হজের সফরে যেসব স্থানে কষ্ট ও ঝগড়া হয়



মুফতি অহিদুল আলম, অতিথি লেখক, ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

হজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। হজে রয়েছে ঈমানি উদ্দীপনার বিরাট উৎস। এর ঐতিহাসিক পটভূমি ও ফজিলত সম্পর্কে প্রতিটি মুসলমান কমবেশি অবগত।

হজে রয়েছে মুমিনের জন্য প্রচুর কল্যাণ। একজন মুমিন একটা সময়ের জন্য আত্মীয়-স্বজন, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করে দীর্ঘ সফরের কষ্ট স্বীকার করে হজব্রত পালন করতে পারে তখনই যখন তার অন্তর আল্লাহভীতি ও ভালোবাসায় পূর্ণ হয়। তাই হজের প্রথম ও প্রধান কল্যাণ হলো- হজব্রত পালনের মাধ্যমে হাজি সাহেবরা অন্তরে নতুন করে অর্জন করে হৃদয়ের সজীবতা, প্রেমের উষ্ণতা এবং ঈমানের দৃঢ়তা।

হজের সফরে যেহেতু ঘর-বাড়ি ছেড়ে, ভিন্ন পরিবেশে, ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে থাকতে হয়, তাই কিছুটা কষ্ট করতে হয়। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, হজের সফরে এমন কিছু স্থান রয়েছে যেখানে কষ্ট হয়, আর সেই কষ্টের কারণে অনেক মেজাজ চড়া হয়ে যায়, ফলশ্রুতিতে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। হজপালনকারীদের একান্ত কর্তব্য হলো- কষ্টের এ জায়গাগুলোতে ধৈর্য্যধারণ করা, কোনোভাবেই ঝগড়ায় লিপ্ত না হওয়া।

কষ্টের স্থানসমূহ
১. সমগ্র দুনিয়া থেকে হজকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কিছু দিনের মধ্যে জেদ্দা অথবা মদিনা এয়ারপোর্টে হজপালনকারীরা অবতরণ করেন। তাই এয়ারপোর্টের সব কাজে অস্বাভাবিক ভিড় হয়।

২. কাবা শরিফের চত্বর (মাতাফ), মসজিদে হারাম, সাফা-মারওয়া, মদিনা শরিফ, মসজিদে নববি ও রওজা শরিফ নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা অবস্থিত হওয়ায় হজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব আমলগুলো একসঙ্গে করতে যেয়ে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়- সুতরাং এখানে একটু কষ্ট হয়।

৩. মিনা, আরাফা ও মুজদালিফায় একই দিনে একই স্থানে ৩০-৩২ লাখ মানুষ জমা হওয়া ও আসা-যাওয়া করতে গাড়ীতে কষ্ট হয়, পথে যানজটের সৃষ্টি হয়। কখনও যান্ত্রিক গোলোযোগ দেখা দেয়, দূর্ঘটনাও ঘটে। তাই স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখানে ৫-৬ গুণ সময় বেশি লাগে। ইহরাম অবস্থায় এখানে কষ্ট হয়। তাই সাবধানে থাকা।

৪. সৌদি আরবের আবহাওয়া বিশেষ করে মক্কা, মিনা, আরাফা ও মুজদালিফার তাপমাত্রা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি রুক্ষ্ম। রোদের তাপ ও গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই চলাফেরায় ছাতা রাখা, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।

৫. হজের সফরে মক্কা ও মদিনার সব কাজকর্মের জন্য সৌদি মুয়াল্লিমের দারস্ত হতে হয়। অনেক মুয়াল্লিমের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হয়। এসব কারণে পরিস্থিতি বুঝা, মেজাজ ঠাণ্ডা রাখা।

৬. ফাইভ স্টার হোটেলসহ বিলাসবহুল হোটেল মক্কা-মদিনাতে অনেক আছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। অন্য স্থানের হোটেলের মতো এসব হোটেলে সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। অধিকাংশ হাজি সাধারণ হোটেল বা বাড়িতে থাকেন। কিছু কিছু হোটেল বা বাড়ি এত নিম্নমানের যে- এসি, বাথরুম বা অন্যান্য বিষয়ে হাজিদের কষ্ট পোহাতে হয়।

৭. মক্কা ও মদিনার সব হোটেলে রান্না করার অনুমতি নেই। অনেক দূর থেকে কষ্ট করে খাবার পৌঁছানো হয়। নামাজের জামাতের আগে পরে ভিড় না কমা পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করা যায় না। আবার কখনও পুলিশের যন্ত্রণা পোহাতে হয়। এমনকি আইনের খেলাফ হলে পুলিশ অনেক সময় খাবার ফেলে দেয়। তাই যথাসময় খাবার না পৌঁছানোর কারণে কষ্ট হয়।

অন্যদিকে নিম্নরুচিবোধসম্পন্ন, অতিলোভী এজেন্সি বা দায়িত্বশীলের পরিকল্পিত কৃত্রিম সঙ্কটও অনেক সময় কষ্টের কারণ হয়।

/uploads/files/OaydYvxSq2SATQ9Gi9jS2VECkq95m4IsdfPQC9jV.jpeg

যে সব স্থানে ঝগড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
হজ আল্লাহতায়ালার এমন একটি ব্যতিক্রমী বিধান- যার পবিত্রতা ও সুমহান মর্যাদা সুরক্ষার জন্য তিনি সকল প্রকার অশ্লীলতা, গালি-গালাজ, ঝগড়া ও মারামারি করা হতে কঠিনভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।

হজের সফরের নিম্নোক্ত স্থানে সাধারণত ঝগড়া বেশি হয়। তাই এমন স্থানগুলো একটি ধারণা দেওয়া হলো- যাতে সতর্কতা অবলম্বন করা যায়।

১. যারা হজের প্রশিক্ষণ নেয় না, কোনো আল্লাহওয়ালার সান্নিধ্যে যায় না, তাবলিগ জামাতে সময় লাগায় না, হজের মাসয়ালা-মাসয়েলের ওপর পড়াশুনা করে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের অবান্তর ও অন্যায় আচরণ দ্বারা হজের সফর কলুষিত হয়।

২. দুর্ভাগ্যক্রমে কোনো প্রতারক, ঠকবাজ এজেন্সির মাধ্যমে হজে গেলে তার কষ্টের শেষ থাকে না। তাই তাদের সস্তা প্রলোভন ও চটকদার কথায় আকৃষ্ট না হয়ে বরং টাকা কিছু বেশি গেলেও যথাসম্ভব নির্ভরযোগ্য এজেন্সির মাধ্যমে হজে যেতে হবে।

৩. কম টাকার প্যাকেজে গিয়ে যে সব সম্মানিত হাজি বেশি সুযোগ-সুবিধা নিতে চান, তাদের দ্বারা সাধারণত ঝগড়াটা বেশি হয়। কখনও ঝগড়া মারামারির পর্যায়ে চলে যায়।

. বাংলাদেশ থেকে প্রথমে মক্কা অথবা মদিনার হোটেলে উঠার পর। হোটেল, সীট বা ওয়াশরুম পছন্দ না হওয়ার কারণে অথবা দূরত্বের কারণে।

৫. ফিতরা অর্থাৎ শিফটিয় পদ্ধতির হজ যাত্রীরা ঝগড়া সৃষ্টি করে। হজের সময় মক্কার পার্শ্ববর্তী এলাকা আজিজিয়া, শওকিয়া, কাকিয়া বা অন্যকোনো দূরের হোটেলে যখন তাদেরকে দেওয়া হয়।

৬. খাবার নিয়ে। সুস্থ-অসুস্থ, বিভিন্ন স্বভাব ও মানসিকতার লোকেরা হজে যান, প্রত্যেকের রুচিসম্মত খাবার পরিবেশন করা কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। তাই নিজের ঘরের কথা খেয়াল করা উচিৎ। সবদিন চাহিদামতো খাবার নিজের ঘরেও হয় না। মক্কা-মদিনাতে খাবার পাকানো ও হোটেলে পৌঁছানো একটি জটিল কাজ।

৭. মক্কা ও মদিনার হোটেলে পান করার পানি নিয়ে ঝগড়া হয়। অথচ কাবা শরিফ এবং মসজিদে নববিতে পর্যাপ্ত জমজম পানির ব্যবস্থা আছে। প্রতি নামাজের ওয়াক্তে একটি বোতল ভরে আনা যায় অথবা প্রয়োজনে সামান্য কিছু রিয়াল দিয়ে পানি ক্রয় করা যায়।

৮. নাস্তা নিয়ে। বাবুর্চিরা দুপুর এবং রাতের খাবার পাকাতে পাকাতে এবং সবকিছু গোছাতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই সকালে ঘুমায়। এজন্য সকালের নাস্তা তৈরি করতে সাধারণত তারা রাজি হয় না। অন্যদিকে হোটেলওয়ালারাও বিভিন্ন কারণে অনেক লোকের নাস্তা পার্সেল দিতে বিরক্তবোধ করে। এসব বিবেচনায় নিজ দায়িত্বে নাস্তা করতে পারলে ভালো হয়।

৯. মক্কা শরিফ থেকে মিনার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় ঝগড়া সৃষ্টি হয়। মিনা থেকে আরাফার উদ্দেশ্যে। আরাফা থেকে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে গাড়ীতে উঠা নিয়ে, গাড়ীর সীট সামনে ও পেছনে নিয়ে এবং পছন্দমতো সীট না পাওয়াকে কেন্দ্র করে কখনও কখনও তুমুল বাকযুদ্ধ ও ঝগড়া হয়।

মনে রাখবেন, সৌদি আরবের রাস্তাগুলো অনেক মসৃণ ও সুন্দর। গাড়ীর পেছনে বসলেও কোনো কষ্ট হয় না। মক্কা ও মদিনা শরিফে যাতায়াতের পথেও ঝগড়া হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় আমরা পরস্পরে সর্বোচ্চ ত্যাগ, সম্প্রীতি ও সহানুভূতি প্রদর্শন করতে পারি।

১০. মিনায় ৫০-৬০ জন হাজির জন্য একটি তাঁবু বরাদ্দ থাকে। খুব সংকীর্ণ জায়গায় অবস্থান করতে হয়। পছন্দমতো প্রশস্ত জায়গা না পাওয়ায় অনেকের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। স্মরণ রাখতে হবে, মিনাতে শুধুমাত্র ওই রাত্রটি সকলে অবস্থান করেন। বাকি এ রাতগুলো হাজিরা চলাচলের মধ্যে থাকেন। ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করা উচিত।

১১. দমে শোকর (কোরবানি) দেওয়া নিয়ে ঝগড়া হয়। উত্তম হয় নিজ হাতে কোরবানি সম্পন্ন করা। আর অন্য কারও মাধ্যমে করলে চুক্তি অনুযায়ী সম্পূর্ণ রিয়াল দিয়ে দিতে হবে। কত রিয়াল লাগলো না লাগলো এসব বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে কোনো সমালোচনা একেবারেই ঠিক নয়।

মুফতি অহিদুল আলম: খতিব, মসজিদ আল মাগফিরা, সেক্টর- ৩, উত্তরা, ঢাকা- ১২৩০

   

ঈমানের স্বাদ ও মিষ্টতা কী?



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ঈমানের স্বাদ সবাই আস্বাদন করতে পারে না, ছবি : সংগৃহীত

ঈমানের স্বাদ সবাই আস্বাদন করতে পারে না, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, হজরত জিবরাইল (আ.) রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, এবার আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন, রাসুল (সা.) বললেন, ‘ঈমান হলো, তুমি ঈমান রাখবে আল্লাহর প্রতি, তার (আল্লাহর) ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসুলদের প্রতি এবং শেষ দিবসের (কেয়ামত) প্রতি। (এবং) তুমি ঈমান রাখবে তাককিরের ভালো-মন্দের প্রতি।’ হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। -সহিহ মুসলিম : ৮

ঈমানের স্বাদ
হজরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী কারিম (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে রবরূপে, ইসলামকে দ্বীনরূপে এবং মুহাম্মাদ (সা.)-কে রাসুলরূপে সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করবে। -সহিহ মুসলিম : ৩৪

সুস্বাদু খাদ্যের স্বাদ সেই বুঝতে পারে যার জিহ্বায় স্বাদ আছে। রোগ-ব্যাধির কারণে নষ্ট হয়ে যায়নি। তদ্রূপ ঈমান ও যাবতীয় আমলের স্বাদও ওই খোশনসিব ব্যক্তিই অনুভব করে, যে সম্পূর্ণ সন্তুষ্টিচিত্তে ও সর্বান্তকরণে আল্লাহকে রব ও পরওয়ারদিগার এবং মুহাম্মদ (সা.)-কে রাসুল ও আদর্শ এবং ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করে।

আল্লাহতায়ালা, নবী মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলামের সঙ্গে যার সম্পর্ক কেবলই বংশগত ও প্রথাগত বা কেবলই চিন্তাগত ও বুদ্ধিগত পর্যায়েই নয় বরং সে আল্লাহর বন্দেগি, মুহাম্মদ (সা.)-এর আনুগত্য এবং ইসলামের অনুসরণকে মনেপ্রাণে নিজের জীবনে গ্রহণ করে নেবে। সেই ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। -মাআরিফুল হাদিস : ১/৯১

ঈমানের মিষ্টতা
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকবে সে ঈমানের মিষ্টতা অনুভব করবে। আল্লাহ ও তার রাসুল তার কাছে সবকিছু থেকে অধিক প্রিয় হওয়া, কাউকে ভালোবাসলে শুধু আল্লাহরই জন্য ভালোবাসা, আর কুফুরিতে ফিরে যাওয়াকে এমন ঘৃণা করা, যেমন সে ঘৃণা করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে। -সহিহ বোখারি : ১৬

এই হাদিসের বিষয়বস্তুও আগের হাদিসের বিষয়বস্তুর প্রায় কাছাকাছি। উপস্থাপনায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এই হাদিসে বলা হচ্ছে, ঈমানের মিষ্টতা ওই ব্যক্তিই অনুভব করতে পারবে, যে আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ সমর্পিত থাকবে; আল্লাহ ও তার রাসুলকে জগতের সবকিছু থেকে বেশি ভালোবাসবে। অন্য কারও প্রতি যদি তার ভালোবাসা হয়, তা হবে সম্পূর্ণ এই ভালোবাসার অধীন। আর ইসলাম তার এতই প্রিয় যে, ইসলাম থেকে ফিরে যাওয়া, কুফুরিতে লিপ্ত হওয়া তার কাছে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সমতুল্য। -মাআরিফুল হাদিস : ১/৯১

;

মসজিদ নির্মাণ করবে দাউদ কিম

কোরিয়ার প্রতিটি গলি থেকে ভেসে আসবে আজানের সুর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জমি কেনার দলিল হাতে দাউদ কিম, ছবি : সংগৃহীত

জমি কেনার দলিল হাতে দাউদ কিম, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কয়েক বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী দক্ষিণ কোরিয়ান ইউটিউবার দাউদ কিম মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে মসজিদের জন্য জমিও কিনেছেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে ওই জমি ও তার দলিলের ছবি শেয়ার করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক এই নওমুসলিম। তিনি দেশটির ইঞ্চোন শহরে মসজিদটি নির্মাণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

ইনস্টাগ্রামে কিম লিখেছেন, ‘অবশেষে আপনাদের সাহায্যে আমি ইঞ্চোনে মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি ক্রয়ের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। খুব শিগগিরই জায়গাটিতে মসজিদ নির্মিত হবে। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আমার এই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।’

ওই পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘ওই জমিতে মসজিদের পাশাপাশি একটি ইসলামিক পডকাস্ট স্টুডিও তৈরির ইচ্ছা আমার। সত্যি এটি একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ, এতে বহু সমস্যার সম্মুখীন হওয়া লাগতে পারে। তবে আমার বিশ্বাস- আমি এগুলো সম্পন্ন করতে সক্ষম হব।’

দাউদ কিম আশাবাদ ব্যক্ত করে লিখেছেন যে, ‘এমন একটি দিন আসবে, যেদিন কোরিয়ার প্রতিটি গলি আজানের সুমধুর ধ্বনিতে ভরে উঠবে। এ জন্য আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

কিম ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। এরপর ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে তিনি সারাবিশ্বে বিখ্যাত বনে যান। জনপ্রিয় এই ইউটিউবার তার নিয়মিত ব্লগে ইসলামিক বিভিন্ন কনটেন্ট, নামাজ পড়ার ভিডিওসহ নানা কিছুই পোস্ট করে থাকেন। ২০২২ সালে কিম বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশ ঘুরে তিনি পবিত্র উমরা পালন করতে সৌদি আরব যান।

দক্ষিণ কোরিয়ার এই গায়ক ইউটিউবিং করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান। ঘুরতে ঘুরতে তিনি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও তিউনিশিয়া যান। দেশগুলোতে গিয়ে ইসলাম ধর্মকে কাছ থেকে দেখে ও বুঝে তিনি আকৃষ্ট হন। ইসলামের জীবনবিধান দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পুরোপুরি মুসলমান হয়ে যান।

দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। যা কোরিয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশ নিয়ে গঠিত। সিউল দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। সিউল বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ধনী শহরের তালিকায় থাকা একটি শহর।

দক্ষিণ কোরিয়ায় ইসলামের উপস্থিতি খুবই সামান্য। ২০০৫ সালেও দেশটির আদমশুমারিতে মুসলিমদের কোনো বিভাগের সদস্য হিসেবে ধরা হত না। বর্তমানে দেশটিতে ২ লাখ মুসলিম রয়েছে, যাদের বেশিরভাগ বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশ থেকে আসা অভিবাসী এবং কিছু ধর্মান্তরিত বাসিন্দা। দেশটিতে ২১টি মসজিদ, ১৩টি ইসলামিক সেন্টার ও ১৪০টির মতো নামাজের স্থান রয়েছে।

১৯৬৯ সালে কোরিয়ান সরকার প্রদত্ত জমিতে গড়ে ওঠে সিউল কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার। সিউল সেন্ট্রাল মসজিদ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম মসজিদ। যা হেনামডং সিউলে অবস্থিত। মসজিদটি ইতিমধ্যে বিশ্বের অনন্য সুন্দর মসজিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

;

তীব্র গরম মুমিনকে যা শিক্ষা দেয়



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
গরম থেকে বাঁচতে ফুটপাতের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাথায় পানি দিচ্ছেন, ছবি : রাজু আহমেদ

গরম থেকে বাঁচতে ফুটপাতের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাথায় পানি দিচ্ছেন, ছবি : রাজু আহমেদ

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে এখন চলছে গ্রীষ্মকাল। ফলে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। বস্তুত শীত, গরম, রোদ, বৃষ্টি সবই আল্লাহর দেওয়া। তীব্র শীত আর প্রচণ্ড গরমে রয়েছে মুমিনে জন্য শিক্ষা। জনজীবন অতিষ্ট হওয়া গরম আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আজাবের কথা। তাই তীব্র তাপদাহের সময় দয়াময় আল্লাহতায়ালার কাছে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা জরুরি।

পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে মানবতার কল্যাণ সাধনকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। ফলে তীব্র গরমের সময় ইবাদত-বন্দেগি সহজ করেছে ইসলাম। হজরত আবু জার (রা.) বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম।
এক সময় মোয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী কারিম (সা.) বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মোয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবী কারিম (সা.) পুনরায় বলেন, গরম কমতে দাও।
এভাবে তিনি (নামাজ আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম।
এরপর নবী কারিম (সা.) বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামাজ আদায় করো। -সহিহ বোখারি : ৫৩৯
বর্ণিত হাদিসের আলোকে বিধান হলো, অতীব গরমের সময় কিছুটা বিলম্ব করে জোহরের নামাজ আদায় করা সুন্নত।

গরমের সময় এমন কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোর সওয়াব অনেক। একজন মুমিন সেসব আমল করে সহজেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারেন। ওই সব আমলের কয়েকটি হলো-

নফল রোজা
গরমের রোজা শীতের থেকে বেশি কষ্টকর। গরমের কষ্ট উপেক্ষা করে যদি নফল রোজা রাখা যায়, তাহলে আল্লাহতায়ালা বেশি নেকি দেবেন। সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্ববর্তী বুজুর্গরা বেশি সওয়াবের আশায় গরমকালে রোজা রাখতেন।

পিপাসার্তকে পানি পান করানো
পিপাসার্তকে পানি পান করানো একটি উত্তম কাজ। আর যদি প্রচণ্ড গরমে কাউকে ঠাণ্ডা পানি পান করানো হয়, তাহলে তো কাজটি আরও উত্তম হবে। এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ‘কোন দান উত্তম? তিনি বললেন, ‘পানি পান করানো।’ -সুনানে নাসাই : ৫৪৫৬
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা নিবারণ সর্বোত্তম মহৎ কাজের একটি।’
হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সদকা বা দান জাহান্নামের আগুন নির্বাপণ করে। আর পানি পান করানো উত্তম সদকা।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৭৪৩৫

নফল নামাজ
অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস, তাই জাহান্নামের ভয়ে বেশি করে এবং লম্বা লম্বা সুরা দিয়ে নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন গরম বেশি পড়বে, তখন বেশি নামাজ আদায় করো। কারণ অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস।’ -মেশকাত : ৫৯১

গরম থেকে শিক্ষা
গরমের তীব্রতা থেকে মুমিনের জন্য রয়েছে শিক্ষা। কেননা জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি। তাই এ গরম থেকে জাহান্নামের তীব্রতা অনুমান করে গোনাহ থেকে মুক্ত থাকা। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলছে। ফলে আল্লাহ তাকে দুইটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি শীতকালে অপরটি গ্রীষ্মকালে। আর তাই তোমরা গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে তীব্র ঠাণ্ডা অনুভব করো।’ -সহিহ বোখারি : ৫৪৫৫

গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে, গরিবদের মাঝে সুমিষ্ট ফল বিতরণ করা। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা। ঘামে ভেজা শরীরে জনসমাগমে গমন না করা। গরমের সময় প্রবাহিত ঘামের গন্ধ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা। গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা বিষয়টিও খেয়াল রাখার নির্দেশ দেয় ইসলাম।

বৃষ্টির জন্য নামাজ
প্রচণ্ড গরমে একপশলা বৃষ্টির জন্য মুমিনরা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। শস্য ফলানোসহ পশুপাখির খাবারের জন্য যেমন বৃষ্টি দরকার, তেমনি তীব্র তাপদাহে সৃষ্ট নানা জটিলতা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতেও আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি খুব প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে দয়াময় আল্লাহতায়ালার দরবারে বৃষ্টি কামনা করে নামাজ পড়া ও দোয়া করা সুন্নত। পরিভাষায় এই নামাজের নাম ‘ইসতিসকা’ বা বৃষ্টির নামাজ।

ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় বান্দা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। প্রচণ্ড গরমের সময়ও এর ব্যতিক্রম নয়। তীব্র তাপদাহের সময় মানুষের উচিৎ জাহান্নামের গরমের কথা স্মরণ করা। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে আত্মনিয়োগ করা।

একটু শান্তির জন্য দুনিয়ার জীবনে গরমের কষ্ট ও তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য যদি আমরা সম্ভবপর সব উপায় অবলম্বন করতে পারি, তাহলে আখেরাতের আজাব ও ভয়াবহতা থেকে বাঁচার জন্য আমলদার এবং সাধনাকারী হওয়া জরুরি।

;

৪০ বছর ধরে মদিনায় বিনামূল্যে চা-কফি খাওয়ানো বৃদ্ধের মৃত্যু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র মদিনা জিয়ারতকারীদের অনেকের কাছে পরিচিত নাম শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা। গত ৪০ বছর ধরে তিনি পবিত্র হজ-উমরা পালনকারীদের মাঝে বিনামূল্যে চা, কফি, রুটি ও খেজুর বিতরণ করেছেন। অনেক বাংলাদেশি হাজি তার হাতে চা-কফি পান করেছেন।

সদাহাস্য সিরিয়ান এই নাগরিক মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ৯৬ বছর বয়সে মদিনায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হারামাইনের খবর সরবরাহকারী ভেরিফায়েড পেইজ ‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’ এই খবর জানিয়ে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

জানা যায়, প্রতিদিন ৪০টি ফ্লাস্কে করে চা-কফি আনতেন তিনি। এ জন্য একটি বিশেষ ট্রলি ব্যবহার করতেন, মসজিদে নববিতে যাওয়া অন্যতম পথ জায়েদিয়া এলাকায় বসতেন তিনি। সবুজ চা, লাল চাসহ নানা স্বাদের চা বানিয়ে আনতেন। থাকত চিনিযুক্ত, চিনিমুক্ত চা-কফি। এছাড়া এলাচযুক্ত চা, পুদিনা চা, বিভিন্নরকমের মশলাযুক্ত চা আনতেন।

তিনি রাস্তার পাশে বসে পথচারীদের মধ্যে চা, কফি, খেজুর, রুটি ও বিস্কুট বিনামূল্যে বিতরণ করতেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন ছেলেরা। কেউ কিছু দিতে চাইলে বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করতেন।

গত বছর সৌদি আরবের প্রভাবশালী পত্রিকা আল আরাবিয়া তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সিরিয়ার নাগরিক শায়খ ইসমাইল প্রায় ৪০ বছর ধরে মদিনায় বসবাস করে আসছিলেন। মদিনার কুবা এভিনিউতে একটি সাধারণ বাড়িতে বসবাস করলেও নিজের সম্পদ পুরোটাই উৎসর্গ করেছিলেন হজ ও উমরা যাত্রীদের খেদমতে।

টানা চার দশক ধরে অনন্য এই সেবার কারণে সবার কাছে তিনি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হন। তার মৃত্যুতে মদিনায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বাংলাদেশের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি শোকপ্রকাশ করে তার জন্য দোয়া কামনা করেছেন।

;