পাবনা-১ আসন: আ.লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পাবনা-১ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে জাতীয়পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী। প্রার্থী ও অনুসারীরা সভা সমাবেশ, গণসংযোগ, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মতবিনিময় সভার মাধ্যমে সরব উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
পাবনা-১ আসনটি সাঁথিয়ার পুরো ও বেড়ার আংশিক নিয়ে গঠিত। সাঁথিয়া পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫৮২ জন ও বেড়া পৌরসহ ৫টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮ হাজার ৫৩৪ জন।
পাবনা জেলার ৫টি আসনের মধ্যে এই আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান বেশ শক্ত। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির পর এই আসনে জয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে জামায়াতে ইসলামীর ভোট ব্যাংক। ভোটার সমর্থন হিসেবে বিএনপির চেয়ে এগিয়ে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত। ২০১৪ সালের নির্বাচন বাদে সর্বশেষ ৪টি সংসদ নির্বাচনে দল দু’টি জয় পায় দুইবার করে।
বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের হলেও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সাঁথিয়া উপজেলার ৩টি পদই রয়েছে জামায়াতের দখলে। শক্ত অবস্থান থাকা সত্ত্বেও ১৯৯৬ সালের পর পাবনা-১ আসনে বিএনপির কেউ প্রার্থী হতে পারেননি। তাই জামায়াতের ভোট ব্যাংক ও দুর্গ হিসেবে এই আসনের আশা ছেড়েই দিয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তবে হাল ছাড়েনি স্থানীয় নেতারা।
তথ্য মতে, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী। ১৯৯৬ সালে জামায়াতের নিজামী ও বিএনপির মেজর (অব:) মঞ্জুর কাদেরকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ। ২০০১ সালে আসন পুনরুদ্ধার করে জামায়াত। আবু সাইয়িদকে হারিয়ে জয় পান চারদলীয় জোটের প্রার্থী মাওলানা নিজামী।
২০০৮ সালে সংস্কারপন্থী হিসেবে বহিষ্কৃত হন আবু সাইয়িদ। ফলে নৌকার নতুন মাঝি হয়ে অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু জামায়াতের আমির নিজামীকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে জামায়াত-বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। সেবার নৌকার প্রার্থী শামসুল হক টুকুর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ। সাইয়িদের করা নানা অনিয়ম কারচুপির অভিযোগের ওই নির্বাচনে জয় পান টুকু।
বর্তমানে এ আসনে বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ এসেছে। প্রায় দুই দশকের স্থবিরতা কাটিয়ে পাবনা-১ আসনে চাঙা হয়ে উঠেছে স্থানীয় বিএনপি। এ কারণে সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। তবে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. বাসেত দাবি করছেন, নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনকে পূর্ব থেকেই চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই আসনে জোটের প্রার্থী একমাত্র নাজিব মোমেনই।
স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, আসন্ন সংসদ নির্বাচন যে পদ্ধতিতেই অনুষ্ঠিত হোক না কেন তাতে বিএনপির অংশ নেওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এ জন্য স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কর্মতৎপরতা এমনিতেই বেড়েছে। এছাড়া নিজামীর অবর্তমানে বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাঙা ভাব দেখা দিয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান, জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ইউনুস আলী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন খান ও বিএনপি নেতা ডা. মীর শফিকুল ইসলাম। এদের মধ্যে বিএনপির মনোনয়ন পাবার দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ইউনুস আলী ও জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন খান।
আর জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনের নাম ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে জেলা জামায়াত। এছাড়া জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় তাঁতী কমিটির সভাপতি সরদার শাহজাহান মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে শোনা যাচ্ছে।
অপরদিকে, নৌকার মাঝি হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বর্তমান সাংসদ ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সাঁথিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা সরদার সোহেল মাহমুদ। তবে মনোনয়ন দৌড়ে শামসুল হক টুকু ও অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এগিয়ে রয়েছেন। ইতোমধ্যে এই শীর্ষ দুই নেতা ও তার কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের সভা সমাবেশ ঘিরে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী নিয়ে দলীয় সূত্র ও এলাকা ভিত্তিক বিশ্লেষণে জানা গেছে, বিএনপি ও জামায়াত যদি জোটগতভাবে একজনকে প্রার্থী করে তাহলে আসনটি পুনরুদ্ধার সম্ভব হতে পারে। তবে যদি বিএনপি ও জামায়াত আলাদা করে দুইজন প্রার্থী দেয় সেক্ষেত্রে সহজ হয়ে যাবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়।