ঐতিহ্যের বাহনে জীবিকা
আগেকার দিনে যুদ্ধের ময়দানের প্রধান বাহন ছিল ঘোড়া। এছাড়াও আগে জমিদার থেকে শুরু করে রাজা-বাদশা আর রাজপরিবারের সদস্যদের প্রধান বাহন ছিল ঘোড়ার গাড়ি। স্বল্প পরিসরে ভ্রমণ বিলাসীদের কাছে ঘোড়ার গাড়ির জনপ্রিয়তা থাকলেও বর্তমানে তা শূন্যের কোঠায়। শখের বশে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখন ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয়। তবে দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়েছে ঘোড়ার এ ব্যবহার।
তবুও ঐতিহ্যবাহী এ বাহনে জীবন-জীবিকার সন্ধান করছে খুলনার কিছু মানুষ। পৈত্রিক সূত্রে আদি আমল থেকে ঘোড়ার গাড়িই তাদের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন।
আধুনিক বিশ্বের দ্রুতগামী সব যানের মাঝেও ঘোড়ার এ গাড়িতে দৈনন্দিন মালামাল বহন থেকে শুরু করে ভাড়া দেয়া হচ্ছে দৈনিক হিসেবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, খুলনার ডুমুরিয়া অঞ্চলের ঘোড়ার গাড়ির মালিকরা অমসৃণ মাটির রাস্তা দিয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ মণ ওজনের কাঠ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন মালামাল বহন করছে। স্থানীয় পাইকারি বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ঘোড়ার গাড়িতে বহন করে তারা বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে। এতে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্তও আয় করছে তারা। যেসব রাস্তায় যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করা খুবই কষ্টকর সেখানেই মূলত ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয়।
স্থানীয় ঘোড়ার মালিক ফারুক শেখ বার্তা২৪.কমকে জানান, ঘোড়া নিয়ে সব জায়গা থেকেই সহজে মাল টানা যায়। একটি ঘোড়া একবারে ২০ থেকে ২৫ মণ মাল টানতে পারে। তাই ঘোড়া দিয়ে মাল টেনে লাভ হয় অনেক।
আরেক মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘অল্প টাকায় ঘোড়া কিনে আস্তে আস্তে বড় করি। তিন-চার বছর হলে ঘোড়া দিয়ে মাল টানাই। বিভিন্ন ফসলের মৌসুমে ঘোড়ার চাহিদাও বেড়ে যায়।’
তিনি আরও জানান, একটি ঘোড়া দিয়ে ৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত মালামাল টানা যায়। ঘোড়াকে খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিন ২শ থেকে ২৫০ টাকা খরচ হয়। ৩০ বছর ধরে এ ঘোড়ার গাড়ির জীবিকার উপরে নির্ভরশীল তিনি।
জীবিকা নির্বাহে ব্যবহৃত ঘোড়ার এ গাড়িকে স্থানীয়ভাবে টঙ্গা বলা হয়। একটি ঘোড়া কিনতে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্তও ব্যয় হয়।