যে কারণে আরিফুল আবারও শক্ত প্রার্থী
সিলেট থেকে: বাস থেকে নেমেই চোখ যায় টার্মিনালের যত্রতত্র হ-য-ব-র-ল গাড়ির বহরে। আরিফুল হক ৬০ কোটি টাকায় নির্মিত নতুন টার্মিনালে গাড়িগুলো নিয়ে যাচ্ছেন।
মূল শহরে ঢুকলেই সিলেটের প্রাণ বন্দরবাজার ও জিন্দাবাজার এলাকা। আগের চেয়ে পরিচ্ছন্ন। ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত। হাঁটাচলার জন্য যথেষ্ট জায়গা। জলাবদ্ধতা যে শহরের মুল সমস্যা এখন সেখানে বর্ষা মৌসুমেও এক ফোটা পানি খুঁজে পাওয়া যাবে না। সিলেট সিটি করপোরেশেনের উন্নয়ন এখন এমন দৃশ্যমান। মেয়র আরিফুল তার ৫ বছর মেয়াদের আড়াই বছরে এ পরিবর্তন এনেছেন। বাকি আড়াই বছর ছিলেন জেলের ভেতরে।
আরিফুল বলেন, আড়াই বছরে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কাজ করেছি। জেলে না থাকলে শতভাগ কাজ করতে পেরেছি বলতে পারতাম।
মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর আরিফ প্রায় ২৯ মাস সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় কারাবন্দি ছিলেন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় তাকে ঘটনার ১২ বছর পর আসামী করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র হওয়ার পর অ্যাকশন ভূমিকায় ছিলেন প্রতিনিয়ত। ছড়া, খাল উদ্ধারে যখন তখন অভিযান চালিয়েছেন। যা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বেশ ফলপ্রসু ভূমিকা রাখে।
আরিফুল বলেন, মহানগরের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন থেকে শুরু করে ছড়া খাল উদ্ধার পর্যন্ত যা করেছি, সবকিছুই বৃহত্তর স্বার্থে করেছি। নতুন প্রজন্মের কথা চিন্তা করে করেছি।
হঠাৎ হঠাৎ বুলডোজার নিয়ে দখলকৃত দেওয়াল, ছড়া খালের ওপর তৈরি স্থাপনা ভেঙে চুরমার করে দিতেন আরিফ।
আর এসব কারণে আরিফ কিছু অংশের কাছে বিরাগভাজনও হয়েছেন। এমনকি আরিফুল হক রাস্তা দখলমুক্ত করতে গিয়ে জোটের শরিক দল জামায়াতের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছিলেন।
তবে আরিফুল হক বললেন , এসব নগরবাসীর জন্য করেছেন বলে তারা তাকে ভোটের মাঠে সুবিবেচনায় রাখবেন।
এবারের সিলেট সিটি নির্বাচনে নগরবাসী আবারও মেয়র হিসেবে দেখতে চান বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হককে। সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভার, রিকশা চালক এমনকি নগরীর চাকরিজীবী শ্রেণিরও পছন্দের তালিকায় প্রার্থী হিসেবে আসছে আরিফুলের নাম বলে জানায় তার নির্বাচন কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা।
আরিফুল জানান, দেশসেরা প্রকৌশলী জামিলুর রেজাসহ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে সিলেটের মাস্টারপ্লান অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছি। এরপরই আমার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নির্বাচিত হয়ে সেই মাস্টারপ্লান ধরে কাজ করতে চাই। মাস্টারপ্লানের পরিবল্পনায় সিলেট নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি সংকটের সমাধান, স্বাস্থ্যসেবা, আধুনিক বহুতল পার্কিং ভবন নির্মাণ, সৌন্দর্যবর্ধন, সড়ক সম্প্রসারণ, বিনামূলে ওয়াইফাই সেবা, বিনোদনের সর্বোত্তম ব্যবস্থা অর্ন্তভুক্ত।
মেয়র হয়ে আরিফুল জনপ্রিয়তা বাড়ালেও ভোটের মাঠে জয়ী হতে বাঁধা পেরুতে হবে তাকে। তার দলের আরেকজন প্রার্থী হয়ে বাঁধ সেধেছেন। জোটের শরিক দল জামায়াতও দিয়েছে আলাদা প্রার্থী। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে একক প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারণায় সরগরম। তাদের প্রার্থীও দুই বারের মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।
সব সমীকরণ মিলে ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচন আরিফুল হক চৌধুরীর সামনে বেশ চ্যালেঞ্জ। যদিও এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রত্যয়ী দেখা যাচ্ছে আরিফুলকে। গণনায় ধরছেন না জামায়াত ও তার দল বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়া প্রার্থীকেও।
নির্বাচনে সরকারকে কোনো 'কূটকৌশল' খাটাতে দিবে না বলে জানান আরিফুল ও তার সমর্থকরা। নির্বাচনে মরণপণ লড়াই করার ঘোষণা আগেই দিয়েছেন আরিফুল। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছেন, 'এটা সিলেট; পবিত্র ভূমি। এখানে কেউ পাপ করে টিকে থাকতে পারবে না। অলি আউলিয়ার মাটিতে সরকারের কর্মকর্তা আমলারা অনিয়ম করলে সঙ্গে প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যায়।'
সিলেটের মানুষের প্রত্যাশা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। গত এক সপ্তাহে একাধিকবার মেয়র প্রার্থীরা একত্রিত হয়ে হাতে হাত রেখেছেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য। তাদের হাসিমুখ সাধারণ মানুষকে শান্তিপূর্ণ ভোটের ইঙ্গিত দিয়েছে।
তরুণ ভোটার ও রেস্টুরেন্ট উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ চৌধুরী বলেন, অতীতে কোন মেয়র চৌহাট্টার ৪০ ফুট রাস্তাকে ২০০ ফুট করার উদ্যোগ নেন নি, আম্বরখানার মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের ব্যাক্তি দখলে চলে যাওয়া ভূমি উদ্ধার করে সড়ক সম্প্রসারণ করেননি। সদ্য সাবেক মেয়র আরিফ এসব করেছেন। তার দৃশ্যমান এসব উন্নয়নের কারণে মানুষের দৃষ্টিতে তিনি লেগে আছেন।
সিলেট জর্জকোর্টের তরুণ আইনজীবি মশিউর রহমান চৌধুরীর চোখেও উন্নয়ন বড়। যিনি উন্নয়ন করেছেন, নগরে চলতে ফিরতে স্বস্তি দিয়েছেন তারই আবার মেয়র হওয়া উচিত।
পরিবর্তন ও উন্নয়নের স্লোগান তুলে ২০১৩ সালের সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩১ হাজার ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আরিফুল। ওই নির্বাচনে তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ১৭৩ ভোট। এবারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরান। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি থেকে বিদ্রোহী হয়ে বহিষ্কৃত হওয়া প্রার্থী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমও। নিজস্ব প্রার্থী নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াতও। আগামী ৩০ জুলাই নির্বাচন। প্রচারণায় জমজমাট এখন সিলেট নগরের পথঘাট।