স্মরণের আলোয় প্রমীলা নজরুল ইসলাম



সোমঋতা মল্লিক, কলকাতা
প্রমীলা দেবী

প্রমীলা দেবী

  • Font increase
  • Font Decrease

বুদ্ধদেব বন্দ্যোপাধ্যায় 'প্রমীলা-নজরুল' গ্রন্থে লিখেছেন- "আমরা যদি পৃথিবী ব্যাপী কবি সাহিত্যিকদের জীবনীপঞ্জি খুঁজে দেখি, সংগত ভাবেই দেখতে পাবো, পারস্পারিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মেলবন্ধনে সৃজনীশক্তির অসামান্য বিকাশ ঘটেছে দেশে, দেশান্তরে। যে প্রতিভাটি বিকশিত হল তার আড়ালে নিয়ামক শক্তি হিসাবে রয়ে গেল আরো একটি প্রতিভা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আড়ালের এই শক্তিটি লোকচক্ষুর অগোচরে থেকে যায়। মানুষ তার খোঁজ পায় না কখনো। বহুক্ষেত্রে খোঁজ রাখতেও চায় না। ফলে সংশ্লিষ্ট ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

জাতীয় কবি, বিদ্রোহী নজরুল জনমানসের কবি। ভারতীয় উপমহাদেশের মুক্তির অন্যতম প্রধান কবি-সারথি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য পর্যালোচনা করলে আমরা উপরোক্ত সত্য-বীক্ষণে স্থিত হতে পারি। তাঁর ঝঞ্ঝাবহুল ও তীব্র গতিময় জীবনে বড়ো একটি অংশে দক্ষ কাণ্ডারীর মত হাল ধরেছিলেন তাঁর সহধর্মিনী প্রমীলা নজরুল ইসলাম।" 

৩০শে জুন, প্রমীলা দেবীর প্রয়াণ দিবসে আরও একবার ফিরে দেখা সাহিত্যপ্রেমী প্রমীলা দেবীকে।

প্রমীলা দেবী

তৎকালীন ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জ মহকুমার তেওতা গ্রামে ১৩১৬ বঙ্গাব্দের ১৭ই বৈশাখ প্রমীলা দেবী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাল্য নাম ছিল আশালতা সেনগুপ্ত। ডাক নাম 'দোলন' বা 'দোলনা'। গুরুজনেরা ভালোবেসে 'দুলি' নামে ডাকতেন। পিতার নাম বসন্তকুমার সেনগুপ্ত। মাতা গিরিবালা দেবী। চাকরি সূত্রে তাঁর পিতা সপরিবারে ত্রিপুরায় থাকতেন। প্রমীলা ছিলেন ভারী সুন্দরী। চাঁপার কলির মত ছিল গায়ের রং। মধুর স্বভাবের জন্য তিনি ছিলেন সকলের আদরের। প্রমীলাকে নিয়েই তাঁর বাবা-মার সংসার পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

কিন্তু এই সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। হঠাৎ-ই অকালে প্রয়াত হলেন বসন্ত কুমার সেনগুপ্ত। ছোট্ট দুলিকে নিয়ে গিরিবালা দেবীর জীবন সংগ্রাম শুরু হল। তিনি ছিলেন সংগ্রামী নারী। স্বামীর অকাল প্রয়াণে তিনি শোকাতুর হলেও কর্তব্যচ্যুত হননি। তাঁর দেবর ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্ত কুমিল্লার কোর্ট অব ওয়ার্ডসের ইন্সপেক্টর ছিলেন। গোমতী নদীর তীরে কান্দির পাড়ে তাঁর বাড়ি ছিল। শিশুকন্যাকে নিয়ে এখানেই এলেন গিরিবালা দেবী।

শুরু হলো জীবনের নতুন অধ্যায়। এই পরিবারের সকলেই বিশ্বাস করতেন দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে উদ্ধার করার কাজে সকলকে ব্রতী হতে হবে। এছাড়াও এই পরিবারে সঙ্গীত এবং কাব্য সাহিত্যের ধারাবাহিক চর্চা ছিল।

প্রমীলা দেবীর বাল্য নাম ছিল আশালতা সেনগুপ্ত

ইন্দ্রকুমারের স্ত্রী বিরজাসুন্দরী দেবী ছিলেন বিদুষী। তিনি কবিতা লিখতেন। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁকে 'মা' বলে সম্বোধন করতেন। ১৩ই মাঘ, শনিবার, ১৩২৯ সালে ধূমকেতু পত্রিকায় বিরজাসুন্দরী দেবীর লেখা মায়ের আশীষ -২ (শ্রীমান কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি) নামাঙ্কিত কবিতাটি প্রকাশিত হয়।

ওরে লক্ষ্মীছাড়া ছেলে-

আমার এ বেদন ভরা বুকের মাঝে

জাগিয়ে দিলি নূতন ব্যথা

‘মা’ ‘মা’ ব'লে কাছে এসে

আবার কবে কইবি কথা? (অংশ বিশেষ)

কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর 'সর্বহারা' কাব্যগ্রন্থটি  বিরজাসুন্দরী দেবীকে উৎসর্গ করেছেন একটি কবিতার মাধ্যমে-

মা (বিরজাসুন্দরী দেবী)র

শ্রীচরণারবিন্দে

সর্বসহা সর্বহারা জননী আমার!

তুমি কোনোদিন কারো করনি বিচার,

কারেও দাওনি দোষ। ব্যথা-বারিধির

কূলে বসে কাঁদো মৌনা কন্যা ধরণীর

একাকিনী! যেন কোন্ পথ-ভুলে আশা

ভিন্ গাঁর ভীরু মেয়ে! কেবলি জিজ্ঞাসা

করিতেছ আপনারে, 'এ আমি কোথায়?'- (অংশবিশেষ)

ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের কথাও এই প্রসঙ্গে উল্লেখের দাবি রাখে। তিনি ছিলেন গৃহকর্তা। তাঁর পরিবারে ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক সংকীর্ণতার কোনও ঠাঁই ছিল না। তাই পরবর্তীকালে নজরুলও এই পরিবারের সাথে একাত্ম হতে পেরেছিলেন। এইরকম একটি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল প্রমীলার উপর সদর্থক প্রভাব বিস্তার করেছিল। কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ে তাঁকে ভর্তি করেছিলেন গিরিবালা দেবী। ছোট মেয়ের কণ্ঠে রবীন্দ্র সংগীত শুনে সকলেই মুগ্ধ হতেন।

শুধুমাত্র বাল্যজীবনেই নয়, বিবাহ পরবর্তীতে প্রমীলা দেবী তাঁর সাহিত্য চর্চা অক্ষুণ্ন রেখেছিলেন। তাঁর লেখা কবিতা দ্বি মাসিক 'সাম্যবাদী' পত্রিকায় ১৩৩২ সালের বৈশাখ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এই কবিতাটিই ‘সওগাত’ পত্রিকার মহিলা সংখ্যায় পুণর্মুদ্রিত হয়।

                       শঙ্কিতা

কেন আজি প্রাণ মম বেদনায় বিহ্বল

কেন আজি অকারণ চোখে আসে জল।।

সন্ধ্যার সমীরণ হু হু করে বয়ে যায়

বয়ে যায় মোর মন করে কেন হায় হায়।

কেন বেদনায় মম বুক আজি কম্পিত

কে জানে গো হিয়া মাঝে কত ব্যথা সঞ্চিত।।

বেলা শেষে নীলিমায় চেয়ে আছে অনিমিখ্

কে ছড়ালে বিদায়ের সিন্দুর চারিদিক।

কিছুই বুঝিনা হায় কেন প্রাণ ভারাতুর

কে দিল হৃদয়ে বেঁধে মল্লার-রাগসুর।

মনে হয়, এ নিখিলে কেহ নাই, নাই মোর

তুমি বলো কি সন্ধ্যা, কেহ নাই, নাই তোর।।

তার লেখা আরও একটি কবিতা ১৩৩২ সালে আষাঢ় সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।

                  করুণা

সেই ভালো তুমি যাও ফিরে যাও

মোর সুখনিশি হয়েছে ভোর

সেধে সেধে কেঁদে থাকি পায়ে বেঁধে

ভেঙ্গেছে সে ভুল ছিঁড়িনি ডোর্।।

জনমের মতো ভুলে যাও মোরে

সহিব নীরবে যাও দূরে সরে

করুণা করিয়া দাঁড়ায়োনা দোরে

পাষাণ এ-হিয়া বাঁধিব গো।।

চিরদিন আমি থাকিব তোমার

কাঁদিবে বেহাগ কণ্ঠে আমার

আপনি একলা কত স্মৃতি হার

গাঁথিব ছিড়িব কাঁদিব গো।।

প্রাণ নাহি চায় দায়ে ঠেকে আসা

একটু আদর কিছু ভালোবাসা

চাইনা কো আমি ঘুমের কুয়াশা

থাকুক জড়ায়ে নয়নে মোর।।

দোষ করে থাকি ক্ষম মোরে ক্ষম

সুখী হও তুমি প্রার্থনা মম

চাহিনাকো সুখ, ভিখারীর সম

সেই ভালো তুমি হও কঠোর।।

রাঁচি থেকে কাজী অনিরুদ্ধ কে লেখা প্রমীলা দেবীর দুটি চিঠি বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে। ‘নিনি’ সম্বোধন করে লেখা এ চিঠি দুটি পড়লেই বোঝা যায় যে–সেই সময় প্রমীলা দেবী তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রের উপর কতখানি নির্ভর করতেন। “এই চোখের জলের সঙ্গে নিয়ত প্রার্থনা করছি, তোমার সকল অশান্তি, সব বিঘ্ন দূর হোক। বাবা, হতাশ হয়ো না। কায় মনে ওঁকে স্মরণ কর, যার কৃপায় অলৌকিক ঘটনা ঘটে। আমাদের ব্যাধির জন্যে কষ্ট কোরো না। অনেকদিন গত হয়েছে। এতে প্রাণ ভয় নেই। তুমি ছাড়া শান্তি পাওয়ার আর কিছু নাই জীবনে। তোমাকে ভালো দেখতে না পেলে এই মৃত্যুহীন প্রাণ অসহায় হয়ে ওঠে। আমারই জন্য এবং যাঁর ছেলে তুমি তাঁর প্রতি কর্তব্যবোধে মন কে সবল রাখো। ওঁর (নজরুল) অসুখের প্রথম অবস্থায় তোমারই জন্য কেবল ব্যাকুল হতেন এবং তোমার নাম করতেন। ওঁর প্রতি সকলেরই কর্তব্য আছে, কিন্তু যে তার অর্থ না বোঝে তাকে বলা বৃথা।”

বিলেত থেকে প্রমিলা দেবী চিঠি লিখেছেন পুত্রবধূকেও। চিঠির প্রতিটি লাইনে ঝরে পড়েছে মাতৃস্নেহ।

শুধুমাত্র প্রমীলা দেবীই নন, প্রমীলা জননী গিরিবালা দেবীও কিছু কিছু সাহিত্য চর্চা করেছেন। তিনি মূলত গল্প লিখতেন, তাঁর লেখা ছোট গল্প অলকা, ভ্রান্তি এবং ঠিক - ভুল, নারায়ণ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। তিনি খুব সুন্দর চিঠি লিখতেন। প্রমীলা দেবীর সাহিত্যচর্চায় তাঁর যে বিরাট ভূমিকা ছিল তা বলাই বাহুল্য।

তথ্য ঋণ: প্রমীলা-নজরুল, বুদ্ধদেব বসু, অন্তরঙ্গ অনিরুদ্ধ, কল্যাণী কাজী,

সোমঋতা মল্লিক, নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ও সভাপতি, ছায়ানট (কলকাতা)।

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। তিনি ছিলেন উদার, অসাম্প্রদায়িক ও জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব। কিশোরগঞ্জের সমাজ প্রগতি ও জনসেবায় তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মরণোত্তর সম্মাননা পদক প্রদানকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবী নূরজাহান বেগমকে ১ম শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী অষ্টবর্গ শাহ্ বাড়িতে নবনির্মিত নান্দনিক স্থাপত্য শাহ্ মাহ্তাব আলী কালচারাল কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের পক্ষে তাঁর বড় ছেলে, মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বার্তা২৪.কম এর অ্যাসোসিয়েট এডিটর ড. মাহফুজ পারভেজ পদক গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘জীবনের ধ্রুবতারা: আমার মা নূরজাহান বেগম ও কিশোরগঞ্জের স্মৃতি’ শীর্ষক পাবলিক লেকচার প্রদান করেন।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ্ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার। এতে পদক প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. গোলাম হোসেন।

এতে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সি‌নিয়র আইনজীবী বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা না‌সির উ‌দ্দিন ফারুকী, সিনিয়র আইনজীবী, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা পাব‌লিক লাই‌ব্রে‌রির সাধারণ সম্পাদক মু আ ল‌তিফ, সি‌নিয়র সাংবা‌দিক আলম সা‌রোয়ার টিটু, সহকারী অধ্যাপক মো. সেলিম, ফ্রন্টিয়ার্স রিপোর্টার্স সোসাইটির সভাপতি মিনহাজ শিহাব ফুয়াদ, সমাজকর্মী লুৎফু‌ন্নেছা চিনু প্রমুখ। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক সমীক্ষাধর্মী মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবন কীর্তির ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা ছাড়াও বিভিন্ন জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কাজ করছে।

এছাড়া সমাজসেবী নূরজাহান বেগম বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসাসহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি এই মহীয়সী নারী পরলোকগমন করেন। তাঁর কর্ম ও স্মৃতিকে অম্লান রাখার জন্য শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন তাঁকে মরণোত্তর পদকে ভূষিত করেছে।

;

‘প্রতিবন্ধী নারীদের বাধা দূর করতে একসঙ্গে সাইরেন বাজাতে হবে’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), অ্যারো ও সিএনএস এর যৌথ উদ্যোগে ‘প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা রোধ’ বিষয়ক একটি কর্মশালা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ডিআরইউ সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় বেলা ১১টায় ডিআরইউ’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

এ সময় তিনি বলেন, বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন প্রতিবন্ধী নারীরা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারসহ শীর্ষ পর্যায়ে নারী ক্ষমতায় থাকলেও নারীরা এখনও তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এই নারীরাই যখন প্রতিবন্ধী হয় তখন তারা আরো নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন।


নারীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না এমন মন্তব্য করে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, রাস্তাঘাটসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রজেক্ট থাকলেও মানুষের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবন্ধীদের নিয়েও পর্যাপ্ত পরিমানে প্রকল্প নেই। আমার মনে হয়, রাষ্ট্র একটা ভুল মডেলের দিকে যাচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সবাইকে একসঙ্গে বাঁশি এবং সাইরেনটা বাজাতে হবে, আওয়াজ এক সঙ্গে করতে হবে।

এসময় তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিকে এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একটি সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমে সরকার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ এগিয়ে আসলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কর্মশালাটিতে প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি ও ইউএন উইমেন বাংলাদেশ প্রকল্প সমন্বয় বিশেষজ্ঞ তুশিবা কাশেম মূল বিষয়ের উপরে আলোচনা করেন এবং অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়াও বক্তব্য দেন ডিআরইউ’র তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক কামাল মোশারেফ।

অনুষ্ঠানে ডিআরইউ’র যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমীন, অর্থ সম্পাদক এস এম এ কালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি, নারী বিষয়ক সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন, আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান ও কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, কার্যনির্বাহী সদস্য সোলাইমান সালমান, সুশান্ত কুমার সাহা, মো: আল-আমিন, এসকে রেজা পারভেজ ও মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ) উপস্থিত ছিলেন।

;

ইরানে আন্দোলনরত নারীদের সমর্থনে বিএনএসকে’র মানববন্ধন



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ইরানে আন্দোলনরত নারীদের সমর্থনে বিএনএসকে’র মানববন্ধন

ইরানে আন্দোলনরত নারীদের সমর্থনে বিএনএসকে’র মানববন্ধন

  • Font increase
  • Font Decrease

ইরানি তরুণী মাহ্সা আমিনি’র মৃত্যুর ঘটনায় উপযুক্ত বিচার এবং দেশটিতে চলমান নারী নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের নারী সাংবাদিকরা।

রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। একই সাথে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ ওই দেশে বিভিন্ন শহর ও বিশ্বব্যাপী চলমান আন্দোলনের সাথে তারা একাত্মতা পোষণ করেন।

ইরানে আন্দোলনরত নারী সমাজ ও জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করে সংগঠনের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, ‘সঠিক উপায়ে হিজাব না পরার অভিযোগে ইরানি তরুণী মাহ্সা আমিনীকে সম্প্রতি গ্রেফতার ও পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে পুরো ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে অজুহাতে ইরানে দীর্ঘদিন ধরে নারীরা এরকম নৃশংস জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, শত শত নারী কারাগারে দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন। ইরানের নারীরা ইরানের জনগণ এই জুলুম নির্যাতনের অবসান চায়। বাংলাদেশেও একটি গোষ্ঠী ধর্মের নামে মেয়েদের ওপর বিরাট বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। আমাদের এই বিষয়গুলোকে এভাবেই শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে।’

মানববন্ধনে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের দপ্তর সম্পাদক দিলরুবা খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহনাজ পারভীন এলিস, সদস্য আফরোজা সরকারসহ নারী সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন।

এসময় তারা পোশাকের জন্য নারীর ওপর খবরদাবি নারীর মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মানববন্ধন থেকে নারী ওপর এ ধরনের খবরদারি ও জুলুম-নির্যাতন বন্ধসহ মাসা আমিনী হত্যা ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করা হয়।

;

'আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ নয়'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ নয়'

'আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ নয়'

  • Font increase
  • Font Decrease

"প্রথম বা আগের পক্ষের স্ত্রী এবং সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারবেন না মুসলমান পুরুষরা।"

বুধবার (১২ অক্টোবর) এ রায় জানিয়ে দিল এলাহাবাদ হাই কোর্ট। যুগান্তকারী রায়ের প্রসঙ্গে পবিত্র কোরানেরও উল্লেখ করেছে হাই কোর্ট।

মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানকে উদ্ধৃত করে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে জানায়, "আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানদের যত্ন না নিলে মুসলমানদের দ্বিতীয় বিবাহ করা ধর্মবিরুদ্ধ।" এলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি প্রকাশ কেশরওয়ানি এবং রাজেন্দ্র কুমার তাঁদের পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, “যদি কোনও মুসলমান পুরুষ বুঝতে পারেন যে, তিনি আগের পক্ষের স্ত্রী সন্তানদের দায়িত্ব নিতে অক্ষম, তবে তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ করার ভাবনা থেকে সরে আসা উচিত।"

অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ধর্মীয় দিক থেকে উত্তেজক এই রায়ের প্রসঙ্গে আদালতের সাফ পর্যবেক্ষণ হলো, "ধর্মনির্বিশেষে কোনও পুরুষ যদি প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তবে তিনি প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে বাধ্য করতে পারেন না।"

কিছু দিন আগেই উত্তরপ্রদেশ নিবাসী আজিজুর রহমান প্রথম পক্ষের স্ত্রীর কাছ থেকে দাম্পত্যের অধিকার দাবি করে আদালতের শরণাপন্ন হন। মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে প্রদত্ত রায়ে আদালত জানায়, "প্রথম পক্ষের স্ত্রীর অজান্তেই দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন ওই ব্যক্তি। তাই ওই ব্যক্তি প্রথম স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে কিংবা প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে দাম্পত্যের অধিকার দাবি করতে পারেন না।"

ভারতের বিচারালয় আগেও তিন তালাক, খোরপোশ ও হিজাব সম্পর্কে বিভিন্ন রায় দিয়েছে, যা নিয়ে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতণ্ডা ও বাদানুবাদ হয়েছে। তবে দ্বিতীয় বিয়ে প্রসঙ্গে দেওয়া আদালতের রায়ের পক্ষে-বিপক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা কোনও প্রতিক্রিয়া জানায় নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রায়ের এক অংশে "ধর্মনির্বিশেষে কোনও পুরুষ যদি প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তবে তিনি প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে বাধ্য করতে পারেন না" মর্মে উল্লেখ করায় তা কেবল মাত্র মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করে দেওয়া হয়েছে বলা যায় না। তদুপরি, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানকে উদ্ধৃত করে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে "আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানদের যত্ন না নিলে মুসলমানদের দ্বিতীয় বিবাহ করা ধর্মবিরুদ্ধ" উল্লেখ করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। সবকিছু মিলিয়ে নারীর অধিকার ও আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো সামনে চলে আসায় রায়ের ক্ষেত্রে ধর্মীয় আবেগের চেয়ে নারীর ক্ষমতায়নের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোই প্রাধান্য পেয়েছে।

;