বগুড়ায় এক কিশোরকে আটকে রেখে নির্যাতন করে তার পরিবারের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা চাঁদা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে শিবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আইনুল হকের বিরুদ্ধে। আহত অবস্থায় ওই কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর এসআই আইনুল চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন।
তবে এসআই আইনুল হক টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন পুলিশের সাথে উচ্চ বাচ্য করায় চড় থাপ্পড় দিয়েছি। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মত কিছু না।
আর শিবগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রউফ বলেছেন, এসআই আইনুলের মাথার (ব্রেইনের) সমস্যা রয়েছে।
নির্যাতনের শিকার শাকিল আহম্মেদ (১৭) শিবগঞ্জ থানার আটমুল ইউনিয়নের ভায়ের পুকুর মন্ডলপাড়া গ্রামের ছাকরাম হোসেনের ছেলে।
বুধবার ( ১৭ এপ্রিল) শিবগঞ্জ থানার কিচক বাজারে ছাকরাম হোসেনের রিকশা ও সাইকেলের খুচরা যন্ত্রাংশের দোকানে আটকে রেখে তার ছেলেকে নির্যাতন করা হয়।
ছাকরাম হোসেন বলেন, বুধবার সকাল ১০টার দিকে এসআই আইনুল তার দোকানে যান। এসময় তিনি জয়পুরহাটে ব্যবসায়িক কাজে অবস্থান করছিলেন। দোকানে তার ছেলে ও কর্মচারী ছিল। এসআই আইনুল দোকানে গিয়ে একটি মোটরসাইকেল দেখে সেটি চোরাই বলে থানায় নিয়ে যেতে চায়। পরে তার ছেলে বাড়ি থেকে কাগজপত্র এনে দেখানোর পর এসআই আইনুল বলেন দোকানের মালামাল ভারত থেকে চোরাই পথে আনা হয়েছে। বিষয়টি তার ছেলে মোবাইল ফোনে ছাকরাম হোসেনকে জানালে তিনি এসআই আইনুলের সাথে কথা বলেন।
এসআই আইনুল সেসময় দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বলেন, টাকা না দিলে দোকানের মালামাল থানায় নিয়ে ভারতীয় মালামাল হিসেবে মামলা দিব। এ নিয়ে তার ছেলের সাথে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে ছেলেকে দোকানে আটকে রেখে লোহার পাইপ দিয়ে মারধর শুরু করে। ছাকরাম হোসেন বলেন, ছেলেকে মারধরের খবর পেয়ে আমার স্ত্রী লাভলী বেগম বাড়ি থেকে ৬০ হাজার টাকা এবং দোকানের মালামাল কেনার মেমো নিয়ে কিচক বাজারে এসে দোকানে এসআই আইনুলকে দেন।
দুপুর দুইটার দিকে এসআই আইনুল ৬০ হাজার টাকা নিয়ে দোকান থেকে চলে যান। এদিকে নির্যাতনে শাকিল আহম্মেদ অসুস্থ হয়ে পড়লে বুধবার সন্ধ্যার পর তাকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্সরিল) সকালে খবর পেয়ে এসআই আইনুল হাসপাতালে গিয়ে শাকিল আহম্মেদকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে হাত ও পায়ের এক্সরে করান। পরে ওষুধ কিনে দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন এবং যাবতীয় চিকিৎসা খরচ বহন করার প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়াও ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য অনুরোধ করেন।
এবিষয়ে এসআই আইনুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কিচক বাজারে আসামি ধরতে গেলে ছাকরামের দোকানে যাই। সেখানে তার ছেলে আমার সাথে উচ্চ বাচ্য করে। একারণে চড় থাপ্পর দিয়েছি। তবে কোন টাকা নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, শাকিল আহম্মেদের বাবাকে ফোন করে বলেছি চড় থাপ্পর দেয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করানোর কারণ কি? এতে তারা স্বেচ্ছায় হাসপাতাল থেকে চলে গেছে।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, শাকিল আহম্মেদের নির্যাতন করে ৬০ হাজার টাকা আদায়ের বিষয়টি জানা নাই। তবে এসআই আইনুল হকের মাথার সমস্যা আছে উল্লেখ করে ওসি বলেন, ২০২৩ সালের প্রথম দিকে তিনি রাজশাহী জেলার চারঘাটে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে মারামারি করে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। সেই সময় তার নামে চারঘাট থানায় মামলা হয়।
তিনি পাঁচ মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। যে কারণে বেশকিছুদিন সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন। ওই ঘটনায় তার নামে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। জমিজমা নিয়ে গ্রামে মারামারি করে মাথায় আঘাত পাওয়ার পর থেকেই তার ব্রেইনে (মাথায়) সমস্যা দেখা দেয়। তবে শাকিল আহম্মেদের বিষয়টি কেউ অভিযোগ না করলেও অনুসন্ধান করে সত্যতা পাওয়া গেলে এসআই আইনুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।