রাজশাহীতে প্রাণ-তীর-ড্যানিশসহ নিষিদ্ধ ৫২ পণ্যের ছড়াছড়ি



হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ পণ্যের কয়েকটি, ছবি: সংগৃহীত

আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ পণ্যের কয়েকটি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হাইকোর্ট কর্তৃক 'নিষিদ্ধ' ঘোষিত ৫২ ভেজাল পণ্যের ছড়াছড়ি রাজশাহীর দোকানগুলোতে। গত ১২ মে বাজার থেকে ১০ দিনের মধ্যে এসব পণ্য প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেওয়া হলেও এখনো দোকানগুলোতে মজুদ রয়েছে, চলছে বিক্রিও।

বুধবার (১৫ মে) দুপুর সাড়ে ১২টা। রাজশাহীর সাহেব বাজার ১নং গদির মোশাররফ হোসেনের দোকানে কেনাকাটা করতে এসেছেন সাগরপাড়া এলাকার মিলি বেগম। তিনি প্রাণের হলুদের গুঁড়া, কারি পাউডার, লাচ্ছা সেমাই, রূপচাঁদার সরিষার তেল ও মোল্লা সল্টের লবণ কিনে ব্যাগে ভরে রেখেছেন।

ভেজাল পণ্য

নিম্নমান ও ভেজাল হওয়ায় এসব পণ্য নিষিদ্ধ, তবুও কিনছেন কেন? এমন প্রশ্নে মিলি বেগম যেন আকাশ থেকে পড়েছেন! তিনি জানেনই না এসব পণ্য আদালত থেকে নিষিদ্ধ। সামনে দাঁড়ানো দোকান মালিক মোশাররফ হোসেনও দাবি করলেন, তিনি জানেন না কোন কোন পণ্য নিষিদ্ধ। ফলে আদালতের নির্দেশনার পরও দোকান থেকে সেগুলো সরানো হয়নি।

শুধু নগরীর সাহেব বাজারে নয়, নিউমার্কেট, লক্ষ্মীপুর, কোর্ট কাঁচাবাজার, বিনোদপুর, কাজলা, হড়গ্রাম বাজার ঘুরেও দেখা গেছে ভেজাল পণ্যের ছড়াছড়ি। অধিকাংশ ক্রেতা পণ্যগুলো সম্পর্কে জানেন না। অনেক বিক্রেতারও দাবি- তারা পণ্য নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি শুনেছেন, তবে সেটা কোন কোন পণ্য তা জানেন না। আবার অনেকে জানলেও লোকসানের ভয়ে ক্রেতাদের ধোঁকা দিয়ে নিম্নমানের নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রি করছেন।

প্রাণ-তীর-ড্যানিশসহ রাজশাহীর বাজারে নিষিদ্ধ ৫২ পণ্যের ছড়াছড়ি

নগরীর বড় বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ভেজাল ও নিম্নমান হওয়ায় আদালতে নিষিদ্ধ ৫২টি পণ্য দেদারছে বিক্রি করছেন দোকানিরা। প্রকাশ্যেই পণ্যগুলো দোকানে সাজিয়ে রেখেছেন।

পণ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ড্যানিশের হলুদের গুঁড়া, প্রাণের হলুদের গুঁড়া, তানভির ফুডের ফ্রেশের হলুদের গুঁড়া, এসিআইয়ের ধনিয়ার গুঁড়া, প্রাণের কারি পাউডার, ড্যানিশের কারি পাউডার, সিটি ওয়েলের তীর সরিষার তেল, গ্রিন ব্লিচিংয়ের জিবি সরিষার তেল, শবনমের পুষ্টি সরিষার তেল, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের রূপচাঁদা সরিষার তেল, প্রাণের লাচ্ছা সেমাই ও মোল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ।

প্রাণ-তীর-ড্যানিশসহ রাজশাহীর বাজারে নিষিদ্ধ ৫২ পণ্যের ছড়াছড়ি

নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকা থেকে সাহেব বাজারে কেনাকাটা করতে আসা তাশফিয়া আক্তার বলেন, 'এগুলো দীর্ঘদিন ধরে কিনছি। এখন শুনছি, পণ্যগুলো ভেজাল। তাহলে কিনব কোনটা? নামিদামি কোম্পানির পণ্য যদি ভেজাল হয়, তবে নাম না জানা কোম্পানির পণ্য কিনে কী ভালো মনে খাওয়া যাবে?'

শফিকুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ভেজাল হওয়ায় পণ্য নিষিদ্ধের বিষয়টি জেনেছি। তবে দোকানে আসলে কেনার সময় ভুলে যেতে হচ্ছে। আমি গতকালও রূপচাঁদার সরিষার তেল কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে বলল, এটা ভেজালের কারণে নিষিদ্ধ। পরে সেটা বাদ দিয়ে স্থানীয় ব্রান্ডের একটি সরিষার তেল কিনে নিয়ে গেছি।'

ভেজাল পণ্য

রাজশাহীর বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে তারা দেখেছেন, ৫২টি পণ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেগুলো আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাজার থেকে সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে। তবে কোন কোম্পানির, কি কি পণ্য তা পরিষ্কার করে কিছু জানেন না। সরকার বা কোম্পানির পক্ষ থেকেও তাদেরকে কিছু জানানো হয়নি। তাই তারা বিক্রি বন্ধও করেননি।

নগরীর ‘শাহ আলম অ্যান্ড সন্স’ এর মালিক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘৫২টি পণ্য আদালত বাতিল করছেন, তা আমরা শুনেছি। তবে পরিষ্কার কোনো নির্দেশনা আমরা এখনও পাইনি। তাই কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।’

প্রাণ-তীর-ড্যানিশসহ রাজশাহীর বাজারে নিষিদ্ধ ৫২ পণ্যের ছড়াছড়ি

পিএনপি টেডার্সের মালিক বিদ্যা প্রসাদ বলেন, 'বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। তবে নামিদামি কোম্পানির পণ্য যে ভেজাল, তা আমাদের অবাক করেছে। বুঝে উঠতে পারছি না, এগুলো বাতিল হবে নাকি আবার সবাই বেচতে পারবে। যদি কদিন বাদে সব ঠিকঠাক হয়ে যায়, তবে আমার কেনা পণ্য সরিয়ে ফেললে আমিই লোকসানে পড়ব। তাই এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।'

নগরীর হড়গ্রামের শামীম ভ্যারাইটি স্টোরের মালিক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘কতকিছুই তো নিষিদ্ধ হয়, পরে আবার ঠিক হয়ে যায়। এবারও তাই হবে। টাকা দিয়ে কোম্পানির কাছ থেকে পণ্য কিনেছি। ফেলে দিলে তো আমারই লস (ক্ষতি)। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়!’

বিনোদপুর বাজারের রহমান সন্স মালিক আব্দুর রহমান বলেন, 'যে ৫২টি পণ্য আদালত নিষিদ্ধ করেছে, রাজশাহীর বাজারে তার ২০/২২টি চলে। অন্যগুলো বাজারে নেই বললেই চলে। কেউ কিনতেও চাই না। মূলত প্রাণ, রূপচাঁদা, এসিআই, পুষ্টি, ফ্রেস ও ড্যানিশের পণ্যগুলো বাজারে চলত। সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। আমি দ্রুত সেগুলো সরিয়ে নেব।' আদালতের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদও জানান তিনি।

প্রাণ-তীর-ড্যানিশসহ রাজশাহীর বাজারে নিষিদ্ধ ৫২ পণ্যের ছড়াছড়ি

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন বাজারে দিনভর অভিযান পরিচালনা করছে। জরিমানা করছে, সকলকে সতর্ক করছে। গণমাধ্যমেও বিষয়টি ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। সবাই বিষয়টি এরই মধ্যে অবগত হয়েছেন বলেই আমার বিশ্বাস। তবুও কেউ কেউ যদি দাবি করে থাকে, তারা এখনও জানেন না। তবে বিষয়টি অবগত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রশাসন চেষ্টা করে যাচ্ছে, এখানে যারা ক্রেতা সেই সাধারণ মানুষকে সচেতন এবং বিক্রেতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। একজন নাগরিক হিসেবে ন্যূনতম দায়িত্বশীল হলে ভেজাল ও নিম্নমানের এসব পণ্য কেউ বিক্রি করবে না বলে আমার বিশ্বাস।'

   

মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে পিতার মৃত্যুদণ্ড



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে পিতার মৃত্যুদণ্ড

মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে পিতার মৃত্যুদণ্ড

  • Font increase
  • Font Decrease

১৪ বছরের কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় পিতাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-৪ এর বিচারক শাহরিয়ার কবির এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

রায় ঘোষণার আগে আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর আসামিকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী কিশোরী বাবার সঙ্গে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকায় বসবাস করত। কিশোরীর মা বিদেশে থাকতেন।

২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বাসায় ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে তার বাবা। এই ঘটনায় ওই কিশোরী বাদী হয়ে রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেন।

পরবর্তীতে আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর আসামি মেয়েকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।

রায় ঘোষণার আগে মামলায় ছয় জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত।

;

সাতক্ষীরায় পিলারে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, চালক নিহত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সাতক্ষীরায় বাইপাস সড়কের ধারে পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে রাজমোহন দাস (৩৫) এক মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল দশটার দিকে সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কে এই ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম। 

নিহত রাজমোহন সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার রাজেন্দ্রপুর গ্রামের প্রভাত কুমার দাসের ছেলে।

পুলিশ জানায়, রাজমোহন দাস মোটরসাইকেলে সাতক্ষীরা থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বেলা দশটার দিকে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কের ধারে থাকা একটি পিলারের সাথে সজোরে ধাক্কা লাগে। এতে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে রাজমোহন দাস ঘটনাস্থলে নিহত হন।

 

;

একটা রিকশার আক্ষেপে ২৫ বছর পার



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪ কম, কটিয়াদী ( কিশোরগঞ্জ)
একটা রিকশার আক্ষেপে ২৫ বছর পার

একটা রিকশার আক্ষেপে ২৫ বছর পার

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র দাবদাহ ও কাঠফাটা রোদে রাস্তার মোড়ে মাথায় হাত দিয়ে বসা এক রিকশাচালক। টপটপ করে ঘাম ঝরছে। বারবার মাথার ঘাম গামছা দিয়ে মোছার চেষ্টা করছেন। গরমের কারণে রাস্তায় তেমন লোকজন নেই। রিকশাচালক গোলাপ মিয়ার মাথায় চিন্তার ভাঁজ। একদিকে রিকশার ভাড়ার চাপ, আরেকদিকে সংসার চালানো।

দিনটা পার হলেই রিকশার ভাড়া দিতে হবে, তিনশো টাকা৷ সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে দুপুর একটা পর্যন্ত তার উপার্জন মোট আশি টাকা। রাতে রিকশার মহাজনকে যেভাবেই হোক টাকা দিতেই হবে। উপার্জন হোক বা না হোক এ-টাকা তাকে দিতেই হবে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে তার।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পৌরবাজারে দেখা মিলেছে এমনই এক রিকশারচালকের৷ তার নাম গোলাপ মিয়া (৪০)। পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউপির পূর্ব বীরগাঁও গ্রামের মাঝিবাড়ির বাসিন্দা তিনি।

এলাকাবাসী ও রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্ত্রী দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার গোলাপ মিয়ার। মেয়ে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বাকিরাও স্কুলে লেখাপড়া করছে। ছেলেমেয়েরা সবাই মেধাবী। লেখাপড়ায় তারা আগ্রহী। তীব্র অভাব অনটনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এলাকাবাসী জানান, গোলাপ খুবই সহজ সরল ও পরিশ্রমী মানুষ। নিয়মিত নামাজ পড়েন। নিজস্ব থাকার নিজস্ব কোন জায়গা নাই। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় ভালো। অভাবের কারণে খাবার জোটানো কঠিন। লেখাপড়ার খরচ তাদের জন্য যুদ্ধ করার মতো কষ্ট হচ্ছে। তার নিজস্ব একটা গাড়ি হলে পরিবার নিয়ে উপার্জন করে ভালোভাবে চলতে পারতেন বলে ধারণা তাদের।

রিকশাচালক গোলাপ মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, সংসার নিয়ে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছি। ভাত জোটানো যেখানে দায় সেখানে লেখাপড়া কীভাবে করাব বলেন? তবুও সন্তানের মুখের দিকে তাকালে মনডা মানে না আর, তাদের আবদার রাখতে পারি না।

তিনি আরও জানান, একটা আনলে আরেকটা বাকি থাকে। আমার নিজস্ব একটা প্যাডেলের রিকশা ছিল। ২৫ বছর আগে চিকিৎসার খরচ আর তীব্র অভাবে বিক্রি করেছিলাম। পরে আর কেনার সাধ্য হয়নি। একটি অটোরিকশা হলে সংসারটা চালাতে পারতাম। বাড়িটাও ঝুপড়ি ঘর, বৃষ্টি আসলেই ভিজতে হয়; এভাবেই চলছি।

;

কুষ্টিয়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত ৪



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুষ্টিয়ায় আধিপত্য বিস্তার ও মসজিদ কমিটি কে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে চারজন আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাতে সদর উপজেলার ইবি থানার উজানগ্রাম ইউনিয়নের বিত্তিপাড়া গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন- উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের বিত্তিপাড়া গ্রামের মৃত কলিল মন্ডলের ছেলে জাহিদুর মন্ডল (৫৫), মৃত ফকির মন্ডলের ছেলে মনি মন্ডল (৬০), মৃত মকবুল মন্ডলের ছেলে খালেক মন্ডল (৫৫) ও মৃত আহসান আলীর ছেলে আক্কাস মন্ডল (৫০)।

আহতরা সবাই উজানগ্রামের বিত্তিপাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন মেম্বারের সমর্থক।

আহতরা জানান, মাগরিবের নামাজের পরে বিত্তিপাড়া তেল পাম্পের নিকটে মোহিদের দোকানে বসে চা পান করছিলেন তারা। হঠাৎ করে উজানগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কার সিদ্দীক ও তার লোকজন তাদের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে , বিত্তিপাড়া গ্রামে প্রভাব বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের বিরোধ অনেক পুরনো। একপক্ষে নেতৃত্ব দেন উজানগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কার সিদ্দীক এবং অপরপক্ষে বিত্তিপাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন মেম্বার।

বুধবারের এই ঘটনার আগে গ্রামের ঈদগাহ কমিটি নিয়ে এই দুপক্ষের মতানৈক্য চলছিল। এর আগে ঈদের (ঈদুল ফিতর) নামাজের পর বসে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু ১১ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে গোশত কিনতে গিয়ে দু’পক্ষের কর্মী রশিদ ও জামালের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়।

এরপর ঈদগাহে আসার পথে বক্কার গ্রুপের লোকদের মারধর করা হয়। পরে সাড়ে ৮টার দিকে ঈদগাহের দখল নিয়ে দুপক্ষের তুমুল সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষে বক্কার গ্রুপের যোয়াদ মণ্ডল, আব্দুল্লাহ, শাহীন ও বাবু এবং হোসেন মেম্বার গ্রুপের রাজা ও মিন্টু আহত হন। পূর্বের ঘটনার জেরে সর্বশেষ এই ঘটনা ঘটেছে।

সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ৪, ৫, ৬ ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার মোছা. শারমিন আক্তার জানান, ‘আমার মাধ্যমে জেলা পরিষদ থেকে বিত্তিপাড়া জামে মসজিদের গেইটের জন্য এক লক্ষ টাকা অনুদান পাই। পরবর্তীতে আবু বক্কার সিদ্দীক মসজিদে গিয়ে দাবি করেন, তিনি এ টাকা জেলা পরিষদ থেকে নিয়ে এসেছেন, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। সে সময় তিনি দাবি করেন তাকে মসজিদ কমিটির সভাপতি বানাতে হবে। এই নিয়ে মসজিদে মধ্যে হট্টগোল বাঁধে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর হোসেন মেম্বারের লোকজন বাজারে গোশত কিনতে আসে। লোক মুখে শুনেছি, তখন সরদার পাড়ার জামাল পাগল অর্থাৎ জামাল খোড়া হোসেন মেম্বারের এক সমর্থককে মারধর করে। পরবর্তীতে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেই সংঘর্ষে ৭ জন আহত হয়। ওই মারামারি ঘটনা সমাধান না হওয়ার জের ধরে বুধবার অতর্কিতভাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বাক্কার সিদ্দীকের সমর্থকরা হোসেন মেম্বারের সমর্থকদের উপর এই হামলা চালিয়েছে।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘জেলার শীর্ষ নেতারা উভয় পক্ষের লোকজনদের এক জায়গায় বসিয়ে এই মারামারি, এই সংঘর্ষ পুনরায় যাতে না হয়, সে বিষয়ে একটি সমাধান করে দেবেন। আমরা গ্রামের শান্তি চাই।’

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মামুন রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ জন অহত হয়েছে। বর্তমানে তারা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বিত্তিপাড়া গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

;