ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবিলায় চলছে প্রস্তুতি
ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ফণী’র প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমেই শক্তি সঞ্চার করে অগ্রসর হতে থাকায়, দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মাছ ধরার নৌযানগুলোকে উপকূল নিকটবর্তী এলাকায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় ফণী এখনো চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। তবে এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার থেকে ঝড়ো হাওয়া ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে হালকা-মাঝারি ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে শুরু করলেও আকাশ এখনো পরিষ্কার রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফোনির আঘাত হানার সম্পর্কে সতর্কতা ও প্রস্তুতি গ্রহণ কার্যক্রম শুরু করেছে মংলা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, পায়রা বন্দর ও পৌর কর্তৃপক্ষ এবং উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) সদস্যরাও প্রস্তুত রয়েছে।
সিপিপির সহকারী পরিচালক মেসপাউর রশীদ বলেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি এখনো বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। তাই উপকূলবাসীদের এখনো আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ৪০টি উপজেলায় আমাদের সদস্যদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক শেষ হয়েছে। আমরা প্রস্তুত আছি। ঘূর্ণিঝড়ের উপর ভিত্তি করে আমাদের সেচ্ছাসেবকসহ প্রশাসন কাজ শুরু করবে। সরকারের নির্দেশনা পেলে উপকূলবাসীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।’
সচিবালয় মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঘূর্ণিঝড় ফণী’র বিষয়ে জরুরি প্রস্তুতি সভায় আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার কিলোমিটার দূরে বর্তমানে গভীর সমুদ্রে অবস্থান করছে। এটি যদি গভীর সমুদ্র থেকে সরাসরি মংলা হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানে, তাহলে ভয়াবহ ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। আর যদি এটি ভারতের পশ্চিম বঙ্গ এবং ওড়িশা হয়ে আমাদের দেশে আসে তাহলে তা অনেকটাই হালকা হয়ে যাবে। এতে ক্ষতির শঙ্কা কম থাকবে।’
সভায় দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের খুলনা, ‘সাতক্ষীরা রংপুর হয়ে দিনাজপুরের দিকে যেতে পারে। একই সঙ্গে কক্সবাজার ও চট্রগ্রামে আঘাত হানতে পারে। তবে ফনি ৪ মে সকাল নাগাদ আঘাত হানতে পারে।’
ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতির বিষয়ে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার দুরুল হুদা বলেন, `যেহেতু ঝড়টি এখনো বেশ দূরে রয়েছে। তারপরও আমরা ঝড়ের গতিবিধি মনিটরিং করছি। বুধবার বন্দরে বিদেশি জাহাজ আগমন ও নির্গমন এবং অবস্থানরত জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস কাজ স্বাভাবিক রয়েছে। সকল সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যারা দূরে আছে তাদেরকেও বিকেলের মধ্যে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে। মংলার ৭৮টি সাইক্লোন শেল্টার ছাড়াও বহুতল ভবনগুলোকেও আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার, পর্যাপ্ত শুকানো খাবার ও ওষুধ মজুদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় রামপাল উপজেলা পরিষদেও জরুরি সভা ডাকা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের প্রস্তুতি বিষয় তুলে ধরেন জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের চার নম্বর সতর্কতার পর আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সিভিল সার্জনকে পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স,মেডিকেল টিম এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা। চট্টগ্রাম বন্দর এবং নৌযান শ্রমিকদের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থান, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশকে যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো.আশরাফুল আবছার বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে। একইভাবে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সব সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোকেও। পাশাপাশি উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের কথা বিবেচনা করে কক্সবাজার ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে আলাদাভাবে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।’