সংখ্যালঘুর সমানাধিকার ও সম্মানের শিক্ষা দেয় ইসলাম



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মীয়, জাতিগত, ভাষাগত সংখ্যালঘুর মানবাধিকারের দাবিতে সোচ্চার বিশ্ব সম্প্রদায় আইনগত ও সামরিক-বেসামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেও বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত মানবতার আহাজারি থামাতে পারছে না। বরং ইসলামে সংখ্যালঘুর অধিকার সংরক্ষণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত থাকার পরেও মুসলিমরাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। ‘ইসলামে সংখ্যালঘুর অধিকার’ সম্পর্কে ঐতিহাসিক পর্যালোচনা: পর্ব- ২

সামান্যতম সংখ্যালঘু উৎপীড়নের আশঙ্কাকা এড়ানোর জন্য মুসলমানের পক্ষে জিম্মির জমি ক্রয় করা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং এমন ব্যবস্থা করা হয়েছিল যে- ইমাম, খলিফা, সুলতান বা সাধারণ মুসলমান, কেউই জিম্মিকে তার সম্পত্তি থেকে বেদখল করতে পারবে না। আইনের চোখে মুসলমান আর জিম্মি ছিল সম্পূর্ণ সমান।

খলিফা হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘তাদের রক্ত আর আমাদের রক্ত একই রকম।’ সমস্ত আধুনিক সরকার, এমন কি সবচেয়ে সভ্য সরকারগুলোও সমানাধিকার ও সংখ্যালঘু নীতির রক্ষার্থে ইসলাম ও এর ভিত্তিতে পরিচালিত শাসনকে তাদের আদর্শ করতে পারে। কারণ, তখন অপরাধের শাস্তির ব্যাপারে শাসক ও শাসিতের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হত না। ইসলামের আইন এই যে, কোনো মুসলমান একজন জিম্মিকে হত্যা করলে তার যা শাস্তি, জিম্মি কোনো মুসলমানকে হত্যা করলে তারও সেই একই শাস্তি।

প্রসঙ্গত খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর আমলের একটি ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে। বকর ইবনে ওয়াইল নামে জনৈক মুসলমান হাইরূত নামে একজন খ্রিস্টানকে হত্যা করে। বিচার শেষে খলিফা আদেশ দেন, ‘হত্যাকারীকে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের হাতে সমর্পণ করা হোক।’ অপরাধীকে হাইরূতের উত্তরাধিকারী হোনাইনের হাতে সমর্পণ করা হলে বদলা হিসাবে হোনাইন তাকে হত্যা করে।

পরবর্তীতে প্রসিদ্ধ হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (রহ.)-এর সময়েও অনুরূপ একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। নবী করিম (সা.), তার সাহাবি (রা.) এবং পরবর্তী উত্তরাধিকারীদের (রহ.) কর্ম ও আচরণের মধ্যে অমুসলমান ও সংখ্যালঘুদের প্রতি সমানাধিকার ও সম্মানজনক বিধানের শিক্ষাই লক্ষ্য করা যায়।

অমুসলমান ও সংখ্যলঘুদের প্রতি সহনশীল ও উদার ব্যবহারের উজ্জ্বল আরেক প্রমাণ হল, অমুসলমান ও সংখ্যলঘু জিম্মিগণ মুসলমানদের অসিয়তনামার নির্বাহক নিযুক্ত হতে পারতেন। তারা মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ কর্তা বা রেক্টর নিযুক্ত হতে পারতেন। আর ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের প্রয়োজন না থাকলে ধর্মস্বত্বে তত্ত্বাবধায়কের পদ পূরণ করতে পারতেন এবং কোনো সুযোগ্য বা গুণবাণ অমুসলমান মারা গেলে মুসলমানরা দলেবলে তার শেষকৃত্যে উপস্থিত থেকে অংশগ্রহণ করতেন। ইসলামের অধীনে প্রতিষ্ঠিত এমন অধিকার, মর্যাদা ও সম্মানের উদার উদাহরণ পৃথিবীর অন্য ধর্ম ও আদর্শের শাসনে শুধু বিরলই নয়; অকল্পনীয়ও বটে।

যদিও ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে সুস্পষ্ট কারণবশতঃ অমুসলমানদেরকে সামরিক নেতৃত্বে দেওয়া হয়নি; তথাপি অন্যান্য উচ্চবেতনযুক্ত ও দায়িত্বপূর্ণ পদে তারা মুসলমানদের সঙ্গে সম-অধিকারের ভিত্তিতে নিয়োগ লাভ করতেন। এই সমতা কেবল নীতিরই ব্যাপার থাকেনি; বাস্তবায়িতও হয়েছিল। কারণ ইসলামের সূচনাকালেই হিজরি প্রথম শতকে দেখতে পাওয়া যায় যে, খ্রিস্টান-ইহুদি-ম্যাজিয়ানরা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদে নিযুক্ত হয়েছেন। প্রাথমিক শাসকগণ প্রজাদের মধ্যে কোনোরূপ ধর্মভিত্তিক পার্থক্য স্বীকার করেননি। আর পরবর্তী শাসকগণও অতি যত্ন সহকারে অগ্রণীদের উদাহরণ অনুসরণ করেছেন।

মোদ্দা কথায়, ইসলামী দেশগুলোতে যদি অমুসলমান-সংখ্যালঘুদের আচরণের সঙ্গে ইউরোপীয় সরকারগুলোর অধীনে অখ্রিস্টানদের প্রতি ব্যবহারের তুলনা করা হয়, তবে সকল বিবেচনায় সমানাধিকার, মানবতা আর মহত্ত্বের পাল্লা ইসলামের দিকেই ঝুঁকবে। আরবের বাইরেও ইসলামী শাসন বা মুসলিম প্রশাসনে অভিন্ন সমানাধিকারের বিবরণ দেখা যায় অমুসলমানদের প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে।

দিল্লি¬র মুঘল সম্রাটদের অধীনে অমুসলিম হিন্দুরা সেনাবাহিনীর অধিনায়ক হতেন; প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিযুক্ত হতেন; সম্রাটের মন্ত্রী পরিষদ ও পরামর্শ সভায় সদস্যরূপে অন্তর্ভূক্ত হতেন। সুলতানী আমলের বাংলায় অমুসলমান হিন্দুরা ভাষা-শিল্প-সাহিত্য-ধর্ম প্রসারে রাষ্ট্রীয় পূর্ণ সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে নবজন্ম লাভ করেন। রাষ্ট্রীয় উচ্চপদে তাদের অবাধ বিচরণ বর্তমানকালের তথাকথিক সমানাধিকারের প্রবক্তাদের কাছেও ভাবনাতীত বিষয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

আজকে, এই একবিংশ শতাব্দীতেও কেউই জোর গলায় বলতে পারবে না যে, ইউরোপ-আমেরিকার পশ্চিমা আদর্শের অধীনস্থ মিশ্র জাতি ও ধর্ম বিশিষ্ট দেশগুলোতে বিশ্বাস, ধর্ম, বর্ণ, অঞ্চল, সংস্কৃতি ও বংশের ভিত্তিতে কোনো পার্থক্য নেই!

প্রসঙ্গত ইসলামে রাষ্ট্র ব্যবস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্রষ্টা মানুষের মধ্যে যেসব গুণাবলী দেখতে চান সেগুলোর প্রচলন, প্রতিপালন ও বিকাশ এবং তিনি যেগুলোকে ত্রুটিপূর্ণ মনে করেন সেগুলোতে বাধা দেওয়া ও দূর করা। ফলে ইসলামী রাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক প্রশাসনের হাতিয়ারে পরিণত হবে না এবং কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ইচ্ছাপূরণের মাধ্যম হবে না। ইসলামে রাষ্ট্র কাঠামোয় ব্যক্তি ও রাষ্ট্র সম্মিলিতভাবে ঐশী বিধান অনুযায়ী ধার্মিকতা, নৈতিক উৎকর্ষতা, সৌন্দর্য, সচ্চরিত্রতা, সফলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মৃদ্ধির আদর্শ-স্থানীয় গুণসমূহ অর্জনের প্রয়াস চালাবে এবং একইসঙ্গে সকল ধরনের অন্যায়, অসভ্যতা, দুর্নীতি, ভ্রান্তি, অসহিষ্ণুতা ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করবে। মানবতা ও মানব কল্যাণের জন্য হঠকারিতামুক্ত টেকসই আর স্থায়ী পরিকল্পনা ও কার্যক্রম ইসলামী ব্যবস্থার প্রধান অবলম্বন।

প্রকৃতিগতভাবে মানুষ স্বাধীনরূপে জন্মগ্রহণ করে এবং নিজের খুশি অনুযায়ী বেপরোয়াভাবে যা কিছু ইচ্ছা করতে চায়। দার্শনিক নিৎসরে মতে- ‘একটি শিশুকে জন্মের পর পরই যদি মানুষের তত্ত্বাবধান ছাড়া জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং সে যদি জীবজন্তুর মাধ্যমে লালিত-পালিত হয়, তাহলে সে তার বাকী জীবন জন্তুর মতোই আচরণ করবে। তাকে দেখতে অন্যান্য মানুষের মতো মনে হলেও সে কখনোই মানবিক আচরণ, গুণাবলী ও মর্যাদাবোধ পাবে না। সে কেবলমাত্র একটি সামাজিক ব্যবস্থায় অন্য মানুষের সঙ্গে মিশেই তার মানবিক সম্ভাবনা ও সুযোগকে বিকশিত ও বাস্তবায়িত করতে পারবে।’

নিৎসের বক্তব্যের সঙ্গে বর্তমান কালের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হলে দেখা যাবে, এখনও চরম শাস্তি বলতে কাউকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ করা উল্লেখযোগ্য। এটাই ভয়ঙ্কর শাস্তি হিসাবে যথেষ্ট, যদি কাউকে কারারুদ্ধ করা হয়, নিঃসঙ্গভাবে আটকে রাখা হয়, এমনকি বিলাস বহুল অবস্থাতে। নিঃসঙ্গভাবে থাকার আরেকটি প্রতিফলন হচ্ছে কবরের ভীতি।

ইসলাম সম্মিলিত সামাজিক জীবন ও মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। যে জীবন ও সমাজে থাকবে সম্প্রীতি, শান্তি ও ন্যায়বিচার। এ সব শর্ত মানুষকে তার শারীরিক অস্তিত্বের ঊর্ধ্বে উঠে চিন্তা করতে এবং পরকালের পরবর্তী জীবন সম্পর্কে প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে হজ, নামাজ, জাকাত, জিহাদ, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ ইত্যাদি ইবাদত বা প্রার্থণা ব্যক্তিগত হলেও চূড়ান্ত বিচারে সুন্দর মানুষের বিকাশের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুন্দর করার কাজ হিসাবেই চিহ্নিত এবং সমাজ ও রাষ্ট্রকে সহায়তা করারই নামান্তর। ব্যক্তিবর্গের মন ও মানসিকতা এমন হলে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সমানাধিকারের দায়িত্ববোধ জাগ্রত ও প্রতিষ্ঠিত হতে বাধ্য। এভাবেই নিজের, অন্য মানুষের ও সমাজের প্রতি কর্তব্যের ভিত্তিতে ইসলাম মানুষের জন্য সার্বজনীন মানবাধিকারের রূপরেখা প্রণয়ন করেছে এবং তা সকল পরিস্থিতিতে অনুসরণ করতে হবে। এ সকল অধিকার ও দায়িত্ববোধ মুসলমান ও অমুসলমান; সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সকলের জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য।

আরও পড়ুন: পর্ব-১: ইসলামে বর্ণবাদ ও বর্ণবৈষম্য বলে কিছু নেই

   

৪০ বছর ধরে মদিনায় বিনামূল্যে চা-কফি খাওয়ানো বৃদ্ধের মৃত্যু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র মদিনা জিয়ারতকারীদের অনেকের কাছে পরিচিত নাম শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা। গত ৪০ বছর ধরে তিনি পবিত্র হজ-উমরা পালনকারীদের মাঝে বিনামূল্যে চা, কফি, রুটি ও খেজুর বিতরণ করেছেন। অনেক বাংলাদেশি হাজি তার হাতে চা-কফি পান করেছেন।

সদাহাস্য সিরিয়ান এই নাগরিক মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ৯৬ বছর বয়সে মদিনায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হারামাইনের খবর সরবরাহকারী ভেরিফায়েড পেইজ ‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’ এই খবর জানিয়ে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

জানা যায়, প্রতিদিন ৪০টি ফ্লাস্কে করে চা-কফি আনতেন তিনি। এ জন্য একটি বিশেষ ট্রলি ব্যবহার করতেন, মসজিদে নববিতে যাওয়া অন্যতম পথ জায়েদিয়া এলাকায় বসতেন তিনি। সবুজ চা, লাল চাসহ নানা স্বাদের চা বানিয়ে আনতেন। থাকত চিনিযুক্ত, চিনিমুক্ত চা-কফি। এছাড়া এলাচযুক্ত চা, পুদিনা চা, বিভিন্নরকমের মশলাযুক্ত চা আনতেন।

তিনি রাস্তার পাশে বসে পথচারীদের মধ্যে চা, কফি, খেজুর, রুটি ও বিস্কুট বিনামূল্যে বিতরণ করতেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন ছেলেরা। কেউ কিছু দিতে চাইলে বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করতেন।

গত বছর সৌদি আরবের প্রভাবশালী পত্রিকা আল আরাবিয়া তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সিরিয়ার নাগরিক শায়খ ইসমাইল প্রায় ৪০ বছর ধরে মদিনায় বসবাস করে আসছিলেন। মদিনার কুবা এভিনিউতে একটি সাধারণ বাড়িতে বসবাস করলেও নিজের সম্পদ পুরোটাই উৎসর্গ করেছিলেন হজ ও উমরা যাত্রীদের খেদমতে।

টানা চার দশক ধরে অনন্য এই সেবার কারণে সবার কাছে তিনি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হন। তার মৃত্যুতে মদিনায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বাংলাদেশের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি শোকপ্রকাশ করে তার জন্য দোয়া কামনা করেছেন।

;

দানের এক ডিম সোয়া দুই লাখ রুপিতে বিক্রি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
নিলামে তোলা সেই ডিম ও ক্রেতা দানিশ হামিদ, ছবি : সংগৃহীত

নিলামে তোলা সেই ডিম ও ক্রেতা দানিশ হামিদ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাধারণ একটা মুরগির ডিম নিলামে তুলে বিক্রি হয় ভারতীয় মুদ্রায় সোয়া দুই লাখ রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় তিন লাখ টাকা। একটি ডিমের এমন দাম মেলায় অবাক অনেকেই। মাত্র ছয় রুপির একটি ডিমের এত দাম কী করে হলো? কেনই বা নিলামে চড়ানো হলো ডিমটি?

ঘটনা ভারত অধিকৃত কাশ্মীর উপত্যকার সোপোর জেলার মাল মাপানপুরা গ্রামের একটি মসজিদের।

খবরে প্রকাশ, মসজিদ কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় যে, ঈদ উপলক্ষে বাড়ি বাড়ি ঘুরে তারা নগদ অর্থ আর বিভিন্ন সামগ্রী দান হিসেবে সংগ্রহ করবে। এ সময় কেউ নগদ অর্থ দিয়েছেন, কেউ থালা-বাসন, মুরগি বা চাল দান করেছেন।

মসজিদ কমিটির এক সদস্য নাসির আহমেদ জানান, ‘আমরা দান সংগ্রহ করছিলাম। তার মধ্যেই একটা ছোট বাড়ি থেকে এক নারী মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসেন। আমার কাছে এসে একটা ডিম দিয়ে বলেন, তার দানটা যেন আমি গ্রহণ করি।’ ওই নারী খুবই গরিব। একটা ভাঙাচোরা ছোট্ট ঘরে একমাত্র ছেলের সঙ্গে বাস করেন।

ছয় রুপি দামের সাধারণ ডিমটি গরিব ওই নারী যে আবেগ নিয়ে খোদার নামে দান করেছিলেন, সেটাই ডিমটাকে ‘অমূল্য’ করে তুলে। কমিটির সবার সঙ্গে আলোচনা করে ডিমটাকে নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ওই নারীর পরিচয় প্রকাশ না করেই নাসির আহমেদ ডিমটাকে নিলামে তোলার কথা ঘোষণা করেন। তিনি নিজেই ১০ রুপি নিয়ে নিলামে প্রথম দর হাঁকেন।

প্রথমেই ডিমটার দাম উঠেছিল ১০ হাজার ভারতীয় টাকা। তারপরে দর বাড়ানো হয়। একটা সময় দাম বাড়তে থাকে, তিন দিন পর্যন্ত নিলাম করা হয় ডিমটি। প্রথম দুই দিনে ১০, ২০, ৩০ আর ৫০ হাজার ভারতীয় টাকা পর্যন্ত দর উঠে। প্রতিবারই ডিমটা ফেরত নিয়ে নেওয়া হতো। এরপর শেষ দিনে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নিলাম চলবে, এরকম একটা ঘোষণা করা হয়। শেষ দিনের নিলামে উপস্থিত ছিলেন সোপোরের ব্যবসায়ী দানিশ হামিদ।

নিলামে দুবার হাঁক দেওয়া হয় ৫৪ হাজার ভারতীয় রুপির। একেবারে শেষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা হামিদ দর হাঁকেন- ‘৭০ হাজার।’ পরে দাম বাড়তে থাকে এক পর্যায়ে দাম উঠে সোয়া দুই লাখে। সব মিলিয়ে বিক্রি হয় দুই লাখ ২৬ হাজার ৩৫০ ভারতীয় রুপি। 

দানিশ হামিদ জানান, তিনি ডিমটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার জন্য ভালো একটা ফ্রেম বানাবেন।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে শঙ্কা হাবের



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হাবের মতবিনিময় সভা, ছবি : সংগৃহীত

হাবের মতবিনিময় সভা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে আগামী মাসের ৯ মে থেকে হজফ্লাইট শুরুর কথা রয়েছে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজযাত্রী। অথচ এখনও সৌদি আরবে হাজিদের বাড়ি ভাড়া করা সম্ভব হয়নি।

এমনকি হজযাত্রীদের মীনায় অবস্থানের জায়গা (তাঁবু) এবং সার্ভিস প্রোভাইডার (সৌদি আরবের মোয়াল্লিম) এখনও নির্ধারণ হয়নি। প্রকাশ করা হয়নি চূড়ান্ত ফ্লাইট সিডিউল। এসব কারণে হজ এজেন্সি কর্তৃপক্ষ সৌদি আরবে হাজিদের বাড়ি ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতির জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনাকে দুষছেন হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব)।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাতে ‘হজ ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সংগঠনটির সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম এসব কথা বলেন। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউটে আয়োজিত আলোচনা সভায় সারাদেশের হজ এজেন্সির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সভায় হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, অব্যবস্থাপনার কারণে আমরা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছি। কোনো হাজি যেন হজে গিয়ে কষ্ট না পান, সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। হাব সভাপতি বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয়ে কোনো কর্মকর্তা স্থায়ী না, তারা দুই-তিন বছর পরপর বদলি হন, হজের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে তাদের স্বচ্ছ কোনো ধারণা নেই। তাদের কারণে হজ ব্যবস্থাপনা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা আমরা চাই না।’

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হজ ব্যবস্থাপনায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এজেন্সি মালিকদের সঙ্গে পরামর্শ করেন না বলেও অভিযোগ হাবের। এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘হজ ব্যবস্থাপনা আবার চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। আমরা আগেই ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলাম, হজ ব্যবস্থাপনা এ বছর চ্যালেঞ্জিং হবে। এজেন্সি কোটা সর্বনিম্ন ১০০ জন রাখতে আমরা অনুরোধ করেছিলাম। ধর্ম মন্ত্রণালয় হজযাত্রীর সংখ্যা কমাতে অনাগ্রহী হয়। সর্বোচ্চ এজেন্সি কোটা ৩০০ থাকা স্বত্বেও কি কারণে ৫০০ জন করা হলো তা বোধগম্য নয়। ধর্মমন্ত্রী এজেন্সি প্রতি ৪০০ জন কোটা রাখার নির্দেশনা দেওয়া স্বত্বেও ধর্ম সচিব ৫০০ জন কোটা নির্ধারণ করলেন। কেন করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

হাব সভাপতি বলেন, ‘সৌদি সরকার ৫৬ এজেন্সির মাধ্যমে হজ কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব দিলেও আমরা তার বিরোধিতা করেছিলাম। কারণ এজেন্সিতে যাত্রীসংখ্যা বেশি হলে সব যাত্রীকে সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বৃদ্ধ হাজিদের জন্য সঠিকভাবে সেবা প্রাপ্তিতে বিঘ্ন ঘটে। কিন্তু এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের ভূমিকা যথার্থ ছিল না।’

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কারণে এখনও সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সির প্রতিনিধিদের সৌদিতে যেতে হয়। প্রতি বছর প্রতিনিধিদের সৌদি যেতে মাল্টিপল ভিজিট ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে। পরিচালক হজ অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী এজেন্সিগুলো পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ভিজিট ভিসার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় এখনও হজ এজেন্সির প্রতিনিধিদের ভিজিট ভিসার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ। তারা সৌদি আরবে না গেলে বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এজেন্সির প্রতিনিধি ছাড়া বাড়ি ভাড়া করা যাবে না এবং বাড়ি ভাড়া করা না গেলে হজ ভিসা করা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ মিশন আছে। জেদ্দা কনসাল জেনারেল (হজ) আছেন, তারা চাইলেই সৌদি আরবে সরকারি নিবন্ধিত হাজিদের বাড়ি ভাড়া করতে পারেন। তারপরও ধর্ম সচিবের নেতৃত্বে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে লোকবল নিয়ে দীর্ঘদিন সৌদি আরবে অবস্থান সরকারিভাবে বাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি এজেন্সির বাড়ি ভাড়া জন্য সৌদি যেতে ভিসার ব্যবস্থা করতে ধর্ম মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে। বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সি প্রতিনিধিরা সৌদি যেতে না পারলে বিশাল সংখ্যক হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া কীভাবে সম্ভব?’

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর দেশ থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের সৌদি নেওয়া হয় হজে সহায়তাকারী হিসেবে। এতে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। এ প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত হয়েছিল এ বছর বাংলাদেশ থেকে কোনো সহায়তাকারী নেওয়া হবে না। সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু অজানা কারণে বাংলাদেশ থেকে হজ সহায়তাকারী নেওয়া হচ্ছে।’

হাব সভাপতি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা কখনও বেসরকারি হজযাত্রীদের খোঁজ-খবরও নেন না। সরকারি চার-পাঁচ হাজার হাজির জন্য এই বিশাল সংখ্যক জনবল দেশ থেকে নেওয়া দেশের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। সব চেয়ে বেশি হাজি যায় হজ এজেন্সির মাধ্যমে, তাদের জন্য সহায়তাকারী বেশি প্রয়োজন। তাই সহায়তাকারী হিসেবে হজ এজেন্সিকে ভিসা সুবিধা নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে হজ ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জের মুখে। ধর্ম মন্ত্রণালয়কে হাব এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিল। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় তা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। হজযাত্রীদের কল্যাণে সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।’

সভায় উপস্থিত ছিলেন- হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, সহ-সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান, মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার, মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার, জনসংযোগ সচিব মুফতি মুহাম্মদ জুনায়েদ গুলজার প্রমুখ।

উল্লেখ্য, চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা নির্ধারণ করেছিল সৌদি আরব। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও হজের নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে গাইড ও মোনাজ্জেমসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন।

;

যেভাবে ধরে রাখবেন রমজানের ভালো অভ্যাসগুলো



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
রমজানে অর্জিত ভালো অভ্যাসগুলো ধরে রাখার চেষ্টা করা, ছবি : সংগৃহীত

রমজানে অর্জিত ভালো অভ্যাসগুলো ধরে রাখার চেষ্টা করা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ ৩ সপ্তাহের প্রচেষ্টায় নিজেদের ভালো অভ্যাস গঠনে তৈরি করতে পারে। কোনো মানুষ যদি নিয়মিত ভালো কাজ করে তবে সে নিয়মিত কাজের একটি অভ্যাস তার মধ্যে তৈরি হয়। যেমন- নিয়মিত নামাজ পড়লে নামাজের অভ্যাস তৈরি হয়, রোজা রাখলে রোজাপালনের অভ্যাস তৈরি হয়; আবার মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে ধৈর্যধারণ করলে তাও তৈরি হয়। আর মুমিন-মুসলমানের এসব অভ্যাস তৈরিতে রমজান কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

রমজানে যে ব্যক্তি নিয়মিত রোজা রাখে, নামাজ আদায় করে, ধৈর্যধারণ করে- আল্লাহর ইচ্ছায় ওই ব্যক্তির মাঝে ভালো অভ্যাসগুলো তৈরি হয়। আবার রমজানের পরে অনেকেই সেসব ভালো গুণ থেকে দূরে সরে যায়। কিন্তু উচিৎ ছিলো, গুণগুলো ধরে রাখা। রমজানে অর্জিত ভালো অভ্যাসগুলো ধরে রাখার রয়েছে বেশ কিছু উপায়। সেগুলো হলো-

সপ্তাহে ২ দিন রোজাপালন
রমজানের পর প্রত্যেক সপ্তাহে ২ দিন রোজাপালনের চেষ্টা করা। তাতে খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা সহজ হয়। রোজা মানুষকে শুধু আধ্যাত্মিক উপকারই দেয় না বরং তাতে শারীরিক স্বাস্থ্যগত অনেক উপকারও রয়েছে।

স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা যায়, রোজাপালন মানুষের শরীর ও মনের জন্য অনেক উপকারি। রোজায় মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। ঘুম, মনোযোগ ও শারীরিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পায়। নার্ভের কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও উন্নতি হয়।

আর সপ্তাহে ২ দিন রোজাপালন সুন্নতের অনুসরণও বটে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সপ্তাহে ২ দিন (সোম ও বৃহস্পতিবার) রোজা রাখতেন। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সোমবার এবং বৃহস্পতিবার মানুষের কাজের হিসাব আল্লাহর কাছে পৌছানো হয়। আর আমি এটি ভালোবাসি যে, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার কাজে হিসাব পৌছানো হোক।’ -জামে তিরমিজি

দান-সদকা অব্যাহত রাখা
দানের অভ্যাস অব্যাহত রাখা। কেননা দান-সহযোগিতা মানুষকে মানসিক প্রশান্তি দেয়। রমজানে যেভাবে বেশি সওয়াব লাভের আশায় মানুষ দান-সদকা করে, রমজান পরবর্তী সময়েও গরিবদের দান-সদকার অভ্যাস চালু রাখা।

দানের কার্যকারিতা শুধু আখেরাতে নয়, বরং দুনিয়াতেও লাভ হয়। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দান-সাদকা মানুষের বিপদ-আপদ দূর করে দেয়।’ দান-সদকার ফলে সমাজের গরিব ও অসহায় মানুষ সুন্দর জীবন-যাপন করতে পারে। তাতে পাস্পরিক সুসম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে সুন্দর সমাজ তৈরি হয়।

নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত
রমজানের পরে নির্ধারিত একটি সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ কোরআন মাজিদ তেলাওয়াতের অভ্যাস তৈরি রাখা। যেভাবে রমজান মাসে মানুষ নির্ধারিত সময়ে কোরআন তেলাওয়াত করে থাকে।

কোরআন তেলাওয়াত মানুষের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তির জন্য সহায়ক। এটা উত্তম ইবাদতও বটে। কোরআন পরকালে শুধু তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশই করবে না বরং দুনিয়াতে অনেক অন্যায় ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে।

অর্থসহ কোরআন মাজিদ পড়া
রমজানের পর সামান্য সময়ের জন্য হলেও কোরআন অধ্যয়ন তথা অর্থসহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পড়া। রমজানের পরে কোরআন বুঝার নিয়মিত চেষ্টা অব্যাহত রাখলে, একটা সময় কোরআন বুঝা সহজ হয়ে যাবে। আর সে আলোকে গড়ে ওঠবে মানুষ জীবন।

কোরআনে কারিমের জ্ঞান বাস্তবায়ন
রমজান মাসে কোরআনের যেসব জ্ঞান অর্জন করেছে মানুষ। রমজানের পরেও তা যথাযথ বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। কোরআনে কারিমের সব ঘটনাগুলোই অর্থবহ এবং পরিপূর্ণ। কোরআনের সে ঘটনাগুলোর আলোকেই নিজেদের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা সহজ হয়।

যখনই কোরআনের কোনো ঘটনা বা জ্ঞান অর্জন হয়, তখনই সে ঘটনা বা গুণ দিয়ে নিজেকে মূল্যয়ন করুন। যদি তা থেকে থাকে আলহামদুলিল্লাহ। আর সে গুণ না থাকলে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা।

দোয়া করা
কোরআনের অনেক ঘটনায় দোয়ার কথা এসেছে। কল্যাণ লাভে দোয়ার রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব। রমজান মাসে দোয়া যেভাবে মানুষের কার্যতালিকা থেকে বাদ যায়নি। রমজান পরবর্তী সময়েও তা অব্যাহত রাখা জরুরি। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’

আল্লাহতায়ালা প্রতিদিনই মানুষকে ডেকে ডেকে বলেন, তার কাছে দোয়া করার জন্য। নিজের গোনাহ মাফের আহ্বান করেন, রিজিক চাওয়ার আহ্বান করেন। সুতরাং যারা রমজানের পরেই আল্লাহর কাছে নিয়মিত দিনে-রাতে দোয়ার অভ্যাস গঠন করবে, তারাই সফলকাম হবে।

ভালো কাজে আগ্রহী হওয়া
প্রতিবেশি কিংবা বন্ধুর সঙ্গে ভালো অভ্যাস গঠনে পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করা। একে অপরের সঙ্গে ভালো আচরণ করা। কারো মাঝে অন্যায় বা খারাপ আচরণ থাকলে তা থেকে বেঁচে থাকতে ভালো কাজ বা গুণের পরামর্শ দেওয়া। একে অপরকে নিয়মিত ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করা।

ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ দিতে একটি গ্রুপ তৈরি করা যেতে পারে। যেখানে প্রতিদিনই নির্ধারিত একটা সময় ভালো কাজের আলোচনা হতে পারে। হতে পারে তা কোরআন শিক্ষা বা গবেষণার আসর।

প্রতিদিন নিজেকে মূল্যয়ন করা
প্রতিটি মানুষেরই উচিত নিয়মিত নিজের কাজের মূল্যয়ন করা। আর তাতে ভেসে উঠবে ভালো ও মন্দ কাজ প্রতিচ্ছবি। নিজেকে মূল্যয়নে কোরআনে সে আয়াতটি বেশি বেশি স্মরণ করা উচিত। তাহলো, ‘তোমার কিতাব (কাজের হিসাব) পাঠ কর। আজ তোমার হিসাব (কাজের মূল্যয়ন) গ্রহণে তুমিই যথেষ্ট।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ১৪

প্রতিদিন নিজের কাজের মূল্যয়ন অব্যাহত রাখলে গোনাহমুক্ত জীবন লাভ সম্ভব হবে। পরকালে নিজেদের কাজের হিসাব প্রদানও হবে সহজ। আর তাতেই আলোকিত জীবন লাভ করবে মুমিন।

;