মাকামে ইবরাহিমের মর্যাদা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
মাকামে ইবরাহিম, যে পাথর খণ্ডে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পায়ের চিহ্ন রয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

মাকামে ইবরাহিম, যে পাথর খণ্ডে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পায়ের চিহ্ন রয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মক্কা (সৌদি আরব) থেকে: পবিত্র কাবা ঘর থেকে ১০ বা ১১ মিটার পূর্ব দিকে সাফা-মারওয়া অভিমুখে অবস্থিত একটি সোনালী রংয়ের মিনার দৃষ্টি কাড়ে সবার। এটাই মাকামে ইবরাহিম। এর ভেতরে একটি পাথর খণ্ড রয়েছে, যে পাথর খণ্ডে দু'টো পায়ের ছাপ বিদ্যমান।

এই পাথরটি নরম প্রকৃতির পাথর, কঠিন শিলা খণ্ড নয়। এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা প্রায় পঞ্চাশ সেন্টিমিটার। প্রায় চৌকোণ বিশিষ্ট। পাথরটি আগে উন্মুক্ত ছিল, যে কেউ হাত দ্বারা স্পর্শ করতে পারত। কিন্তু পরবর্তীতে তা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে অত্যন্ত সুদর্শন ও মজবুত লোহা ও কাঁচের বেষ্টনীর ভেতর একটি ক্রিস্টালের বাক্সে রাখা হয়েছে। এটা ধরা, স্পর্শ করা, চুমো খাওয়া, তাতে কোনো কাপড় মুছে আনার কোনো আলাদা উপকারিতা নেই। তারপরও অনেক তাওয়াফকারী কাজগুলো করে থাকেন। এগুলো ভুল কাজ। ইসলামি শরিয়ত এসব করার অনুমতি দেয় না।

মাকামে ইবরাহিম। অর্থ হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দাঁড়ানোর স্থান। এটি একটি জান্নাতের অতি মূল্যবান ইয়াকুত পাথর। এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি; হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহিম জান্নাতের দু'টো ইয়াকুত পাথর। আল্লাহতায়ালা এই দু'টির আলোকপ্রভা নিষ্প্রভ করে দিয়েছেন। এ দু'টির প্রভা যদি তিনি নিষ্প্রভ না করতেন তাহলে তা পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে যা কিছু আছে সব আলোকিত করে দিত। -তিরমিজি: ৮৭৮

এ পাথরটি আল্লাহতায়ালার অন্যতম নিদর্শন। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর। যা মক্কায় অবস্থিত এবং সমগ্র জগতের মানুষের জন্য বরকতময় ও পথ নির্দেশ (হেদায়েত)। এতে রয়েছে মাকামে ইবরাহিমের মতো প্রকৃষ্ট নিদর্শন। -সূরা আলে ইমরান: ৯৬ ও ৯৭।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/23/1566569071755.jpg

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, ‌মাকামে ইবরাহিম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- যে পাথরে তার পদযুগলের চিহ্ন রয়েছে।

আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমের দুই জায়গায় মাকামে ইবরাহিমের কথা উল্লেখ করেছেন। ওই দুই স্থান হলো- সূরা বাকারা ১২৫ ও সূরা আলে ইমরানের ৯৭ নম্বর আয়াত।

হজরত ইবরাহিম (আ.) এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে কাবা ঘর নির্মাণ করেছেন। তার পুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম পাথর সংগ্রহ করে এনে এগিয়ে দিতেন। আর তিনি এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে কাবা ঘরের দেয়াল নির্মাণ করতেন। এ প্রসঙ্গে বোখারির হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর ইবরাহিম (আ.) বললেন, হে ইসমাইল! আল্লাহ আমাকে একটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত ইসমাইল (আ.) বললেন, আপনার রব! আপনাকে যা আদেশ করেছেন, তা করুন। হজরত ইবরাহিম (আ.) বললেন, তুমি আমাকে সাহায্য করবে কি? হজরত ইসমাইল (আ.) বললেন, আমি আপনাকে সাহায্য করবো।

হজরত ইবরাহিম (আ.) বললেন, আল্লাহ আমাকে এখানে একটি ঘর বানাতে নির্দেশ দিয়েছেন।

এই বলে তিনি উঁচু টিলাটির দিকে ইশারা করলেন যে, এর চারপাশে ঘেরাও দিয়ে। তখন তারা উভয়ে কাবা ঘরের দেয়াল তুলতে লেগে গেলেন। হজরত ইসমাইল (আ.) পাথর আনতেন, আর হজরত ইবরাহিম (আ.) নির্মাণ করতেন।

পরিশেষে যখন দেয়াল উঁচু হয়ে গেল, তখন হজরত ইসমাইল (আ.) (মাকামে ইবরাহিম নামে খ্যাত) পাথরটি আনলেন এবং হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য তা যথাস্থানে রাখলেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) তার ওপর দাড়িয়ে নির্মাণ কাজ করতে লাগলেন। আর হজরত ইসমাইল (আ.) তাকে পাথর যোগান দিতে থাকেন। তখন তারা উভয়ে এ দোয়া করতে থাকলেন, হে আমাদের রব! আমাদের থেকে কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছু শুনেন ও জানেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/23/1566569991338.jpg

তারা উভয়ে আবার কাবা ঘর তৈরি করতে থাকেন এবং কাবা ঘরের চারদিকে ঘুরে ঘুরে দোয়া করতে থাকেন, হে আমাদের রব! আমাদের থেকে কবুল করে নিন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছু শুনেন ও জানের। -সূরা আল বাকারা: ১২৭, -সহিহ বোখারি: ৩১২২

আল্লাহতায়ালা হজ ও উমরাকারীদের মাকামে ইবরাহিমের পেছনে নামাজ আদায়ের নির্দেশ প্রদান দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কা এলেন সাতবার বায়তুল্লাহর তওয়াফ করলেন। তখন তাকে আমি পাঠ করতে শুনেছি, তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো।' -সূরা বাকারা: ১২৫

তারপর তিনি মাকামে ইবরাহিমের পেছনে নামাজ আদায় করলেন। -সুনানে তিরমিজি

এই পাথরের ওপরে যে দু'টি পদচিহ্নের মতো গর্ত আছে, সেগুলো ইবরাহিম (আ.)-এর পদচিহ্ন কিনা, এ প্রসঙ্গে উল্লেখিত আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে ইবনে জারির কাতাদা (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালা এ পাথরের নিকটে লোকদের নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন; হাত দ্বারা মাসেহ করতে বলেননি। কিন্তু এই উম্মত নিজেদের ওপর এমন কিছু কাজ চাপিয়ে নিয়েছে যা পূর্ববর্তী উম্মতগণ করেননি। যাহোক, যারা ওই পাথরের ওপর হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পায়ের গোড়ালি ও আঙ্গুলের চিহ্ন দেখেছেন, তারা আমাদের কাছে বিবরণ দিয়েছেন। কিন্তু উম্মতের লোকেরা হাত দ্বারা স্পর্শ করতে করতে সেই পাথরের আলোকপ্রভা নিষ্প্রভ হয়ে গেছে এবং শেষ অবধি সেই চিহ্ন মুছে গেছে। -তাফসিরে ইবনে কাসির: ১/১১৭

আর আল্লামা উসমাইমিন (রহ.) বলেন, মাকামে ইবরাহিম সুপ্রমাণিত। এতে কোনও সন্দেহ নাই। এই যে কাচে ঘেরা স্থাপনাটি সেটি মাকামে ইবরাহিম। কিন্তু তার মধ্যে যে গর্তটি রয়েছে তা দেখে মনে হয় না যে, এটি ইবরাহিম (আ.)-এর পদযুগলের চিহ্ন। কেননা এটি ঐতিহাসিকভাবে স্বতঃসিদ্ধ যে, দীর্ঘ কালপরিক্রমায় পদচিহ্ন মুছে গেছে এবং এটি সেখানে গর্ত করা হয়েছে বা কেবল চিহ্নিত করার জন্য বসানো হয়েছে। এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে, এ গর্তটিই হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পা রাখার স্থান।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/23/1566569176595.jpg

এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম (আ.) হজের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে ফাকেহি ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে করেন, হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবা ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ করলে আল্লাহ তাকে হজের ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। অত:পর তিনি মাকামে ইবরাহিমে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, হে লোকেরা! তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য একটি ঘর নির্মাণ করেছেন। অতঃএব তোমরা তাতে হজ করো।

তখন পুরুষদের পৃষ্ঠদেশ ও নারীদের গর্ভাশয় থেকে মানুষ তার জবাব দিয়ে বলল, আমরা সাড়া দিলাম, আমরা সাড়া দিলাম। আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, হে আল্লাহ! তোমার দরবারে উপস্থিত। তিনি বলেন, সুতরাং বর্তমানে যত মানুষ হজ করে তারা ওই সব লোক যারা সেদিন ইবরাহিম (আ.)-এর ডাকে সাড়া দিয়েছিল।

পাথরটি হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর যুগ, তারপরে জাহেলি যুগ, রাসূল (সা.)-এর যুগ এবং সর্বশেষ হজরত আবু বকর (রা.)-এর যুগে কাবা ঘরের সঙ্গে লাগানো অবস্থায় ছিলো। পরবর্তীতে উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) একটিকে কাবা থেকে কিছুটা দূরে স্থাপন করেন।

ইমাম বায়হাকি সহিহ সনদে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, মাকামটি রাসূলুল্লাহ (সা.) ও হজরত আবু বকর (রা.)-এর যুগে কাবা ঘরের সঙ্গে লাগানো ছিল। অত:পর হজরত উমর (রা.) সেটিকে পেছনে নিয়ে আসেন।

এর উদ্দেশ্য ছিল, যেহেতু মাকামে ইবরাহিমের পেছনে নামাজ আদায়ের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, সেহেতু সেটিকে এমন স্থানে স্থানান্তরিত করা প্রয়োজন যেন, লোকজন সুবিধাজনকভাবে নামাজ আদায় করতে পারে এবং তওয়াফকারীগণও বাধাগ্রস্ত না হয়। ইবনে হাজার আসকালানি (বহ.) বলেন, উমর (রা.)-এর কাজে কোনও সাহাবি প্রতিবাদ করেননি। সুতরাং এটি সাহাবিদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হিসেবে পরিগণিত।

   

মসজিদের নগরী এখন মসজিদের দেশে পরিণত হয়েছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ আয়োজিত আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত অতিথি, ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ আয়োজিত আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত অতিথি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমাজের অনাচার দূর করা সম্ভব। বিশেষ করে দুর্নীতি, মাদকাসক্তিসহ সব সমস্যা দূরীকরণে সামাজিক সংঠনগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে সামাজিক সংগঠনগুলোকে নিষ্ঠার সঙ্গে আরও ব্যাপকভাবে কাজ করা দরকার।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর কাকরাইলস্থ ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ আয়োজিত আলোচনা সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা আরও বলেন, উগ্রবাদীদের টার্গেটে যখন বাংলাদেশ, তখন এগিয়ে এসেছেন আলেম-উলামা এবং সংগঠনসমূহ। একসময় ঢাকা শহরকে মসজিদের নগরী বলা হতো। এখন সেটা ছাপিয়ে পুরো বাংলাদেশ মসজিদের দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর কারণে।

ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান উপদেষ্টা ধর্মবিষক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপিকে পূর্ণ মন্ত্রী, প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন মূখ্যসচিব মো. আবুল কালাম আজাদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এবং আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপিকে পরপর তিনবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ায় সংগঠনের বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুফতি আবুল বাশার নুমানি, মাওলানা মুজিবুর রহমান, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল হামিদ জমাদ্দার, ডি আইজি নাফিউর রহমান, মুফতি মুনিরুল ইসলাম এবং মুফতি রেজাউল হক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশন একটি অরাজনৈতিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজের মধ্য দিয়ে এটি আলোচনায় আসে।

২০২২ সালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিশ্বজয়ী হাফেজদের সংবর্ধনা ও জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগীতা’ আয়োজনের মধ্য দিয়ে ফাউন্ডেশনটি ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করে।

২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম দেশসেরা হাফেজদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।

কাজের ধারাবাহিকতায় ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতিতে ত্রাণ সহায়তা প্রদান, ঢাকার মিরপুরে পুলিশ কনভেনশন হলে ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে সচেতনতামূলক সেমিনার, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ‘এডিস মশা ও ডেঙ্গু বিস্তাররোধে করণীয়’ সম্পর্কে ইমাম-খতিবদের নিয়ে সেমিনারের আয়োজন ছাড়াও সারাদেশে ধর্মীয় ও সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

;

রমজানে উমরাকারীর সংখ্যা ২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কাবা তওয়াফ করছেন উমরাকারীরা, ২৮ মার্চ সকালের দৃশ্য, ছবি : হারামাইন পেইজ

কাবা তওয়াফ করছেন উমরাকারীরা, ২৮ মার্চ সকালের দৃশ্য, ছবি : হারামাইন পেইজ

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা ও মদিনায় এখন শুধু মানুষ আর মানুষ। দৃষ্টি যতদূর যায় শুধুই মানুষের ভিড়। তাদের কেউ ইহরাম পরিহিত, কেউ স্বাভাবিক পোষাকে। তবে সবার লক্ষ্য এক জায়গা- মসজিদে হারাম।

সোমবার (২৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়া জানিয়েছে, সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পবিত্র এই মাস শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৮২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৮০ জন মুসল্লি উমরা পালন করেছেন।

সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, এর আগে এত বিপুল সংখ্যক মুসল্লি এভাবে ভিড় করেননি। তাদের আশা আগামী ১৫ দিনে এই সংখ্যা ২ কোটি পার হয়ে যাবে।

প্রতিবেদন অনুসারে রমজান মাস শুরুর পর থেকে ৭২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৪ জন উমরা সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে দেশটিতে ৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৬ জন অবস্থান করছেন।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, স্থলপথে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক উমরাযাত্রী সৌদি আরব এসেছেন। এরপর যথাক্রমে আকাশপথ ও সমুদ্রপথে এসেছেন। স্থলপথে ৯ লাখ ৮০ হাজার ৫৫৬ জন আগমন করেছেন। আর আকাশপথে সাত লাখ ৯৮৩ জন এবং সমুদ্রপথে ৫৪ হাজার ১৪১ জন এসেছেন। রমজান মাসে পবিত্র মসজিদে হারামে ভিড় নিয়ন্ত্রণে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে উমরা পালন নিশ্চিত করতে নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে সৌদি আরব।

বিশেষ করে নুসুক অ্যাপের মাধ্যমে চলতি রমজানে উমরা পালনের কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয়বারের মতো অনুমতি পাননি। অ্যাপে আবেদন করলে একটি বার্তা ভেসে ওঠে। তাতে লেখা থাকে, ‘অনুমতি প্রদান ব্যর্থ হয়েছে। সবাইকে সুযোগ দিতে রমজানে দ্বিতীয়বার কেউ উমরা করতে পারবেন না।’

অন্য আরেক নির্দেশনায় পবিত্র কাবাঘরের প্রাঙ্গণ তথা মাতাফে নামাজ না পড়ে মসজিদে হারামে নামাজ পড়তে বলা হয়েছে। যেন ওই সময় উমরাযাত্রীরা তওয়াফ করতে পারেন। এ ছাড়া রমজান মাসে একবারের বেশি উমরা পালনে বারণ করাসহ মক্কার বাসিন্দাদের মসজিদে হারামে ভিড় না করে আশপাশের মসজিদে নামাজ পড়তে উৎসাহিত করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মুসলিম উমরা পালন করেছে, যা ছিল সৌদি আরবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যা।

;

শিক্ষাদানের শর্তে যে যুদ্ধের বন্দিরা মুক্তি পায়



মাওলানা সাইফুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
বদর যুদ্ধে মুসলমানদের সহযোগিতায় আসমান থেকে ফেরেশতা এই পাহাড়ে অবতীর্ণ হয়, বর্তমান নাম জাবালে মালাইকা, ছবি : সংগৃহীত

বদর যুদ্ধে মুসলমানদের সহযোগিতায় আসমান থেকে ফেরেশতা এই পাহাড়ে অবতীর্ণ হয়, বর্তমান নাম জাবালে মালাইকা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বদর যুদ্ধে বিপুলবৈভব কুরাইশদের বিরুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর অভাবনীয় বিজয় অর্জিত হয়। এই যুদ্ধে ৭০ জন কুরাইশ যোদ্ধা নিহত হয় এবং সমপরিমাণ ব্যক্তি বন্দি হয়। যুদ্ধ শেষে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় পৌঁছার পর সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে যুদ্ধবন্দিদের ব্যাপারে পরামর্শ করলেন। হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, ওরা তো চাচাতো ভাই এবং আমাদের আত্মীয়-স্বজন। আমার মত হলো, ওদের কাছ থেকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হোক। এতে অর্জিত সম্পদ অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের শক্তিতে পরিণত হবে। আর এমনও হতে পারে, আল্লাহতায়ালা তাদের হেদায়েত দেবেন এবং তারা একসময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে।

হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) ভিন্ন মত দিলেন। তিনি বললেন, কুরাইশ যোদ্ধাদের হত্যা করা হোক, যেন ইসলামের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণের সাহস কেউ না পায়। এ ছাড়া এ যুদ্ধবন্দিরা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। তাদের অনুপস্থিতি অবিশ্বাসী শিবিরকে দুর্বল করে দেবে।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আবুবকরের পরামর্শ গ্রহণ করলেন। কিন্তু আল্লাহতায়ালা হজরত ওমরের সিদ্ধান্তটিই অধিক সঠিক ছিল বলে জানিয়ে দেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিকটবর্তী একটি গাছের প্রতি ইশারা করে বললেন, আমার কাছে ওদের আজাব এই গাছের চেয়ে নিকটতর করে উপস্থাপন করা হয়েছে। -তারিখে ওমর ইবনে খাত্তাব, ইবনে জওজি, পৃষ্ঠা ৩৬

তবে আল্লাহতায়ালা ফিদইয়া গ্রহণের সিদ্ধান্তের বৈধতা দেন এবং প্রদেয় মুক্তিপণকে মুসলিমদের জন্য হালাল ঘোষণা করেন। তবে আল্লাহতায়ালা এ জন্য করেছেন যে তারা শুধু যুদ্ধবন্দি ছিল না; বরং তারা ইসলাম, মুসলমান ও মানবতার বিরোধী অনেক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল।

যুদ্ধবন্দিদের কাছ থেকে নেওয়া মুক্তিপণের পরিমাণ ছিল এক হাজার থেকে চার হাজার দিরহাম পর্যন্ত। যাদের মুক্তিপণ দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না, তাদের পেশা দক্ষতার বিনিময়ে মুক্তি লাভের সুযোগ দেওয়া হয়। যেমন- মক্কাবাসী লেখাপড়া জানত। পক্ষান্তরে মদিনায় লেখাপড়া জানা লোকের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। ফলে যাদের মুক্তিপণ প্রদানের সামর্থ্য নেই এবং লেখাপড়া জানে, তাদের সুযোগ দেওয়া হলো যে তারা মদিনায় ১০টি করে শিশুকে লেখাপড়া শেখাবে। শিশুরা ভালোভাবে লেখাপড়া শেখার পর শিক্ষক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কয়েকজন বন্দিকে বিশেষ দয়া করায় তাদের কাছ থেকে ফিদইয়া গ্রহণ করা হয়নি, এমনিতেই মুক্তি দেওয়া হয়। তারা ছিল মোত্তালিব ইবনে হানতাব, সাঈফি ইবনে আবু রেফায়া ও আবু আযযা জুমাহি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জামাতা আবুল আসকে এই শর্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন যে তিনি নবীনন্দিনী হজরত জয়নব (রা.)-র পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না।

এর কারণ ছিল যে হজরত জয়নব (রা.) আবুল ইবনে আসের ফিদইয়া হিসেবে কিছু সম্পদ পাঠিয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি হারও ছিল। হারটি হজরত খাদিজা (রা.) হজরত জয়নব (রা.)-কে আবুল আসের ঘরে পাঠানোর সময় উপহারস্বরূপ দিয়েছিলেন। মহানবী (সা.) তা দেখে অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন এবং আবেগে তার কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে আসে। তিনি আবুল আসকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে সাহাবাদের মতামত চান। সাহাবারা প্রিয় নবী (সা.)-এর এই প্রস্তাব সশ্রদ্ধভাবে অনুমোদন করেন। অতঃপর মহানবী (সা.) তার জামাতা আবুল আসকে এই শর্তে ছেড়ে দেন যে তিনি হজরত জয়নব (রা.)-কে মদিনায় আসার সুযোগ করে দেবেন। স্বামীর অনুমতি পেয়ে জয়নব (রা.) মদিনায় হিজরত করেন।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত জায়েদ ইবনে হারেসা এবং অন্য একজন আনসারি সাহাবিকে মক্কায় প্রেরণ করেন। তাদের বলা হয়, তোমরা মক্কার উপকণ্ঠ অথবা জাজ নামক জায়গায় থাকবে। হজরত জয়নব (রা.) তোমাদের কাছ দিয়ে যখন যেতে থাকবেন, তখন তাকে সঙ্গে নিয়ে আসবে। এই দুজন সাহাবি মক্কায় গিয়ে হজরত জয়নব (রা.)-কে মদিনায় নিয়ে আসেন। হজরত জয়নব (রা.)-এর হিজরতের ঘটনা অনেক দীর্ঘ এবং মর্মস্পর্শী।

;

ইতিহাস বদলে দেওয়া বদর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট



মাওলানা আবদুল জাব্বার, অতিথি লেখক, ইসলাম
বদর যুদ্ধে যেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তাঁবু ছিল সেখানে পরে এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে, নাম মসজিদে আরিশ, ছবি : সংগৃহীত

বদর যুদ্ধে যেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তাঁবু ছিল সেখানে পরে এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে, নাম মসজিদে আরিশ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুসলিম ইতিহাসের প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ বদর। দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান মদিনার উপকণ্ঠে বদর নামক স্থানে মুখোমুখি হয় মুসলিম ও কুরাইশ বাহিনী। ঐতিহাসিক এ যুদ্ধ ছিল অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই। ইসলাম ও মুসলিমদের অস্তিত্বের সংগ্রাম। বদর যুদ্ধে আল্লাহতায়ালা অসম প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মুসলিম বাহিনীকে বিজয় দান করেন। অস্তিত্বের সংকট থেকে মুসলিম উম্মাহকে মুক্তি দিয়ে অমিত সম্ভাবনার দুয়ারে পৌঁছে দেন।

৬২৪ খ্রিস্টাব্দ তথা দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান সংঘটিত হয়েছিল ইসলামে চিরস্মরণীয় ও গৌরবময় অধ্যায় বদর যুদ্ধ। এটি ছিল সত্য ও মিথ্যার, হক ও বাতিলের, মুসলিম ও কাফেরদের মধ্যকার ঐতিহাসিক যুদ্ধ, ইসলামের প্রথম যুদ্ধ। মদিনার অদূরে অবস্থিত একটি কূপের নাম ছিল বদর। সেই সূত্রে এই কূপের নিকটবর্তী আঙিনাকে বলা হতো বদর প্রান্তর। এই বদর প্রান্তরেই মহান আল্লাহ তার প্রিয় হাবিব নিরস্ত্র মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তার সঙ্গীদের বিজয়ী করেছিলেন হাজার সশস্ত্র যোদ্ধার মোকাবেলায়।

ঘটনার সূত্রপাত
মদিনায় বইতে থাকা ইসলামের বসন্তের হাওয়া মক্কার কাফেরদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল। না জানি কখন এই হাওয়া দমকা হাওয়ায় রূপ নিয়ে তাদের উড়িয়ে নিয়ে যায়, কিংবা তাদের ব্যবসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই মুসলমানদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার জন্য অর্থ জোগান ও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ক্রয় করার উদ্দেশ্যে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মক্কার একটি বিশাল বাণিজ্য কাফেলা শামে গিয়েছিল। মক্কার প্রতিটি ঘর থেকে প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ দিয়ে গঠন করা হয়েছিল ৪০ জন সশস্ত্র অশ্বারোহী যোদ্ধার পাহারায় এক হাজার মালবাহী উটের একটি বাণিজ্যিক বহর।

বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিল মুসলমানরাও। তাই যখন তারা শাম থেকে ব্যবসা শেষে অস্ত্র নিয়ে ঘরে ফিরছিল, তখন তাদের ওপর হামলা করার সিদ্ধান্ত হলো। মুসলমানদের আত্মরক্ষার্থে হামলা করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না। বিষয়টি আবু সুফিয়ান টের পেয়ে দ্রুত সাহায্যের জন্য মক্কায় খবর পাঠায়। তবে খবরটি ছিল, মুসলমানরা আবু সুফিয়ানের কাফেলার ওপর হামলা করেছে। খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ আবু জাহেলের নেতৃত্বে এক হাজার সশস্ত্র যোদ্ধার এক বিশাল বাহিনী মদিনা আক্রমণের জন্য বের হয়। অথচ মুসলমানরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে আসেনি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল শুধু আবু সুফিয়ানকে আটকানো।

এই যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে যেসব বিষয় প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছিল তা ছিল নাখলার খণ্ডযুদ্ধ, কাফেরদের রণপ্রস্তুতি, আবু সুফিয়ানের অপপ্রচার, যুদ্ধপ্রস্তুতির জন্য অহি লাভ ও মক্কাবাসীর ক্ষোভ ইত্যাদি। আর পরোক্ষ কারণ হিসেবে দেখা হয়, মদিনা শরিফে সাফল্যজনকভাবে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কুরাইশদের হিংসা, আবদুল্লাহ বিন উবাই ও ইহুদিদের ষড়যন্ত্র, কুরাইশদের যুদ্ধের হুমকি, তাদের বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা, কাফেরদের আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা, ইসলামের ক্রমবর্ধমান শক্তির ধ্বংসসাধন এবং রাসুল (সা.)-কে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার কাফেরদের অশুভ বাসনা।

যুদ্ধের ফলাফল ও প্রভাব

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। মহান আল্লাহ এই যুদ্ধকে ‘ইয়াওমুল ফুরকান’- সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্টকারী দিন বলে আখ্যা দিয়েছেন। আল্লাহর এই নামকরণ থেকেই বদর যুদ্ধের প্রভাব ও ফলাফল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। মূলত প্রতিষ্ঠিত শক্তি কুরাইশদের বিরুদ্ধে সদ্যঃপ্রসূত মদিনার ইসলামি রাষ্ট্রের জন্য বদর ছিল অস্তিত্বের লড়াই। বদর যুদ্ধের বিজয় ছিল মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রথম রাজনৈতিক স্বীকৃতি। এ যুদ্ধই ইসলামি রাষ্ট্রের পথচলার গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বদর যুদ্ধের পূর্বাপর অবস্থা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এই যুদ্ধ শুধু মদিনা নয়; বরং সমগ্র আরব উপদ্বীপে মুসলিম উম্মাহর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছিল।

ঐতিহাসিকরা মনে করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হিজরতের পর মদিনায় যে ইসলামি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়েছিল, তার প্রকৃত প্রতিষ্ঠা বদর প্রান্তে বিজয়ের মাধ্যমেই হয়েছিল। এই বিজয়ের আগে মদিনার মুসলিমরা ছিল একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় মাত্র। কিন্তু কুরাইশদের মতো প্রতিষ্ঠিত শক্তির বিরুদ্ধে সামরিক বিজয় এই ধারণা পাল্টে দেয় এবং আরব উপদ্বীপে মদিনার মুসলিমদের একটি রাজনৈতিক পক্ষের মর্যাদা এনে দেয়। শুধু তা-ই নয়, বদর যুদ্ধ আরবের বহু মানুষের হৃদয়ের সংশয় দূর করে দেয় এবং তারা ইসলাম গ্রহণের সৎসাহস খুঁজে পায়। এ ছাড়া অসম শক্তির বিরুদ্ধে এই অসাধারণ বিজয় মুসলিম উম্মাহর জন্য অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস।

আরবের অমুসলিমদের ওপরও বদর যুদ্ধের প্রভাব ছিল অপরিসীম। বদর যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনীর ৭০ জন নিহত হয়। তাদের বেশির ভাগই ছিল শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ও খ্যাতনামা আরব বীর। আবু জাহেল, উতবা ইবনে রাবিয়া, শায়বা ইবনে রাবিয়া, ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা, নদর বিন হারেস ও উমাইয়া বিন খালাফের মতো কুরাইশ নেতাদের করুণ মৃত্যু তাদের হৃদয়াত্মাকে কাঁপিয়ে দেয় এবং তাদের চোখ থেকে অহমিকার পর্দা সরে যায়। কারণ সমকালীন ইতিহাসে কুরাইশ গোত্রের এমন বিপর্যয় আরবরা দেখেনি।

এ ছাড়া বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর বিজয় কুরাইশদের অবাধ বাণিজ্য এবং আরবের অন্যান্য গোত্রের ওপর অন্যায় প্রভাব খাটানোর পথ বন্ধ করে দেয়। মদিনার উপকণ্ঠে ডাকাতি ও লুণ্ঠনের যে ধারা যুগ যুগ ধরে চলে আসছিল- যার পেছনে কুরাইশ নেতাদের সহযোগিতা ও প্রশ্রয় ছিল, তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মুসলিম বাহিনীর এই বিজয়ে স্বস্তি প্রকাশ করে মদিনা ও আশপাশের সর্বস্তরের মানুষ। তারা স্বাগত জানায় সত্যপক্ষের এই মহান বিজয়কে।

;