তিস্তায় হামার ঈদ খাইছে
রংপুর: ‘হামার মতন গরীব মাইনসের কিসের ঈদ। সারা জীবন দুঃক্ক কষ্ট নাগি আচে। নদীর বগলোত থাকতে থাকতে সোগ হারাইছি। বসতভিটা, গাছপালা, ক্ষ্যাত সোগ এই নদীত হারাইছে। ঈদ হারাইলে কি আর হইবে। এই তিস্তায় হামার ঈদ খাইছে।’
কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের চরহয়বতখাঁ গ্রামের নিয়াজ আলী।
সম্প্রতি টেপামধুপুর ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি তিস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন নিয়াজ আলী মতো অনেকেই। টেপামধুপুর মতো ও বালাপাড়া ইউনিয়নে নদীর ভাঙনে ৬ গ্রামের প্রায় শতাধিক বাড়ি-ভিটাসহ ২শ’ হেক্টর ফসলি জমি তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী কোন ব্যবস্থা না থাকায় আতংকে দিন কাটাচ্ছেন নিয়াজ আলীর মতো নদী তীরবর্তী মানুষেরা।
নদী ভাঙনের শিকার তালুকশাহবাজ গ্রামের গোপাল চন্দ্র জানান, তিস্তা নদীর ভাঙনে সুভাঘাট নামের একটি গ্রাম কাউনিয়ার মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। ভাঙন রোধে কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আরো প্রায় ১১টি গ্রাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, ঈদগাহ মাঠ হুমকির মধ্যে রয়েছে। গত বছর এই এলাকার আরো শতাধিক বাড়ি গিলে খেয়েছে তিস্তা নদী।
ঈদ সবার জন্য এলেও ঈদের আনন্দ সবার ভাগ্যে জুটে না। বরং বঞ্চিতদের কান্নায় কখনো বিলীন হয় ঈদ উদযাপনের আনন্দ। বিশেষ করে নদী ভাঙনের কবলে পড়া মানুষরা বরাবরই ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। রংপুরের তিস্তা নদী তীরবর্তী উপজেলা কাউনিয়া। গেল তিন সপ্তাহে কাউনিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষ নদীগর্ভে বসত ভিটে হারিয়েছে। এখন তাদের অধিকাংশ নিঃস্ব প্রায়। এসব অসহায় মানুষের ঈদ আনন্দ এখন নদীর ভাঙনের স্রোতে ধূসরতায় রূপ নিয়েছে।