জামের পাইকারি দাম কম, খুচরায় কয়েক গুণ বেশি
‘বাজান, গাজীপুর থাইক্যা জাম আনছিলাম অনেকটি। বাজরে জামের যে দাম, তাতে ব্যাপারীগো জবান বন্ধ হইয়া গেছে! জাম নিয়া আইসা আমাগো মাথায় হাত। চাইরের এক আইলেও আইতে পারে। আর তিনই যাবে লোকসানে!’
আক্ষেপের সঙ্গে বার্তা২৪.কমকে কথাগুলো বলছিলেন জামের পাইকারী বিক্রেতা বয়োবৃদ্ধ রশিদ মিয়া।
তিনি জানান, গাজীপুরের কালিগঞ্জ থেকে যে জাম নিয়ে এসেছেন, তার বেশির ভাগই পড়ে আছে বাজারে। ক্রেতা নেই বাজারে। অতিরিক্ত গরমে ধরে রাখার সুযোগ নেই। দাম আর লাভ-ক্ষতির তোয়াক্কা না করেই ছেড়ে দিতে হচ্ছে এসব জাম।
সোমবার (১৭ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি জামের বাক্স ধরে বসে আছেন পাইকারি বিক্রেতারা। তেমন ক্রেতা নেই জামের বাজারে। গরমের চাপে কোথাও কোথাও জাম গলতে শুরু করেছে। কোথাও পঁচে গিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে জামের রস।
বিক্রেতারা জানান, গাজীপুর আর মায়মনসিংহ অঞ্চল থেকে এসব জাম বাজারে আসে। তবে বরিশালসহ আরও কিছু অঞ্চলের জামও বাজারে আসে।
‘কারওয়ান বাজারে প্রতিদিন দেশি জামসহ গোদা, চন্দিনা, হাইব্রিডসহ বেশ কয়েক জাতের জাম পাওয়া যায়। পাইকারি বা খুচরা সব রকম বিক্রি চলে এ বাজারে। তবে জামের ভালো দাম না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যাপারীরা।’
জাম বিক্রেতা মো. মাসুদ বলেন, আমরা জাম নিয়ে পড়েছি যন্ত্রণায়। দাম নেই বললেও চলে। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি এসব জাম। আমরা গ্রাম থেকে কিনে এনেছি, গড়ে ৪০/৪১ টাকায়। কেজি প্রতি ২০ টাকা লোকসান।
জাম ব্যাপারী আলী আকবর শেখ বলেন, আমরা সরাসরি গাজীপুরের হাওড়াখালি বাজারের মোকাম থেকে জাম নিয়ে আসছি। জামের দাম রমজানে ছিল ভালোই। এখন দাম একবারেই শেষ। এক লাখ টাকার জাম কিনে ২৫ হাজার পর্যন্ত আসতে পারে।
‘অন্যান্য বার সাধনা ফ্যাক্টরি কিছু জাম কিনতেন। এবার আমাদের থেকে একেবারেই জাম কেনেননি। তাছাড়া আমদানিও বেশ ভালো। সব মিলে খুব খারাপ অবস্থায় জাম ব্যাপারীরা। এবার চালানটাও ঠিকভাবে পাবেন কি-না, উপরওয়ালা (সৃষ্টিকর্তা) ভালো জানেন।’
তবে পাইকারি বাজার থেকে বেরিয়েই খুচরা বাজারে আবার জামের দাম কয়েক গুণ বেশি। সেখানে প্রতি কেজি জাম বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। সামান্য দূরত্বেই এই দুই বাজার। এতেই জামের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ক্ষেপে ওঠেন মো. রাসেদ নামের খুচরা বিক্রেতা।
তার দাবি, ‘আমাদের জাম আর তাদের (ব্যাপারী) জামের মধ্যে পার্থক্য আছে। আমরা দেখে দেখে ভালো ভালো জাম ক্রেতাদের জন্য রেখেছি। এজন্য দামটা একটু বেশি।’
কারওয়ান বাজার ছাড়াও রাজধানীর প্রায় বেশিরভাগ ছোট বড় বাজার ও ভ্যানে আবাসিক এলাকায় কিংবা ফুটপাতেও জাম বিক্রি করতে দেখা যায় নিয়মিত। তাদের দাবি- জামের দাম বেশি। একশ’ টাকার নিচে কোথাও জামের কেজি পাওয়া যাবে না।
খুচরায় জাম কিনতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার কথা জানালেন রামপুরার মহানগর প্রজেক্ট আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের।
তিনি বলেন, আমার এলাকায় গত রাতে সন্ধ্যার দিকে এক ভ্যান গাড়ি থেকে জাম কিনতে চেয়েছিলাম। তিনি কোনোভাবেই জামের দাম কমায়নি। সবচেয়ে খারাপ দেখতে যেসব জাম, তার মূল্যও সর্বনিম্ন একশ’ টাকা! তাই সকালে কারওয়ান বাজারে এসেছি জাম কিনতে। মানুষ কিনে খেতে চায়, কিন্তু এভাবে দাম বাড়িয়ে নৈরাজ্য করতে দেওয়া যায় না।