কোরআনের আলোকে মুমিনের কিছু গুণ
মুমিন শব্দটি আরবি। অর্থ বিশ্বাসী। মুমিনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যার সমস্ত কর্মকাণ্ড একনিষ্ঠতার সঙ্গে একমাত্র আল্লাহতায়ালা ও তার রাসূলের আনুগত্যের পথে পরিচালিত হয়।
মুমিন ও মুমিনের গুণাবলি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের অসংখ্য জায়গায় বর্ণনা রয়েছে। সেখান থেকে কিছু আয়াত উল্লেখ করা হলো-
১. মুমিনের সামনে আল্লাহতায়ালার নাম নিলে ভয়ে অন্তর কেঁপে উঠবে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘সত্যিকারের মুমিন (ঈমানদার) তো তারাই আল্লাহকে স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পাঠ হয়, তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা নিজেদের রবের ওপর ভরসা করে।’ -সূরা আনফাল: ২
২. আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কখনো শিরক করে না। ‘তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্যকে ডাকে না।’ -সূরা ফুরকান: ৬৮
৩. ‘জিনা-ব্যভিচার করে না’ (সূরা ফুরকান: ৬৮), ‘সেই সঙ্গে নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।’ -সূরা মুমিনুন: ৫
৪. একনিষ্ঠতা সহকারে নামাজ আদায় করে। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘যারা নিজেদের নামাজে বিনয়াবনত হয় এবং নিজেদের নামাজগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে।’ -সূরা মুমিনুন: ২-৯
৫. পিতা-মাতার প্রতি উফ শব্দও করে না। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘তাদেরকে (পিতা-মাতাকে)‘উহ’ পর্যন্ত বলো না।’ -সূরা ইসরা: ২৩
৬. মুমিন সর্বদা অযথা এবং বাজে কাজ থেকে দূরে থাকবে। আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘বাজে কাজ থেকে দূরে থাকে।’ -সূরা মুমিনুন: ৩
৭. মুমিন কখনও ধারণা করে কাজ করে না। কোরআনে বিষয়টি বলা হয়েছে এভাবে, ‘এরা বলে, জীবন বলতে তো শুধু আমাদের দুনিয়ার এই জীবনই। আমাদের জীবন ও মৃত্যু এখানেই এবং কালের বিবর্তন ছাড়া আর কিছুই আমাদের ধ্বংস করে না। প্রকৃতপক্ষে এ ব্যাপারে এদের কোনো জ্ঞান নেই। এরা শুধু ধারণার বশবর্তী হয়ে এসব কথা বলে।’ –সূরা জাসিয়া: ২৪
৮. কোনো মুমিন মূর্খদের সঙ্গে কখনো তর্ক করে না। কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘মূর্খরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে থাকলে সালাম বলে দেয়।’ -সূরা ফুরকান: ৬৩
৯. প্রকৃত মুমিনরা নিন্দুকের নিন্দাকে পরওয়া করে না। ‘যারা আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা করে যাবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না।’ -সূরা মায়েদা: ৫৪
১০. কোনো মুমিন কখনো মিথ্যা কথা বলবে না। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, আমানতের খেয়ানত করে না, প্রতিশ্রুতি দিলে তা রক্ষা করে, অঙ্গিকার করে তা পূর্ণ করে।’ –সূরা বাকারা: ১৭৭
১১. এতিমের হক নষ্ট করবে না। ‘এতিমদের তাদের ধন-সম্পদ ফিরিয়ে দাও।’ -সূরা নিসা: ২
১২. মুমিনের আরেক গুণ হলো, সে মানুষের ভুলভ্রান্তিকে ক্ষমা করবে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অন্যের দোষ-ক্রটি মাফ করে দেয়।’ -সূরা আলে ইমরান: ১৩৪
১৩. রাগান্বিত হলে রাগকে দমন করবে। ‘যারা ক্রোধ দমন করে।’ –সূরা আলে ইমরান: ১৩৪
১৪. কেবলমাত্র মুমিনদেরকেই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে। ‘মুমিনরা যেন ঈমানদারদের বাদ দিয়ে কখনো কাফেরদের নিজেদের পৃষ্ঠপোষক, বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে গ্রহণ না করে। যে এমনটি করবে, আল্লাহর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে হ্যাঁ, তাদের জুলুম থেকে আত্মরক্ষার জন্য তোমরা যদি বাহ্যত এ নীতি অবলম্বন করো- তাহলে তা মাফ করে দেওয়া হবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে তার নিজের সত্তার ভয় দেখাচ্ছেন আর তোমাদের তারই দিকে ফিরে যেতে হবে।’ -সূরা আলে ইমরান: ২৮
১৫. অভাব-অনটন এবং সচ্ছলতায় সর্বাবস্থায় দান করবে। ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায় অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে।’ –সূরা আলে ইমরান: ১৩৪