মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে
সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণ কাজ। মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের অগ্রগতি হলেও তা আশানুরূপ নয়।
সবশেষ গত বছরের জুনে ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং টাস্ক ফোর্সের সভায় প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছিল। অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হয়নি। জাপানের প্যাসিফিক কনসালট্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড প্রকল্পের সার্ভে সম্পন্ন করেন।
ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং টাস্ক ফোর্সের সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী সংস্থা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ১১টি প্রকল্পের মধ্যে অধিকাংশেরই অগ্রগতি হয়েছে। কোনো কোনোটি অনেক দূর এগিয়েছে। এসব মেগা প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ীই বাস্তবায়ন হবে।
পদ্মা সেতু
জানুয়ারি পর্যন্ত মূল সেতু নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬৩ শতাংশ। এছাড়া নদীশাসন কাজ হয়েছে ৫০ শতাংশ। জাজিরা প্রান্তে অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ ১০০ ভাগ, মাওয়া প্রান্তে অ্যাপ্রোচ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া-২ এর কাজ শতভাগ, মূল সেতুর কাজ হয়েছে ৭৩ শতাংশ। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার মধ্যে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৮ হাজার ৩৯ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম বলেন, এখনও আমি আশাবাদী, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করা যাবে।
পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ
প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ২৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হচ্ছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটি চীন সরকারের অর্থায়নে জি টু জি পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ঠিকাদারের ডিজাইনিং চূড়ান্ত না হওয়ায় ও ভূমি জমিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ব্যয় কম হচ্ছে, বিধায় প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
দ্বিতীয় পর্যায়ে মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে খরচ হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। শুরু থেকে গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬ হাজার ৬৫১ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা। আথিক অগ্রগতি ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত দু’টি চুক্তির আওতায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। প্রকল্পটির আওতায় ১২০০ মেগাওয়াটের দুইটি ইউনিটের মাধ্যমে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। প্রকল্পের মূল কাজ ৩৪৪টি অংশে ভাগ করে কাজ হচ্ছে।
মেট্রোরেল
ইতোমধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ২৬ দশমিক ২০ শতাংশ। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের শুরু থেকে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬৯৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে উত্তরার উত্তরাংশ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত লাইনের নয়টি ষ্টেশন স্থাপনের কাজের ৩০ দশমিক ৭৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক, মতিঝিল পর্যন্ত লাইনের সাতটি ষ্টেশন নির্মাণের কাজ মাত্র তিন শতাংশ শেষ হয়েছে।
মৈত্রী সুপার থারমাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল)
এ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ, আর আর্থিক অগ্রগতি ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ। ইপিসি কাজ ২৭ শতাংশ হয়েছে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও ভরাটের কাজ সম্পূর্ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা, এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে তিন হাজার ৬৪৭ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র
প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২১ দশমিক ৮০শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২১ দশমিক ১৫ শতাংশ। প্রকল্পের জন্য দেড় হাজার একর জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭ হাজার ৫২৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর
এ বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা খরচে একটি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি যথাক্রমে ৪০ দশমিক ৫৫ শতাংশ ও ৩৮ দশমিক ১৮ শতাংশ।
এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ
এ প্রকল্পটি বিল্ড ওন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (বিওওটি) পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গত বছরের ১৯ আগষ্ট টার্মিনাল অপারেশন শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে মহেশখালী-আনোয়ারা, আনোয়ারা-ফৌজদারহাট এবং চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস পাইপলাইন মাধ্যমে গ্যাস দেওয়া শুরু হবে।
ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ
এ প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২০ দশমিক ১০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের ভূমি অধিগ্রহণের বাস্তবায়নের হার ৯৮ শতাংশ ও ভৌত নির্মাণ ২২ শতাংশ। অস্থায়ী পিলার দ্বারা দোহাজারী কক্সবাজার সেকশনে রেলপথের সীমানা চিহ্নিতকরণ ৮৬ শতাংশ, পরামর্শক সেবা- সুপারভিশন ১৯ শতাংশ। আর পরামর্শক অগ্রিম ১০০ শতাংশ এবং রিসেটেলমেন্ট কার্যক্রম সম্পাদন ১০ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৩৪৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা ।
আরও ১১টি মেগা প্রকল্পের পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়নি। এ প্রকল্পগুলো হচ্ছে- চিটাগাং জেটি নির্মাণ প্রকল্প, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য রাস্তা নির্মাণ, বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প, ইকো টুরিজম পার্ক এবং ইকোনমিক জোন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ডাবল পাইপ লাইন প্রকল্প, পিডিবির ১০ হাজার মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্প, জাপানের মিৎসুই কোম্পানির বাস্তবায়ন জন্য ১৩২০ মেগাওয়াট কোলব্যাস পাওযার প্লান্ট, আর একই জাপানি কোম্পানির বাস্তবায়নের জন্য ৭০০ মেগাওয়াট এলএমজি পাওয়ার প্লান্ট, জাপানের সুমিটোম কোম্পানির বাস্তবায়নের জন্য ১২০০ মেগাওয়াট কোল পাওয়ার প্লান্ট, পিপিজি সিবিএল দ্বিতীয় ফেজ ১২০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্প এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম কোল বেস পাওয়ার প্লান্ট ফিজিবিলিটি স্টাডি।