মসজিদের জামাতে নারীদের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে ইসলাম



মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম
মসজিদের জামাতে নারীরা নামাজ আদায় করছেন, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদের জামাতে নারীরা নামাজ আদায় করছেন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দ্বীনি কাজ মানুষ করে থাকে হয়তো আবশ্যক হওয়ার কারণে অথবা সওয়াব লাভের আশায়। মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণ করা নারীদের জন্য আবশ্যক? নাকি অধিক সওয়াবের? এ প্রশ্নের সমাধানের দিকে তাকালে খুব সহজে ও সুস্পষ্টভাবেই বুঝে আসবে, মসজিদের জামাতে নারীদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী কেমন।

হজরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি নারী ও শিশুরা বাড়িগুলোতে না থাকত তাহলে আমি এশার নামাজে দাঁড়িয়ে যেতাম আর যুবকদের বলতাম, (যারা জামাতে শরিক হয়নি তাদের) বাড়িগুলোকে ওরা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিত। -আহমাদ: ৮৭৯৬

এ হাদিসে দেখা যাচ্ছে, জামাত ত্যাগকারীদের বাড়িগুলো আগুন দিয়ে না জ্বালানোর কারণ হলো- সেগুলোতে নারীরা আছে। যদি মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণ করা পুরুষদের মতো নারীদের জন্য আবশ্যক হতো তাহলে নারীরা শাস্তি স্থগিতের উপলক্ষ না হয়ে, শাস্তি প্রয়োগের উপলক্ষ হতো।

তিনি আরও ইরশাদ করেছেন, ওই সত্ত্বার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই আমার মনে চায় কাউকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে বলি। অত:পর কাউকে নামাজের আজান দিতে এবং কাউকে জামাতের ইমামতি করতে বলি। অত:পর (জামাতে শরিক হয়নি এমন) পুরুষদের খোঁজে বের করে তাদেরসহ তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেই। -সহিহ বোখারি: ৭২২৪

এ হাদিসে দেখা যাচ্ছে, জামাতে না আসায় হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষুব্ধ হয়েছেন শুধু পুরুষদের ওপর, শাস্তি দিতে চাচ্ছেন শুধু পুরুষদের। যদি মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণ করাটা পুরুষদের মতো নারীদের জন্যও আবশ্যক হতো তাহলে শুধু পুরুষের ওপর রাগ প্রকাশ না করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার ওপরই তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করতেন।

বর্ণিত হাদিস দু’টি সুস্পষ্ট ভাষায় প্রমাণ করে যে, মসজিদের জামাত নারীদের জন্য আদৌ আবশ্যক নয়। নারীরা মসজিদের জামাতে শরিক না হলে গোনাহগার হবে না।

এবার আমাদের ভাবতে হবে সম্ভাবনার দ্বিতীয় দিক নিয়ে। মসজিদের জামাতে শরিক হওয়া নারীদের জন্য আবশ্যক না হলেও যদি কোনো নারী কষ্ট শিকার করে আগ্রহী হয়ে মসজিদের জামাতে হাজির হয় তবে কি, সে এতে অতিরিক্ত সওয়াব পাবে?

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বড় ঘরে নামাজ পড়ার চেয়ে ছোট ঘরে নামাজ পড়া নারীর জন্য অধিক ফজিলতের। আবার ছোট ঘরে নামাজ পড়ার চেয়ে ভেতরের ছোট কুঠুরিতে নামাজ পড়া নারীর জন্য বেশি ফজিলতের। -সুনানে আবু দাউদ: ৫৭০

বাড়ির কুঠুরিই নারীর সর্বোত্তম মসজিদ। -আহমাদ: ২৬৫৪২

উম্মে হুমাইদ (রা.) গেলেন নবীর দরবারে। বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সঙ্গে নামাজ পড়তে ভালোবাসি। নবী করিম (সা.) বললেন, আমিও জানি, তুমি আমার সঙ্গে নামাজ পড়তে ভালোবাসো। কিন্তু তোমার জন্য তো আমার মসজিদের চেয়ে তোমার স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়া বেশি ভালো। আবার তোমার স্থানীয় মসজিদের চেয়ে তোমার বাড়ির আঙ্গিনায় নামাজ পড়া তোমার জন্য বেশি ভালো। আবার তোমার বাড়ির আঙ্গিনার চেয়ে তোমার বড় ঘরে নামাজ পড়া তোমার জন্য বেশি ভালো। আবার তোমার বড় ঘরের চেয়ে তোমার ছোট ঘরে নামাজ পড়া তোমার জন্য বেশি ভালো। অত:পর উম্মে হুমাইদের নির্দেশক্রমে তার ছোট ঘরের সর্বাধিক অন্ধকার কোনায় তার নামাজের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়। আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সাক্ষাত (মৃত্যু অবধি) করা পর্যন্ত তিনি সেখানেই নামাজ পড়েছেন। -আহমাদ: ২৭০৯০, ইবনে খুযাইমা: ১৬৮৯

নিজের ঘরের অন্ধকার কোনায় আদায় করা নামাজের চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় কোনো নামাজ নারী আদায় করে না। -মাজমাউয যাওয়ায়িদ: ২১১৫

নারীর জন্য বাইরের চেয়ে আঙ্গিনায় নামাজ পড়া বেশি ভালো, আঙ্গিনার চেয়ে বড় ঘরে নামাজ পড়া বেশি ভালো, বড় ঘরের চেয়ে ছোট ঘরে নামাজ পড়া বেশি ভালো। -মুজামুল আওসাত: ৯১০১

বর্ণিত ৫টি হাদিস প্রমাণ করে, মসজিদের জামাতে শরিক হলে নারীরা বাড়তি কোনো সওয়াব তো পাবেই না। বরং নিজের ঘরে নামাজ পড়ার চেয়ে আরও কম সওয়াব পাবে। তাই অধিক সওয়াব পেতে চাইলে মসজিদে নয় ঘরে নামাজ আদায় করুন।

যেহেতু ইসলাম নারীদের জন্য মসজিদের জামাত আবশ্যক করেনি এবং ঘরে নামাজে আদায়ে বেশি সওয়াব রেখেছে সেহেতু বুঝা যাচ্ছে, মসজিদের জামাতে নারীদের অংশগ্রহণ ইসলামে কাম্য নয়।

এমন একটি হাদিসও পাওয়া যায় না, যাতে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের জামাতে উপস্থিত হতে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।

হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মসজিদে নববির জামাতে নারীরা শরিক হতো কিন্তু মদিনার অন্য মসজিদগুলোতে জামাতে নারীরা শরিক হতো না। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, মসজিদে নববির জামাতে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি ইসলামের বিস্তৃত সাধারণ কোনো বিধান নয়। এটা নিছক একটি বিশেষ বিধান।

হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্নিধ্য লাভের জন্য ও সরাসরি তার থেকে অহির জ্ঞান লাভের জন্য নারীরা মসজিদে নববির জামাতে শরিক হতেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Dec/03/1543832087891.jpg
বাড়ির কুঠুরিই নারীর সর্বোত্তম মসজিদ

 

মসজিদে হারামে ও মসজিদে নববিতে অদ্যাবধি নিরবিচ্ছিন্নভাবে সব যুগে নারীরা জামাতে শরিক হয়ে থাকে এটাও ইসলামের ব্যাপক বিস্তৃত ও সাধারণ কোনো বিধি নয়। যেহেতু চব্বিশ ঘণ্টাই তাওয়াফের ও জিয়ারতের অনুমতি আছে আর তওয়াফ ও জিয়ারতের অবস্থায় নামাজের সময় হয়ে গেলে সেখান থেকে বের হয়ে যেয়ে নামাজ আদায় সম্ভব নয় সেহেতু উক্ত দুই মসজিদে সব যুগেই নারীরা জামাতে শরিক হয়ে থাকে।

সার্বিক দিক বিবেচনায় বলা যায়, জামাতে শরিক হওয়ার জন্য নারীদের মসজিদে যাওয়া ইসলাম পছন্দ করে না। এটা নতুন উদ্ভাবিত কোনো সিদ্ধান্ত নয়। বরং মুসলিম জননী হজরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা, দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ফারুক (রা.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর মতো হাদিস ও ফিকহের শীর্ষস্থানীয় সাহাবাদের গৃহীত সিদ্ধান্ত এটা।

মুসলিম জননী হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি নারীদের নতুন এ পরিবর্তন দেখতেন তাহলে মসজিদে যেতে তাদের নিষেধ করতেন যেভাবে বনি ইসরাইলের নারীদের নিষেধ করা হয়েছিল। -সহিহ বুখারি: ৮৬৯

এখানে একটা সংশয় জাগতে পারে, মসজিদের জামাতে নারীদের অংশগ্রহণ যদি ইসলামে অপছন্দনীয়ই হতো তাহলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন স্পষ্ট ভাষায় তা ঘোষণা করে যাননি। এর উত্তরে বলতে হবে, শুধু এটা নয়। আরও বেশকিছু বিষয় এমন আছে যা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি স্পষ্ট করে যাননি। পরবর্তী সময়ে সাহাবারা তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। যেমন- কোরআনে কারিম একত্রিত করা ও মলাটবদ্ধ করা, মসজিদে তারাবির নামাজের বহু জামাত বন্ধ করে মাত্র এক জামাত চালু রাখা এবং পূর্ণ রমজান মাস তা আদায় করা, খলিফাতুল মুসলিমীন মনোনয়নের শরয়ী পদ্ধতি চালু করা ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

অধিক সওয়াবের আশায় বা আবশ্যক মনে করে জামাতে শরিক হতে নারীদের মসজিদে গমন ইসলামে অপছন্দনীয়। কিন্তু কোনেরা প্রয়োজনে বাইরে গেলে মসজিদের জামাতে শরিক হওয়া অথবা মসজিদে নামাজ আদায় করা নারীদের জন্য নিষিদ্ধ নয়। তাই রেলস্টেশন, বাস স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, বিমান বন্দর, বাজার এলাকা, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালতপাড়া প্রভৃতি স্থানে অবস্থিত মসজিদগুলোতে নারীদের নামাজ আদায়ের সুব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। হাজারও নামাজি নারী বাইরে গেলে নামাজ কাজা করতে বাধ্য হয় শুধুমাত্র ব্যবস্থা না থাকার দরুণ।

উপরোল্লিখিত মসজিদগুলোতে নারীদের জন্য নামাজ আদায়ের সুব্যবস্থা না করা আবার আবাসিক এলাকার মসজিদগুলোতে স্থানীয় নারীদের নিয়মিত জামাতে শরিক হতে উদ্বুদ্ধ করা উভয়টি ইসলাম নিয়ে বাড়াবাড়ির নামান্তর। যা রীতিমতো প্রান্তিকতা।

   

দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতা প্রকাশ পেয়েছে যে আয়াতে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন মাজিদ, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন মাজিদ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইতিহাসজুড়ে দেখা গেছে, মানুষ সবসময়ই তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কারণ মানুষ প্রকৃতিগতভাবে অভাব নিয়েই দুনিয়ায় এসেছে। দুইভাবে মানুষ বিপদগ্রস্ত হচ্ছে কিংবা বিপদে পড়ছে। এক. মানুষের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ঠিকমতো চিহ্নিত না করা। দুই. ভুল পথে চাহিদা মেটানোর প্রবণতা।

এই দুই বিপদজনক পথ সঠিকভাবে অতিক্রমের জন্যই আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসুলদেরকে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী নবীরা মানুষকে শিক্ষা দিতেন। যেমন কোরআনের বক্তব্য যদি মানুষ বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী আমল করে তাহলে তার শক্তিসামর্থ্য যেমন বাড়বে তেমনি পরিত্রাণ পাবে এবং যেকোনো বিপদ বা ভুল পথে পরিচালিত হওয়া থেকে নাজাত পাবে।

কোরআন মাজিদের সুরা হাদিদের ২০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা জেনে রাখো যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র।

এর উপমা হলো- বৃষ্টির মতো, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদের আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখেরাতে আছে কঠিন আজাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’

বর্ণিত আয়াতটি আমাদের কাছে জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরেছে এভাবে-
ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া মোটেই ভরসা করার যোগ্য নয়। পার্থিব জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা কিছু হয় এবং যাতে দুনিয়াদার ব্যক্তি মগ্ন ও আনন্দিত থাকে, প্রথমে সেগুলো ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে পার্থিব জীবনের মোটামুটি বিষয়গুলো যথাক্রমে এই- প্রথমে ক্রীড়া, এরপর কৌতুক, এরপর সাজ-সজ্জা, এরপর পারস্পরিক অহমিকা, এরপর ধন ও জনের প্রাচুর্য নিয়ে পারস্পরিক গর্ববোধ।

উল্লেখিত ধারাবাহিকতায় প্রতিটি অর্থেই মানুষ নিজ অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু কোরআন মাজিদ বলে যে, এ সবই হচ্ছে সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী।

প্রকৃতপক্ষে, কোরআন মাজিদের এই আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘মানুষ যখন শিশু থাকে তখন সে খেলা করে, সে তার যৌবনকে উদ্দেশ্যহীনভাবে অতিবাহিত করে, তার যৌবনে সে পৃথিবীর সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যে মগ্ন থাকে এবং তার মধ্য বয়সে ও বার্ধক্যে সে অহংকার এবং সম্পদ ও সন্তানদের নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়!’

তাই পৃথিবীটা একটা খেলা। এমতাবস্থায় খেয়াল রাখা, কোনোভাবেই ধোঁকায় না পড়া। আমরা যদি কোনো উচ্চ অবস্থানে পৌঁছি তাহলে অহংকারী না হওয়া, যদি পতন ঘটে কিংবা অবস্থা নীচের দিকে চলে যায়- তাহলেও নিরাশ না হওয়া।

আয়াতে বর্ণিত পাঁচটি বিশেষ শব্দ দিয়ে মানবজাতির জন্য তাদের বাস্তবতাকে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে এর প্রতিটিই হচ্ছে একেকটি ফাঁদ এবং মানুষ এসবে জড়িয়ে পড়ে।

;

৯ বছর পর উমরার সুযোগ পেলেন ইরানিরা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল উমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল উমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ ৯ বছরের বিরতির পর পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরানের নাগরিকরা পবিত্র উমরা পালনের জন্য তেহরান থেকে পবিত্র মক্কা নগরীর উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। সোমবার (২২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল সোমবার পবিত্র উমরা পালনের জন্য সৌদি আরবের উদ্দেশে যাত্রা করেছে বলে ইরানের সরকারি বার্তাসংস্থা জানিয়েছে। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে।

এর আগে দীর্ঘদিন দূরে থাকার পর গত বছরের মার্চ মাসে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হয় মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ইরান ও সৌদি আরব। এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের মধ্যে আবারও সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়। আর উভয় দেশের সম্পর্কের অগ্রগতির পেছনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিল চীন।

২০১৬ সাল থেকে থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই বড় দেশের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। ওই বছর সৌদি আরব সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের দায়ে শিয়া ধর্মীয় নেতা শেখ নিমর আল নিমরসহ ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা হয়েছিল। আর তারপর দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটে।

মূলত ইরানি বিক্ষোভকারীরা তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলার পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তারপর থেকে সুন্নি এবং শিয়া-নেতৃত্বাধীন এই প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা প্রায়ই জারি ছিল। এই দুই দেশ একে অপরকে নিজের আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে থাকে।

এ ছাড়া সিরিয়া এবং ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংঘাতে ইরান ও সৌদি একে অপরের বিরোধী পক্ষ হয়ে কার্যত পরোক্ষ লড়াইয়ে নিয়োজিত ছিল। আর তাই সুন্নি-সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরব এবং শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরানের মধ্যে উত্তেজনা ছিল প্রায়ই অনেক বেশি।

গত বছর সম্পর্ক পুনরায় শুরু হওয়ার আগে ইরানিরা শুধুমাত্র হজপালন করতে সৌদি আরব যেতে পারত।

রয়টার্স বলছে, তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে ৮৫ জন উমরাযাত্রীর বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইরানে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ বিন সৌদ আল আনজি।

;

পানি ও বৃষ্টির জন্য ইস্তেসকার নামাজ জরুরি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে বৃষ্টির জন্য ইস্তেসকার নামাজ আদায় করা হয়েছে, ছবি : বার্তা২৪.কম

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে বৃষ্টির জন্য ইস্তেসকার নামাজ আদায় করা হয়েছে, ছবি : বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রচণ্ড দাবদাহ ও পানি সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার দরবারে তওবা-ইস্তেগফার, প্রার্থনা ও ইস্তেসকার নামাজ আদায় জরুরি।

প্রচণ্ড গরমে পুড়ছে সারাদেশ। কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে মরু-কারবালার মতো তীব্র পানি সঙ্কট। অনাবৃষ্টি ও শুষ্ক বৈরি আবহাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। হিটস্ট্রোকে ইতোমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে একডজন মানুষ। বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন স্থানে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। রাজধানী ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে ৬ থেকে ৭ ফুট করে। বরেন্দ্র অঞ্চলে ১১০ ফুট থেকে ১২০ ফুট নিচে নেমে গেছে কোথাও কোথাও। ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির। খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে। পশু-পাখিরাও পড়েছে নিদারুণ কষ্টে। এমন দুর্যোগ অব্যাহত থাকলে তার ভয়াবহ পরিণতি কোথায় গিয়ে পৌঁছবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন।

মনে রাখতে হবে, একমাত্র দয়াময় আল্লাহতায়ালাই এই মহাবিপদ থেকে পরিত্রাণ দিতে পারেন। তিনিই অনতিবিলম্বে ফিরিয়ে আনতে পারেন স্বাভাবিক অবস্থা। তাই আমাদের উচিৎ তার দ্বারস্থ হওয়া। সব ধরনের পাপের কাজ পরিত্যাগ করে গোনাহের জন্য একনিষ্ঠভাবে তওবা করা। তিনি রহমতের ভাণ্ডার। তার কাছে কাতরভাবে প্রার্থনা করা রহমত কামনায়।

অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড দাবদাহ থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য ইসলামে রয়েছে ইস্তেসকার নামাজের ব্যবস্থা। মুমিন-মুসলমান হিসেবে দেশের সর্বত্র এ নামাজের ব্যবস্থা করে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে সকাতরে প্রার্থনা জানানোর এখনই সময়।

‘ইস্তেসকা’ অর্থ পানি প্রার্থনা করা। অনাবৃষ্টিতে মানুষ ও জীবজন্তুর কষ্ট হতে থাকলে আল্লাহর দরবারে পানি প্রার্থনা করে দোয়া করা সুন্নত। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, নবী কারিম (সা.) বৃষ্টির প্রার্থনার সময় বলতেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি তোমার বান্দাকে এবং তোমার জীব-জানোয়ারকে পানি দান করো।

‘ইস্তেসকা’ নামাজ আদায়ের পদ্ধতি
এলাকার সব মুসলমান পুরুষ বালক ও বৃদ্ধদেরসহ গরু, ছাগল নিয়ে পায়ে হেঁটে, অবনত মস্তকে মিনতির সঙ্গে খোলা মাঠে উপস্থিত হতে হয়। এরপর উপযুক্ত ইমামের পেছনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। এ নামাজে আজান-ইকামত নেই। ইমাম উচ্চস্বরে কেরাত পড়বেন এবং সালাম ফেরানোর পর ঈদের খুৎবার ন্যায় দুইটি খুৎবা পাঠ করবেন। এরপর কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত প্রসারিত করে মুসল্লিদের নিয়ে আল্লাহর দরবারে রহমতের পানির জন্য মোনাজাত করবেন।

উল্লেখ্য, মাঠে যাবার পূর্বে দান-সদকা করা উত্তম।

;

দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার দোয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার দোয়া, ছবি : সংগৃহীত

দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার দোয়া, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হাদিসের ভাষ্য মতে, মহান আল্লাহ কেয়ামতের আগে দাজ্জালকে পাঠাবেন। সে এসেই পৃথিবীতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে। ধোঁকা ও প্রতারণায় মানুষের ঈমান ছিনিয়ে নেবে। তার ভয়াবহ ফেতনা সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হজরত আদম (আ.) থেকে কেয়ামত কায়েম হাওয়া পর্যন্ত দাজ্জালের ফেতনার চেয়ে কোনো ফেতনা বড় নয়।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার ফেতনার বিষয়ে সতর্ক ছিলেন। উম্মতের জন্য দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন।

দোয়াটি হলো- (উচ্চারণ) : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া মিন আজাবিন্নারি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ্দাজ্জাল।

অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কবরের শাস্তি, জাহান্নামের শাস্তি, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এ দোয়া পাঠ করতেন। -সহিহ বোখারি : ১৩৭৭

দাজ্জাল এখন কোথায়?
হজরত ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে দাজ্জালের অবস্থানের কথা বর্ণিত হয়েছে। দীর্ঘ হাদিসের সারাংশ হলো, একদিন নামাজ শেষে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবি হজরত তামিম দারি (রা.)-এর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা বর্ণনা করেন। তারা নৌভ্রমণে বের হয়ে ঘটনাচক্রে একটি দ্বীপে উপনীত হয়েছিল। সেখানে দাজ্জাল ও তার গুপ্তচরের সঙ্গে কথোপকথন হয়েছিল।

হাদিসের শেষাংশে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মনে রেখো, দাজ্জাল শাম কিংবা ইয়েমেনের কোনো সাগরে নেই। সে পূর্বের কোনো এক স্থানে আছে। এ কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। -সহিহ মুসলিম : ৭১১৯

দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের স্থান
হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বলেছেন, দাজ্জাল পূর্বাঞ্চলীয় কোনো স্থান থেকে বের হবে। স্থানটির নাম হলো খোরাসান। কিছু কওম তার অনুসরণ করবে। তাদের চেহারা হবে স্তরবিশিষ্ট ঢালের মতো। -জামে তিরমিজি : ২২৩৭

দাজ্জালের নিষিদ্ধ এলাকা
হজরত আনাস (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মক্কা-মদিনা ছাড়া পৃথিবীর সব জনপদে দাজ্জাল বিচরণ করবে। কেননা এই দুই শহরের প্রতিটি রাস্তায় ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পাহারাদারিতে নিয়োজিত থাকবে। অবশেষে দাজ্জাল মদিনার এক নিকটবর্তী স্থানে অবতরণ করবে। তখন মদিনায় তিনবার ভূকম্পন হবে। যার ফলে প্রত্যেক মুনাফেক ও কাফের মদিনা থেকে বের হয়ে তার নিকট চলে যাবে। -সহিহ মুসলিম : ৭১২৩

আল্লাহতায়ালা সবাইকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

;