সুদ ভর্তুকির বাকি ২০৪ কোটি টাকা চেয়েছে কৃষি ব্যাংক
২০১৬-১৭ অর্থবছরে গ্রামাঞ্চলে বিতরণ করা ঋণের সুদ বাবদ সরকারের কাছে বাকি ২০৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা সুদ ভর্তুকি চেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। সম্প্রতি বিকেবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী হোসেন প্রধানিয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এই অর্থ চায় ব্যাংকটি। এমনকি দ্রুত অর্থ ছাড় করতেও অনুরোধ জানায় ব্যাংকটি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট সুদ ভর্তুকির পরিমাণ৩৬৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড় করেছে মাত্র ১৬৪ কোটি ৭৮ লাখটাকা। বাকি ২০৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা ছাড় করতে আবেদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, `দু’বছর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কম সুদে কৃষকদের মাঝে ঋণ বিতরণের জন্য সরকারের কাছে মোট এক হাজার ৫৫৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা ভর্তুকি দাবি করে কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে ব্যাংকটিকে মোট ৩৬৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা সুদ ভর্তুকি দেওয়ার সুপারিশ করে।বিকেবি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।এতো ঘাটতি নিয়ে ব্যাংকটির ব্যবসা পরিচালনা ও ঋণদান কর্মসূচি কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও গত অর্থবছরের (২০১৭-১৮) শেষে বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে বিকেবি’র ঘাটতি মেটাতে ৪০০ কোটি টাকা ছাড় করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কৃষি ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের ৮২ শতাংশই সরাসরি কৃষি খাতে দেওয়া হয়। দেশের কৃষকদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় কৃষিঋণের ওপর অন্যান্য ব্যাংক ও ঋণখাতের মতো বাজারভিত্তিক সুদ আরোপ না করে সরকার নির্দেশিত কম সুদ হারে ঋণ বিতরণকরা হয়। যা ব্যাংকটির তহবিল ব্যয়ের চেয়েও কম। আর এ কারণেই ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও কৃষি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান খোন্দকারইব্রাহিম খালেদ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘অন্যান্য ব্যাংক যেখানে ১৪-১৫ শতাংশ হার সুদে ঋণদেয়, সেখানে কৃষি ব্যাংককে ৯-১০ শতাংশ হার সুদে কৃষিঋণ দিতে হয়। অথচ ব্যাংকটির আমানত নিতে হয় বেশি সুদে। ব্যাংকটির তহবিল পরিচালন ব্যয়ের চেয়ে ঋণের সুদ হার কমহওয়ায় প্রতিবছর মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। তাই ব্যাংকটিকে টেকাতে এখনই ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।’
বিকেবি’র এমডি আলী হোসেন প্রধানিয়া বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যাচাই করেই এই পরিমাণ সুদ ভর্তুকি দেওয়ার সুপারিশ করেছে। মূলত বেশি সুদে ঋণ করে কম সুদেকৃষকদের ঋণ দেওয়ায় ভর্তুকির পরিমাণটা বাড়ছে। আর কৃষকদের কম সুদে ঋণ দেওয়ায় গ্রামের অর্থনীতি সচল রয়েছে, কৃষি উৎপাদন বেড়েছে এবং সেই উৎপাদন দিয়েই ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রাত্ব সোনালী, রুপালী ও জনতা ব্যাংক ৯ শতাংশ হার সুদে ঋণ দিয়েব্যবসা করছে, কিন্তু কৃষি ব্যাংক পারছে না। তার প্রধান কারণ ওইসব ব্যাংক মোট ঋণের মাত্র২-৩ শতাংশও কৃষি ঋণ দেয় না। বিপরীতে কৃষি ব্যাংকের কৃষি ঋণের পরিমাণ মোট ঋণের ৮২ শতাংশ। মূলত চাল-ডাল-রসুন- পেঁয়াজ-আদা চাষকারীদের, গরুর খামারি এবং গ্রামের ক্ষুদ্রব্যবসায়ীদের ঋণ দেয় কৃষি ব্যাংক। শতাংশ হারে কৃষি ঋণ বেশি হওয়ায় কৃষি ব্যাংকের আর্থিকক্ষতিও বেশি।’
আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, ‘ব্যাংকটির তহবিল পরিচালনায় ব্যয় প্রায় ১০ শতাংশ। কিন্তু কৃষি ঋণ দেওয়া হয় ৯ শতাংশ হারে। এছাড়া সময়মতো ভর্তুকির টাকা না পাওয়ায় ব্যাংকের মূলধনঘাটতি বাড়ছে। তবে ব্যাংকের পারফরমেন্স ভালো করতে নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করাহয়েছে। গত জুন থেকে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছি।’
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কৃষি ব্যাংকের ১০৩১টি শাখা আছে। তারপরও ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ মাত্র ২২ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ হাজার কোটি টাকা। ২০১৫ সালে ঘাটতি ছিল ৬ হাজার ৭৫৮কোটি টাকা। আর ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।