চেনা অচেনা কলকাতা



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
ভিক্টোরিয়া মোমোরিয়াল।

ভিক্টোরিয়া মোমোরিয়াল।

  • Font increase
  • Font Decrease

শ্যামবাজারের পাঁচ মাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে অশ্বারোহী নেতাজির মূর্তিটি আমি বার বার দেখি। বাসে, গাড়িতে যা দেখা যায় না, তা দেখতে হয় পায়েদলে। পদাতিক হয়েই কোনও শহরকে একনিষ্ঠতায় দেখা শ্রেয়।

কিছুক্ষণ আগে বিটি রোডের (ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড) উপরে মূল কলকাতার আরও উত্তরের বেলঘড়িয়া থেকে হেঁটে কাছাকাছি পয়েন্ট কামারহাটি পৌরসভা ভবনের সামনের রবি ঠাকুরের মূর্তিটি এক পলক দেখে বাসে চড়েছি। শহরের আরেক প্রান্তমুখী বাস থেকে নেমে শ্যামবাজারের মোড়ে নেতাজি মূর্তিতে আকৃষ্ট হয়ে ভাবছি কলকাতার রূপান্তর নিয়ে।

মধ্যযুগের শেষ বেলায় ইংরেজ কোম্পানির হাতে তৈরি শহরটি কয়েক শ বছরে সমাজ-রাজনীতি-ধর্ম-সংস্কৃতির নানা অদল-বদলের পথে যেন হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়েছে। চেনা আর অচেনা অবয়বে মনে হলো বার বার দোলা দিচ্ছে উপমহাদেশের প্রাচীনতম শহর কলকাতা।

জনবহুল-চলবহুল মোড়ের ভয়াবহ ভিড় ঠেলে সন্তর্পনে ট্রাম রাস্তা এড়িয়ে পায়ে পায়ে সামনে এগুতে থাকি। গন্তব্য কলকাতার হৃৎপিণ্ডের দিকে। খানিক চলার পর মোহনবাগান ক্লাবের পাশের ফুটপাতে টগবগে গরম তেলে ভাজা নানা খাদ্যের লোভ সামাল দিতে পারিনা। 'আপনার না ফ্যাটি লিভার!' সহযাত্রী-ভ্রমণ সঙ্গী আঁতকে ওঠেন। আমি মুখে কুলুপ এঁটে চুপ থাকি। একমনে খাওয়া শেষ করার পর কথার বদলে সৌজন্যের এক ফালি হাসি উপহার দিই বন্ধুকে, যার অর্থ হলো, 'আপনার সুপরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। তবে সব সময় সব পরামর্শ গ্রহণ করা যায় না!'

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/21/1537516065681.jpg

সমঝদার বন্ধুও কথা না বাড়িয়ে মুচকি হাসিতে আমাকে সঙ্গ দিয়ে কলকাতার ঐতিহাসিক পথে পা বাড়ান। চারপাশে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের রোশনাই আর স্টার থিয়েটারের নবরূপের আড়ালে তখন ধীর লয়ে খেলা করছে হারিয়ে যাওয়া ঔপনিবেশিক আমলের কিছু অন্ধকার। আমিও ধীরে ধীরে হাতিবাগান, হেঁদুয়া পেরিয়ে পুরনো কলকাতার এক ভাঙাচোরা বাড়ির বহুম্তর অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থমকে গেলাম।

আচমকা মনে হলো, এ কোন জগতে এসে পৌঁছেছি? ফ্রানৎস কাফকা বা স্যামুয়েল বেকেট-এর নির্মিত জগতের সঙ্গে ঘুণ ধরা পুরনো কলকাতার এতো মিল যে মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। অথচ এঁরা কেউই কলকাতায় আসেন নি। কিন্তু এঁরা না এলেও কয়েক বার এসেছেন এঁদের সমকক্ষ বলে বিবেচিত আরেক জন। তিনি সাংঘাতিক স্বীকারোক্তির জন্য সমকালীন পৃথিবীতে বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। নাম গুন্টার গ্রাস। নোবেল বিজয়ী জার্মান সাহিত্যিক।

গ্রাসের দেখা কলকাতা লুই মাল কিংবা দমিনিক লাপিয়েরের মতো নয়। ‘হিরোশিমা সানামুর’-এর রচয়িতা এবং কোনো দিন কলকাতায় না-আসা ফরাসি ঔপন্যাসিক মার্গারেট দ্যুরাসের ‘ইন্ডিয়া সং’-এ কলকাতা যেমন হয়েছে এক চূড়ান্ত-অবর্ণনীয় যন্ত্রণার বিমূর্ত প্রতীক, গুন্টার গ্রাসের দেখা কলকাতা ঠিক তেমন না হলেও কাছাকাছি। বরং গ্রাসের কাছে কলকাতা হলো শুধুই এক ‘জঞ্জালের চাঙারি’। গ্রাসের লেখনি ও অভিজ্ঞতার সততা, সম্মান ও বিশ্বাস্যতা নিয়ে কারো মনে বিন্দুমাত্র প্রশ্ন নেই। সবাই তাই তিলোত্তমা চেহারার আড়ালে লুকিয়ে থাকা কলকাতার অন্ধকার তাকিয়ে তাকিয়ে খোঁজে । যেমনটি আমি উত্তর কলকাতার একটি প্রাচীন বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেয়েছিলাম। প্রতিটি ম্যাগাসিটি আর কসমোপলিটনেরই এমন দ্বান্দ্বিক চেহারা থাকে। একদিকে আলোর প্রপাত তো অন্যদিকে অন্ধকারের কুণ্ডলী। কলকাতাও নগরায়নের এই নিয়তির বাইরে থাকতে পারেনি।

গ্রাসের কলকাতা দর্শন ও ভাবনার স্থানাঙ্ক একটি নয়, একাধিক। এটি কলকাতা-ক্ষুব্ধ পশ্চিমী ভ্রামণিকের মর্মান্তিক বিবরণ। এবং এটি ভিনদেশী এক শিল্পীর দেখা মৃত্যুময়তা। যে শিল্পী মৃত্যুময়তার সামনে দাঁড়িয়ে এক প্রাক্তন-আক্রান্ত হিসাবে মানব-অস্তিত্বের চিরকালীন প্রশ্ন নিয়ে উদ্বেলিত। যে শিল্পী তাঁর স্বদেশীয় জার্মান ভাষায় একজন Hofnarr বা বিদূষক, যিনি অরুচিকর বাস্তব থেকে সত্য নিষ্কাষণ করাকেই নিজের পবিত্র কর্তব্য-কর্ম মনে করেন।

আমি মোটেও তা নই। আমি স্মৃতিভারাক্রান্ত পর্যটক। যে স্মৃতি ব্যক্তিগতভাবে আমার নয় অথচ আমাকেই বহন করতে হচ্ছে সামাজিক-ভৌগোলিক পরিবর্তনের রাজনৈতিক অতীত, ঐতিহ্য ও পরম্পরায়। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকেই লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে বয়ে চলেছে তেমনই ভারী ও বেদনাদীর্ণ স্মৃতির সঞ্চালন। ব্যক্তি থেকে পরিবার ও গোষ্ঠী ছাড়িয়ে তা প্রবহমান প্রজন্ম-প্রজন্মান্তরে।

পথ চলতে চলতে ভাবছি কলকাতার নানা বিশেষণ নিয়ে। ‘সংস্কৃতির শহর’, ‘সিটি অব জয়’ এবং আরও কত কি নামে ডাকা হয় কলকাতাকে! হাল আমলে বেশ ভারিক্কি একটা শিরোনাম দিয়েছেন লেখক সুধীর চৌধুরী: ‘আজব’! যদিও শহর কলকাতার নানা বিশেষ শোনা যায়। তার মধ্যে ‘আজব’ শব্দটা আজকাল বেশ চলছে এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম এই শহরটির ক্ষেত্রে। কারণ জন্মের ৩২৮ বছরে ভোজবাজির মতো প্রতিদিনই কলকাতা বদলাচ্ছে। আজব সে পরিবর্তন। ইংরেজ কোম্পানির সাহেব জোব চার্ণকের তিনটি অখ্যাত গ্রাম উন্নয়ন, ক্ষয়, দারিদ্র্য মিশিয়ে আজগুবি চেহারা পেয়েছে। ‘ক্রেতাই ঈশ্বর’ বলে যে আদি কলকাতায় দোকানদারি শুরু হয়েছিল, তা এখন ধনী-গরিবের মিলিত মানবস্রোতে বিশ্বের অন্যতম বড় মার্কেটপ্লেস।

ধনী-গরিবের চিত্রটিও কলকাতায় বেশ আজব। গরিব কলকাতা মিশে আছে মহানগরের বস্তি জীবনে। যদিও বস্তি যে কোনও শহরের সহজাত, তথাপি কলকাতার বস্তিবাসীর সংখ্যাটি বিরাট। ১৪ লাখ লোক থাকে কলকাতার বস্তিতে! কলকাতার বস্তি যেন পাল্লা দিচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তির সঙ্গে। আর মুম্বাই প্রথম হতে লড়ছে নাইরোবির কিবেরি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের খায়েলিশা বস্তির সঙ্গে! পরিসংখ্যান অবশ্য জোর লড়াইয়ের ইঙ্গিত দেয়। কারণ, কলকাতার ৩১ শতাংশ মানুষই বস্তিবাসী। দিল্লিতে বস্তিবাসীর সংখ্যা শতকরা ১১ জন আর চেন্নাইয়ে শতকরা ২৯ জন।

ধনী কলকাতার সঙ্গে গরিব কলকাতার সম্পর্কটাও বেশ জটিল। ধনী কলকাতার চোখে গরিব কলকাতার অস্তিত্ব অসহ্য। অথচ গরিব কলকাতা না থাকলে ধনী কলকাতা অচল। বন্ধ রান্নাঘর, গাড়ির চাকা, অফিসের তালা। সাহিত্য বা চলচ্চিত্রের কোথাও কোথাও সংলাপের ভাষায় সম্পর্কটা চিত্রিত হতেও শোনা যায়। এক গৃহকর্মী মুখ দিয়ে বলানো হয়েছে, ‘আমি যদি না আসি তা হলে তোমাদের আপিস যাওয়া হবে না। আপিস না গেলে মাইনে পাবে কোত্থেকে? আমরা কাজ করে দিই বলে তোমাদের চলে, না হলে কীভাবে চলত ভেবেছ?’

পৃথিবীর পালাবদলের টানে কলকাতারও কত কত পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। সমাজ-রাজনীতি, এমনকি প্রতিটি দিনও বদল হচ্ছে। শহর বাড়ছে। লোক বাড়ছে। ইতিহাসের কঙ্কালের উপর দাঁড়াচ্ছে নতুন চাকচিক্য। শুধু বৈষম্য আর শ্রেণি বিভাজনের কোনও বদল হচ্ছে না। এই একটি মাত্র ক্ষেত্রে কলকাতা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যসব শহরগুলোর বড় আপন, বড় নিকটজন, একান্ত সহযাত্রী।

অনাদি কাল থেকেই দারিদ্র্যের মৈত্রীতে বিশ্বের শহরগুলো অভিন্ন আত্মীয়তার মেলবন্ধনে দাঁড়িয়ে রয়েছে একই সমান্তরালে। অতি দূরের নিউইয়র্ক, টোকিও, লাস ভেগাস, চট্টগ্রাম, ঢাকা, কলকাতা, বেঙ্গালুরু মিশে আছে বুকে বুকে। অতি-আধুনিক ও অতি-অগ্রসর নাগরিক জীবন ও আরবান উন্নয়ন মোটেও বদলাতে পারছে না বড় বড় শহরের পাদ প্রদীপের তলদেশের না-পাওয়ার হাহাকার নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষজনের নিবিড় নৈকট্য! বিশ্বায়ন তথ্য-প্রযুক্তি আর দ্রুত যোগাযোগের মসৃণ পথ খুলে দেওয়ার আগেই ভাগ্যন্বেষী গরিবের দল মাইগ্রেশনের লুকানো পথ খুঁজে খুঁজে পৌঁছে গেছে এক শহর থেকে আরেক শহরে। সেইসব ভাগ্যহত মানুষের জীবন সংগ্রামের চলমান সংস্কৃতিতে-সৃষ্ট আরবান ল্যান্ডস্কেপ না দেখতে পেলে নগরের সবটুকু কখনোই দেখা হয় না।

   

বয়সের ভারে শীর্ণ, তবু আজ ও ছুটেছে ১৫১ বছরের ট্রাম



ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, কলকাতা
-কলকাতার রাজপথে এখনও ছুটে চলছে ট্রাম

-কলকাতার রাজপথে এখনও ছুটে চলছে ট্রাম

  • Font increase
  • Font Decrease

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলেছে সবকিছু। হয়েছে বিবর্তন। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নুতনকে স্বাগত জানিয়েছে মানুষ। পুরনো যা কিছু এখন দেখা যায় জাদুঘরে কিংবা কারও ব্যক্তিগত সংগ্রহে। একইভাবে সময়ের সঙ্গে তাল রেখে বদলেছে এক সময়ের ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতা । সময়ের পরিবর্তনে এখন যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রধান শহর।

অন্য আর পাঁচটা শহরের মত গতি পেয়েছে কল্লোলিনী কলকাতা। তবে ১৫১ বছর আগের কলকাতার একটা খন্ডচিত্রের অংশ ট্রাম এখনও দিব্যি চলছে কলকাতার বুকে । গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি ছিল কলকাতার ট্রামের জন্মদিন । ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে প্রথমবার শুরু রাস্তা দিয়ে চলে ঘোড়ায় টানা কাঠের ট্রাম।

শিয়ালদা থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত প্রথমবার ছুটেছিল সেই ট্রাম। এই বছর কলকাতার সেই ট্রাম যাত্রা পা রাখতে চলেছে একশো একান্ন বছরে ৷ তবে প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ট্রামেরও বিবর্তন হয়েছে। ১৯০২ সালের ২৭ মার্চ ধর্মতলা খিদিরপুর-রুটে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম চলেছিল।

অনেকেই হয়তো জানেন না যে, ভারতে কলকাতা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি শহরে একসময় চলত ট্রাম ৷ কলকাতার পর তৎকালীন মাদ্রাজ, দিল্লি, বোম্বে, কানপুর, ভাভনগর, নাসিক এবং পাটনাতেও শুরু হয়েছিল ট্রাম পরিষেবা। এমনকী ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় করাচি এবং কলম্বোতেও ছিল ট্রাম পরিষেবা। তবে সেগুলি সবই পরে বন্ধ হয়ে যায়। কল্লোলিনী কলকাতার জীর্ণকায়ে ট্রাম কোনওমতে বাঁচিয়ে রেখেছে নিজের অস্তিত্ব।

একসময় রমরম করে স্বমহিমায় শহরের বুক চিঁড়ে ঘণ্টির শব্দ করে দৌঁড়ে যেত ট্রাম ৷ সেই দৃশ্য এখন বড়ই বিরল । ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকেছে ট্রামের ভবিষৎ । তাই বোধহয় ট্রামের ১৫১ বছর নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ একেবারেই নেই । তবে শহরের ট্রামপ্রেমী সংগঠন ক্যালকাটা ট্রাম ইউজারস অ্যাসোসিয়েশন, ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন ও ট্রাম যাত্রা বলে একটি সংগঠনের উদ্যোগে এই উপলক্ষ্যে এক বিশেষ উদ্যোগ নেয়।

কলকাতায় ট্রাম পরিবহণ ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের ট্রাম নেটওয়ার্ক তুলনায় অনেকটাই অন্যরকম। শতাব্দী প্রাচীন এই ট্রামগুলি এখনও পরিষেবা দিয়ে চলেছে । সাধারণ মানুষের মতে শুধুমাত্র ট্রামকে উন্নত করলেই চলবে না। ট্রাম এবং অন্যান্য পরিবহণ ব্যবস্থা যাতে একে অপরের সমস্যা সৃষ্টি না-করে পরিষেবা দিতে পারে সেইভাবে পরিকল্পনা করতে হবে ।

ট্রামের তার দেখিয়ে মহানগর কলকাতার পরিচয় তুলে ধরতে চেয়েছিলেন সত্যজিৎ। কিন্তু কলকাতার পরিচয় বহনকারী সেই ট্রাম এখন যেন ‘ফেয়ারওয়েল’ পাওয়ার অপেক্ষায়। দেড়শো বছর ধরে শহরের ‘ঐতিহ্য’ হয়ে থেকে গেলেও ‘হেরিটেজ’ তকমা জোটেনি তার।

;

হুগলির কোন্নগরে অনাদরে ভাষাশহিদ শফিউরের জন্মভিটা!



ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, কলকাতা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি’ ১৯৫২ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা শহরের একদল দামাল ছেলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে বর্বর পাকিস্তানি পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন। রক্তে ভেসে গিয়েছিল ঢাকার রাজপথ। সেইদিন স্মরণে ১৯৯৯ সালের ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সারা পৃথিবীর মানুষ এই দিনটিকে 'ভাষা দিবস' হিসেবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

সেদিনের সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের যে বীর শহিদেরা মাতৃভাষার সম্মানার্থে প্রাণ দিয়েছিলেরন, তাদের মধ্যে ছিলেন রফিক, জব্বার , শফিউর, সালাম, বরকতের মতোন যুবক। তাদের মধ্যে শফিউর রহমান ছিলেন ওপার বাংলার মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরের কাছে জিটি রোডের ওপর এখনো তাদের বাড়িটি শহিদের জন্মভূমি হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে অত্যন্ত অবহেলায় ও অনাদরে!

অত্যন্ত আক্ষেপের বিষয় একজন ভাষাশহিদের জন্মভিটা আজ ধ্বংসের মুখে। ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি এই মহান ভাষাশহিদের জন্ম হয় কোন্নগরে। শফিউর রহমানের বাবা ছিলেন ঢাকার পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট। কোন্নগর হাইস্কুলে পড়া শেষ করে কলকাতা গভর্মেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে আইএসসি পাস করার পর ১৯৪৮ সালের শফিউররা সপরিবারে ঢাকায় চলে যান। ঢাকা হাইকোর্টে কেরানির পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে মাতৃভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যদের সঙ্গে সামিল হয়েছিলেন শফিউরও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৪ ধারা অমান্য করে রফিক, জব্বার,সালাম, বরকত, শফিউরসহ হাজারও ভাষাপ্রেমী মানুষ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সেদিনের সেই বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকা শহরের মানুষ শামিল হয়েছিলেন। ক্ষিপ্ত পাকিস্তানি পুলিশ সেই বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে দামাল ছেলেদের দেহ মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। সেদিন প্রভাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা রক্তের নদীতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু তাতেও দমেনি বিক্ষোভ সংগ্রাম। তাদের সেই মরণপণ সংগ্রাম আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছিল। অবশেষে, ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তারপর থেকেই এপার ওপার দুই বাংলা মিলিয়ে এই দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছে। কিন্তু সব থেকে বড় আক্ষেপের বিষয়, সেদিনের সেই মরণপণ সংগ্রামের অন্যতম যোদ্ধা শফিউর রহমান যার জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে, তাঁর সেই জন্মভিটাটি আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে অত্যন্ত অনাদর ও অবহেলায়।

সম্প্রতি, যখন পশ্চিমবঙ্গের বড় বড় দেশপ্রেমী মনীষীদের স্মরণে রাখতে তাঁদের জন্মভূমি এবং কর্মক্ষেত্রগুলি সরকার স্বীকৃতি দিয়ে তীর্থস্থানে পরিণত করেছে, কিন্তু সেই ১৯৫২ সালে ঢাকার মাটিতে শহিদ হওয়া সফিউর রহমানের কথা আজ আর কেউ আর মনে রাখেননি। যে বিদ্যালয়ে শফিউর পড়াশোনা করেছেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে সেই কোন্নগর হাইস্কুলের একপাশে জিটি রোডের ধারে ছোট্ট একটি শহিদ বেদি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই প্রতিবছর গুটিকয়েক মানুষ যারা শফিউর রহমানকে চেনেন, ভাষা আন্দোলনের বীরগাথার কথা জানেন, তারা ’২১-এর সকালে কয়েক মুঠো ফুল দিয়ে শহিদবেদিতে তর্পণ করেন।

কোন্নগরবাসীর অত্যন্ত আক্ষেপ, এই শহরে এত বড় একজন ভাষা শহিদ জন্ম নিয়েছিলেন, শিক্ষার প্রথম পাঠ হিসেবে এখানকার কোন্নগর হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন, তাঁর কথা আজ আর কেউই মনে রাখেননি। স্থানীয়দের দাবি, শফিউরের বাড়িটি অন্তত সংরক্ষণ করা হোক অথবা তাঁর স্মরণে এই শহরে যদি একটি মিনার তৈরি করা হয়, তাহলে ভৌগলিক সীমানা অতিক্রম করে আপামর বাঙালি সেই গৌরবের অংশীদার হতে পারবেন। সেইসঙ্গে অমরত্ব পাবে ভাষা সংগ্রামের ইতিহাসও!

;

হেলিকপ্টার শট: 'শাকাহারি আমিষ' সংস্থায় বিনিয়োগ ধোনি-র!



ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, কলকাতা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শাকাহারি আমিষ...তাও আবার হয় নাকি? এ যেন ঐ সোনার পাথর বাটির মত! আর এবার তাকে ঘিরেই এক বিপুল ব্যবসায়িক এবং বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দ্বার যেন খুলে যাচ্ছে।

উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ভারতবর্ষের যে সংস্থা এই ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য এগিয়ে এসেছে, তাকে বিনিয়োগ করে বসে আছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং অন্যতম জনপ্রিয়তম ইয়ুথ আইকন মহেন্দ্র সিং ধোনি বা মাহি। উল্লেখ করা যেতে পারে ধোনি তার ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে কিছুটা অ-ক্রিকেটীয় শট বা উদ্ভাবনী শট - যেমন হেলিকপ্টার শট - এইসবের জন্যই বিখ্যাত ছিলেন। আর এইবার ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগের জগতে প্রবেশ করেও বেছে নিবেন এক উদ্ভাবনী ব্যবসা।

শাকাহারিকে একটু উদ্ভাবনী উপায়ে লিখে শাখা হ্যারি- বাজারে এই সংস্থা আনতে চলেছে শাকসবজি বা গাছ পাতাভিত্তিক আমিষ খাদ্যদ্রব্য। ইতিমধ্যেই তারা বেশ কিছু এই ধরনের খাদ্যদ্রব্য বাজারে এনেছে এবং যা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর এবার তারা আরেকটি নতুন ব্র্যান্ড বা সাব-ব্র্যান্ড - শেফসক্লুসিভ নিয়ে দখল করতে চাইছে হোরেকা বা হোটেল রেস্টুরেন্ট এন্ড ক্যাফে - বাজারের এই অংশটিকে বা এই সেগমেন্টটিকে।

এর পেছনে কারণ ও যথেষ্ট রয়েছে। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে অত্যন্ত দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে। ভারতের বাজারে খুব শিগগির এই হোরেকা সেগমেন্টের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাজারে ক্রেতা বা উপভোক্তাদের পছন্দ এবং চাহিদা নিয়মিতই বদলাচ্ছে। নিরামিষ খাবারের দিকে যেমন ঝোঁক বাড়ছে, প্ল্যান্ট-বেসড প্রোটিন এর চাহিদাও বাড়ছে। এই দুইয়ের মধ্যে একটা সমন্বয় বা সামঞ্জস্য সাধনের লক্ষ্যেই শাকাহারি বাজারে নিয়ে আসছে শেফসক্লুসিভ। এই ব্র্যান্ডের অধীনে বাজারে আসছে হরেক রকমের স্নাক্স, স্টার্তার্স, মিলস এবং অ্যাকম্পানিমেন্টস। এবং এসবগুলোই আসছে উপভোক্তাদের স্বাদের সঙ্গে কোনরকম আপস না করেই।

উল্লেখ করা যেতে পারে, আর এক ক্রিকেটীয় মহা তারকা এবং প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলিও এই ধরনের একটি প্লান্ট বেসড প্রোটিন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন।

;

সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন অক্সিজেন সাপোর্টে



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলা আধুনিক গানের শিল্পী কবীর সুমন বুকে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে তাঁকে অক্সিজেন সাপোর্ট রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার। তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় পত্রিকাটির অনলাইন ভার্সনে এ খবর জানানো হয়।

খবরে বলা হয়, “অসুস্থ সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন। বুকে সংক্রমণ নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ‘গানওয়ালা’। অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাঁকে। সূত্রের খবর, সোমবার দুপুর ৩টে নাগাদ সঙ্গীতশিল্পীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশালিটি ব্লকে ভর্তি করানো হয় তাঁকে।”

এদিকে, শিল্পী তাঁর ফেসবুকে ওয়ালে এক পোস্টে অসুস্থতার কথা জানিয়ে লিখেছেন, ‘শ্বাসকষ্ট নিয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। শিগগির সেরে উঠব। চিন্তা করবেন না।’

দৈনিক আনন্দবাজার হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন সুমন। সোমবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বুকে সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর হৃদযন্ত্রেও সমস্যা রয়েছে শিল্পীর। তীব্র শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্টে ভুগছিলেন।

তাঁর চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে, তাঁর শারীরিক পরীক্ষাও করা হয়েছে। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দৈনিকটি।

;