আন্দোলনকারীকে জাবি ছাত্রলীগ নেতার মারধর, আলোচনা স্থগিত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী নেতা ও জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাইমুমকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে।
আর এ ঘটনায় পূর্ব ঘোষিত আলোচনা সভা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগে মারধরকারী ছাত্রলীগ নেতাকে হল থেকে বিতাড়ন ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে তাৎক্ষণিক মিছিল করেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের চাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মণ্ডল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র।
তবে ওই ছাত্রলীগ নেতা বলছেন, আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য নয় বরং 'অন্য' কারণে তাকে মারধর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জাবিতে চলছে অবরোধ, আলোচনায় হয়নি সমাধান
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক জব্বার হল সংলগ্ন খাবার দোকানে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার নুরুল ইসলাম সাইমুম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'আমি সকালের নাস্তা করতে দোকানে যাই। এ সময় আমার মোবাইলে জরুরি কল আসে, রিসিভ করে কথা বলতে থাকি। কিন্তু পাশে বসে থাকা অভিষেক হঠাৎ আমার ওপর চড়াও হন। আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করেন। আমি নিজের পরিচয় দেই। এসময় জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক বলার সাথেই তিনি আমাকে মারধর শুরু করেন। সঙ্গে থাকা তার বন্ধু আমার হাত চেপে ধরেন। আর অভিষেক দোকানে থাকা কাঠ দিয়ে আমাকে মারধর করতে থাকেন। তবে তার সঙ্গে আমার পূর্ব কোনো শত্রুতা নেই। চলমান আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণে মারধর করা হয়ে থাকতে পারে।'
মারধরের বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান সাইমুম।
মারধরের কথা স্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা অভিষেক মণ্ডল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'মারধরের সঙ্গে আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। সকালে আমি এবং আমার বন্ধু দোকানে নাস্তা করতে যাই। সাইমুম আমাদের টেবিলে বসে। কিন্তু সে উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকে এবং দোকানের বাচ্চাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করেন। আমি তখন তাকে অন্য টেবিলে যেয়ে বসতে বলি। কিন্তু সেটা না করে উল্টো আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার শুরু করে। পরে তাকে মারধর করেছি। আমি জানতাম না সে আন্দোলনকারী বা থিয়েটার নেতা।'
এদিকে, আজ সকালে (৭ সেপ্টেম্বর) চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের তিনটি দাবির নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আলোচনা করার কথা ছিল। তবে 'মারধরের বিচার না হওয়া পর্যন্ত' প্রশাসনের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনায় বসতে নারাজ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী নেতা ও জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'এক দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদেরকে আলোচনার আহ্বান করছেন। অন্যদিকে, সরকার দলীয় ছাত্র নেতার হাতে আমাদের কর্মী মারধরের শিকার হচ্ছেন। এভাবে আলোচনা এবং মারধর একসঙ্গে চলতে পারে না।’
আরও পড়ুন: জাবিতে ৩ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবরোধ চলছে
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে ছাত্রলীগ এমন মনোভাব পোষণ করেনা। এটা ব্যক্তি পর্যায়ের বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর সঙ্গে সংগঠনের কোনো যোগ নেই।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘অভিযুক্ত যেহেতু সাবেক শিক্ষার্থী তাই প্রশাসন মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রক্টরিয়াল টিম রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছে। আজকেতো আর আলোচনা হলো না। হয়তো কাল-পরশু ফের আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হবে।'
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত প্রকল্পের টাকা থেকে নির্মাণ কাজ বাধাহীনভাবে সম্পন্ন করতে শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে।
এর আগে, গত ২৩ মে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টেন্ডার শিডিউল ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
আর দুর্নীতির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ মাস্টারপ্ল্যান সংশোধন ও অংশীজনের অংশগ্রহণে প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: জাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, ১৯ সিনেটরের উদ্বেগ