শীর্ষ খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক
শীর্ষ খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে সরকারি ৫টি ব্যাংক। এসব ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে শীর্ষ ২০ জন খেলাপির কাছ থেকে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু সে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি তারা। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে সোনালী ব্যাংক শীর্ষ খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩ দশমিক ২২ শতাংশ, জনতা ব্যাংক ১৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংক শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ, রূপালী ব্যাংক শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং বেসিক ব্যাংক শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোকে অন্যান্য খেলাপি ঋণ আদায়েও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। যার মধ্যে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। কিন্তু ৬ মাসে আদায় হয়েছে ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, জনতা ব্যাংক এক হাজার ১০০ কোটি টাকার বিপরীতে ২১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংক ৮০০ কোটি টাকার বিপরীতে ১৭ দশমিক ৩০ শতাংশ, রূপালী ব্যাংক ৬০০ কোটি টাকার বিপরীতে ১১ শতাংশ এবং বেসিক ব্যাংক ৭১৫ কোটি টাকার বিপরীতে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ আদায়ে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ঋণ আদায়ে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের ব্যর্থতার পরিচয় পাওয়া গেছে। বিশেষ করে ঋণ অবলোপন করলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ব্যালেন্স শিট ভালো দেখানোর জন্য কু-ঋণ মূল হিসাব থেকে বাদ দেয়। ফলে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যাংকগুলো ওই অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের চেষ্টা করে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে সোনালী ব্যাংক এক হাজার ৭৮ কোটি টাকার বিপরীতে মাত্র ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংক ৩২৮ কোটি টাকার বিপরীতে ১৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ৮১০ কোটি টাকার বিপরীতে ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং রূপালী ব্যাংক ১৫৩ কোটি টাকার বিপরীতে ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা অবলোপনকৃত ঋণ আদায় করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ৮ হাজার ৯ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংকের ৬ হাজার ৬০১ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ১০৬ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ২ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের এক হাজার ৪১৯ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল।
এদিকে, সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে গত পাঁচ অর্থবছরে মোট ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরেও এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে সোনালী ব্যাংককে ৩ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংককে ২১৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংককে এক হাজার ৮১ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংককে ৬১০ কোটি টাকা এবং বেসিক ব্যাংককে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তারপরও ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা ভালো হয়নি।
আর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ থাকায় সরকারি ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতিও বেড়ে গেছে। যদিও চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত জনতা, অগ্রণী ও বিডিবিএল’র কোনো প্রভিশন ঘাটতি ছিল না। তবে একই সময়ে সোনালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের এক হাজার ৩৫১ কোটি টাকা এবং বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ২২২ কোটি টাকা।