নিষেধাজ্ঞার পরও মহাসড়কে ইজিবাইক, বাড়ছে দুর্ঘটনা
কক্সবাজার: কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এখন আতঙ্কের নাম হচ্ছে ইজিবাইক (টমটম) ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। এ দুইটি যানকে মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটার প্রধান কারণ হিসেবে দেখছে অনেকে। আর এসব ইজিবাইকের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সারি লম্বা হচ্ছে। সম্প্রতি মহাসড়ক থেকে ইজিবাইক সরিয়ে নিতে গিয়ে প্রভাবশালীদের তোপের মুখে পড়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, গত ২ সপ্তাহে কক্সবাজার মহাসড়কের লিংরোড থেকে চকরিয়ার বড়তলী পর্যন্ত এলাকায় ৭ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ১৮ যাত্রী। যার বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে ইজিবাইকের সঙ্গে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত দুই শতাধিক যাত্রী। মামলা হয়েছে ৭টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে চালক, মালিক ও হেলপারকে।
এরমধ্যে গত বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মহাসড়কের চকরিয়ার হারবাং অংশে টমটম-কাভার্ড ভ্যানের সংঘর্ষে নারীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- হারবাং মুসলিমপাড়ার আব্দুস সাত্তারের ছেলে তাজ উদ্দিন (৩২), পেকুয়ার রাজাখালী এলাকার রফিক আহমদের ছেলে মো. ইউনূছ (৩৭) ও আবু তাহের (৫৫)। অপরজনের নাম পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
গত মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ার বড়ইতলী অংশে বাস-লেগুনা সংঘর্ষে নারীসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ইজিবাইক দুর্ঘটনায় আরও ৬ যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
তবে অভিযোগ রয়েছে, এসব ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে মালিক ও শ্রমিক নেতাদের একটি সিন্ডিকেট টোকেনের মাধ্যমে প্রতিদিন গাড়ি প্রতি ১০ টাকা, স্থানীয় পুলিশের জন্য মাসিক ৫০ টাকা, হাইওয়ে পুলিশের টোকেন বাবদ ৩০০ টাকা, ভর্তি বাবদ ১০০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইজিবাইক চালক অভিযোগ করে বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রতিদিন মালিক সমিতিকে ১০ টাকা দিয়ে টোকেন নিতে হয়। এই টোকেন নিয়েই গাড়ি চালাতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালিক ও শ্রমিক সমিতির এক নেতা বার্তা২৪.কমকে জানান, মালিক ও শ্রমিক সমিতির নামে আদায়কৃত এই টাকার একটি বিশাল অংশ পুলিশ প্রশাসন পেয়ে থাকে। তার হিসাব মতে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা চাঁদা আদায় হয়ে থাকে। এছাড়াও প্রতিটি ইজিবাইক নামানোর সময় সমিতিকে ১ হাজার টাকার পাশাপাশি বিভিন্ন অজুহাতে মাসিক দুই/তিন কিস্তিতে টাকা দিতে হয়।
এদিকে আরকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, ছোট যানবাহনে ভরে গেছে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। ছোট যানবাহন যেখানে সেখানে গাড়ি থামালেই দুর্ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি এসব যানবাহনের চালকরা অদক্ষ হওয়ায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। মহাসড়কের ঘোষণা অনুযায়ী যদি ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ হয় তাহলে এ দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।
তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের কারণে মহাসড়ক থেকে ইজিবাইক নির্মূল করা যাচ্ছে না। কারণ কোনো গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রভাবশালীরা।
চিরিংঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে জানান, তার এলাকায় প্রায় ৩০টির মতো উপ-সড়কের পয়েন্ট রয়েছে। এসব উপ-সড়কে চলাচলরত ইজিবাইক হঠাৎ মহাসড়কে উঠে পড়লে ঘটছে দুর্ঘটনা।
মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আলমগীর হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এসব গাড়ির বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। ইতোমধ্যে অর্ধ-শতাধিক ইজিবাইক ও সিএনজি মহাসড়কের পাশে ফেলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু অভিযান এক পাশে চললেও সিন্ডিকেটের লোকজন অন্য পাশে ইজিবাইক চালাচ্ছে। এতেই দুর্ঘটনা ঘটছে।’
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামু তুলাবাগান হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজাহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, যে সব এলাকা থেকে অভিযোগ আসছে সেখানে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু এতো মামলা দেয়ার পরও ইজিবাইকের চালকরা মহাসড়কে চলে আসছে।
উল্লেখ, তিন চাকার যানবাহন অটোরিকশা, অটোটেম্পু ও লেগুনা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন সরকার। কিন্তু কোনো ভাবেই তা মানছে না চালকরা। এসব গাড়ি জব্দ করতে গেলে হাইওয়ে পুলিশকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করে প্রভাবশালীরা।