নতুন সরকারের ব্যতিক্রমী বাজেট



শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা, জাতীয় সংসদ ভবন থেকে
বাজেট অধিবেশনে প্রবেশ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল,  ছবি: সংগৃহীত

বাজেট অধিবেশনে প্রবেশ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

 

দেশের সংসদীয় ইতিহাসে একটি অনন্য নজির সৃষ্টি হলো। সাধারণত সরকারের আর্থিক আয়-ব্যয়ের হিসাব সম্বলিত বাজেট দিয়ে থাকেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে কখনোই অর্থমন্ত্রীর ছাড়া অন্য কাউকে বাজেট দিতে দেখা যায়নি।

এবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের অসুস্থতার কারণে জাতীয় সংসদে তার পক্ষে বাজেটের সিংহভাগই উত্থাপন করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।

সংসদীয় ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রীর বাজেট উপস্থাপনায় অংশগ্রহণের ঘটনা এই প্রথম। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেল ৪টা ১০ মিনিট থেকে ৪টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত মোট আধা ঘণ্টা অবশিষ্ট বাজেট বক্তব্য শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা দীর্ঘক্ষণ টেবিল চাপড়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। তবে হাসপাতাল থেকে সরাসরি সংসদে এসে প্রচণ্ড অসুস্থ অবস্থায়ই প্রথম এক ঘণ্টা বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। এ সময় স্পিকারের পরনে ছিল হলুদ শাড়ি। বাজেট পেশ উপলক্ষে অধিবেশন কক্ষ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। সংসদ গ্যালারি থেকে ভিআইপি লাউঞ্চ সবখানেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিজের জীবনের প্রথম বাজেট প্রস্তাবনা পড়তে শুরু করেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ এই শিরোনামে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন শুরু করেন তিনি।

তবে অসুস্থতার কারণে ঠিকমতো বাজেট বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারছিলেন না অর্থমন্ত্রী। পাশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং 0সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী তাকে বার বার সহযোগিতা করছিলেন। কিন্তু বিকেল ৪টার দিকে একটু বেশিই অসুস্থ হয়ে পড়েন অর্থমন্ত্রী। তিনি চোখে ওষুধ দেওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে পাঁচ/সাত মিনিট সময় চান। ওই সময়ে উপস্থিত কয়েকজন চিকিৎসক তার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন। কিন্তু চোখে ওষুধ দেওয়ার পরও শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বাকি বাজেট বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেন অর্থমন্ত্রী।

এতে অধিবেশনের চিত্রই পাল্টে যায়। সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাকি বাজেট উপস্থাপনের প্রস্তাবকে পূর্ণ সমর্থন জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের বাকি অংশটুকু উপস্থাপনের জন্য স্পিকারের অনুমতি চান। স্পিকার অনুমতি দিয়ে বলেন, ‘আপনি দাঁড়িয়ে বা বসে বাজেট উপস্থাপন করতে পারেন।’

বাজেট উপস্থাপনের জন্য ফ্লোর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থমন্ত্রী খুবই অসুস্থ। তার চোখে অপারেশন হয়েছে। ১৫ মিনিট পর পর তার চোখে ড্রপ দিতে হয়। আমারও চোখে অপারেশন হয়েছে, ঠাণ্ডা লেগেছে। কথা বলতে গেলে কাশি আসে। এটাই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। তারপরও আপনি (স্পিকার) অনুমতি দিলে বাজেটের বাকিটা আমি উপস্থাপন করব।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপন শুরু করলে টেবিল চাপড়ে তাকে অভিনন্দন জানান সংসদ সদস্যরা।

তবে বাজেট বক্তৃতার বইয়ের অনেকাংশেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে কিছু বক্তব্য রয়েছে। সেসব অংশ পড়ার সময় প্রধানমন্ত্রী হেসে স্পিকারকে বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, এটি আমার বক্তব্য নয়, এটি হচ্ছে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য। বাজেট বক্তৃতায় যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে, সেটি আমি পড়ব কি না?’ জবাবে স্পিকার বাজেট বক্তৃতায় যেভাবে রয়েছে সেভাবেই উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপন শেষ করলে স্পিকার বলেন, বাজেটের অপঠিত অংশগুলো পঠিত বলে গণ্য করা হলো।

বাজেট বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী ব্যাগ থেকে ওষুধ বের করে নিজের চোখে নিজেই ড্রপ দেন। সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে বিরোধী দলের নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর আসনের সামনে এসে তার এই দৃঢ়তার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

উৎসব মুখর পরিবেশ
বাজেট অধিবেশন উপলক্ষে রীতিমতো উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় জাতীয় সংসদে। অতীতের মতো কোনো রাজনৈতিক দলের বর্জন নেই। বরং নিকট ইতিহাসের মধ্যে এবারই সরকার ও বিরোধী দল মিলে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দেশের ৪৮তম বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শুধু অধিবেশনই নয়, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের এই বাজেট উপস্থাপন প্রত্যক্ষ করতে ভিভিআইপি, ভিআইপি ও দর্শক গ্যালারি সব জায়গাই ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ।

দেশের ৪৮তম বাজেট পেশ উপলক্ষে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যদের সরব উপস্থিতি ছিল সংসদ অধিবেশনে। উৎসব মুখর পরিবেশে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।

শুরুতেই অর্থমন্ত্রী নিজের অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে পুরো সময় না দাঁড়িয়ে মাঝে মধ্যে বসে বাজেট উপস্থাপন করার অনুমতি চান স্পিকারের কাছে। স্পিকার তাকে অনুমতি দিলে শুরুতেই অর্থমন্ত্রীর অনুরোধে বাংলাদেশ শীর্ষক একটি দীর্ঘ প্রমাণ্যচিত্র তুলে ধরা হয়। প্রামাণ্যচিত্রে পাকিস্তান আমলে বাঙালি জাতির ওপর বৈষম্য, শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম, দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা অর্জন, পরবর্তী স্বৈরশাসকদের দুঃশাসন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তিন মেয়াদে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির সোপানে অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরা হয়।

এদিকে বাজেট বক্তৃতার আগে সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতি বছর বাজেট উত্থাপনের আগে রেওয়াজ অনুযায়ী এই বৈঠকটি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন পাওয়ার পর বাজেট বিলে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

উৎসব মুখর সংসদে বাজেট বক্তৃতা শুনতে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সংসদে নিজ কক্ষে বসে বাজেট উপস্থাপন প্রত্যক্ষ করেন তিনি। এর আগে রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভবনে স্বাগত জানান সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছাড়াও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী,পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চোধুরী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল, কূটনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাজেট বক্তৃতা দেখেন।

pm
অসুস্থ থাকায় অর্থমন্ত্রীর হাত ধরে রাখেন একজন (বায়ে), ডানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: সংগৃহীত

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কালো সুটকেস হাতে বেলা পৌনে ৩টায় বাজেট অধিবেশনে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী। মঙ্গলবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে সরাসরি সংসদ ভবনে আসেন অর্থমন্ত্রী। তারপরও তার চেহারায় ছিল উচ্ছ্বাস। বাজেট বক্তৃতার মাঝে মাঝে সরকারি দলের সদস্যরা টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে উৎসাহ যোগান।

কঠোর নিরাপত্তা
বাজেট পেশ উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বৈধ পাস ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি সংসদ ভবন এলাকায়। এমনকি দর্শক গ্যালারিতে পাস ইস্যুতেও ছিল কড়াকড়ি। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার বিপুল সংখ্যক সদস্য পুরো ভবনে নিরাপত্তার ঘেরাটোপ গড়ে তোলেন। বাজেট বক্তৃতার পরে আমন্ত্রিত অতিথিরা যাতে নির্বিঘ্নে বের হতে পারেন সেজন্য সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার পিজিয়ন হলের গেটটিও খোলা রাখা হয়। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয় আলাদাভাবে।

অর্থ বিল উত্থাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাজেট বক্তৃতা শেষ হলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দাঁড়িয়ে অর্থ বিল- ২০১৯ সংসদে উত্থাপন করেন। সরকারের আর্থিক প্রস্তাবগুলো কার্যকর এবং কিছু আইন সংশোধনের লক্ষ্যে বিলটি উত্থাপন করা হয়। সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিলটি আগামী ৩০ জুন পাস হবে। এর আগে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সরকার ও বিরোধী দলীয় সদস্য ৪৫ ঘণ্টা আলোচনা করবেন।

   

জ্বালানি তেল পরিবহনের খোলনলচে বদলে দিচ্ছে ৩ মেগা প্রকল্প



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তিন মেগা প্রকল্প বাংলাদেশের জ্বালানি তেল পরিবহনের খোলনলচে বদলে দিতে যাচ্ছে। মেগা প্রকল্প তিনটি হলো, এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং), বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্প এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্প।

এর মধ্যে এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) ও বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন ইতোমধ্যেই অপারেশনে এসেছে। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন চলতি বছরেই শেষ হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।

এখন ভোক্তার হাতে জ্বালানি তেল পৌঁছাতে বহুঘাট ঘুরতে হবে না। আবার বৃষ্টি-বাদল কিংবা হরতাল, ধর্মঘটেও জ্বালানি তেল সরবরাহ থাকবে নির্ভার। শুধু কী নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চয়তা, তাও নয়, এক এসপিএম বছরে সাশ্রয় করবে কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা! কমে যাবে জ্বালানি তেলের সিস্টেম লসও।

জ্বালানি তেল পরিবহনের খোলনলচে পাল্টে দিচ্ছে মেগা তিন প্রকল্প

এজন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপন করা হয়েছে, এসপিএম উইথ ডাবল পাইপলাইন। এতদিন আমদানি করা জ্বালানি তেলের জাহাজ গভীর সমুদ্রে নোঙর করতো। সেখান থেকে লাইটার জাহাজে করে রিফাইনারি ট্যাংকে পৌঁছাতে সময় লাগত ১১, ১২ দিন। এসপিএম হওয়ায় সমপরিমাণ তেল পরিবহনে সময় লাগবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। এতে করে মাদার ভেসেলের ওয়েটিং চার্জ এবং লাইটারেজ জাহাজের পরিবহন খরচ আর থাকছে না।

মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে গভীর সমুদ্রে স্থাপন করা হয়েছে, ভাসমান বয়া। সেই বয়া থেকে সাগরের তলদেশ দিয়ে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের পৃথক দুটি পাইপলাইন পৌঁছে গেছে স্টোরেজ ট্যাংক টার্মিনালে। একটি ক্রড অয়েল সঞ্চালনের জন্য। আরেকটি দিয়ে সফলভাবে ডিজেল পরিবহন কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

গভীর সমুদ্রে বয়াতে এসে নোঙর করবে মাদার ভেসেল। সেখান থেকে পাাইপলাইনের মাধ্যমে কয়েক ঘণ্টায় তেল পৌঁছে যাবে চট্টগ্রামের জ্বালানি তেলের প্রধান স্থাপনায়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জ্বালানি তেল ব্যবস্থাপনা সাশ্রয়ী ও টেকসই করতে এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) কার্যকরী অবদান রাখবে। প্রকল্পটি চালু হলে বছরে ১ হাজার কোটি টাকা খরচ সাশ্রয় হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় ২শ ২০ কিলোমিটার পাইপলাইনে পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ৬টি বিশালাকৃতির স্টোরেজ ট্যাঙ্ক; যার মাধ্যমে বাংলাদেশের তেল মজুত সক্ষমতা পৌঁছে গেছে নতুন এক উচ্চতায়।

এসপিএম প্রকল্পের পরিচালক শরীফ হাসনাত বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বড় জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে অন্তত ১১ দিন সময় লাগে। কখনো কখনো এই তেল খালাস করতে আরো সময় লেগে যায়। বিশেষ করে সমুদ্র উত্তাল হয়ে পড়লে তখন খালাস করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। জাহাজ মালিকদের সঙ্গে চুক্তির চেয়ে বেশি সময় লাগায় কখনো কখনো জরিমানা গুণতে হতো। এসপিএম প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় ২৮ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় ডিজেল ও ক্রুড অয়েল খালাস করা সম্ভব হবে। এতে একদিকে যেমন জাহাজ ভাড়া কমে আসবে, অন্যদিকে তেল পরিবহনে সিস্টেম লস ও নানান ধরনের চুরিও প্রতিরোধ সম্ভবপর হবে।

বাংলাদেশ জ্বালানি তেল উৎপাদন করে না। গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে প্রাপ্ত কনডেনসেট থেকে পেট্রোল এবং ৪০ শতাংশের মতো অকটেন জোগান আসে। বিপুল পরিমাণ ডিজেলসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করে জোগান দেওয়া হয়। বিপুল পরিমাণ জ্বালানি আমদানি করা হয়, নদীপথে। কিন্তু নদী বন্দরগুলোতে নাব্যতার অভাবে বড় বড় জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারে না। সে কারণে নির্ভর করতে হয় লাইটারেজ জাহাজের ওপর।

মেগা প্রকল্প বদলে দিচ্ছে জ্বালানি তেল পরিবহনের ব্যবস্থা

মাদারভেসেল থেকে লাইটার বা ছোট জাহাজে করে তেল আনা হয়, বিপিসি’র (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) ডিপোতে।

বিপিসি থেকে আবার জাহাজে করে তেল দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়। ক্ষেত্র বিশেষে রেলের ওয়াগন এবং ট্যাংকলরিতে করেও তেল পৌঁছাতে নানান রকম ঝাক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। বিষয়টি ছিল সময়সাপেক্ষ ও অনেক কিছুর ওপর নির্ভরশীল। সেখানেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগতে শুরু করেছে।

অবশেষে, ঢাকা-চট্টগ্রাম তেলের পাইপলাইন করার কাজও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ২০১৭ সালে প্রাক-সমীক্ষা শেষ হলেও নানা কারণে নির্ধারিত গতিতে চলতে পারেনি প্রকল্পটি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অর্থায়নে গৃহীত এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ২শ ৩৭ কিলোমিটার, কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার, ফতুল্লা থেকে থেকে গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। পাইপলাইনটি চালু হলে বছরে ৬৫ কোটি টাকা পরিবহন খরচ সাশ্রয় হবে বলে আশা করছে বিপিসি।

প্রকল্পের আওতায় ২শ ৩৭ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন চট্টগ্রাম ডেচপার্স টার্মিনাল ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় রিসিভিং পয়েন্টের ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। ডিসেম্বরের আগেই পাইপলাইনটি চালু করার বিষয়ে আশাবাদী জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ।

অন্যদিকে, দেশের শস্যভাণ্ডার খ্যাত উত্তরাঞ্চলের জ্বালানি পরিবহন ব্যবস্থা ছিল খুবই জটিল ও বহুঘাট, হাত ঘুরে। লাইটারেজে করে তেল নেওয়া হতো। এছাড়াও ট্যাংকলরি, আরেকটি রুট হচ্ছে রেলওয়ের মাধ্যমে পৌঁছানো। এখন সেখানেও পরিবর্তন এনেছে, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন।

দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় নিরবচ্ছিন্ন, দ্রুত ও সাশ্রয়ীভাবে জ্বালানি সরবরাহের জন্য ২০১৮ সালে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ৩ হাজার ৬শ ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১শ ৩১.৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণের সময়কাল ছিল ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের আগেই পাইপলাইনটি চালু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ভারতের নুমালীগড় থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত বিস্তৃত এই পাইপলাইনের কারণে উত্তরাঞ্চলের দৈনিক অতিরিক্ত ২৯ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি মজুত সক্ষমতা বৃদ্ধি হবে। সহজে বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ করা, উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় কম খরচে এবং দ্রুততম উপায়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে এই পাইপ লাইনের কারণে।

;

বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে বাণিজ্য জোরদারে প্রতিষ্ঠিত হলো ‘জেবিসি’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত ও জোরদার করার পাশাপাশি ব্যবসায়িক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিলের (জেবিসি) প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ ও কাতার।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির উপস্থিতিতে এ উপলক্ষ্যে চুক্তি সই করেছে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং কাতারের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন কাতার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (কিউসিসিআই)।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং কিউসিসিআই চেয়ারম্যান শেখ খলিফা বিন জসিম আল থানি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। মূলত বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে বাণিজ্য জোরদার করতে এই চুক্তি স্বাক্ষ্যরিত হয়।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম এই প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে জেবিসি প্রতিষ্ঠা দুই দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে। এ চুক্তির আওতায় কাতারের ব্যবসায়ীরা যেমন উপকৃত হবে তেমনি বাংলাদেশী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পক্ষেও কাতারের রপ্তানি বাজার ধরা আরও সহজতর হবে এবং কাতার থেকে জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি সহজ হবে। একইসঙ্গে জেবিসির মাধ্যমে কাতারের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এফবিসিসিআই ও কিউবিসিসিআই’র মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও কাতারের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, সেবা এবং অন্যান্য শিল্প খাতে বাণিজ্য কার্যক্রম জোরদারের একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল।

এফবিসিসিআই এবং কিউসিসিআই উভয়ই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং পরিষেবা সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে উপকৃত হবে। পাশাপাশি দুই দেশের ব্যবসায়ীক তথ্যের আদান-প্রদান, সংশ্লিষ্ট সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেওয়া, প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করাসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করবে জেবিসি।

এছাড়া উভয় পক্ষই বাণিজ্য উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য যৌথ বৈঠক আয়োজন করতে পারবে। চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনে এফবিসিসিআই ও কিউসিসিআই সাব-কমিটি ও টাস্কফোর্স গঠন করতে পারবে।

 

;

সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৩১৩৮ টাকা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি মাসে তিন দফা বৃদ্ধির পরে দেশের বাজারে সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমানো হয়েছে। তাতে ভালো মানের, অর্থাৎ হল-মার্ক করা ২২ ক্যারেট সোনার দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি ভরি ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকায়। নতুন এ দাম আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে কার্যকর হবে ।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে। এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে খাঁটি সোনার দাম কমেছে, সে জন্য সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের সোনার দাম পড়বে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১০ হাজার ৯৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৫ হাজার ১৪৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৭৬ হাজার ৫৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে, গত ২১ এপ্রিল একদিনের ব্যবধানে ভরিতে ৬৩০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৭ হাজার ৭০৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৭৮ হাজার ৬৬২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা সেদিন বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে কার্যকর হয়েছিল।

তার আগে, ২০ এপ্রিল সোনার দাম ক‌মিয়ে‌ছিল বাজুস। যা ওইদিনই কার্যকর হয়। ওই দাম অনুযায়ী রোববার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ টাকা, ২১ ক্যারেট সোনার দাম ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৯৭ হাজার ১৯৭ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা।

;

বোয়িং

৬ ড্রিমলাইনার নিয়ে শঙ্কা, কী আপডেট বিমানের



ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

 

বিশ্বের সর্বাধুনিক উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৮৭ ‘ড্রিমলাইনার’-এর নির্মাণে ত্রুটিপূর্ণ রয়েছে বলে দাবি করে এই মডেলের সব উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বোয়িংয়ের সাবেক প্রকৌশলী স্যাম সাহেলপৌর সম্প্রতি এ কথা বলায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

ওই প্রকৌশলী অভিযোগ করেছেন, বোয়িং ৮৭৮ ড্রিমলাইনার ছাড়া বোয়িং ৭৭৭ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছিল। এতে সব উড়োজাহাজের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এদের ঝুঁকি বিপর্যকর মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে।

স্যাম এটাও বলেন, আমি কখনোই উড়োজাহাজের এমন গুরুতর অবস্থা দেখিনি। তাই, কখনোই আমার পরিবারের সদস্যদের বোয়িং ড্রিমলাইনারে উঠতে দেবো না।

এই ঘটনার পর বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

এরপর বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম জানিয়েছেন, এ বিষয়ে বিমানের পক্ষ থেকে বোয়িংয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনো আপডেট পেলে মন্ত্রীকে জানাবো।

পরবর্তীতে মন্ত্রী বলেছেন, বিমানের বহরে থাকা ‘ড্রিমলাইনার’ উড়োজাহাজগুলো নতুন হওয়ায় আপাতত কারিগরি সমস্যা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে এবং যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী কোম্পানি বোয়িংয়ের সঙ্গে দ্রুত কথা বলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। কারণ, বাংলাদেশ সরকার ও বিমানের কাছে যাত্রীদের নিরাপত্তাই মুখ্য বিষয়।

ড্রিমলাইনার কতটা নতুন
বিমানমন্ত্রী ফারুক খান বোয়িংয়ের ত্রুটির বিষয়ে ত্বরিত নির্দেশনা দিয়েছেন। এটি যেমন প্রশংসিত, তেমনি তিনি বলেছেন, ‘ড্রিমলাইনার’-এর উড়োজাহাজগুলো নতুন হওয়ায় এর কারিগরি ত্রুটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

বোয়িং কোম্পানির উড়োজাহাজ, ছবি- সংগৃহীত

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের আগস্টে দেশে প্রথম ড্রিমলাইনার অবতরণ করে। এরপর একে একে বিমানের বহরে যুক্ত হতে থাকে ‘ড্রিমলাইনার’-এর উড়োজাহাজগুলো। সর্বশেষ, ‘ড্রিমলাইনার’টি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। সে হিসাবে এসব উড়োজাহাজ পুরোপুরি নতুন নয়।

দুর্ঘটনা পিছু ছাড়ছে না বোয়িংকে
মাঝ আকাশে আলাস্কা এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজের দরজা খুলে যাওয়ার ঘটনায় বিশ্ব জুড়ে তোলপাড় হয়। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন করে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় এলো একই কোম্পানির ‘ড্রিমলাইনার’ মডেলের উড়োজাহাজগুলো।

‘ম্যাক্স’-এর ঘটনার পর বোয়িং ৭৮৭-৮০০ উড়োজাহাজের জানালায় ফাটলের ঘটনায় জাপানের তোয়ামা বিমানবন্দর থেকে নিপ্পন এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজটি ছেড়ে গিয়ে দ্রুতই আবার বিমানবন্দরে ফিরে আসে। দুটি ঘটনাতেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় উড়োজাহাজ দুটি। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে বোয়িং ৭৪৭-এর একটি উড়োজাহাজে মাঝ আকাশে আগুন লাগে।

কেন বিমানের ড্রিমলাইনারের উইন্ডশিল্ডে ফাটল
বোয়িংয়ের উড়োজাহাজের দুর্ঘটনার ঝাপটা এসে লেগেছে বিমানেরও। গত জানুয়ারিতে বিমানের বোয়িং ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজের উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখা দেয়।

দাম্মামগামী উড়োজাহাজটি দুই ঘণ্টা ফ্লাই করার পর ফের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে আসে। বোয়িংটির পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজা। উড়োজাহাজটি ২৮৫ জন যাত্রী নিয়ে ফের ঢাকায় অবতরণ করতে সক্ষম হয়।

এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজটি জরুরি অবতরণ করে। ওই উড়োজাহাজের উইন্ডশিল্ডেও ফাটল দেখা দিয়েছিল। যদিও সেটি বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজ নয়। এটি লিজে আনা হয়েছিল।

উইন্ডশিল্ডে ফাটলের বিষয়ে এক বৈমানিক বলেন, উইন্ডশিল্ডে ফাটল সচরাচর ঘটে না। মাঝ আকাশে উইন্ডশিল্ডে ফাটল অবশ্যই ভীতিকর। উইন্ডশিল্ড ভেঙে গেলে উড়োজাহাজের ভেতরে চাপ কমে তা ভারসাম্যহীন হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বিমানের প্রকৌশল পরিদপ্তরের পরিচালক এয়ার কমোডর মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, চার বছরের মাথায় সাধারণত উড়োজাহাজে এ ধরনের ঘটনা ঘটার কথা না।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
এ বিষয়ে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘বোয়িং ম্যাক্স’ দুর্ঘটনার পর বোয়িংয়ের নিরাপত্তা ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এবার আবার নতুন করে ‘ড্রিমলাইনার’-এর নিরাপত্তার ইস্যুটি সামনে এলো। তাই, এটি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে উত্থাপিত বিষয়টির সুরাহা করা উচিত।

 

;