বড় ভাইয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে ছোটভাইকে জেলে পাঠাল পুলিশ!
রাজশাহী মহানগরীর ছোটবন গ্রামের তোফাজ উদ্দিনের ছোট ছেলে সজল মিয়া (৩৪)। গত ৩০ এপ্রিল একটি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে তার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। যেখানে মামলার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সেলিম হোসেন ওরফে ফজল।
তবে ফজল পলাতক থাকায় তার ছোটভাই সজলকে ধরে নিয়ে আসে পুলিশ। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ে সেলিম হোসেন ওরফে ফজল সাজিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। গত ১ মে থেকে কারাভোগ করছেন নির্দোষ সজল মিয়া। অর্থাৎ বড়ভাই ফজলের কারাদণ্ডে পুলিশ ছোটভাই সজলকে জেলে পাঠায়।
পরিবারের পক্ষ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, ভুলক্রমে গ্রেফতার সজলের অন্য তিন ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র আদালতে জমা দিয়ে সজলের খালাস দেয়ার আবেদন করে। তবে পুলিশের দাবি- সেলিম হোসেন ওরফে ফজলকেই তারা গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে। কোনো ভুল মানুষকে গ্রেফতার করেনি।
মামলা সূত্রে জানা যায়, নগরীর ছোটবন গ্রামের বাসিন্দা তোফাজের চার ছেলের মধ্যে সেলিম হোসেন ওরফে ফজল তৃতীয়। বিয়ের পর স্ত্রীকে নির্যাতনের দায়ে করা একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় ফজলকে আসামি করা হয়। তবে তদন্ত শেষে চার্জশিটে ফজলের অন্য তিন ভাইকেও আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
মামলার পর থেকে মূল আসামি সেলিম হোসেন ওরফে ফজল পলাতক। পরিবার ও পুলিশ তার কোনো খোঁজ জানে না। মামলার বিচার কাজ শেষে ২০০৯ সালের ২৮ আগস্ট রায় ঘোষণা করা হয়। সেখানে সেলিম ওরফে ফজলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। আর তার অন্য তিন ভাইকে বেকসুর খালাস দেয়।
তবে সাজাপ্রাপ্ত আসামি পলাতক থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে অভিযান চালাতে থাকে। প্রায়ই তাদের বাড়িতে গিয়ে অন্য ভাই ও আশেপাশের মানুষকে সেলিম ওরফে ফজলের সন্ধান বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ঠিক একইভাবে ৩০ আগস্টও বাড়িতে গিয়ে সাজাপ্রাপ্ত ফজলের ছোটভাই সজলকে ধরে নিয়ে এসে সেলিম ওরফে ফজল সাজিয়ে জেলে পাঠিয়ে দায় সারে পুলিশ।
এদিকে, সজল মিয়ার মুক্তি চেয়ে রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে যে আবেদন করা হয়েছে, সেখানে তার সকল ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেগুলো সত্যায়িত করে দিয়েছেন। এছাড়া সজলের জমি খারিজের ডিসিআর, জমির দলিলসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছে। সজল এবং তার ভাই সেলিমের ছবি সম্বলিত এবং স্ট্যাম্পের কপিও দাখিল করা হয়েছে।
সজলের আইনজীবী মোহন কুমার সাহা বলেন, 'অপরাধী না হয়েও সজল মিয়া সাজা ভোগ করছেন। পুলিশ হয়তো ভুল করে অথবা প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নির্দোষ সজলকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। বিষয়টি আদালতকে জানিয়ে তার মুক্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে। আগামী ১১ জুন সজলকে আদালতে হাজির করে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন বিচারক।'
জানতে চাইলে নগরীর শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, 'আমরা ঠিক আসামিকেই ধরেছি। মামলার সাক্ষীরা আসামিকে শনাক্ত করেছেন। এ নিয়ে তারা এফিডেফিটও করে দিয়েছেন। সেটি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।'
তবে ভুল আসামি দাবি করে আদালতে মুক্তির আবেদনের বিষয়টি জানা নেই বলে জানান ওসি।