খুলনা-সাতক্ষীরায় বেড়িবাঁধ ভাঙনে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত



ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

খুলনা: খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় নদী ভাঙনের কারণে একাধিক পোল্ডার দিয়ে নোনা পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। এতে গত দুই দিনে নোনা পানিতে অর্ধশত গ্রামের মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। ধসে পড়ছে সহস্রাধিক কাঁচা-পাকা ঘর। গৃহহীন হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।

উপকূলীয় জেলা খুলনার কয়রা ও দাকোপ উপজেলা এবং সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার হাজরাখালী এলাকার নদী ভাঙন সংস্কারে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ (পাউবো)।

দাকোপ: ৩১নং পোল্ডারের কামিনী বাসিয়া পুলিশ ক্যাম্পের পশ্চিম পাশে ঢাকী নদীর ভয়াবহ ভাঙনের পর এবার ৩২নং পোল্ডারের নলিয়ান ফরেস্ট অফিসের দক্ষিণ পাশে ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ৫০ গজ রাস্তা শিবসা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় নলিয়ান গ্রামের প্রায় ৪শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ৩১নং পোল্ডারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দীর্ঘ কোনো পরিকল্পনা না থাকায় এবং দায়সারা ওয়াপদার বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করায় শত চেষ্টা করেও এ নদী ভাঙন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো অভিযোগ করেছে।

এদিকে কামিনী বাসিয়া নদী ভাঙনে সহায়-সম্বলহারা পরিবারগুলো ওয়াপদা বেড়িবাঁধের উপর মানবেতর জীবনযাপন করছে। ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় শত শত কৃষক তাদের আমন ধানের বীজতলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে।

সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির জানান, সোমবার (১৩ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টায় শিবসা নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে নলিয়ান ফরেস্ট অফিসের দক্ষিণ পাশে প্রায় ৫০ গজ ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে নলিয়ান গ্রামের বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ৪শ পরিবার সম্পূর্ণভাবে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে বাঁধটি সংস্কারের জন্য বারবার চেষ্টা করা হলেও নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে তা আবারো ভেঙে যাচ্ছে।

তিলডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান রনজিত কুমার মণ্ডল জানান, পাউবো কর্তৃপক্ষ কামিনী বাসিয়া পুলিশ ক্যাম্পের পশ্চিম পাশের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধটি সংস্কারে এগিয়ে না আসার কারণে আজ এ নদীতে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এ বাঁধটি সংস্কারের জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা হলেও তারা এখন পর্যন্ত সংস্কার বা বিকল্প বাঁধ নির্মাণে এগিয়ে আসেনি। ৩৪টি পরিবার তাদের বসতঘর বাড়ি হারিয়ে ওয়াপদা রাস্তার উপর খোলা আকাশের নিচে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। শিবসা ও ঢাকী নদীর মোহনায় ভেঙে যাওয়া বাঁধটি দ্রুত সংস্কার বা বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা না হলে এ বাঁধের বাকি অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে ৩১ পোল্ডারের চালনা পৌরসভাসহ তিলডাঙ্গা ও পানখালী ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মারুফুল আলম বলেন, ‘সরেজমিনে কামিনি বাসিয়া নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। নদী গর্ভে বিলীন হওয়া ৩৪টি পরিবারের আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসনের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। এ নদী ভাঙনের কারণে অনেক পরিবারের বসতঘর তলিয়ে যাওয়ায় তারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। সকল ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতির পরিমাণ ও নামের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/14/1534228811526.jpg

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপজেলার ৩২ ও ৩৩ নং পোল্ডারের বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক কাজ শুরু করেছে। তাই ওই পোল্ডার দুটির রক্ষণাবেক্ষণের দায় দায়িত্ব এখন তাদের। তাই এই মুহূর্তে ওই দুটি পোল্ডারের কাজ পাউবো করতে পারছে না। তবে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চলমান বাঁধ নির্মাণ কাজের অংশ হিসেবে তারা নলিয়ান ফরেস্ট অফিসের পাশে ভেঙে যাওয়া বাঁধটি দ্রুত সংস্কার করবেন।

৩১নং পোল্ডারের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙন এলাকায় কাজ চলছে। ৩১নং পোল্ডারে কোনো দায়সারা কাজ করা হয়নি। কোনো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কেন্দ্রীয় টিমের কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করেই তবে বিল দেয়।

কয়রা: কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাববুনিয়া এলাকার পাউরোর বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। সেখানে ভয়াবহ ভাঙনের কারণে নদীর পার্শ্ববর্তী জনসাধারণ রয়েছে আতঙ্কে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সেখানে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এলাকাবাসী কাজ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এ জনপদের সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, পাউবোর ১৩/১৪-২ পোল্ডারের শাকবাড়িয়া নদীর গাব্বুনিয়া বেড়িবাঁধ ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে। স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বেশ কয়েক দিন ভাঙন রোধে কাজ করলেও গতকাল সোমবার দুপুরে নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে।

উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘গাব্বুনিয়া এলাকার বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন ধরেছে। বেশ কিছু দিন সেখানে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে কোনো রকমে পানি আটকানো সম্ভব হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাঙন কবলিত এলাকায় চলাচলের জন্য সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু গতকাল সোমবার দুপুরে স্থানটির প্রায় ৫০/৬০ হাত বেড়িবাঁধ এলাকা ছাপিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। তাৎক্ষণিক বস্তায় মাটি ভরাট করে পানি আটকানো হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ রক্ষা করা না হলে এই এলাকার ৪/৫টি গ্রাম যেকোনো মুহূর্তে প্লাবিত হবে। ফলে চলতি মৌসুমের আমন ধানের পাশাপাশি মৎস্য সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের আমাদী সেকশন কর্মকর্তা সেলিম হোসেন জানান, ভাঙনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রাথমিকভাবে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ভাঙনরোধে কাজ শুরু করা হয়েছে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা জানান, গাব্বুনিয়া বেড়িবাঁধের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধে কাজ করা হবে।

সাতক্ষীরা: জেলার আশাশুনির হাজরাখালীতে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধটি স্থানীয়দের প্রাণপণ চেষ্টায় স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করা হলেও সোমবার দুপুরে জোয়ারে তা আবারো ভেঙে গেছে। নতুন করে আরও ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে শত-শত বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। ধসে পড়েছে সহস্রাধিক কাঁচা পাকা ঘর। গৃহহীন হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।

অন্যদিকে শ্রীউলা ইউনিয়নের থানাঘাটা বেড়িবাঁধটি নির্মাণে আট লাখ টাকা বরাদ্দ হওয়ার পরও সময় মতো কাজ না হওয়ায় বাঁধটির শেষ রক্ষা হল না।

জানা গেছে, সম্প্রতি একই স্থান হতে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে স্থানীয় চেয়ারম্যান আবুহেনা সাকিলের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে প্রাথমিকভাবে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। এরপর টেকসই মজবুত বাঁধ নির্মাণে সরকার কর্তৃক ৮ লাখ টাকা টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। কিন্তু ঠিকাদার কাজ না করায় শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ আজ সহায় সম্বল হারিয়ে উপকূলীয় ওয়াপদা বেড়িবাঁধের উপর ও সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে।

বর্তমানে পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। রোববার খোলপাটুয়া নদীর জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে নড়বড়ে ৫০-৬০ হাত বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়। ওই দিন বিকেলে ভাটার সময়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটির কাজ শুরু করে রাত ১২টার দিকে তা শেষ হয়। পুনরায় রাতে প্রচণ্ড জোয়ারের পানির চাপে আবারো তা ভেঙে যায়। এর ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাফফারা তাসনীন, ইঞ্জিনিয়ার, পাউবোর কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুহেনা সাকিল ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাফফারা তাসনীন জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে কাজ চলছে।

   

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে মানবাধিকার সম্পর্কিত একটি নতুন শাখা চালু করার পরামর্শ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই পরামর্শ দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বৈঠকে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কুতুপালং এবং ভাসানচর পরিদর্শনের জন্য বৈঠকে প্রস্তাব করা হয়।

কমিটির সভাপতি এ কে আব্দুল মোমেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শাহরিয়ার আলম, নাহিম রাজ্জাক, নিজাম উদ্দিন জলিল, নুরুল ইসলাম নাহিদ, হাবিবুর রহমান, সাইমুম সারওয়ার, জারা জাবীন মাহবুব অংশ নেন।

 

;

ঢাকাসহ ৮ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকাসহ দেশের আট জেলার ওপর দিয়ে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস। সেইসঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলা হচ্ছে।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া এক পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং সিলেট জেলার ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সময় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে, আবহাওয়া অফিসের অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

এ অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।

;

ইসলামি সংগীত শিল্পী সালমানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় নিহত তিনজনের একজন সালমান আজাদী। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং ইসলামি সঙ্গীত শিল্পী ও প্রশিক্ষক। তার মৃত্যুতে ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সালমান আজাদী।

তিনি বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার হাপানিয়া এলাকার মৃত কোরবান আলীর ছেলে। নিহত সালমান স্ত্রী ও এক শিশুপুত্রকে নিয়ে নগরীর মাসকান্দা এলাকায় থাকতেন।

জানা গেছে, ইসলামি সংঙ্গীত শিল্পী হিসেবে ময়মনসিংহে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন সালমান আজাদী। ইসলামি সঙ্গীতের প্রসারে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন সালমান ইসলামি সঙ্গীত একাডেমি। প্রায় দুই বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে শিশুদের ইসলামি গান শেখাতেন। এছাড়াও ত্রিশালে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ইসলামি সঙ্গীতের প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি।

উদীয়মান এ ইসলাম সঙ্গীত শিল্পীর মৃত্যুতে শোকাভিভূত পরিবার, আত্নীয়-স্বজন, ক্যাম্পাসের সহপাঠী-শিক্ষার্থী, ইসলামি সংস্কৃতি প্রেমিসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা। শতশত মানুষের ফেসবুক স্ট্যাটাসে যেন শোক বইয়ে পরিণত হয়েছে সানমানের ফেসবুক টাইমলাইন।

আব্দুর রহিম ভূঁইয়া নামে একজন লিখেছেন, কিছু মৃত্যুর সংবাদ মানুষকে ভীষণ বেদনা দেয়, ভীষণ কষ্ট দেয়। আর এই মৃত্যু যদি অকালে হয় বা আকস্মিক হয় তার শোক কাটিয়ে উঠা মোটেও সহজ না। সালমান আজাদী ইসলামিক শিল্প একাডেমির শিক্ষক ও স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। তিনি বাচ্চাদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। বাচ্চাদের সুস্থ ধারার ইসলামিক সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যাপারে তার অনেক পরিকল্পনা ছিল।

হানজালা রমজান মুন্না নামে আরেকজন লিখেছেন, প্রিয় হাসিমাখা মুখ ও সুন্দর করে কথা উপস্থাপন ছিল যার নৈমিত্তিক অভ্যাস। ইসলামি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ায় পেছনে ময়মনসিংহ শহরে যাদের অবদান, তাদেরই একজন ছিলেন। মনের মধ্যে ছিল ইসলামের জন্য তীব্র ভালবাসা। ভাইয়ের ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতের উঁচু মাক্বাম দান করুন।

স্বামীর শোকে বাকরুদ্ধ স্ত্রী খাদিজা খাতুন জানান, সালমান নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার ক্লাস করতেই ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ত্রিশাল যাচ্ছিলেন তিনি।

এদিকে সালমান আজাদীর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। এক শোকবার্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ২০১৭-'১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকের শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে স্নাতকোত্তরে ২০২১-'২২ সেশনে অধ্যয়নরত মো. সালমান আজাদী (২৫) বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় ত্রিশালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে। তাঁর এই অকাল মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়-পরিবারের পক্ষে আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। সেইসঙ্গে সালমানের বিদেহী আত্মার চিরশান্তির জন্য প্রার্থনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন জানান, বিনা ময়নাতদন্তের জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে, ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪ জন। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উপজেলার ত্রিশাল বাজারের সাইফুল কমিশনারের বাসার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত অন্য দুইজন হলেন, উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের রুদ্রগ্রামের এনামুল হকের মেয়ে রুবাইরা তাজনিম (২) ও চিকনা মনোহর এলাকার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩৪)।

;

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীরাঙ্গনাদের সম্মাননা দাবি



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নরসিংদী
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের বহু যুবক ও ছাত্র জনতার আত্মহুতির অবদান। এই যুদ্ধে নারীদের অবদানও কোন অংশে কম নয়। এ যুদ্ধে অসংখ্য নারী সরাসরি অংশগ্রহণের পাশাপাশি ইজ্জতও দিতে হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বেদনা দত্ত। বেদনা দত্তের মতো বীরাঙ্গনাদের স্মরণীয় করে রাখতে বীরাঙ্গনা স্মৃতিসৌধ বা রাস্তা ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণের দাবি মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়দের।

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বড়ি-বাড়ির বেদনা দত্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্বেই স্বামী মারা যাওয়ায় অবুঝ তিন শিশুকে নিয়ে অনেক দুঃখ কষ্টে দিন পার করছিলেন। ঠিক সেই সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাওয়ানোসহ তাদের নানাভাবে সহয়তা করতেন বেদনা দত্ত। আর এমন খবর পেয়ে রাজাকার সদস্যরা বেদনাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে পাকিস্তানি হায়েনাদের হাতে তুলে দেয়। বাড়ির পাশে রেল ব্রিজের নিচে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে ৪ দিনে নির্যাতন শেষে মৃত ভেবে পাশের জঙ্গলে ফেলে দেয় বেদনাকে।

পরে সেখান থেকে দুইদিন পর প্রাণ ফিরে পেলেও ইজ্জত আর সন্তানদের জীবন রক্ষায় এলাকা ছেড়ে নিজেকে আড়াল করে রাখেন তিনি। দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরে আসলেও জীবন চলে অনাহারে অর্ধাহারে। এভাবেই পার করতে হয়েছে জীবনের প্রায় অর্ধশতাব্দি। অবশেষে এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনের নজরে আসলে তার কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে তাকে বীরাঙ্গনা হিসেবে নথিভুক্ত করেন এবং ভাতার আওতায় আনেন। সেই সাথে মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে তার জন্য তৈরি করা হয় বীর নিবাস। এখন এলাকাবাসীর দাবি বেদনা দত্তের অবর্তমানে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্মৃতিসৌধ নির্মাণের। অথবা তার নামে স্থানীয় কোন রাস্তা বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণের দাবি মুক্তিযুদ্ধাসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

স্থানীয় জিনারদী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান উদ্দিন পাঠান বলেন, আমরা জানতামই না আমাদের এলাকায় একজন বীরাঙ্গনা রয়েছে। সরকার যখন বেদনা দত্তকে একটি বীর নিবাস তৈরি করে দেয় তখনই জানতে পারি এই এলাকায় একজন বীরাঙ্গনা রয়েছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্মম নির্যাতনের শিকার এই নারী হয়তো একদিন থাকবেনা। কিন্তু তাকে যেনো পরবর্তী প্রজন্ম মনে রাখে এবং স্মরণ করে সেজন্য তার নামে একটি সড়কের নামকরণ বা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি জানাই।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধে নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বেদনা দত্তের মতো আরও যারা বীরাঙ্গনা রয়েছেন তাদের অসামান্য অবদান রয়েছে। নরসিংদীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে কয়েকটি আবেদন জমা পড়েছে যা প্রক্রিয়া দিন রয়েছে। অচিরেই এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

;