‘এ কলকাতার মধ্যে আছে আরেকটা কলকাতা’



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগ্রহীত

ছবি: সংগ্রহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘এ কলকাতার মধ্যে আছে আরেকটা কলকাতা।’ আশ্চয শহর কলকাতা প্রসঙ্গে বলেছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। সেই কোনকালে সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতা নামে তিনটি গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠা একটি শহর কলকাতার ভেতরে লুকিয়ে আছে অনেকগুলো শহর। এক কলকাতাকে দেখতে গেলে ভেসে ওঠে আরও অনেক কলকাতার মুখচ্ছবি। ইতিহাসের কলকাতা যেন অনেকগুলো মুখের কোলাজে পূর্ণ একটি বড় ক্যানভাস।

কলকাতা সপ্তদশ শতকের শেষভাগ অবধি ছিল বাংলার নবাবদের শাসনে। ১৬৯০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবদের কাছ থেকে বাণিজ্য-সনদ পেয়ে কলকাতায় স্থাপন করে বাণিজ্যকুঠি। ঘটতে থাকে কলকাতার সমৃদ্ধি। ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলাহ কলকাতা দখল করলেও তা ধরে রাখতে পারেন নি। পরের বছরই ইংরেজ কোম্পানি ফের দখল করে নেয় কলকাতা।

তারপর আস্তে আস্তে বাংলায় প্রতিপত্তি বাড়িয়ে ১৭৯৩ সালে কোম্পানি বাংলার যাবতীয় ‘নিজামৎ’ বা স্বায়ত্তশাসনের অবলুপ্তি ঘটিয়ে কায়েম করে তাদের মৌরসি পাট্টা। কোম্পানির শাসন এবং ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রত্যক্ষ শাসনের প্রথমার্ধে কলকাতা ছিল ভারতের রাজধানী। ১৯১১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে কলকাতা অবিভক্ত বাংলা প্রদেশের রাজধানী ছিল।

কলকাতা যখন সমগ্র ভারতের রাজধানী, তখন ভারতবর্ষের ইংরেজ গর্ভনর জেনারেল-ভাইসরয় রাজধানী কলকাতাতেই বছরের আংশিক সময় থাকতেন। শীতকালের পাঁচ মাস ছিল তাঁর কলকাতা উপস্থিতি। তারপর উষ্ণকালটুকু তিনি থাকতেন ব্রিটিশ-ভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী সিমলায়। এক অর্থে ভারতবর্ষের রাজধানী ছিল কলকাতা ও সিমলা। রাজপুরুষদের সিমলা-কলকাতা যাতায়াত ছিল। সাধারণত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে বা নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে সিমলা নামক হিল টাউন থেকে সরকারি কর্তারা সকলেই নেমে আসতেন। সিমলা থেকে কলকাতা আসাকে সাধারণ মানুষ বলতেন ‘নেমে আসা’।

ভারতবর্ষের রাজধানীর পাশাপাশি অবিভক্ত বাংলা প্রদেশের রাজধানীও ছিল কলকাতা। তবে সেটা মূল কলকাতায় নয়, আলিপুরে। চিড়িয়াখানার কাছে বেলভিডিয়ার নামের যে জায়গাটিতে বাংলার শাসক লেফটেন্যান্ট গর্ভনর থাকতেন, সে প্রাসাদের শুদ্ধ উচ্চারণ হলো বেলভেডেরে। বেলভিডিয়ার নয়। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার একটি প্রাসাদের অনুকরণে নির্মিত বাড়িটির নাম রাখা হয়েছিল বেলভেডেরে।    

প্রাচীন ও অভিজাত ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের জন্য কলকাতাকে ‘প্রাসাদ নগরী’ও বলা হতো। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ১৩৮ কিলোমিটার উত্তর দিকে হুগলি (ভাগীরথী) নদীর বাম (পূর্ব) তীরে অবস্থিত শহরটি অন্য তিন দিকে অখণ্ড চব্বিশ পরগণা জেলা দ্বারা স্থলবেষ্টিত, যে জেলাটি বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন। এখন অবশ্য চব্বিশ পরগণা উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করে দুটি জেলায় পরিণত করা হয়েছে।

কলকাতার ঘটনাপ্রবাহ বড়ই বিচিত্র, প্রাণবন্ত, নস্টালজিক। কঠিনে-কোমলে মেশানো এমন সজীব ও উপভোগ্য ইতিহাস খুব বেশি শহরের নেই। সেই কলকাতা তার সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, শিল্পকলা, জনসমাজ, সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্য ইত্যাদি সব দিকেই লাভ করেছিল নিজস্ব উৎকর্ষ আর আশ্চয বিস্তৃতি। যেন একটা কলকাতার মধ্যেই পরতে পরতে বিন্যস্ত হয়েছিল অনেকগুলো কলকাতা।

নর্থ, সেন্ট্রাল ও সাউথ কলকাতা আলাদা আলাদা অস্তিত্ব নিয়ে সমগ্র কলকাতার অংশ হয়ে আছে। যদিও আদিতে নর্থ বা উত্তর কলকাতা বলে কোনও এলাকা ছিল না। দক্ষিণ কলকাতার লোকেরা এখন যাকে নর্থ কলকাতা বলেন, সেটাই একমাত্র কলকাতা ছিল। বাকীটা ছিল শহরতলী। ঢাকুরিয়া, যাদবপুর, গড়িয়া, বৈষ্ণবঘাটা দূরে থাকুক, তখন ভবানীপুর, কালীঘাট, টালিগঞ্জ, আলিপুর, খিদিরপুর, বালিগঞ্জ প্রভৃতি এলাকাকে কলকাতার অংশ বলা হতো না। এগুলো ছিল দক্ষিণের উপকণ্ঠ। আবার শিঁথি, বরাহনগর, বেলঘরিয়া, দমদম, নাগের গাঁও, ব্যারাকপুর প্রভৃতি এলাকা আজকাল উত্তর কলকাতার অংশ বলে বিবেচিত হলেও সেগুলো ছিল উত্তর প্রান্তীয় উপশহর। 

কলকাতা আসলে ছিল লোয়ার সার্কুলার রোড এবং আপার সার্কুলার রোডের মধ্যকার জায়গাটুকুতে। সে কলকাতার আবার তিনটি ভাগ ছিল। একটি হলো ধর্মতলা আর চৌরঙ্গীর মোড় হতে লোয়ার সার্কুলার পযন্ত। এ অঞ্চলকে বলা হতো সাহেব পাড়া। এর পূর্ব দিকে পার্ক স্ট্রিট, পার্ক সার্কাস অঞ্চলে ছিল মুসলমানদের অধিবাস। ধর্মতলার উত্তরে শ্যামবাজার-বাগবাজার পযন্ত ছিল হিন্দু অধিবাসীদের বসবাস। শুধু মানুষ বা সমাজ নয়, তিনটি অংশই কাঠামোগত ও সাংস্কৃতিক বিন্যাসের দিক থেকে পৃথক ছিল। ব্রিটিশ শাসিত কলকাতার মূল চৌহদ্দি বলতে এগুলোকেই চিহ্নিত করা হতো।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ঔপনিবেশিক কলকাতায় এসে আশ্রয় নেন ইংরেজের শক্তি ও ষড়যন্ত্রে রাজ্যহারা তিনটি নবাবের পরিবার। শহরের উত্তর অংশের চিৎপুরে বসতি গড়েন একদা বাংলার প্রশাসক রেজা খানের বংশধরবৃন্দ। যে রেজা খান পলাশী-পরবর্তী বাংলার শাসনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দক্ষিণ অংশের টালিগঞ্জে মহিশূরের বীর টিপু সুলতানের বংশধরবৃন্দ বাস করেন। এবং দক্ষিণ-পশ্চিম কলকাতার নদী তীরবর্তী মেটিয়াবুরুজে বসতি স্থাপন করেন অযোধ্যার রাজ্যহারা নবাব আবুল মনসুর মির্জা মহম্মদ ওয়াজিদ আলী শাহ’র পরিবারবর্গ। 

মাত্র নয় বছর স্বদেশ লক্ষ্ণৌ শাসনের পর রাজ্য হারিয়ে নবাব ওয়াজেদ আলী শাহ (১৮২২-১৮৮৭) তিরিশ বছর ছিলেন কলকাতায়। তখন আর তিনি রাজনীতির কেউ নন। তবু তিনি কলকাতায় নবাবের মতোই বেঁচে ছিলেন স্বনির্মিত শিল্প-সংস্কৃতির বলয়ে। বিরিয়ানি থেকে সরোদ শিখিয়েছিলেন তিনি কলকাতাকে। দিল্লির পর যে লক্ষ্ণৌ হয়েছিল ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী, সেখান থেকে এসেছিলেন নবাব। রাজ্যহারা নবাব ওয়াজিদ আলী শাহ জীবনের শেষটুকু নবাবি হালেই কাটিয়েছিলেন কলকাতাতে। মেটিয়াবুরুজে বানিয়েছিলেন মিনি লক্ষ্ণৌ। সময় যত এগোচ্ছে, কলকাতা শহরের ওপর তাঁর সাংস্কৃতিক প্রভাব তত ফুটে উঠছে।

একদা শ্রীপান্থ ‘মেটিয়াবুরুজের নবাব’ নামে ওয়াজিদ আলী শাহ’কে নিয়ে প্রথম বই লিখেছিলেন। এখন আরও অনেকেই লিখছেন— ইংরেজি-বাংলা, দুই ভাষাতেই। ‘দ্য লাস্ট কিং ইন ইন্ডিয়া: ওয়াজিদ আলি শাহ’ নামে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন রোজি লিউলিন জোনস। শামীম আহমেদ লিখেছেন ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘আখতারনামা’। সুদীপ্ত মিত্র রচনা করেছেন ‘পার্ল বাই দ্য রিভার: নবাব ওয়াজিদ আলি শাহজ কিংডম ইন একজাইল’। উর্দুতে রচিত আবদুল হালিম শরর-এর ‘গুযিশতা লখনউ’ (পুরনো লখনউ) গ্রন্থটিও ঐতিহাসিক হয়ে আছে লক্ষ্ণৌ ও কলকাতার সাংস্কৃতিক ভাব-বিনিময়ের মূল্যবান ইতিবৃত্তের কারণে।

গবেষণা ও লেখালেখির সুবাদে স্পষ্ট হয়েছে যে, বাঙালির কাছে, বিশেষত কলকাতাবাসীর কাছে নবাব ওয়াজিদ আলী শাহ’র গুরুত্ব অনেকটাই। কলকাতার সংস্কৃতি, সাহিত্য, খাদ্যাভ্যাস, এমন কি ব্যক্তিগত যাপিতজীবনেও অযোধ্যার রাজা এবং তাঁর অনুচররা দীর্ঘ ছাপ ফেলেছেন এবং দিল্লি-লক্ষ্ণৌ-কলকাতার মধ্যে নির্মাণ করেছেন একটি সাংস্কৃতিক ত্রিভূজ। কলকাতার সাংস্কৃতিক জাগরণের শৈল্পিক নবাব ছিলেন তিনি।

   

নজরুল চর্চার স্বীকৃতিতে সম্মানিত সোমঋতা মল্লিক



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
নজরুল চর্চার স্বীকৃতিতে সম্মানিত সোমঋতা মল্লিক/বার্তা২৪.কম

নজরুল চর্চার স্বীকৃতিতে সম্মানিত সোমঋতা মল্লিক/বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease
 
ছায়ানট (কলকাতা) নজরুল চর্চায় নিবেদিত অগ্রণী প্রতিষ্ঠান। সভাপতি শিল্পী সোমঋতা মল্লিকের নেতৃত্বে শুধু ভারত বা বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে ছায়ানট।
 
নজরুল জীবন ও সাহিত্যকর্মের নিরিখে বছরব্যাপী অনুষ্ঠান পালনের পাশাপাশি ছায়ানট প্রকাশ করেছে নতুনের গান, জীবনীভিত্তিক ক্যালেন্ডার ও বর্ণময় প্রকাশনা। গবেষণা করছে নজরুল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রপঞ্চ।
 
কলকাতায় নজরুল স্মৃতিধন্য জনপদ ও স্থাপনাসমূহকে ধ্বংস, দখল ও অবলুপ্তির কবল থেকে রক্ষা করার কৃতিত্ব ছায়ানটের। সেসব স্থানে তথ্য ফলক দিয়ে সংরক্ষণের আওতায় এনেছে সংগঠনটি।
 
নজরুল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে আলীপুর জেল কিংবা রাঁচি মানসিক হাসপাতাল ছিল তাৎপর্যবাহী। ছায়ানট সেসব স্থানে নজরুল কর্নাল ও তথ্যফলক দিয়ে নজরুলের সংগ্রামমুখর জীবনের ঐতিহাসিক পরম্পরাকে সজিব রেখেছে।
 
নজরুলচর্চায় নিবেদিত ছায়ানট (কলকাতা) - এর সভাপতি সোমঋতা মল্লিক স্বীকৃতি পেয়েছেন কলকাতার 'অন্বেষণ পরিবার' নামক সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্য সংগঠন কর্তৃক। তাকে এ উপলক্ষে সম্মান প্রদান করেন সংগঠনের শ্রী অমিতাভ। 
 
বার্তা২৪.কম'কে শিল্পী সোমঋতা মল্লিক বলেন, 'যেকোনো সম্মাননা কাজের প্রণোদনা আরো বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বময় নজরুল চর্চা এগিয়ে চলুক, এই প্রত্যাশায় আমি ও ছায়ানট কাজ করে যাবে।'
 
;

কলকাতায় দুদিনব্যাপী 'নজরুল কবিতা উৎসব'



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতায় দুদিনব্যাপী 'নজরুল কবিতা উৎসব'

কলকাতায় দুদিনব্যাপী 'নজরুল কবিতা উৎসব'

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ৪ এবং ৫ এপ্রিল রবীন্দ্র সদন চত্বরে অবনীন্দ্র সভাগৃহে ছায়ানট (কলকাতা) - এর উদ্যোগে 'নজরুল কবিতা উৎসব ২০২৪' অনুষ্ঠিত হয়। দু দিনে শতাধিক শিল্পী একক/দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বিকেল ৫টা-রাত্রি ৯টা অনুষ্ঠিত হয় এই কবিতা উৎসব।

পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছায়ানটের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক। নজরুল কবিতা উৎসবের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কবি এবং পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির সভাপতি
মাননীয় সুবোধ সরকার। ৪ এপ্রিল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. শেখ কামাল উদ্দীন, অধ্যক্ষ- হিঙ্গলগঞ্জ মহাবিদ্যালয় ও সভাপতি- নজরুল চর্চা কেন্দ্র। তাঁর আলোচনার বিষয় ছিল 'বাংলা সাহিত্যে অভিনবত্বের দিশারী নজরুল'। ৫ এপ্রিল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. শেখ মকবুল ইসলাম (ডি. লিট.), বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ, কলকাতা'। কাজী নজরুল ইসলামের ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি তাঁর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণার অনেকখানি অবকাশ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ড. শেখ মকবুল ইসলাম।

একক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন ঊর্মিলা সেন, অতসী নন্দ গোস্বামী, বর্ণালী সরকার, পীতম ভট্টাচার্য, শম্পা দাস,
তাপস চৌধুরী, সুদীপ্ত রায়, শম্পা বটব্যাল, শুভদীপ চক্রবর্তী, নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবযানী বিশ্বাস, ইন্দ্রাণী লাহিড়ী, শাশ্বতী ঘোষ, দেবলীনা চৌধুরী, সৌমিতা নস্কর, মিতালী ভট্টাচার্য্য, সুকন্যা রায়, তৃষিতা সাহা, এরিসা কামিলা, ইনশ্রী নাথ, শতাক্ষী নাথ, সোনালী চট্টোপাধ্যায়, মোনামি সামন্ত, দোয়েল চ্যাটার্জী, চিত্রা সোম বাসু, গোপা ভট্টাচার্য্য রায়, ইন্দ্রাণী নাগ, ডক্টর সৌমিত্র নারায়ণ শূর, মিতালী মুখার্জী, দীপ্তি বর্মন, অন্বেষা মুখার্জী, রাকা দাস, দেবলীনা দাশগুপ্ত, শর্মিলা মাজী, মোনালিসা শীল, অপর্না চক্রবর্তী, দীপিকা গোস্বামী, পাপিয়া ভট্টাচার্য, সৃজিতা ঘোষ, শাশ্বতী বাগচী, প্রাযুক্তা চক্রবর্তী, জয়িতা দত্ত এবং রুনা মুখার্জি।

দলীয় পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন ছায়ানট (কলকাতা), আন্তরিক, বরানগর প্রতিশ্রুতি, নৈহাটি বঙ্কিম স্মৃতি সংঘ, আরশি হরিণঘাটা, প্রেরণা আবৃত্তি অনুশীলন কেন্দ্র, আমরা অ আ ক খ স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ, অন্বেষণ, কাব্যপথিক, শ্রুতিবৃত্ত, আবৃত্তিওয়ালা, শৃণ্বন্তু, বৈখরী, পাঠশালা, অনন্ত উড়ান, অনুরণন, চেতনা, শ্রুতিকথন, যাদবপুর কথাছন্দ এবং প্রতিধ্বনি - এর শিল্পীবৃন্দ।

সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সোমা মুখোপাধ্যায়, অপরাজিতা মল্লিক, দেবলীনা চৌধুরী এবং রাকা দাস।

ছায়ানটের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক বলেন, "এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো আমরা 'নজরুল কবিতা উৎসব' - এর আয়োজন করলাম। আমাদের প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টি নিয়ে ২ দিন ব্যাপী এই বিশেষ আয়োজনে বাচিকশিল্পীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আমরা আপ্লুত।
অনেক বাচিক শিল্পীকে আমরা সুযোগ দিতে পারিনি, আমরা সত্যিই ক্ষমাপ্রার্থী, আগামী বছর আরও বেশীদিন ধরে এই আয়োজন করার চেষ্টা করব। কাজী নজরুল ইসলামের লেখা জনপ্রিয় কবিতার পাশাপাশি বেশ কিছু স্বল্পশ্রুত কবিতা আমরা শুনতে পেলাম এই কবিতা উৎসবে - এখানেই আয়োজনের সার্থকতা।"

;

বয়সের ভারে শীর্ণ, তবু আজ ও ছুটেছে ১৫১ বছরের ট্রাম



ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, কলকাতা
-কলকাতার রাজপথে এখনও ছুটে চলছে ট্রাম

-কলকাতার রাজপথে এখনও ছুটে চলছে ট্রাম

  • Font increase
  • Font Decrease

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলেছে সবকিছু। হয়েছে বিবর্তন। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নুতনকে স্বাগত জানিয়েছে মানুষ। পুরনো যা কিছু এখন দেখা যায় জাদুঘরে কিংবা কারও ব্যক্তিগত সংগ্রহে। একইভাবে সময়ের সঙ্গে তাল রেখে বদলেছে এক সময়ের ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতা । সময়ের পরিবর্তনে এখন যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রধান শহর।

অন্য আর পাঁচটা শহরের মত গতি পেয়েছে কল্লোলিনী কলকাতা। তবে ১৫১ বছর আগের কলকাতার একটা খন্ডচিত্রের অংশ ট্রাম এখনও দিব্যি চলছে কলকাতার বুকে । গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি ছিল কলকাতার ট্রামের জন্মদিন । ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে প্রথমবার শুরু রাস্তা দিয়ে চলে ঘোড়ায় টানা কাঠের ট্রাম।

শিয়ালদা থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত প্রথমবার ছুটেছিল সেই ট্রাম। এই বছর কলকাতার সেই ট্রাম যাত্রা পা রাখতে চলেছে একশো একান্ন বছরে ৷ তবে প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ট্রামেরও বিবর্তন হয়েছে। ১৯০২ সালের ২৭ মার্চ ধর্মতলা খিদিরপুর-রুটে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম চলেছিল।

অনেকেই হয়তো জানেন না যে, ভারতে কলকাতা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি শহরে একসময় চলত ট্রাম ৷ কলকাতার পর তৎকালীন মাদ্রাজ, দিল্লি, বোম্বে, কানপুর, ভাভনগর, নাসিক এবং পাটনাতেও শুরু হয়েছিল ট্রাম পরিষেবা। এমনকী ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় করাচি এবং কলম্বোতেও ছিল ট্রাম পরিষেবা। তবে সেগুলি সবই পরে বন্ধ হয়ে যায়। কল্লোলিনী কলকাতার জীর্ণকায়ে ট্রাম কোনওমতে বাঁচিয়ে রেখেছে নিজের অস্তিত্ব।

একসময় রমরম করে স্বমহিমায় শহরের বুক চিঁড়ে ঘণ্টির শব্দ করে দৌঁড়ে যেত ট্রাম ৷ সেই দৃশ্য এখন বড়ই বিরল । ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকেছে ট্রামের ভবিষৎ । তাই বোধহয় ট্রামের ১৫১ বছর নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ একেবারেই নেই । তবে শহরের ট্রামপ্রেমী সংগঠন ক্যালকাটা ট্রাম ইউজারস অ্যাসোসিয়েশন, ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন ও ট্রাম যাত্রা বলে একটি সংগঠনের উদ্যোগে এই উপলক্ষ্যে এক বিশেষ উদ্যোগ নেয়।

কলকাতায় ট্রাম পরিবহণ ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের ট্রাম নেটওয়ার্ক তুলনায় অনেকটাই অন্যরকম। শতাব্দী প্রাচীন এই ট্রামগুলি এখনও পরিষেবা দিয়ে চলেছে । সাধারণ মানুষের মতে শুধুমাত্র ট্রামকে উন্নত করলেই চলবে না। ট্রাম এবং অন্যান্য পরিবহণ ব্যবস্থা যাতে একে অপরের সমস্যা সৃষ্টি না-করে পরিষেবা দিতে পারে সেইভাবে পরিকল্পনা করতে হবে ।

ট্রামের তার দেখিয়ে মহানগর কলকাতার পরিচয় তুলে ধরতে চেয়েছিলেন সত্যজিৎ। কিন্তু কলকাতার পরিচয় বহনকারী সেই ট্রাম এখন যেন ‘ফেয়ারওয়েল’ পাওয়ার অপেক্ষায়। দেড়শো বছর ধরে শহরের ‘ঐতিহ্য’ হয়ে থেকে গেলেও ‘হেরিটেজ’ তকমা জোটেনি তার।

;

হুগলির কোন্নগরে অনাদরে ভাষাশহিদ শফিউরের জন্মভিটা!



ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, কলকাতা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি’ ১৯৫২ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা শহরের একদল দামাল ছেলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে বর্বর পাকিস্তানি পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন। রক্তে ভেসে গিয়েছিল ঢাকার রাজপথ। সেইদিন স্মরণে ১৯৯৯ সালের ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সারা পৃথিবীর মানুষ এই দিনটিকে 'ভাষা দিবস' হিসেবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

সেদিনের সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের যে বীর শহিদেরা মাতৃভাষার সম্মানার্থে প্রাণ দিয়েছিলেরন, তাদের মধ্যে ছিলেন রফিক, জব্বার , শফিউর, সালাম, বরকতের মতোন যুবক। তাদের মধ্যে শফিউর রহমান ছিলেন ওপার বাংলার মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরের কাছে জিটি রোডের ওপর এখনো তাদের বাড়িটি শহিদের জন্মভূমি হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে অত্যন্ত অবহেলায় ও অনাদরে!

অত্যন্ত আক্ষেপের বিষয় একজন ভাষাশহিদের জন্মভিটা আজ ধ্বংসের মুখে। ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি এই মহান ভাষাশহিদের জন্ম হয় কোন্নগরে। শফিউর রহমানের বাবা ছিলেন ঢাকার পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট। কোন্নগর হাইস্কুলে পড়া শেষ করে কলকাতা গভর্মেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে আইএসসি পাস করার পর ১৯৪৮ সালের শফিউররা সপরিবারে ঢাকায় চলে যান। ঢাকা হাইকোর্টে কেরানির পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে মাতৃভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যদের সঙ্গে সামিল হয়েছিলেন শফিউরও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৪ ধারা অমান্য করে রফিক, জব্বার,সালাম, বরকত, শফিউরসহ হাজারও ভাষাপ্রেমী মানুষ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সেদিনের সেই বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকা শহরের মানুষ শামিল হয়েছিলেন। ক্ষিপ্ত পাকিস্তানি পুলিশ সেই বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে দামাল ছেলেদের দেহ মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। সেদিন প্রভাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা রক্তের নদীতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু তাতেও দমেনি বিক্ষোভ সংগ্রাম। তাদের সেই মরণপণ সংগ্রাম আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছিল। অবশেষে, ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তারপর থেকেই এপার ওপার দুই বাংলা মিলিয়ে এই দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছে। কিন্তু সব থেকে বড় আক্ষেপের বিষয়, সেদিনের সেই মরণপণ সংগ্রামের অন্যতম যোদ্ধা শফিউর রহমান যার জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে, তাঁর সেই জন্মভিটাটি আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে অত্যন্ত অনাদর ও অবহেলায়।

সম্প্রতি, যখন পশ্চিমবঙ্গের বড় বড় দেশপ্রেমী মনীষীদের স্মরণে রাখতে তাঁদের জন্মভূমি এবং কর্মক্ষেত্রগুলি সরকার স্বীকৃতি দিয়ে তীর্থস্থানে পরিণত করেছে, কিন্তু সেই ১৯৫২ সালে ঢাকার মাটিতে শহিদ হওয়া সফিউর রহমানের কথা আজ আর কেউ আর মনে রাখেননি। যে বিদ্যালয়ে শফিউর পড়াশোনা করেছেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে সেই কোন্নগর হাইস্কুলের একপাশে জিটি রোডের ধারে ছোট্ট একটি শহিদ বেদি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই প্রতিবছর গুটিকয়েক মানুষ যারা শফিউর রহমানকে চেনেন, ভাষা আন্দোলনের বীরগাথার কথা জানেন, তারা ’২১-এর সকালে কয়েক মুঠো ফুল দিয়ে শহিদবেদিতে তর্পণ করেন।

কোন্নগরবাসীর অত্যন্ত আক্ষেপ, এই শহরে এত বড় একজন ভাষা শহিদ জন্ম নিয়েছিলেন, শিক্ষার প্রথম পাঠ হিসেবে এখানকার কোন্নগর হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন, তাঁর কথা আজ আর কেউই মনে রাখেননি। স্থানীয়দের দাবি, শফিউরের বাড়িটি অন্তত সংরক্ষণ করা হোক অথবা তাঁর স্মরণে এই শহরে যদি একটি মিনার তৈরি করা হয়, তাহলে ভৌগলিক সীমানা অতিক্রম করে আপামর বাঙালি সেই গৌরবের অংশীদার হতে পারবেন। সেইসঙ্গে অমরত্ব পাবে ভাষা সংগ্রামের ইতিহাসও!

;