবো? কোনো উপায় না পেয়েই আমরা মাছ ধরতে যাই। জেলেদের জীবন অনেক কষ্টের। কিন্তু খোঁজও রাখেন না। ‘
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের বিনা সুদে ঋণ দেয় তাহলে আমরা বিকল্প পেশার ব্যবস্থা করতে পারতাম।’
গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল শরিফ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সরকার থেকে যে বরাদ্দ আসে সেগুলো আমরা তাদের মাঝে বিতরণ করি। এ উপজেলায় বর্তমান কার্ডধারী প্রায় এক হাজার ৭০০ জন জেলে রয়েছেন। তবে এর মধ্যে কিছু অপেশাদার জেলে রয়েছেন। শিগগিরই আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলেদের তালিকা হালনাগাদ শুরু করবো।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মজিনুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘স্বাবলম্বী হতে রাজবাড়ীর জেলেরা কোনো অর্থনৈতিক সুবিধা পান না। এ জন্য সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলীর সহযোগিতায় গতবছর থেকে ৪ হাজার ৬৪০ জন জেলেকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। এছাড়া দুই সপ্তাহ আগে জাটকা ধরা থেকে বিরত রাখতে প্রত্যেককে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, চিরা, মুড়ি, লবণ, সয়াবিন, চিনি, টোস্ট বিস্কুট এবং ১২টি করে ম্যাচ ও মোমবাতি বিতরণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হওয়া জেলে পরিবারের জন্যও বিশেষ সহযোগিতার ব্যবস্থা আছে।’