ফলোঅনের ফাঁদে জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশের চোখে জয়ের স্বপ্ন
দিনের মাঝামাঝি সবাই হিসেব মেলাচ্ছিলেন আর কতো রান হলে জিম্বাবুয়ে ফলোঅন এড়াতে পারবে? শেষ সেশনে ব্রেন্ডন টেলরের সেঞ্চুরির পর সেই হিসেবে কিছুটা বদল এলো। মনে হচ্ছিলো ফলো অনের শঙ্কা কাটিয়ে ঢাকা টেস্টে নিরাপত্তা খুঁজে পেয়েছে জিম্বাবুয়ে। কিন্তু মেহেদি মিরাজের একওভারে সেঞ্চুরিয়ান টেলর ও স্পিনার মাভুতার আউটের পর জিম্বাবুয়ে ফের নিরাপত্তাহীনতায় পড়লো; ফলো অন চোখ রাঙালো। শেষমেষ জিম্বাবুয়ে ফলো অন এড়াতে পারলো না। দিনের খেলা শেষ হওয়ার ২.৩ ওভার আগেই জিম্বাবুয়ের ইনিংস ৯ উইকেটে ৩০৪ রানে থেমে গেল। ইনজুরিতে থাকায় ব্যাটিংয়ে নামতেই পারেননি টেন্ডাই চাতারা। ফলো অন এড়াতে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিলো ৩২৩ রানের। সেই লক্ষ্য থেকে ১৯ রান দুরে থেমে গেল জিম্বাবুয়ের ইনিংস। জিম্বাবুয়েকে ফলো অনে পাঠাবে বাংলাদেশ, নাকি নিজেরাই নামবে দ্বিতীয় ইনিংসে সেটা জানা যাবে চতুর্থদিনের সকালে। তৃতীয়দিন শেষে ম্যাচে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিলো ২১৮ রানে। এই টেস্টে এখন বাংলাদেশের চোখে জয়ের স্বপ্ন আরো সবুজ।
তৃতীয়দিনের তিন সেশন তিনভাবে কাটলো জিম্বাবুয়ের। সকালের প্রথম সেশনে ব্যাটিং- বোলিংয়ের সন্মান ভাগাভাগি। জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা জমা করলো ৭৫ রান। বাংলাদেশ স্পিনে তুলে নিলো ২ উইকেট। দুপুরের দ্বিতীয় সেশনের পুরোটাই জুড়ে জিম্বাবুয়ের দাপট; এই সময়ে তারা যোগ করলো ৯৫। কোন উইকেট পড়লো না। বিকালের সেশনে ১০৯ রান যোগ করলেও জিম্বাবুয়ে হারায় ৪ উইকেট। রান অনেক জমা করলেও ফলো অন এড়ানোর জন্য সেটা যথেস্ট ছিলো না। এই সেশনের ‘বিজয়ী’ বাংলাদেশ।
সারাদিনের ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব পাচ্ছেন ব্রেন্ডন টেলর। ১৯৪ বলে তার ১১১ রান করেন জিম্বাবুয়ের সাবেক এই অধিনায়ক। আর বোলিংয়ে সিলেট টেস্টের মতো ঢাকা টেস্টেও একচ্ছত্র আধিপাত্য দেখালেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ১০৭ রান শিকার করলেন ৫ উইকেট। সঙ্গী স্পিনার মেহেদি মিরাজ পান ৩ উইকেট। সিলেট টেস্টের উভয় ইনিংসে পাঁচ বা তার চেয়ে বেশি উইকেট লাভের কৃতিত্ব দেখান তাইজুল। ঢাকায়ও সেই ফর্ম ধরে রাখলেন। টানা তিন টেস্ট ইনিংসে পাঁচ বা তারচেয়ে বেশি উইকেট শিকারি তাইজুল এখন আরেকটি রেকর্ডের সামনে। দুই টেস্টের সিরিজে সবচেয়ে বেশি ১৯ উইকেট শিকারের মেহেদি মিরাজের রেকর্ড স্পর্শ করতে তাইজুলের চাই আর মাত্র ৪ উইকেট। রেকর্ড গড়ার জন্য জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংস তো পাচ্ছেন তাইজুল!
পিটার মুরস ও ব্রেন্ডন টেলর দিনের দ্বিতীয় সেশনের পুরোটাই ব্যাটিংয়ে দাপিয়ে বেড়ালেন। মুরস খেললেন পুরোপুরি ওয়ানডে স্টাইলে। ৫৮ বলে এই সেশনে তার জমা অপরাজিত ৪৪ রান। হাফসেঞ্চুরি পেরিয়ে গেছেন টেলরও। শেষ সেশনে দুজনে যেভাবে খেলছিলেন তাতে মনে হচ্ছিলো এই ইনিংসে তারা বাংলাদেশের মমিনুল-মুশফিক জুটির মতো কিছুটা একটা করতে চলেছেন। তবে ব্রেন্ডন টেলর সেঞ্চুরি পেলেও পিটার মুরস আরেকবার টেস্ট সেঞ্চুরির অপেক্ষা বাড়িয়ে ফিরলেন। আরিফুল হক ম্যাচে নিজের প্রথম ওভারেই মুরসকে এলবিডবøুর ফাঁদে ফেলেন। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি মুরসের। ১১৪ বলে ৮৩ রানে শেষ হার তার ইনিংস। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মুরস ও টেলর যোগ করেন ১৩৯ রান। নম্বইয়ের ঘরে একবার আউটের সুযোগ দিয়েছিলেন টেলরও। ৯৪ রানে তাইজুলের বলে উইকেটের পেছনে তার ক্যাচ গøাভসে রাখতে পারেননি মুশফিক। ক্যাচের সঙ্গে স্ট্যাম্পিংয়ের সুযোগও নষ্ট করেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে সেঞ্চুরি ব্রেন্ডন টেলরের জন্য নতুন কোন বিষয় নয়। ক্যারিয়ারের পাঁচ সেঞ্চুরির চারটি বাংলাদেশের বিপক্ষে। তবে আগেরগুলোর সঙ্গে এই সেঞ্চুরির তার পার্থক্য একটাই-বাংলাদেশের বিপক্ষে আগেরই তিন সেঞ্চুরির সবগুলোই হারারের মাঠে। এই প্রথম বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট সেঞ্চুরি পেলেন টেলর।
শেষ বিকালের শেষ ঘন্টায় ঝটপট চার উইকেট তুলে নিয়ে জিম্বাবুয়েকে অলআউট করতে পারলে ক্যাচ মিসের বাজে অভ্যাসও দেখালো বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে এই সময়ে চারটি ক্যাচ মাটিতে ফেলে বাংলাদেশ। দায়টা বেশি ক্লোজ ইন ফিল্ডিংয়ে দাড়ানো মমিনুল ও মিঠুনের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: (তৃতীয়দিন শেষে) বাংলাদেশ ১ম ইনি: ৫২২/৭ (১৬০ ওভারে ওভারে, ইমরুল ০, লিটন ৯, মিঠুন ০, মমিনুল ১৬১, মুশফিক ২১৯*, তাইজুল ৪, মাহমুদউল্লাহ ৩৬, আরিফুল ৪, মেহেদি মিরাজ ৬৮* অতিরিক্ত ২১ , জারভিস ৫/৭১)। জিম্বাবুয়ে ১ম ইনি: ৩০৪/১০ (১০৫.৩ ওভারে, মাসাকাদজা ১৪, চারি ৫৩, টেলর ১১০, মুরস ৮৩, চাকাভা ১০, তাইজুল ৫/১০৭, মিরাজ ৩/৬১, আরিফুল ১/১০)