রবীন্দ্রনাথের আরেক নায়িকা



সুমন ভট্টাচার্য
মেহরিন জব্বার/ছবি: সংগৃহীত

মেহরিন জব্বার/ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাহিত্যে উদ্ভাসিত রবীন্দ্রনাথের নান্দনিক নায়িকাদের কথা সবাই জানি। চলচ্চিত্রে তাদের উপস্থিতিও দেখেছি। তবে, তারা মূলত বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলাভাষী পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চলে আবর্তিত হয়েছেন। এবার, সম্ভবত প্রথমবারের মতো উর্দুভাষী পাকিস্তানে দেখা পাওয়া গেল রবীন্দ্রনাথের আরেক নায়িকার।

রিভার্স স্যুইং যে পাকিস্তানের পেস বোলাররাই ভাল দেয়, সেটা এতদিন আমরা সবাই জানতাম| তাই বলে এইরকম রিভার্স স্যুইং, মেহরিন জব্বার? আপনার দেওয়া এই যে রিভার্স স্যুইং, পাক সিরিয়ালে রবীন্দ্র সঙ্গীতের ব্যবহার যে এইভাবে ২০২১ এ ফিরে এসে সবার হৃদয়কে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে, তা কে জানতো? আপনার 'সিরিয়াল দিল কেয়া করে'র দৃশ্য আপনি টুইট করে জানিয়ে দেবেন যে, নায়িকা উমনা জাইদির কণ্ঠে 'আমার পরাণ যাহা চায়' গানটি রয়েছে, আর সীমান্তের এপারে ও বিশ্বময় বাঙালি হৃদয় একেবারে আপ্লুত হয়ে যাবে? আপনাকে দেখতে পাবে রবীন্দ্রনাথের আরেক অনিন্দ্য নায়িকা রূপে।

ইতিহাসের কি আশ্চর্য সমাপতন দেখুন, মেহরিন জব্বার, আপনি এই টুইটটা করলেন ২০২১ সালে, অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের ১৬০ তম জন্মবার্ষিকীতে| আমরা সবাই জানতে পারলাম আপনার বহু আলোচিত, তুমুল জনপ্রিয় সিরিয়াল 'দিল কেয়া করে'তে কি চমৎকার ভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যবহৃত হয়েছে| এবং গেয়েছেন ভারতীয় শিল্পী শর্বরী দেশপান্ডে| অথচ ঠিক ৬০ বছর আগে, ১৯৬১ সালে যখন এই নোবেল জয়ী সাহিত্যিকের জন্মশতবর্ষ পালিত হচ্ছে, তখন সেদিনের পাকিস্তানের সামরিক শাসক আয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশে রবীন্দ্র সঙ্গীতকে নিষিদ্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন| আয়ুব খানের সেই রবীন্দ্রনাথের গানকে নিষিদ্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের বাঙালি সমাজের যে ক্ষোভ, বিক্ষোভ, তাই তো সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের পথ ধরে পরবর্তীকালে রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংগ্রাম পেরিয়ে বাংলাদেশ হয়ে ওঠায় ইতিবৃত্ত রচনা করেছে এবং বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি এবং রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে  আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে|

মেহরিনের আলোচিত সিরিয়ালের দৃশ্য
 

মেহরিন বব্বর, তথ্য বলছে ১৯৭১ এ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক ১৩ দিন বাদে, ২৯ ডিসেম্বর আপনার জন্ম| কিন্তু আপনি, যাঁকে পাকিস্তানের অন্যতম অগ্রগণ্য মহিলা পরিচালক বলা হয়, যিনি পাকিস্তান আর নিউইয়র্কের মধ্যে জীবনটাকে ভাগ করে নিয়েছেন, তিনি একটি পাকিস্তানি সিরিয়ালে রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যবহারের তাৎপর্যকে বুঝবেন না, তার রাজনৈতিক বা সামাজিক অভিঘাতকে বুঝবেন না, এমনটা হতেই পারে না| কারণ আপনার বাবার নাম জাভেদ জব্বার,  যিনি শুধু পাকিস্তানের অগ্রগণ্য বুদ্ধিজীবী নন, তিন তিনবার সেদেশের মন্ত্রী হয়েছেন, এমনকি পারভেজ মুশারফের আমলে ইসলামাবাদে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন| সেই জাভেদ জব্বারের কন্যা, পাকিস্তানের অগ্রগণ্য পাবলিক ইন্টালেকচুয়ালের মেয়ে যখন তাঁর সিরিয়ালে দেখান, নিউইয়র্ক থেকে ফেরা পাকিস্তানি কন্যা মুগ্ধ পুরুষের চোখের সামনে বসে গাওয়ার আগে বলেন, 'শোনো এটা কিন্তু একটা বাংলা গান' এবং তারপরে পরিষ্কার বাংলায় গেয়ে ওঠেন, 'আমার পরাণও যাহা চায়', তখন তো আসলেই অনেক কিছু বলা হয়ে যায়!

১৯৬১ তে কবির জন্মশতবর্ষে আয়ুব খানের নিষেধাজ্ঞার রিভার্স স্যুইং ই তো পাকিস্তানি তরুণীর গলায়, 'আমার পরাণও যাহা চায়' মর্মে গুঞ্জরিত। এমন গান আপনি বাছলেন আপনার নায়িকা উমনা জাইদির জন্য, যে বাঙালির হৃদয়ে উথালপাথাল হবেই।

অবশ্য এই বেড়া ভাঙার খেলাটা, উপমহাদেশের বৃহত্তর পরিসরকে খুঁজে বার করার চেষ্টাটা আপনার মজ্জাগত, বাবার থেকে পেয়েছেন| হ্যাঁ, আপনার বাবা, জাভেদ জব্বর, যাঁর জন্ম ভারতের হায়দরাবাদে, কিন্তু তারপরে দেশভাগের পরে করাচিতে চলে গেলেও এই উপমহাদেশের শেয়ারড এক্সপিরিয়েন্স বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে কখনও ভোলেননি| তাই তো জাভেদ জব্বার যেমন ভারত পাকিস্তানের মধ্যে ট্র্যাক টু ডিপ্লোম্যাসির অন্যতম অঙ্গ 'নিমরানা সংলাপ'র অগ্রণী উদ্যোক্তা, তেমনই আপনার, মেহরিন জব্বার, আপনার প্রথম ছবি 'রামচান্দ পাকিস্তানি' প্রযোজনা করেন|

'রামচান্দ পাকিস্তানি'কে সালমন খানের সুপার হিট সিনেমা বজরঙ্গী ভাইজানের প্রিল্যুড বলা যায়, কারণ ২০০৮ সালের এই চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছিল পাকিস্তানের এক দলিত হিন্দু বালক ঘটনাক্রমে ভারতে ঢুকে পড়ার পর কি কি ঘটতে থাকে! নন্দিতা দাস অভিনীত আপনার এই সিনেমা দেখেই তো মীরা নায়ারের মতো পরিচালক মুগ্ধ হয়ে যান আর আপনাকে আফ্রিকা নিয়ে যান একসঙ্গে কাজ করার জন্য|

কলকাতায় মেহরিনের পিতার সঙ্গে সস্ত্রীক লেখক

যাঁরা আপনার এই 'দিল কেয়া করে' সিরিয়াল দেখেছে, দেখা সম্ভবও, কারণ এম এক্স প্লেয়ারের মতো ভারতীয় ওয়েব প্ল্যাটফর্মে এই সিরিয়ালটি রয়েছে, তাঁরা জানেন, উমনা জাইদির আমিনা চরিত্রটিকে কত সাহসের সঙ্গে আপনি এঁকেছেন| পাকিস্তানি মিডিয়া, সেদেশের সমালোচকরা বারবার লিখেছেন, মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় একজন বিধবাকে, যাঁর সন্তান রয়েছে, কেউ প্রেম করছে, বিয়ে করছে, দেখানো কত কঠিন| কিন্তু মেহরিন জব্বার সেই কঠিন কাজটা আপনি বারবার করেছেন বলেই আপনাকে নিয়ে এত আলোচনা, এত পুরস্কার আপনার ঝুলিতে|

মেহরিন জব্বার, আপনাকে চেনা, আপনার কাজকে জানা যেহেতু অনেকটা পারিবারিক সূত্র ধরে, সেহেতু জানি, এই উপমহাদেশে বেড়া ভাঙার কাজটা করতে আপনি কতটা স্বচ্ছন্দ| ২০১৫ সালের যে সময়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চলে যাচ্ছেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের নাতনির বিয়েতে, সেই সময় আসলে জাভেদ জব্বারও ভারতে এসেছেন, বিভিন্ন শহরে গেছেন দুদেশের শান্তি আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে| সেই সময় বিভিন্ন আড্ডার পরে কত সহজে পাকিস্তানের প্রাক্তন মন্ত্রী মধ্য কলকাতায় আমার অফিসে চলে এসেছেন আমার ও আমার অধ্যাপিকা স্ত্রীর সঙ্গে আলাপচারিতাকে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যেতে| কাবাব আর অফ দি রেকর্ড কথাবার্তার মাঝে জাভেদ জব্বার নিজের নতুন বইও দিয়ে গিয়েছেন| সেই দিন থেকেই জানি আপনারা, মানে জব্বাররা হৃদয়ে আগল তুলে দিতে বিশ্বাসী নন|

পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটা চালু শব্দ আছে, মোহাজির| অর্থাৎ যাঁরা উদ্বাস্ত| যাঁরা উদ্বাস্তু হিসেবে পাকিস্তানে গিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন| মেহরিন জব্বার, করাচি, যে শহরে আপনার জন্ম, বেড়ে ওঠা, সেটা আসলে মোহাজিরদের শহর| মনে আছে অনেক আড্ডা এবং তর্কবিতর্কের পর রাত্রিবেলা বিদায় নেওয়ার আগে আপনার পিতা, জাভেদ জব্বার হঠাৎ মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তিনিও আসলে দেশভাগের অনেক ক্ষত বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন|

আপনি মেহরিন জব্বার, সেই বাবার মেয়ে হিসেবে এই উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত লেখককে শুধু সিরিয়ালের গানে ব্যবহার করেই স্মরণ করলেন না, টুইট করে বলতে চাইলেন, 'আমার পরাণ যাহা চায়'। অনেকের না-বলা মনের কথা আপনি বলতে চেয়েছেন। সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের ঈর্ষণীয় নায়িকাদের মতো সংঘাত-বিক্ষুব্ধ বাস্তবে আপনি পরিণত হলেন শান্তি, সম্প্রীতি ও প্রেমের বার্তাবাহী রবীন্দ্রনাথের আরেক নায়িকায়।

লেখক: সুমন ভট্টাচার্য, কলকাতার বিশিষ্ট সাংবাদিক, কবি কথাশিল্পী।

   

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। তিনি ছিলেন উদার, অসাম্প্রদায়িক ও জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব। কিশোরগঞ্জের সমাজ প্রগতি ও জনসেবায় তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মরণোত্তর সম্মাননা পদক প্রদানকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবী নূরজাহান বেগমকে ১ম শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী অষ্টবর্গ শাহ্ বাড়িতে নবনির্মিত নান্দনিক স্থাপত্য শাহ্ মাহ্তাব আলী কালচারাল কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের পক্ষে তাঁর বড় ছেলে, মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বার্তা২৪.কম এর অ্যাসোসিয়েট এডিটর ড. মাহফুজ পারভেজ পদক গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘জীবনের ধ্রুবতারা: আমার মা নূরজাহান বেগম ও কিশোরগঞ্জের স্মৃতি’ শীর্ষক পাবলিক লেকচার প্রদান করেন।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ্ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার। এতে পদক প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. গোলাম হোসেন।

এতে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সি‌নিয়র আইনজীবী বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা না‌সির উ‌দ্দিন ফারুকী, সিনিয়র আইনজীবী, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা পাব‌লিক লাই‌ব্রে‌রির সাধারণ সম্পাদক মু আ ল‌তিফ, সি‌নিয়র সাংবা‌দিক আলম সা‌রোয়ার টিটু, সহকারী অধ্যাপক মো. সেলিম, ফ্রন্টিয়ার্স রিপোর্টার্স সোসাইটির সভাপতি মিনহাজ শিহাব ফুয়াদ, সমাজকর্মী লুৎফু‌ন্নেছা চিনু প্রমুখ। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক সমীক্ষাধর্মী মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবন কীর্তির ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা ছাড়াও বিভিন্ন জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কাজ করছে।

এছাড়া সমাজসেবী নূরজাহান বেগম বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসাসহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি এই মহীয়সী নারী পরলোকগমন করেন। তাঁর কর্ম ও স্মৃতিকে অম্লান রাখার জন্য শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন তাঁকে মরণোত্তর পদকে ভূষিত করেছে।

;

‘প্রতিবন্ধী নারীদের বাধা দূর করতে একসঙ্গে সাইরেন বাজাতে হবে’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), অ্যারো ও সিএনএস এর যৌথ উদ্যোগে ‘প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা রোধ’ বিষয়ক একটি কর্মশালা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ডিআরইউ সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় বেলা ১১টায় ডিআরইউ’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

এ সময় তিনি বলেন, বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন প্রতিবন্ধী নারীরা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারসহ শীর্ষ পর্যায়ে নারী ক্ষমতায় থাকলেও নারীরা এখনও তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এই নারীরাই যখন প্রতিবন্ধী হয় তখন তারা আরো নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন।


নারীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না এমন মন্তব্য করে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, রাস্তাঘাটসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রজেক্ট থাকলেও মানুষের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবন্ধীদের নিয়েও পর্যাপ্ত পরিমানে প্রকল্প নেই। আমার মনে হয়, রাষ্ট্র একটা ভুল মডেলের দিকে যাচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সবাইকে একসঙ্গে বাঁশি এবং সাইরেনটা বাজাতে হবে, আওয়াজ এক সঙ্গে করতে হবে।

এসময় তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিকে এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একটি সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমে সরকার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ এগিয়ে আসলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কর্মশালাটিতে প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি ও ইউএন উইমেন বাংলাদেশ প্রকল্প সমন্বয় বিশেষজ্ঞ তুশিবা কাশেম মূল বিষয়ের উপরে আলোচনা করেন এবং অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়াও বক্তব্য দেন ডিআরইউ’র তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক কামাল মোশারেফ।

অনুষ্ঠানে ডিআরইউ’র যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমীন, অর্থ সম্পাদক এস এম এ কালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি, নারী বিষয়ক সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন, আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান ও কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, কার্যনির্বাহী সদস্য সোলাইমান সালমান, সুশান্ত কুমার সাহা, মো: আল-আমিন, এসকে রেজা পারভেজ ও মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ) উপস্থিত ছিলেন।

;

ইরানে আন্দোলনরত নারীদের সমর্থনে বিএনএসকে’র মানববন্ধন



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ইরানে আন্দোলনরত নারীদের সমর্থনে বিএনএসকে’র মানববন্ধন

ইরানে আন্দোলনরত নারীদের সমর্থনে বিএনএসকে’র মানববন্ধন

  • Font increase
  • Font Decrease

ইরানি তরুণী মাহ্সা আমিনি’র মৃত্যুর ঘটনায় উপযুক্ত বিচার এবং দেশটিতে চলমান নারী নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের নারী সাংবাদিকরা।

রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। একই সাথে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ ওই দেশে বিভিন্ন শহর ও বিশ্বব্যাপী চলমান আন্দোলনের সাথে তারা একাত্মতা পোষণ করেন।

ইরানে আন্দোলনরত নারী সমাজ ও জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করে সংগঠনের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, ‘সঠিক উপায়ে হিজাব না পরার অভিযোগে ইরানি তরুণী মাহ্সা আমিনীকে সম্প্রতি গ্রেফতার ও পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে পুরো ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে অজুহাতে ইরানে দীর্ঘদিন ধরে নারীরা এরকম নৃশংস জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, শত শত নারী কারাগারে দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন। ইরানের নারীরা ইরানের জনগণ এই জুলুম নির্যাতনের অবসান চায়। বাংলাদেশেও একটি গোষ্ঠী ধর্মের নামে মেয়েদের ওপর বিরাট বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। আমাদের এই বিষয়গুলোকে এভাবেই শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে।’

মানববন্ধনে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের দপ্তর সম্পাদক দিলরুবা খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহনাজ পারভীন এলিস, সদস্য আফরোজা সরকারসহ নারী সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন।

এসময় তারা পোশাকের জন্য নারীর ওপর খবরদাবি নারীর মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মানববন্ধন থেকে নারী ওপর এ ধরনের খবরদারি ও জুলুম-নির্যাতন বন্ধসহ মাসা আমিনী হত্যা ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করা হয়।

;

'আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ নয়'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ নয়'

'আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ নয়'

  • Font increase
  • Font Decrease

"প্রথম বা আগের পক্ষের স্ত্রী এবং সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারবেন না মুসলমান পুরুষরা।"

বুধবার (১২ অক্টোবর) এ রায় জানিয়ে দিল এলাহাবাদ হাই কোর্ট। যুগান্তকারী রায়ের প্রসঙ্গে পবিত্র কোরানেরও উল্লেখ করেছে হাই কোর্ট।

মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানকে উদ্ধৃত করে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে জানায়, "আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানদের যত্ন না নিলে মুসলমানদের দ্বিতীয় বিবাহ করা ধর্মবিরুদ্ধ।" এলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি প্রকাশ কেশরওয়ানি এবং রাজেন্দ্র কুমার তাঁদের পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, “যদি কোনও মুসলমান পুরুষ বুঝতে পারেন যে, তিনি আগের পক্ষের স্ত্রী সন্তানদের দায়িত্ব নিতে অক্ষম, তবে তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ করার ভাবনা থেকে সরে আসা উচিত।"

অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ধর্মীয় দিক থেকে উত্তেজক এই রায়ের প্রসঙ্গে আদালতের সাফ পর্যবেক্ষণ হলো, "ধর্মনির্বিশেষে কোনও পুরুষ যদি প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তবে তিনি প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে বাধ্য করতে পারেন না।"

কিছু দিন আগেই উত্তরপ্রদেশ নিবাসী আজিজুর রহমান প্রথম পক্ষের স্ত্রীর কাছ থেকে দাম্পত্যের অধিকার দাবি করে আদালতের শরণাপন্ন হন। মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে প্রদত্ত রায়ে আদালত জানায়, "প্রথম পক্ষের স্ত্রীর অজান্তেই দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন ওই ব্যক্তি। তাই ওই ব্যক্তি প্রথম স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে কিংবা প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে দাম্পত্যের অধিকার দাবি করতে পারেন না।"

ভারতের বিচারালয় আগেও তিন তালাক, খোরপোশ ও হিজাব সম্পর্কে বিভিন্ন রায় দিয়েছে, যা নিয়ে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতণ্ডা ও বাদানুবাদ হয়েছে। তবে দ্বিতীয় বিয়ে প্রসঙ্গে দেওয়া আদালতের রায়ের পক্ষে-বিপক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা কোনও প্রতিক্রিয়া জানায় নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রায়ের এক অংশে "ধর্মনির্বিশেষে কোনও পুরুষ যদি প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তবে তিনি প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে বাধ্য করতে পারেন না" মর্মে উল্লেখ করায় তা কেবল মাত্র মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করে দেওয়া হয়েছে বলা যায় না। তদুপরি, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানকে উদ্ধৃত করে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে "আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানদের যত্ন না নিলে মুসলমানদের দ্বিতীয় বিবাহ করা ধর্মবিরুদ্ধ" উল্লেখ করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। সবকিছু মিলিয়ে নারীর অধিকার ও আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো সামনে চলে আসায় রায়ের ক্ষেত্রে ধর্মীয় আবেগের চেয়ে নারীর ক্ষমতায়নের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোই প্রাধান্য পেয়েছে।

;