বাংলাদেশের চোখে রঙিন স্বপ্ন, প্রতিপক্ষ আজ ভুটান
প্রতিবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হলেই বাংলাদেশ ফুটবলকে ঘিরে শুরু হয় নতুন করে স্বপ্ন দেখা। পেছনের ছয় বছরের তিন আসরে প্রতিবারই অবশ্য সেই স্বপ্নের দৈর্ঘ্য বেশি লম্বা হয়নি; প্রথমপর্বেই শেষ। এই তিন আসরেই গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় বাংলাদেশ।
ঢাকায় আজ ৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্ট ফের নতুন করে বাংলাদেশকে স্বপ্নাতুর করছে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। সাফের চেয়েও বড় আসরে গতমাসে খেলে আসা এশিয়ান গেমসের ফুটবলই বাংলাদেশকে আরেকটু স্বপ্নালু করে তুলেছে! প্রথমবারের মতো এশিয়ান গেমসের ফুটবলের দ্বিতীয় পর্বে এবার উঠে বাংলাদেশ। গ্রুপে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ কাতারকে হারায়। নতুন কোচ জেমি ডে’র কোচিং এবং এশিয়াডে ফুটবল দলের সাফল্য-এই দুইয়ের যোগসূত্রে এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে ঘিরে বাংলাদেশ অনেক রঙিন স্বপ্ন দেখছে।
স্বপ্ন দেখছে ২০০৩ সালের এই টুর্নামেন্টের স্বর্ণালি অতীতকে ফিরিয়ে আনার। সেই মিশন শুরুর প্রথম ম্যাচে আজ ৪ সেপ্টেম্বর টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিনে প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ পাচ্ছে ভুটানকে। ম্যাচটা শুরু হবে রাত ৭টায়। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও চ্যানেল নাইন এই ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে, ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম থেকে।
প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ ভুটানই বলেই বাংলাদেশ একই সঙ্গে স্বস্তিতে এবং খানিকটা অস্বস্তিতেও বটে!
স্বস্তির কারণ ভুটানের দুর্বল শক্তি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে ক্ষিণ এশিয়ার এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দল ভুটান। বলা হয়ে থাকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটান হল অন্য দলগুলোর জন্য পাঞ্চিং ব্যাগ! সে দলকে সামনে পেয়ে প্রতিপক্ষ সমানে গোলোৎসবে মাতে। এখন পর্যন্ত ভুটান এই টুর্নামেন্টে নিজেদের খেলা ২১ ম্যাচের মধ্যে ১৯টিতেই হেরেছে। ড্র করেছে একটিতে। জয় মোটে এক ম্যাচে! টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি ৮৪ গোল খেয়েছে ভুটান। কোনবারই ফাইনালে খেলা তো দুরের কথা, সেই সম্ভাবনাই তৈরি করতে পারেনি। এমন একটা দলকে এবারের টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাশে পাচ্ছে, সেটা হয়তো বা স্বস্তিকর।
তবে এই ভুটানের বিপক্ষেই আবার বাংলাদেশ নিজেদের সাম্প্রতিক ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে! অস্বস্তির কারণও তাই ভুটান! ২০১৬ সালের অক্টোবরে এশিয়ান কাপের প্রাক বাছাই পর্বে এক ম্যাচে ভুটানের কাছে হেরেই সর্বনাশ হয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবলের। সেই হারের কারণে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ আর্ন্তজাতিক ফুটবলে খেলার সুযোগই পায়নি!
থিম্পুতে ভুটানের কাছে সেই হারের পর আজ (৪ সেপ্টেম্বর) আবার মুখোমুখি বাংলাদেশ। দেড় বছর আগের সেই হারের বদলা চুকিয়ে দেয়ার সুযোগটা কিভাবে কাজে লাগায় বাংলাদেশ সেটাই দেখার বিষয়। এই টুর্নামেন্টকে ঘিরে বাংলাদেশের স্বপ্নের শুরু এবং শেষ কোথায় সেটা ভালই জানেন লের কোচ জেমি ডে। প্রস্তুতিও নিয়েছেন তিনি সেভাবেই। সেই প্রসঙ্গে কোচ জেমি ডে জানাচ্ছিলেন- ‘পেছনের চারমাস ধরে আমরা এই টুর্নামেন্টকে ঘিরে প্রস্তুতি নিয়েছি। কাতার, কোরিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া সফর করেছি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যালেঞ্জ নিতে আমার দল পুরোপুরি প্রস্তুত। আমরা এই টুর্নামেন্টের স্বাগতিক দল। দর্শক-সমর্থকরা ও আমারে কাছ থেকে কি চাইছে সেটা আমরা জানি। তবে আমরা বাড়তি কোন চাপ নিচ্ছি না। প্রতি ম্যাচেই আমাদের লক্ষ্য থাকবে নিজেদের সেরা খেলা উপহার দিতে।’
বাংলাদেশ কেমন দল? ম্যাচের আগে এই প্রশ্নের উত্তর য়োর সময় ভুটান কোচ ট্রেভর মরগান দ্বিধাহীন গলায় জানালেন- ‘কোন সন্দেহ নেই স্বাগতিক হিসেবে এই ম্যাচে বাংলাদেশই ফেভারিট। তবে ভুটানও ছেড়ে কথা বলবে না। দলের তরুণ খেলোয়াড়রাই আমারে মুলশক্তি। একঝাঁক নতুন খেলোয়াড়রা নিজেদের প্রমান করার জন্য মুখিয়ে আছে। ভুটানের ফুটবল সম্পর্কে লোকজনের যে পুরানো ধ্যান-ধারণা আছে সেটা এবার আমরা বদলে দিতে চাই।’
এই টুর্নামেন্টে ভুটানের স্বপ্নের পরিধিও বেশ বড়সড়। সেমিফাইনালে চোখ ভুটান কোচের!