অবৈধ পুকুর খনন

মোহনপুরে দু’বছরে ফসলি জমি কমেছে ১১০০ হেক্টর



হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
মোহনপুরে পুকুর খনন চলছে, ছবি: বার্তা২৪

মোহনপুরে পুকুর খনন চলছে, ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

কৃষি অধ্যুষিত জেলা রাজশাহীর সবচেয়ে ছোট আয়তনের উপজেলা মোহনপুর। এখানে ধান, পান, গম ও আমের চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী- ২০১৬ সালে মোহনপুরে ফসলি জমি ছিল ১২ হাজার ৪৩২ হেক্টর। তবে ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৩২০ হেক্টরে।

স্থানীয় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, উপজেলাজুড়ে বাণিজ্যিক পুকুর খননের কারণে কমছে ফসলি জমি। জোর করে কৃষকদের কাছ থেকে জমি নিয়ে পুকুর খনন করছে প্রভাবশালী একটি মহল। পুকুর খননকারীরা মাঠের মাঝামাঝি স্থানের কোনো জমি টার্গেট করেন। সেই জমির মালিককে অর্থের প্রলোভনে জমি কব্জা করেন। ওই জমিতে পুকুর খনন শুরু করলে তখন বাধ্য হয়ে আশেপাশের কৃষকরাও তাদেরকে জমি দিয়ে দেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/20/1561023543558.JPG

কৃষকদের অভিযোগ- তারা এ বিষয়ে কৃষিবিভাগ ও বরেন্দ্র বহমুখী প্রকল্পসহ (বিএমডিএ) স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুমে উঁচু জমির ফসলহানির পাশাপাশি জলাবদ্ধতার ঝুঁকিতে রয়েছে তিন শতাধিক বাড়িঘর।

এদিকে, গত ১০ মার্চ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধভাবে ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধ করতে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানওয়ার হোসেন। এরপরও থেমে নেই প্রভাবশালী মহলের পুকুর খনন।

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মৌসুমে যেসব পুকুর খনন শুরু করা হয়েছে, তা শেষ হলে ফসলি জমি কমবে আরও ৭০০ হেক্টর। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে উপজেলায় ফসলি জমির অস্তিত্ব থাকবে না।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, অন্তত দশটি পুকুর খননের কাজ পুরোদমে চলছে। দিনরাত প্রায় ২৪ ঘণ্টায় এক্সকেভেটর দিয়ে মাটি কাটার কাজ চলছে। প্রতিটি পুকুরের আয়তন ২০ বিঘা জমি থেকে ৮০ বিঘা পর্যন্ত রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেশরহাটের পৌর এলাকার মগরা বিলে আলমগীর হোসেন, ধুরইল বিলে বাবু ও লিখন, বিদ্যাধরপুর বিলে শাফিউল আলম, তেঘর মাড়িয়া বিলে এনামুল হক ও রানা হোসেন এবং শিবপুর বিলে নাজমুল হোসেন জমি লিজ নিয়ে পুকুর খননের কাজ করছেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/20/1561023561855.jpg

তারা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিএনপি ও জামায়াতের কিছু নেতাও বেশি টাকা দিয়ে এদের সঙ্গে শেয়ারে পুকুর খননে যুক্ত হচ্ছেন। ফলে অনেক সময় পুকুর বন্ধে মাঠে নেমে ব্যবস্থা নিতে গেলেও রাজনৈতিক প্রভাবে নিস্ফল ফিরে আসতে হচ্ছে প্রশাসনিক কর্তাদের।

উপজেলার বাকশৈল গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান, সাদেকুর রহমান ও রাশেদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, উপজেলার কয়েকটি বিলে তিন ফসলি জমিতে পুকুর করে আবাদি জমি প্রায় শেষ। খালের মাঝে পুকুর খনন করে বাঁধ দেওয়ায় পানি বের হয় না। জলাবদ্ধতায় ধান নষ্ট হয়ে যায়। গত মৌসুমে কৃষকের দুর্দশা দেখে এমপি আয়েন উদ্দিন নিজে পানিতে নেমে পুকুরের পাড় কেটে পানি বের করার ব্যবস্থা করেন। কয়েকদিন পরে পুকুর মালিকরা আবার পাড় বেঁধে দেন। বারবার তো আর এমপি আসতে পারবেন না। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে তাদেরকে (পুকুর খননকারী) জমি দিয়ে দিচ্ছেন।

জানতে চাইলে পুকুর খননকারী আলমগীর হোসেন ও এনামুল হক দাবি করেন, চাষাবাদ ভালো না হওয়ায় জমির মালিকরা ডেকে পুকুর খননের জন্য জমি দিচ্ছেন। কৃষকদের জমির খাজনা পরিশোধের পাশাপাশি সাংবাদিকসহ স্থানীয় প্রশাসনকেও ম্যানেজ করতে হয়। অল্প জমিতে পুকুর খননে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। একসঙ্গে বেশি জমি হলে ভালো হয়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/20/1561023602206.JPG

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মোহনপুর ছোট আয়তনের একটি উপজেলা। এখানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণ পুকুর খনন করা হচ্ছে। ফলে কৃষি ভূমির পরিমাণ দিন কমে আসছে। হুমকির মুখে পড়ছে এখানকার প্রধান ফসল পান ও ধানের চাষ। এ ধরনের পুকুর খনন বন্ধের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে আসছে উপজেলা কৃষিবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন।

মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুস্তাক আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পুকুর খননের খবর পেলেই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বন্ধ করছি। তারা রাতের আঁধারে পুকুর কাটছে, ফলে প্রতিরোধ করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঙ্গে কিছুটা রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে।’

তবে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও দাবি করেন ওসি।

   

বন বিভাগের গেটের দেওয়ালে চাপা পড়ে শিশুর মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুষ্টিয়ায় বন বিভাগের গেটের দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে জুরাইন আহমেদ (৪) নামে শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে খোকসা উপজেলা বন বিভাগের গেটের দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে এ ঘটনা ঘটে।

জুরাইন আহমেদ খোকসা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মাঠপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী উজ্জলের ছেলে।

নিহত শিশুর চাচা আজিজুল ইসলাম জানান, শিশুরা খেলছিলো আবার কেউ ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলো। এসময় অসাবধানতাবশত গেটের গেটের দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে নিহত হয়।

বন কর্মকর্তার অফিসটি সব সময় অরক্ষিত থাকে। কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনায় জুবায়েরের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তাঁর।

উপজেলা বন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, এক বছর আগে কুষ্টিয়ার এক ঠিকাদার গেট নির্মাণ করেছে।

খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, এটি একটি দুর্ঘটনা। গেট নির্মাণে ত্রুটি থাকতে পারে। ঠিকাদার গেটের পিলার এমনভাবে তৈরি করেছেন, মনে হচ্ছে পিলার দুটি মাটির ওপরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। নাড়া দিলেই নড়ছে। বন কর্মকর্তার গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

;

বাঘা শরীফের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে দুই গুরুর ত্যাগ!



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাবা-মায়ের দেওয়া নাম মোহাম্মদ শরীফ। কিন্তু বলীখেলার রিংয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপের কারণে সেই আসল নামটিই এখন বলতে গেলে হাওয়া। সবার মুখে মুখে রটে তাঁর নামটাই হয়ে গেছে ‘বাঘা শরীফ’। কুমিল্লার হোমনার এই ডানপিটে হৃষ্টপুষ্ট শরীরের তরুণ এবার প্রথমবার অংশ নিয়েছিলেন ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলায়। পরেরটাতো ইতিহাস। একে একে চ্যালেঞ্জ রাউন্ড, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল জিতে ইতিহাসের পাতায় যেন নিজের নামটা খুঁদাই করে গেলেন কুমিল্লার মানুষের ‘প্রিয় বলী’ বাঘা শরীফ। গল্পটা যেন সেই পুরনো প্রবাদের মতো-আসিলাম, দেখিলাম, জয় করিলাম!

অথচ বাঘা শরীফের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথাও ছিল না। বলীখেলায় অংশ নিতে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে এলেও চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে তাঁকে রাখেনি আয়োজক কমিটি। তাতে মন খারাপ হয়ে যায় শরীফের। সেটি দেখে বাঘা শরীফকে সুযোগ দিতে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন জীবন বলী নিজের নামও প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু তাতেও আয়োজকদের মন গলেনি। শেষ পর্যন্ত গত আসরের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলীও বাঘা শরীফকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রত্যাহার করে নেন নিজের নাম। অবশেষে এক প্রকার বাধ্য হয়ে শাহজালালের অনুরোধ রাখে আয়োজক কমিটি। আর এতেই ভাগ্য খুলে যায় বাঘা শরীফের। চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে খেলতে নেমেই কক্সবাজারের নুর মোহাম্মদ বলীকে হারিয়ে বাঘা শরীফ উঠে যান সেমিফাইনালে। আর সেমিফাইনালে একইভাবে হারান সীতাকুণ্ডের রাসেল বলীকে।

ফাইনাল শুরু হতেই রিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বাঘা শরীফকে নানা দিক নির্দেশনা দিতে থাকেন শাহজালাল বলী। অদূরে দাঁড়িয়ে জীবন বলীও সমর্থন জানান শরীফকে। আর এতেই কিনা দ্বিগুণ উৎসাহে রাশেদকে চাপে রাখেন শরীফ। অবশ্য রাশেদও কয়েকবার চেষ্টা করেন ‘মরণকামড়’ দেওয়ার। কিন্তু শরীফের বলের কাছে পরাস্থ হন বারবার। এভাবে ১১ মিনিট ধরে চলতে থাকে ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’। কিন্তু থামতে যে হবেই! শেষ পর্যন্ত রাশেদ পারলেন না আর, মেনে নেন হার। এর মধ্যে দিয়ে ঐতিহাসিক এই বলীখেলা পেল নতুন চ্যাম্পিয়ন।

শরীফ বলী জিততেই আনন্দে ফেটে পড়েন শাহজালাল ও জীবন বলী। জানতে চাইলে জীবন বলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাড়ি থেকে আসার আগে শরীফ আমাকে ফোন করেছিলেন। তার খেলার খুব আগ্রহ ছিল, সেটি জানিয়ে সহযোগিতা চেয়েছিল। আর সে খুব ভালো বলীও। কুমিল্লায় তাঁকে এক নামে চেনেন সবাই। কিন্তু তাঁকে সুযোগ দিচ্ছিল না আয়োজক কমিটি। মূলত তাঁকে সুযোগ করে দিতে আমি নিজের নাম প্রত্যাহার করি নিই। কিন্তু এরপরও সুযোগ না দেওয়ায় শাহজালাল বলীও তাঁর জন্য নাম প্রত্যাহার করে নেন। শেষ পর্যন্ত আমাদের মুখ উজ্জ্বল করল শরীফ। আর আয়োজক কমিটিকেও দেখিয়ে দিল সে কত বড় বলী।’

ছবি: জীবন বলী ও শাহজালাল বলী

প্রায় একই কথা বললেন শাহাজালাল বলীও। তিনি বলেন, ‘বাঘা শরীফ আমার ছোট ভাইয়ের মতো। সে খুব আশা নিয়ে খেলতে এসেছিল। কিন্তু আয়োজক কমিটি সুযোগ দিচ্ছিল না। সেজন্য আমি নিজে না খেলে তাঁকে খেলাতে অনুরোধ জানাই। ভাগ্যিস কমিটি সেই অনুরোধ মেনে নিয়েছিল।’

দুই সিনিয়র বলীর কাছে শ্রদ্ধায় যেন নুইয়ে পড়লেন বাঘা শরীফ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শাহজালাল ভাই আমার কাছে বড় ভাইয়ের মতো। বলীখেলায় তিনি আমার গুরুতুল্য। জীবন ভাইও তেমন। তাঁদের দুইজনের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’

বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাঘা শরীফ ট্রফির সঙ্গে পেয়েছেন ৩০ হাজার টাকার সম্মানীও। এই টাকায় কি করবেন এমন প্রশ্নে বাঘা শরীফ বললেন, ‘স্মৃতি হিসেবে রেখে দেবে বেশিরভাগ টাকা। আর কিছু টাকায় আমার দুই বছরের মেয়ে মিমের জন্য কাপড় কিনে নিয়ে যাব। মেয়েকে বলে এসেছিলাম চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফিরব। সে বুঝতে না পারলেও হেসেছিল। এখন নিশ্চয় আরও বেশি খুশি হবে।’

এবারের বলীখেলাটি হয়তো স্মরণীয় হয়ে থাকবে দুই বলীর ‘ত্যাগের’ জন্যও। খেলায় অংশ নিলে শাহজালাল আর জীবন বলীর মধ্যেই হয়তো হতো ফাইনালের লড়াই, যেটা হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। কিন্তু একজন জুনিয়রকে সুযোগ করে দিতে দুজন যেভাবে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিলেন, সেটি ছুঁয়ে গেছে সবাইকে। দর্শকেরা তাই বললেন, এমন ত্যাগও হয়!

আর বাঘা শরীফ তো বলেই দিলেন, ‘এই ট্রফি, এই সম্মানি আমার একার নয়, এই অর্জনের পেছনে পুরো কৃতীত্ব শাহাজালাল ভাই আর জীবন ভাই। তাদের ত্যাগই আমাকে এনে দিল চ্যাম্পিয়নের সম্মান।’

নাম প্রত্যাহার করে শুধু বাঘা শরীফকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগটাই করে দিলেন না জীবন আর শাহজালাল। জানিয়ে গেলেন-লড়াই না করেও জেতা যায়!

;

গরমে জানটা শ্যাষ হয়া গেইল!



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের সাহেব আলী। এই অইদের (রোদ) ঠ্যালায় জানটা ব্যার হয়া যাবার নাগছে বাহে! গরীম মানুষ বাঁচে কেমন করি। জারের (শীত) সমায় (সময়) কনকনা ঠান্ডা আর গরমের সমায় গরম। হামরা ঘর থাকি ব্যার হওয়া যায় না। জানটা শ্যাষ (শেষ) হয়া গেইল।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রবাহে সৃষ্ট দাবদাহে অতিষ্ট লালমনিরহাটের জনজীবন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ ক্রমশ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আগুন ঝরা বাতাসে নারী-শিশুসহ কর্মজীবী মানুষ দিন দিন অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কে যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা কম, জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাহিরে বের হচ্ছেন না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা হয় হাতীবান্ধা উপজেলার ভ্যানচালক নুরআলম সাথে, তিনি বলেন, বৈশাখের চনচনা অইদোত রোদে মাল নিয়া ভ্যান চালাইতে কষ্ট হয়। গরমের ঠ্যালায় কইলজা ফাটি যায়। ওই জন্যে ঠান্ডাত (গাছের ছায়া) একনা দম নিবার নাগছি।

তিনি আরো বলেন, কোথাও ঠান্ডার আভাস নাই। এভাবে চলতে থাকলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়বো। পরিবার পরিজনের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেয়া দুরুহ ব্যাপার হয়ে পড়বে। রিকশাচালক হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত চার-পাঁচ দিন ধরে আয় রোজগার কমে গেছে। বেলা সাড়ে ১০-১১টার পর রাস্তায় আর কোনো যাত্রী থাকে না।

বাসচালক আকবর আলী বার্তা২৪.কমকে জানান, গরমের কারণে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচ (বিটুমিন) উঠে গাড়ির চাকার সাথে লেগে যায়। এতে খুব সতর্ক অবস্থায় গাড়ী চালাতে হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রমজান আলী বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রচন্ড গরমে শিশু ও বয়স্করা ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দৈনিক শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। জেলার প্রতিটি হাসপাতালে শিশু রোগী ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ, যথাসম্ভব বাহিরে বের না হওয়া, সাথে খাবার পানি রাখা, ছাতা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।

কুড়িগ্রাম আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র বার্তা২৪.কমকে বলেন, দুপুর ১২টায় লালমনিরহাটে তাপমাত্রা ৩৮.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

লালমনিরহাট জেলা তথ্য অফিসার শাহজাহান আলী (অতিরিক্ত দায়ত্বি) বার্তা২৪.কমকে জানান, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে জেলার সর্বত্র সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।

;

কুয়াকাটায় জেলের জালে ২৬ কেজির কোরাল



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, (কলাপাড়া-পটুয়াখালী)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পটুয়াখালির কুয়াকাটায় বঙ্গোপসাগরে রাসেল মাঝি (৩৫) নামের এক জেলের জালে ধরা পড়েছে ২৬ কেজি ওজনের একটি কোরাল মাছ।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর ১.৩০ মিনিটে কুয়াকাটা মেয়র মৎস্য মার্কেটের মনি ফিস আড়তে মাছটি নিয়ে আসা হয়। এসময় মাছটি এক নজর দেখতে ভিড় জমায় উৎসুক জনতা। পরে কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী বিক্রম চন্দ্র নিলামের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকায় মাছটি কিনে নেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বঙ্গোপসাগরের বলেশ্বর নদীর সাগর মোহনায় মাছটি ধরা পড়ে।

মাছ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাসেল মাঝি বলেন, প্রতিদিনের মত গত সোমবার (২২ এপ্রিল) ধুলাস্বার ইউনিয়নের বাবলাতলা বাজার থেকে (মায়ের দোয়া) নামের ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে যাই। পরে বলেশ্বর নদীর সাগর মোহনায় জাল ফেলার পর অন্যান্য মাছের সঙ্গে এ কোরাল মাছটি ধরা পড়ে। মাছটির ওজন বেশি হওয়ায় আমাদের ট্রলারে তুলতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এর আগেও আমার জালে ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজনের কোরাল মাছ ধরা পড়েছিলো। তবে আমার জালে ধরা এটিই সবচেয়ে বেশি ওজনের কোরাল। মাছটি খুব ভাল দামে বিক্রি করেছি। এত বড় মাছ পেয়ে আমার ট্রলারে থাকা জেলেসহ আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।

মাছটি ক্রয় করা ব্যবসায়ী বিক্রম চন্দ্র বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে মাছের ব্যবসা করি, এত বড় কোরাল আসলে সব সময় পাওয়া যায় না। মাছটি দেখেই আমার পছন্দ হয়েছে। তাই নিলামে আমিই বেশি দাম হেঁকে এ মাছটি ক্রয় করেছি। মাছটি বিক্রির জন্য আজই ঢাকায় পাঠাবো। আশা করছি আমি ভালো মানের লাভ করতে পারব।

কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, কোরাল মাছ খুবই সুস্বাদু। শিশুদের মানসিক বিকাশে কোরাল মাছ গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি বৃষ্টি হলে জেলেদের জালে ইলিশের পাশাপাশি আরও বড় বড় মাছ ধরা পড়বে।

;