আর্থিক ক্ষমতা না থাকলেও গৃহ ঋণ নিচ্ছেন কর্মচারীরা
সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতিগুলোর প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ১০ গ্রেডের এক কর্মচারী অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের গৃহ ঋণ নির্মাণ কোষে আবেদন করেছেন। সংগঠনের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও সরকারি কর্মচারীরা ব্যাংক ব্যবস্থা মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ নেওয়া শুরু করেছেন।
অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুনিরুল আলম বলেন , ‘এতো বেশি সুদ ও কিস্তিতে সরকারি গৃহ ঋণ নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা চাই, বাংলাদেশ ব্যাংক যেমন নিজস্ব কর্মচারী ও কর্মকর্তাকে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে গৃহ ঋণ দেয় । আমরাও সে রকম একটা সুযোগ চাই ।‘
তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তারা কোন সুদ ছাড়াই গাড়ি কিনেছে। আর গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা পেয়ে থাকে। তারা ৭৫ হাজার টাকা গৃহ ঋণ নিলে কিস্তিটা চালাতে পারে। আমরা বেতনের টাকা দিয়ে এ গৃহ ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারি না। যদি দরকার পড়ে আমরা এই ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করব।‘
অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এনামুল হক বলেন, ‘এ ঋণের কর্তন পদ্ধতিও আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক গৃহীত ঋণের আসল কর্তন শেষে সুদ কর্তন করা হয়। কিন্তু, আমাদের জন্য উক্ত ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায় অভিন্ন নীতিমালার আলোকে গৃহ নির্মাণ ঋণ পেতে চাই।‘
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মোঃ রফিকুল ইসলাম ৫ শতাংশ সুদে অগ্রণী ব্যাংক রমণা কর্পোরেট শাখা থেকে ৩০ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য গৃহ নির্মাণ ঋণ কোষে আবেদন করেছেন। তিনি মিরপুরের পূর্ব কান্দা মাজার রোড ৯ তালা বিল্ডিংয়ের সপ্তম তালা ১১৫০ বর্গফুট ফ্ল্যাটটা কিনতে চাচ্ছেন। তার মাসিক বেতন ২১ হাজার ৪৭০ টাকা। আর তার গৃহ ঋণের হিসেব অনুযায়ী মাসিক কিস্তি আসবে ১৯ হাজার ৪১৮ টাকা। এখন পর্যন্ত সরকারি সোনালী , জনতা , অগ্রণী , রূপালী এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফিন্যান্স কর্পোরেশনের কাছ থেকে ৩৪ জন কর্মকর্তা ও একজন কর্মচারী ঋণ গ্রহণ করার জন্য আবেদন করেছেন। প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তা ঋণ গ্রহণ করেছেন।
২০১৮ সালের অক্টোবরের ১ তারিখে সরকারের চালু করা গৃহ ঋণের সুবিধার আওতায় মাত্র ৫ শতাংশ সরল সুদে তারা ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গৃহ নির্মাণ ঋণ নিতে পারছেন।
গত বছর ৩০ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮’ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়।
সেখানে বলা হয়, ‘চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন। আর আবেদনের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা হবে ৫৬ বছর।‘
এ ঋণের সীমা ঠিক করা হয়েছে ২০ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টাকা। ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ সময় হবে ২০ বছর।
এর আগে গত বছর গৃহ নির্মাণ ঋণের ওয়ার্কিং কমিটির কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন এ ঋণ গ্রহণের আর্থিক ক্ষমতা তাদের নেই। তারা বলেছেন, ‘মাসিক বেতন থেকে ঋণের কিস্তি দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর কিস্তি প্রদান করলে সারা মাস জুড়ে না খেয়ে থাকতে হবে। মোট ২১ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ কর্মচারী।‘
১০তম গ্রেডের এক কর্মচারী বলেন, ‘প্রস্তাবিত গৃহ ঋণ নীতিমালা ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হলে প্রতি মাসে বেতন বাকি থাকে ৭৮৬৬.৮০ টাকা। অন্যদিকে ২০ গ্রেডের কর্মচারী প্রস্তাবিত গৃহ ঋণ নীতিমালা আওতা সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা ঋণ নিলে প্রতিমাসে তাকে ১৩ হাজার ৩৩৫ টাকা ঋণের কিস্তি দিলে প্রতি মাসে বেতনের অবশিষ্ট থাকবে ২৬৮১ টাকা।‘