‘প্রতিটা ম্যাচই নতুন, শূন্য থেকে শুরু’
সবার আগে তার কিছু পরিসংখ্যান।
১১৭ বলে ১২১ রান; তার খেলা সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচের স্কোর এটি। ৩২ বলে ঝড়ো ৬১ রান; এটি তার খেলা সর্বশেষ টি-টুয়েন্টির স্কোর। ১৪২ বলে ২০৩ রান; প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটি তার সর্বশেষ স্কোর।
ওয়ানডে, টি-টুয়েন্টি এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট-তিন ফরমেটেই তার ব্যাটে রানের হাসি, একেবারে অট্টহাসি! এমন সুখের সময়ে তো যে কাউকেই যা আঁকড়ে ধরতে পারে তার নাম-গর্ব, আত্মতুষ্ঠি!
কিন্তু ঠিক এই জায়গায় লিটন দাস একটু ব্যতিক্রম। ধারাবাহিকভাবে রান পেলেও, পারফর্ম করলেও পা কিন্তু মাটিতেই রাখছেন। টানা পারফরমেন্সে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। কিন্তু আত্মতুষ্ঠিকে ধারে কাছে ঘেঁঘতে দিচ্ছেন না বাংলাদেশ দলের এই ওয়ানডে ওপেনার। ‘ওয়ান ইনিংস ওয়ান্ডার’ হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে পরিচিত হতে চান না তিনি। লক্ষ্য তার একটাই- লম্বা সময় ধরে জাতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড় হয়ে থাকতে। সেই লক্ষ্য অর্জনের পথটা বড় কঠিন, সেটা লিটন মানেন। তাই এশিয়া কাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি বা ঘরোয়া ক্রিকেটে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড-কোনকিছুকেই ‘গ্যারান্টি’ হিসেবে মানতে রাজি নন। ভালই জানেন সামনের দিনে ভাল না করলে পেছনের সাফল্য স্মৃতিপট থেকে ধসূর হয়ে যেতে বেশি সময় লাগবে না। তাই এশিয়া কাপের সেঞ্চুরিকেই ক্রিকেট জীবনের বাঁক বদলের কারণ হিসেবে মানতে ইচ্ছুক নন তিনি।
জাতীয় দলের ক্যাম্পে দ্বিতীয় দিনের অনুশীলনে নামার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে সেকথাই বলছিলেন লিটন দাস-‘প্রতিদিনই প্রতিটা ম্যাচই আসলে নতুনকিছু। প্রতিটা ম্যাচেই একেবারে নতুন করে সবকিছুই শুরু করতে হয়। তবে হ্যাঁ, একটা ম্যাচ কোন খেলোয়াড়ের জীবনে বড় একটা হয়তো প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এটাই আবার সবকিছু না। কারণ পরের ম্যাচ খেলতে নামলেই সেখানে তো আমাকে শূণ্য থেকে শুরু করতে হবে। আমি চেষ্টা করবো যে শূণ্য থেকে আবার যেন বড় কিছুতে যেতে পারি। পেছনে কোন একটা বড় ইনিংস খেলেছিলাম, সেটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তাভাবনা করে আসলে কোন লাভ নেই। তবে হ্যাঁ, মাঠে কোন এক ম্যাচে ভাল পারফর্ম করলে নিজের ওপর থাকা চাপ কিছুটা হলেও কমে যায়। ক্রিকেট তো আসলে মানষিক খেলা। মন যখনই উদ্বীপ্ত থাকবে, পরিস্কার থাকবে ততই ভাল খেলার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আর মাঠে পারফর্ম না করলে একটা খোঁচা তো মনের মধ্যে থাকেই। আমার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। এশিয়া কাপের ফাইনালে ভাল পারফর্ম করার পর চাপ একটু কম ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাই খোলা মন নিয়ে খেলতে পেরেছি। পারফরমেন্সও হয়েছে।
দুটো ভাল যখন খুব পাশাপাশি সময়ে ঘটে, তখন কোনটা বেশি আনন্দদায়ক সেই তুলনা খোঁজার বিষয়টা ক্রিকেটে একটা নিয়মিত অভ্যাসের মতো। লিটনকেও তাই শুনতে হল-এশিয়া কাপের সেঞ্চুরি নাকি ঘরোয়া ক্রিকেটে রেকর্ডময় ডাবল সেঞ্চুরি, কোনটা বেশি আনন্দ ছড়ায়?
তুলনা খোঁজার জন্য বেশি সময় নিলেন না লিটন দাস। বললেন-‘অবশ্যই এশিয়া কাপের সেঞ্চুরিটা। অনেকদিন ধরে ব্যাকফুটে ছিলাম। পারফর্ম করাটা আমার জন্য জরুরি হয়ে দাড়িয়েছিল। তাছাড়া জীবনের প্রথম সেঞ্চুরি। তাও আবার বড় আসরে। এটা অবশ্যই আমার জন্য অনেক বড় কিছু। এখন আমার লক্ষ্য আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে এই পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা।
এশিয়া কাপে বড় সেঞ্চুরি করেছেন। শেষ টি-টুয়েন্টিতেও ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফরমেন্স। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও নিয়মিত ধারাবাহিক পারফর্মার। এতকিছুর পরেও নিজ সম্পর্কে লিটন দাসের বিনীত বিশ্লেষণ-‘এখনো আমি বড় খেলোয়াড় হইনি।’
এশিয়া কাপে তার সেঞ্চুরি নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে, তারচেয়ে বেশি বাজার গরম হয়েছে তার আউট নিয়ে। টিভি আম্পায়ার তাকে যে আউট দিয়েছিলেন সেটা যথাযথ ছিল কিনা-সেই বিতর্ক চলছে এখনো! লিটন সেই বিতর্কে বাড়তি কোন উপাত্ত যোগ করতে রাজি নন-‘উইকেটে আরও সময় টিকে থেকে খেলতে পারলে হয়তো অবশ্যই ভাল হত। দলের রান আরও বাড়তো। তবে আউট নিয়ে বলার কিছু নেই। যেহেতু আম্পায়ার আউট দিয়েছে, তাই আউট!’
এখানেও বিনয়ী লিটন!