বন্যায় ঢিলেঢালা মেজাজে টাঙ্গাইলের কর্মকর্তারা
টাঙ্গাইল থেকে: কর্মকর্তাদের নিজেদের মধ্যে নেই কোনো সমন্বয়। এমনকি জেলায় থেকেও অনেক কর্মকর্তা পরিদর্শনে পর্যন্ত যাননি উপজেলা সদরে। অব্যাহত ভাঙনে কমিউনিটি ক্লিনিক বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। সেই তথ্যও জানা নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
এমন চিত্রই উঠে এসেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ জেলা টাঙ্গাইলের বন্যা মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণী সভায়।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে শনিবার দুপুরে বৈঠকে বসেছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।
ভূঞাপুরে বন্যার পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে গেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
সভার সূচনা বক্তব্যে প্রথমেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে উপমন্ত্রী জানতে চান, ‘বাঁধ ভাঙল কেন?’
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা দায়সারা জবাব দিলে তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি উপমন্ত্রী।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. শরিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয়, উপজেলার সবচেয়ে দুর্গত এলাকায় তিনি গিয়েছিলেন কিনা?
কাচুমাচু করে জবাব আসে- ‘না’। জেলা সিভিল সার্জন জানান, বন্যায় জেলার ভূঞাপুরের একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
সিভিল সার্জেনের বক্তব্য শুনে উপমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি আগে থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন কিনা?’
পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর এমন প্রশ্নে বিব্রত সিভিল সার্জনের উত্তর আসে- ‘না’।
আলোচনায় উঠে আসে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দফতর আর সিভিল সার্জনের দফতরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা।
জেলা কর্মকর্তাদের নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব নিয়ে রশি টানাটানি আর সমন্বয়হীনতার বিষয়টি খোলাসা করেন টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার নাগরপুর) আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু।
তিনি জানান, কর্মকর্তাদের নিজেদের কাজে কোনো সমন্বয় নেই। যার কারণে বন্যার্ত মানুষেরা যেভাবে প্রশাসনের সহযোগিতা পাওয়া দরকার তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরণ একহাত নেন কর্মকর্তাদের গাফলতি আর সমন্বয়হীনতার প্রতি।
তিনি জানান, প্রতি মাসেই জেলার উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভা হয়। সেখানে সমস্যাগুলো আগাম তুলে ধরা হয়। তবে কর্মকর্তারা তাতে কর্ণপাত করেন না। আজ টাঙ্গাইলবাসী বন্যা আক্রান্ত হয়ে যে দুর্ভোগের কবলে পড়েছে এটাই তার বড় প্রমাণ।
টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভুয়াপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান, টাঙ্গাইল সদর আসনের সংসদ সানোয়ার হোসেন, ঘাটাইলের সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানসহ সকলের বক্তব্যে উঠে আসে প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার কথা।
সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল জানান, সবাইকেই নিজ নিজ দায়িত্বের প্রতি সচেতন হতে হবে। একটি বিভাগ আরেকটি বিভাগের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ যদি দুর্গত এলাকায় সময়মতো সুপেয় পানির ব্যবস্থা না করে, নলকূপ স্থাপন না করে-তাহলে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়বে চাপ বাড়বে হাসপাতালগুলোতে। এতে মরার উপর খাড়ার ঘা তৈরির মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে।
আবার বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে গভীর যোগসূত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণের। সময় মতো বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে এবং মানুষের আগের মত দুর্ভোগের শিকার হতে হবে না বলে জানান তিনি।