নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে কেন ‘অনাদরে’ সংবাদকর্মীরা
বিষয়টি নতুন নয় মোটেও। প্রতিবারই কবির বাল্য স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তীর উৎসব হবে। ঘটা করে অনুষ্ঠান হবে সেখানে। মন্ত্রী আসবেন। সংবাদকর্মীদের হুড়োহুড়ি শুরু হবে। অনুষ্ঠানে দারুণ কাভারেজ পেয়ে পুলকিত হবেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে এলেন। কবির শৈশবের গল্প, জয় বাংলা স্লোগানের উৎসসহ নানাভাবে বিশ্লেষণ করলেন সাম্য ও মানবতার কবির কর্মকে।
কিন্তু রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের কর্মীদের প্রতি অন্য সময়ের মতো এবারও জুটল অনাদরই। বসার চেয়ার নেই। একটি টেবিলে সংবাদ কর্মীদের ব্যাকপ্যাক, ল্যাপটপ, ক্যামেরা রাখারও জায়গা নেই। যেখানে পাতা হয়েছে টেবিল, সেখানে আবার বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। সাংবাদিকদের জন্য নির্দিষ্ট চেয়ারগুলোও গেছে স্থানীয়দের দখলে। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বসার জায়গা না পেয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়েই পুরো অনুষ্ঠান কাভার করতে হলো সংবাদকর্মীদের। ফলে সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টিই তাদের ‘অগ্নিশর্মা’ করে তুললেও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই অনুষ্ঠান ফেলে আসতে পারেননি সাংবাদিকরা।
শনিবার (২৫ মে) বিকেলে ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের এমন ক্ষোভ প্রত্যক্ষ করেছেন স্বয়ং সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অবশেষে তার হস্তক্ষেপে আরেকটি টেবিল জুটলেও স্থানীয়দের দখলে থাকা চেয়ারগুলোতে আর বসা হলো না তাদের।
ক্ষোভ জানিয়ে স্থানীয় ও ময়মনসিংহের সাংবাদিকরা বলেন, প্রতি বছরই মঞ্চের পশ্চিম পাশে সাংবাদিকদের জন্য চেয়ার ও টেবিলের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এ চেয়ার-টেবিলগুলো নিজেদের মত করে ব্যবহার করেন স্থানীয় লোকজন ও নেতাকর্মীরা। এতে সাংবাদিকদের দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
একাধিক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন অনুষ্ঠানের শেষ দিকে এসে খেই হারিয়ে ফেলেন। পুরো অনুষ্ঠানস্থলের বাকি সব কিছু ঠিক থাকলেও সাংবাদিকদের জায়গা নিয়ে তারা যেন একটু উদাসীন। যে জায়গাটিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় সেখানটাই রাখা হয় সাংবাদিকদের জন্য। আর যেটুকু রাখা হয় তাও থাকে অন্যদের দখলে।
এটি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি জেলা প্রশাসনের রীতিমত অবজ্ঞা আর অবহেলা বলে মনে করেন সংবাদকর্মীরা।
তারা বলেন, এত চমৎকার অনুষ্ঠান জাতীয় পরিমণ্ডলে উপস্থাপন করেন সংবাদকর্মীরা। এতে জেলা প্রশাসনের সুনাম-ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। কিন্তু যারা অকৃত্রিম মন নিয়ে কবি নজরুলের জন্য এ কাজটি করে চলেছেন তাদের জন্য প্রশাসনের এমন অবজ্ঞা প্রকারান্তরে কাণ্ডজ্ঞানহীনতারই শামিল।
কেন বারবার সংবাদকর্মীদের জন্য এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সেই উত্তর জানতে জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।