নির্যাতিত মানবগোষ্ঠী শান্তি ও নিরাপত্তা খুঁজে পায় ইসলামের ছায়াতলে



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মীয়, জাতিগত, ভাষাগত সংখ্যালঘুর মানবাধিকারের দাবিতে সোচ্চার বিশ্ব সম্প্রদায় আইনগত ও সামরিক-বেসামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেও বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত মানবতার আহাজারি থামাতে পারছে না। বরং ইসলামে সংখ্যালঘুর অধিকার সংরক্ষণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত থাকার পরেও মুসলিমরাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। ‘ইসলামে সংখ্যালঘুর অধিকার’ সম্পর্কে ঐতিহাসিক পর্যালোচনা: পর্ব- ৪

পারস্যের মতো একই মানবিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় আফ্রিকা ও স্পেন বিজয়ের সময়েও। আরিয়ান, পেলাসজিয়ান ও অন্যান্য বিরোধী মতের যে লোকেরা ঐতিহ্যগতভাবে এতকাল ছিল গোঁড়াদের হিংস্রতা ও বিদ্বেষের শিকার, আইনবর্জিত সৈনিকদের তৃপ্তির খোরাক এবং নৈতিকতাবর্জিত পুরোহিত শ্রেণির রসনার বস্তু; সে সব নির্যাতিত-নিপীড়িত মানবগোষ্ঠী শান্তি ও নিরাপত্তা খুঁজে পায় ইসলামের ছায়াতলে।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে যে ইহুদি সম্প্রদায়ের শত্রুতার ফলে নবগঠিত মদিনার ইসলামী গণরাজ্য সূচনাকালেই প্রায়শ বিপর্যস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রায় ধ্বংসের মুখে এসে পড়েছিল- সেই ইহুদিরাও মুসলমানদেরকে রক্ষক হিসাবে পেল। ইতিহাস স্বাক্ষ্য দিচ্ছে যে, খ্রিস্টান কর্তৃক অপমানিত, লাঞ্ছিত, লুণ্ঠিত ও ঘৃণিত হয়ে ইহুদিরা অমানবিকতা থেকে রক্ষা পেতে ইসলামের শাসন বিধানের মধ্যে আশ্রয় ও নিরাপত্তা গ্রহণ করায় এক মনুষ্যত্বপূর্ণ, স্বাধীন ও নিরাপদ জীবনের সন্ধান লাভ করে, যা তাদেরকে দিতে নিষ্ঠুরভাবে অস্বীকার করেছিল খ্রিস্টান জগত।

বস্তুত পক্ষে, ইসলাম মানুষকে সামগ্রিক সাম্য ও নিরাপত্তার এমন একটি ঐশ্বরিক বিধান দান করেছে, যা স্পষ্টতা ও সরলতার কারণে যতই পুরাতন হোক-না-কেন, জাগতিক সভ্যতার উন্নয়ন-অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পরম উৎকর্ষ লাভের উপযুক্ত। ইসলাম রাষ্ট্রের জন্য দান করেছে একটি মানবিক অধিকার ও কর্তব্যের সঠিক উপলব্ধিভিত্তিক নমনীয় শাসনতন্ত্র, যার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যই হচ্ছে নাগরিক সমাজের জন্য সার্বজনীন সুশাসন নিশ্চিত করা। ইসলাম কর সীমিত করে, সব মানুষকে আইনের দৃষ্টিতে সমান করে দেয়, এবং স্বায়ত্তশাসনকে আদর্শ নীতি বলে গ্রহণ করে। ইসলাম নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে আইনের অধীনস্থ করে দিয়ে সার্বভৌম ক্ষমতার একক বা স্বেচ্ছাচারী অপব্যবহারের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে আর সেই নিয়ন্ত্রণকারী আইনটি ঐশ্বরিক নিদের্শ ও ধর্মীয় অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং মানবিক স্খলন, পতনমুক্ত হয়ে একটি উন্নততর মানবিক ও নৈতিকভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়।

ফলে বলা যায়, ইসলামের শাসন নীতিসমূহ, বিশেষ করে অমুসলমান ও সংখ্যালঘু সংক্রান্ত বিধানগুলোর প্রতিটিই এর প্রতিষ্ঠাতাকে অমর করেছে এবং এর সৌন্দর্য ও কার্যকারিতা জীবন বিধান হিসাবে ইসলামের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। অতএব, ঐতিহাসিকভাবে দেখতে পাওয়া যায় যে, ইসলামী জীবন ব্যবস্থা এর রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে এমন শক্তি ও তেজ দান করেছে, যা অন্য যে কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার শক্তি ও তেজের চেয়ে বেশি এবং অন্য যে কোনো আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থার চেয়ে গুণগত বিচারে শ্রেষ্ঠ। যে কারণে, এর প্রতিষ্ঠাতার সংক্ষিপ্ত জীবনকালের মধ্যেই ইসলামের এই ব্যবস্থা রোমান সাম্রাজ্যের চেয়েও অধিক বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে; ব্যবস্থাটি এর মৌলিক চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়ে এবং এর অধীনস্থ অঞ্চল ও মানুষের মধ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিপীড়িত মানবতার উদ্ধারের একটি কার্যকরী, সাম্যভিত্তিক, সম্মানজনক, মানবিক ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হিসাবে মানব সমাজে আদরণীয় হয়।

ইসলামী জীবন-সমাজ-রাষ্ট্র-অর্থ ব্যবস্থায় ভারসাম্য, ন্যায়বিচার ও সুশাসনের ভিত্তিতে নাগরিক সমাজের সকল সদস্যের মধ্যে ভারসাম্য সৃজনের পেছনে প্রাথমিক শাসকের আদর্শিক দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা, দায়িত্বশীলতা, ত্যাগ, মহত্ত্ব আর স্বচ্ছতার অনুভূতিজাত আচরণ ও কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী উজ্জ্বলতম উদাহরণ হয়ে রয়েছে। শিবিরে, নগরে, মসজিদে, গৃহে, যে কোনো স্থানে তাদের সঙ্গে জনসংশ্লি¬ষ্ট বিষয়ে যে কোনো লোকই, যে কোনো সময়ে দেখা, সাক্ষাৎ ও যোগদান করতে পারতেন। প্রত্যেক শুক্রবার জুমার নামাজের পর শাসক বা আমীর উল-মোমিনীন প্রকাশ্য জনসমক্ষে ওিই দিনের উল্লেখযোগ্য মনোনয়ন ও ঘটনাবলীর বিবরণ দিতেন। প্রাদেশিক শাসনকর্তারা এই উদাহরণ অনুসারে কাজ করতেন।

এ হল সর্বোত্তম গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি; সর্বোৎকৃষ্ট জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা। ইসলামের খলিফা, যিনি একই সঙ্গে শাসনতান্ত্রিক ও ধর্মীয় নেতা, তিনি কোনো ঐশ্বরিক আবরণ বা পুরোহিততান্ত্রিকতার আড়ালে অবস্থান করতেন না। রাষ্ট্রের প্রশাসনের ব্যাপারে তিনি তার প্রজাদের কাছে দায়ী থাকতেন। বিশেষ করে, প্রাথমিক খলিফাদের মধ্যে নাগরিক সমনাধিকার ও জনকল্যাণের প্রতি কঠোর নিষ্ঠা আর জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে অনাড়ম্বর-সরলতা ছিল আল্লাহর ভয় আর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঠিক অনুসরণ থেকে উদ্ভূত। তারা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মতই মসজিদে প্রচার ও প্রার্থনা করতে; বাড়িতে গরীব ও দুঃখী মানুষকে নিজের সঙ্গে একত্রে বসিয়ে আপ্যায়িত করতেন; সকলকে সমান চোখে দেখতেন; অতি সামান্য অভিযোগ শুনতেও ক্রুটি করতেন না। অনুচরবর্গ নেই, জাঁকজমক বা উৎসবানুষ্ঠান নেই, তারা শাসন করতেন মানবিক হৃদয়বৃত্তি আর নিজেদের উন্নত-নৈতিক চরিত্রের বলে।

মানুষের জন্য নিজের সমস্ত কিছু বিলিয়ে দিয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যেভাবে জীবন-যাপন করেছেন, তার অনুসারীগণও (রা.) একই সরল আর সাদাসিদা পন্থা অনুসরণ করেন। হজরত আবু বকর (রা.) মৃত্যু শয্যায় তার উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে যান শুধু এক প্রস্ত পোষাক, একটি উট আর একজন খাদেম। জেরুজালেমের আত্মসমর্পণ গ্রহণ করতে হজরত ওমর (রা.) সেখানে গিয়েছিলেন মাত্র একজন খাদেম সঙ্গে নিয়ে এবং তাকে সমান সুযোগ ও আরাম দিয়ে। হজরত ওসমান (রা.) মুক্ত হস্তে তার সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছেন। হজরত আলী (রা.) জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ভাণ্ডার থেকে মানুষকে অকাতরে দান করে তাদেরকে নৈতিকভাবে আলোকিত করার পাশাপাশি সরকারী অর্থকোষ থেকে প্রাপ্ত ভাতা দুস্থ ও পীড়িতদের মধ্যে বিতরণ করে দিতেন। তারা সকলেই ছিলেন কোরআন-সুন্নাহর আলোকে রচিত নীতি ও আচরণের দ্বারা অনুপ্রাণিত ‘মানবতার মহত্ত হেফাজতকারী’; মুসলমান-অমুসলমান-সংখ্যালঘু নির্বিশেষে সকল মানুষের শান্তি, সম্মান, মর্যাদা, নিরাপত্তা, আমানত আর সুখ-সুবিধার রক্ষাকারী।

ইসলামের মহান প্রতিষ্ঠাতার প্রথম প্রতিনিধি হজরত আবু বকর (রা.)-এর স্বল্পকালীন সময়ের কেন্দ্রীয় সরকারকে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় মরুউপজাতিগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার কাজে। দ্বিতীয় প্রতিনিধি হজরত ওমর (রা.) অধীনস্থ অঞ্চল ও এর মানবমণ্ডলীর সামগ্রিক বিকাশ, উন্নয়ন ও কল্যাণের প্রচেষ্টাকে আরেক ধাপ এগিয়ে নেন। তৎপরবর্তী হজরত ওসমান (রা.) এবং হজরত আলী (রা.) অন্তর্ঘাত ও বিভেদের মধ্যে শান্তি ও কল্যাণের প্রশ্নে আপোসহীন থেকে সামাজিক-রাষ্ট্রীয়-মানবিক স্বার্থে ব্যক্তিগত স্বার্থ, ক্ষমতা ও সুখ বিসর্জন দেওয়ার অনুপম নজির রেখে গেছেন।

এই চার জন মহতী প্রতিনিধির মাধ্যমে গড়ে ওঠা খোলাফায়ে রাশেদীনের সামষ্টিক শাসনামলে মুসলমানদের রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে সীমিত ক্ষমতার অধিকারী একজন নির্বাচিত নেতা কর্তৃক শাসিত একটি ন্যায়ভিত্তিক, নৈতিকতা ও সমানাধিকারের মূর্ত প্রতীক একটি জনপ্রিয় সরকারের প্রতিচ্ছবি। সরকার প্রধানের বিশেষ ক্ষমতা সীমাবদ্ধ ছিল বিভিন্ন প্রশাসনিক ও নির্বাহী বিষয়ের মধ্যে যেমন: পুলিশের ব্যবস্থাপনা, সৈন্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক বিষয়ের পরিচালনা, অর্থ সম্পর্কীয় আয়-ব্যয় ইত্যাদির মধ্যে। কিন্তু বিধিবদ্ধ আইনের কাঠামো, তথা কোরআন ও সুন্নাহর বিপরীতে কোনো কাজ করার অধিকার তার ছিল না। স্বাধীন বিচারালয়গুলো সরকারের ওপর নির্ভরশীল ছিল না। আদালতের সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত। আইন-আদালত কর্তৃক দণ্ডিত অপরাধীদের ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রাথমিক খলিফাদের ছিল না। আইন দরিদ্রের জন্য আর ধনীর জন্য, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তির জন্য আর মাঠের কাজে নিযুক্ত মজুরের জন্য, মুসলমান আর অমুসলমানের জন্য, সংখ্যাগুরু আর সংখ্যলঘুর জন্য, স্থায়ী বাসিন্দা আর মুসাফিরের জন্য সমান ছিল। যদিও সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থার আদি ও অকৃত্রিমতা শিথিল হয়ে যায়, তথাপি বহু পরেও, বংশানুক্রমিক শাসকদের আমলে, যে আমলে ক্ষমতা অনেক সময় সীমাহীন আর স্বৈরতান্ত্রিক হত, শাসকগণ আইনের সীমা লঙ্ঘন করলে আইনশাস্ত্রবিদদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ঘোষণা দ্বারা তাদেরকে সংযত ও নিবৃত্ত করা হত।

আরও পড়ুন: পর্ব-৩: ইসলামী রাষ্ট্র সব নাগরিকের জানমাল ও সম্মানের নিরাপত্তা দেয়

   

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;

গরমে মুমিনের আমল



মুফতি উমর ফারুক আশিকী
গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে, হে রব! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। আল্লাহতায়ালা তখন তাকে দুইটি নিশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি নিশ্বাস শীতকালে আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো।’ -সহিহ বোখারি : ৩২৬০

মুমিন বান্দারা দয়াময় আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয়ে গ্রীষ্মের এই গরম সময়ে অফুরন্ত সওয়াব লাভের জন্য বেশ কিছু আমল করতে পারেন। আশা করা যায়, মহান আল্লাহর দয়ায় পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে- ইনশাআল্লাহ।

তওবা করা : মানুষের পাপের কারণে মানুষের ওপর নানা ধরনের বিপদাপদ আসে, তাই প্রতিকূল অবস্থাকে অনুকূলে আনতে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করার কোনো বিকল্প নেই।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

ইবাদতে গাফিলতি না করা : গরমের কারণে ইবাদত-বন্দেগিতে গাফিলতি না করা। কারণ জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার গরমের চেয়ে বহুগুণে উত্তপ্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘পেছনে থাকা লোকগুলো আল্লাহর রাসুলের বিপক্ষে বসে থাকতে পেরে খুশি হলো। আর তারা অপছন্দ করল তাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করতে এবং তারা বলল, ‘তোমরা গরমের মধ্যে বের হয়ো না।’ বলো, জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত।’ -সুরা তওবা : ৮১

পিপাসার্তকে পানি পান করানো : হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, (এক দিন) আমি (নবীজিকে) বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, পানি পান করানো। -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৬৫

চলমান গরমের সময় শহরেরে বিভিন্ন স্থানে পথচারীদের জন্য ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা রাখা হয় বিভিন্ন অফিস, দাতব্য সংগঠন কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে। এটা অত্যন্ত ভালো কাজ, সওয়াবের কাজ।

কেউ পানি চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে নিষেধ করেছেন নবী কারিম (সা.)। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন কী জিনিস আছে, যা কেউ চাইলে না দিয়ে তাকে বিদায় দেওয়াটা ঠিক নয়?

তিনি বলেন, পানি, লবণ ও আগুন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই পানি সম্পর্কে তো আমরা জানি, কিন্তু লবণ ও আগুনের ব্যাপারে কেন বাধা দেওয়া যাবে না? তিনি বলেন, হে হুমায়রা! যে ব্যক্তি আগুন দান করল, সে যেন ওই আগুন দিয়ে রান্না করা যাবতীয় খাদ্যই দান করল।
যে ব্যক্তি লবণ দান করল, ওই লবণে খাদ্য যতটা সুস্বাদু হলো তা সবই যেন সে দান করল। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা সহজলভ্য, সে যেন একটি গোলামকে দাসত্বমুক্ত করল এবং যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৭৪

অন্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো : তীব্র গরমে অনেক সময় মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। বয়োবৃদ্ধরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বাইরে যেতে পারেন না, তখন তাদের সাহায্য করার মাধ্যমে সদকার সওয়াব মেলে।

হজরত আবু জার (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথ থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। -জামে তিরমিজি : ১৯৫৬

পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া : গরমে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও কষ্টে পড়ে। তাই মানুষের উচিত তাদের পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়; সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল, কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা কুকুরটাকে মুমূর্ষ করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ হতে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করালো), এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। -সহিহ বোখারি : ৩৩২১

গরমের কারণে দুনিয়ার এই হাহাকার পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে, মহান রবের সন্তুষ্টি পেতে বর্ণিত আমলগুলো বেশি বেশি করা জরুরি।

 

;

আগামীতে হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট: ধর্মমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ অনুসারে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে হজ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে।

তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত যে পোর্টালটি রয়েছে সেখানে আমরা নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করছি। আগামী দিনে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে ঢাকা হজ অফিসের সম্মেলন কক্ষে হজযাত্রী প্রশিক্ষণ ২০২৪ ’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্মমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ফরিদুল হক খান বলেন, আপনারা সকলেই যাতে সহী-শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে পারেন সেজন্যই মূলত আজকের এই প্রশিক্ষণ। আমরা প্রশিক্ষণের জন্য অত্যন্ত দক্ষ প্রশিক্ষক নির্বাচন করেছি। আপনারা যদি প্রশিক্ষণের প্রতি মনযোগী হতে পারেন তাহলে আপনারা হজের নিয়ম-কানুন, হুকুম-আহকাম, ধারাবাহিক আনুষ্ঠানিকতা- সবকিছু আয়ত্তে আনতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই প্রবণতা হলো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হজ পালন করা। হজ অনেক পরিশ্রমসাধ্য ইবাদত, এর জন্য শারীরিক সামর্থ্য থাকা বাঞ্চনীয়। অনেকেরই সেই শারীরিক সামর্থ্য থাকে না। যার কারণে তাদের পক্ষে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন করা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়।

তিনি বলেন, অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে জমানো সঞ্চয় দিয়েই হজব্রত পালন করতে যান। এদেশের অধিকাংশ মানুষেরই দ্বিতীয় বার হজ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি থাকে না। সে কারণে আপনার পরিশ্রম ও অর্থ যেন বিফলে না যায় সেজন্য অবশ্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)’র নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে হজ সম্পাদন করতে হবে। সহী ও শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে হবে।

ফরিদুল হক খান বলেন, সৌদি আরবে আপনার পরিচয় শুধু একজন হজযাত্রী নয়, আপনার পরিচয়-আপনি একজন বাংলাদেশি। আপনার আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চালচলনের মাধ্যমেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রকাশ পাবে।

তিনি সৌদি আরবের আইন-কানুন, নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিপালনে কোনরূপ বিচ্যুতি না ঘটে সেদিকে যত্নবান থাকার আহ্বান জানান।

এছাড়া, কারো জন্য দেশের ভাবমূর্তি ও সম্মান যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে বিশেষভাবে সর্তক থাকার জন্য হজযাত্রীদেরকে অনুরোধ জানান তিনি।

ধর্মসচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম, যুগ্মসচিব ড. মো. মঞ্জরুল হক ও ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।

প্রশিক্ষণে সরকারি মাধ্যমে নিবন্ধিত ঢাকার হজযাত্রীরা অংশগ্রহণ করছেন।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশঙ্কা এজেন্সি মালিকদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান অপারেটিং হজ এজেন্সির মালিকরা।

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কিছু ঊর্ধতন কর্মকর্তা এবং মক্কা হজ মিশনের কিছু কর্মকর্তাদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, গত ১৮ এপ্রিল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ ১ শাখা থেকে সৌদি সরকারের একটি চিঠির বরাতে জানানো হয়- আগামী ২৯ এপ্রিল হজ যাত্রীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাবে।

চিঠিতে আরও জানানো হয়, ২৯ এপ্রিলের মধ্যে আবশ্যিকভাবে হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করতে হবে। এজেন্সীর অবহেলার কারণে হজযাত্রীদের হজে গমন অনিশ্চিত হলে সে এজেন্সীর বিরুদ্ধে হজ ও উমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন ২০২১ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে, গত ১০ ফ্রেব্রুয়ারি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে জানানো হয়, সৌদি সরকারের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের আবাসন, ক্যাটারিং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল প্রকার অনলাইন চুক্তি (সার্ভিস কোম্পানি, পরিবহান, ইত্যাদি) সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ এখনো অনেক এজেন্সির ৮০ শতাংশ কার্যক্রম বাকি।

এমন অবস্থায় সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এবং সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে হজ এজেন্সি মালিকেরা অনুরোধ করেন।

এছাড়াও কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেন তারা। সেগুলো হলো- দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল হাজির মিনার জোন নির্ধারণ করে ই হজ সিস্টেম আপডেট করতে হবে। ফাইনাল ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা ও সকল এজেন্সির হজযাত্রী অনুপাতে টিকেট নিশ্চিত করতে হবে। মোয়াজ্জেমদের জন্য বারকোড ভিসার বিষয়টি নিশ্চিত করা। যাদের সৌদি একাউন্টে এখনো রিয়াল জমা হয়নি তাদের একাউন্টে দ্রুত রিয়াল জমার ব্যবস্থা করা।

তারা বলেন, বর্তমানে সৌদি একাউন্টে টাকা ঢুকতে দেড় মাস সময় লাগে। যদি কারো একাউন্টে ১ পয়সাও কম থাকে তাহলে তার হজে যাওয়া সম্ভব হবে না। এবং বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন চার্জ একবারে হিসাব করে পাঠানো অনেকটা অসম্ভব। এছাড়া যাদের এখনো মেননজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা হয়নি তাদের জন্য দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়াও ভিসা ইস্যু কার্যক্রম অন্যান্য বছরের মতো সর্বশেষ ফ্লাইটের এক সপ্তাহ পূর্ব পর্যন্ত চালু রাখার দাবি জানান তারা। আরও বলেন, অতীতে দেখা গেছে অনেকে হজ করতে যাওয়ার ইচ্ছে করলেও সকল প্রস্তুতির পর মারা গেছেন। আবার কেউ মারাত্মক রোগাক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে যেতে পারেন না। তাই সেই হজযাত্রীর পরিবর্তে তার পরিবারের অন্য কোন সদস্যদের যাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে জমাকৃত টাকা গচ্চা যেতো না। বর্তমানে যে অবস্থা আছে তাতে ভিসা ইস্যু এতো আগে বন্ধ হয়ে গেলে অহেতুক প্রচুর টাকা সৌদি আরবে চলে যাবে। এতে দেশের ক্ষতি হবে। যদি বিষয়টি সৌদি সরকারকে বুঝাতে আমরা সক্ষম হই তাহলে আমাদের বিশ্বাস সৌদি সরকার বাস্তবতা বুঝে অবশ্যই বিবেচনা করবেন।

;