শুরুতেই এলেবেলে ‘সুফল প্রকল্প’
বনভূমির ভারসাম্য রক্ষায় সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সারা দেশে প্রায় ৬৫ হাজার একর বনায়ন করবে সরকার। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে টেকসই বন ও জীবীকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় এই বনায়ন করা হবে। পাঁচ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর হতে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টম্বর পর্যন্ত এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের ক্রয় পরিকল্পনা অনুমোদন হয়েছে ৩০ মে ২০১৯ সাল।
সুফল নামের এই প্রকল্পের ‘সুফল’ পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। সুফল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও উপপরিচালক নিয়োগ নিয়ে চলছে টানা হেঁচড়া। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী চান নিজের পছন্দের লোক নিয়োগ করে একাধিপত্য বিস্তার করতে।
অন্যদিকে সংসদীয় কমিটির অভিমত যোগ্য লোককে যেন নিয়োগ দেওয়া হয়। শুধু তাই না যাকে নিয়োগ দেওয়া হবে সে যেন অন্তত প্রকল্প শেষ পর্যন্ত থাকতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এই নিয়ে চলছে দুই পক্ষের মধ্যে দর কষাকষি।
সুফল প্রকল্পে একজন প্রকল্প পরিচালক ও চারজন উপপরিচালক থাকার কথা। শুরুতে দুইজন উপপরিচালক নিয়োগ করা হলেও তারা পদন্নোতি পেয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় এখন পদ দুটি ফাঁকা রয়েছে। প্রকল্প পরিচালক এখন অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে উপপরিচালকের দায়িত্বও পালন করছেন। এত বড় প্রকল্পে উপপরিচালক নেই সেটা মেনে নিতে পারছে না সংসদীয় কমিটি।
এরআগে প্রায় একই ধরণের প্রকল্প ছিল নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস)। সেখানে প্রকল্পে কাজের চাইতে অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা বেশি ছিল বলে সংসদীয় কমিটির কাছে প্রতিয়মান হয়েছে। তাই নতুন প্রকল্প শুরুর আগে আরও বেশি সর্তক থাকার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
এই প্রকল্পের আওতায় ৮টি বিভাগের ১৭টি বন বিভাগের ২৮ জেলায় বনায়ন করা হবে। তাই প্রকল্পটিকে চারটি কম্পোন্টে এর আওতায় শ্রেণিবদ্ধ বকরা হয়। প্রথমটিতে প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালীকরণ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ, ৫১ লাখ বনজ ও ফলজ ৭ দশমিক ৫ লাখ উন্নত পদ্ধতিতে উত্তোলিত চার (টিস্যু কালচার) এবং ৫ লাখ চারা মডেল হিসাবে ৫টি উপজেলায় বিতরণ ও রোপণের কাজ সম্পন্ন করা।
কম্পোনেন্ট-২ এর আওতায় বন ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ ও রক্ষিত এলাকার উন্নয়নে ৫২ হাজার ৭২০ হেক্টর অবক্ষায়িত এবং বৃক্ষ শূন্য পাহাড়ি ও সমতল বনভুমির (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, টাংগাইল ও ময়মনসিংহ) বিভিন্ন পদ্ধতিতে বনায়ন।
কম্পোনেন্ট-৩ এ প্রকল্প এলাকার বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্প আয় বর্ধক কাজের সুযোগ বৃদ্ধি, বন সম্প্রসারণ এবং বনের বাইরে বৃক্ষাচ্ছাদন বৃদ্ধিতে দেশের ৬০০ গ্রামে কোলবরেটিভ বন ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন ও সরকারিভাবে নিবন্ধন প্রদান। আর কম্পোনেন্ট-৪ এ প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, পরীবিক্ষণ এবং রিপোর্টিংয়ে ৪০ হাজার সিএফএম সদস্যের অনলাইন ডাটাবেইজ করা।
এরইমধ্যে প্রকল্পের আওতায় গাছের চারা কেনা হয়েছে। গাছের মধ্যে রয়েছে শাল, মহুয়া, গর্জন, বহেরা, হরতকিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। প্রকল্পের উদ্দেশ্য অঞ্চল ভেদে স্থানীয় বনায়নের সঙ্গে মিল রেখে বনভূমি করা।
প্রকল্পের সার্বিক দিক নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন,‘আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে না পারলে কোনও প্রকল্পই সফল হতে পারে না। তাই আমরা বলেছি যে অভিজ্ঞ- তাকে যেন নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে সেটা অবশ্যই স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হতে হবে। সেখানে না মন্ত্রী, না সভাপতি, না সচিব কারো হস্তক্ষেপ থাকবে না।’
তিনি বলেন, শুরুতেই সুফল প্রকল্পে পরিচালক নিয়োগ ও বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এখানে একজন লোক তার পছন্দমত উপপরিচালক নিয়োগ দিচ্ছে যেটা বিধি বর্হিভূত। বিশ্ব ব্যাংক নতুন করে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছে। যেটা আমাদের কাছে সঠিক মনে হয়নি। আমরা চাই সুফলের ‘সুফল’ সবাই পাক। এখন যদি কেউ সুফলের সুবিধা নিয়ে অন্য কিছু করে সেটা তো দেশের জন্য ভাল হবে না। এত বড় প্রকল্পে একজন উপপরিচালক নেই, সেটা কি করে হয়। প্রকল্প অনুমোদনের সময় বলা হয়েছিল একজন বন সংরক্ষক রাখতে হবে। তাই ভেতর থেকে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে হবে।