প্রশান্ত পশ্চিম



মাহমুদ হাফিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পর্ব-৫

আলাস্কা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ওয়ান ফোর সিক্স ওয়ান যথাসময়ে এসে দাঁড়ানোয় বোর্ডিং শুরু হয়েছে। আসন নম্বরের সিরিয়াল মেনে ডাকা হচ্ছে। আমাদের আসন বিজনেস ক্লাসের পেছনের সারিতেই। তুসুর আসন পড়েছে পিছনে। স্লিমদেহী এয়ারবাস থ্রি টু জিরোর দু’দিকের জানালাঘেঁষে তিনটি করে আসন, মাঝখান দিয়ে চলাচল। বিমানে উঠে দেখি আমাদের সারির আয়েল আসনে আসন নিয়েছে জলির চোখের যম ‘ওগো বিদেশিনী’। এয়ারক্রাফট স্লিমদেহী হলে আসনগুলো কোসাদা। ইস্তাম্বুল-সানফ্রানসিস্কো ফ্লাইটে ভাগ্যক্রমে জলি স্বামীকে সুরক্ষিত করতে পারলেও এখানে তা অসম্ভব। কারণ আমাদের আগেই নিজ আসনে আসন গেড়েছে। জলি আজকের মনোরম বিকালটি পাখির চোখে পাহাড় বন বনানী আর সমুদ্র দেখতে চায়। চোখে তেরচা নজর জারি রেখে মাঝের আসনটি আমাকে ছেড়ে দেয়। নিজে জানালার কাছে গিয়ে বসে। শেষ ফ্লাইটের এ কাণ্ডে আমি এই ভরশ্রাবণে কবি নজরুলকে স্মরণ করি- ‘পরাণ প্রিয়….কেন এলে অবেলায়’। 

আমাদের সাময়িক শয়নকক্ষ

‘ওগো বিদেশিনী’র বয়স বোঝার উপায় নেই। এয়ারক্রাফটের মতোই চিকনদেহী। চেহারার কমনীয়তা কবেই উধাও, আহামরি দর্শনধারীও নয়। এটাই জলির সান্ত্বনা। সামনের আসনলগ্ন সকেটে চার্জার ঢুকিয়ে আইপ্যাডে মগ্ন সে। আসন নেওয়ার সময় ‘এক্সিউজিম মি’ বললে শুধু ‘ওহ সিওর’ বলে উঠে দাঁড়িয়েছে। মোবাইল চার্জ করতে কোন সকেটে চার্জার ঢুকাবো এ নিয়ে আমার দোনোমোনো দেখে ‘ইউ ক্যান পুট ইট অন টপ অফ মি’ বলে আমাকে ভড়কে দিয়েছে। পরে বুঝতে পারি প্যানেলের দুটি সকেটের নিচেরটিতে সে চার্জ দিচ্ছে, আমাকে ওপরেরটিতে চার্জার লাগাতে বলছে। আমাদের মধ্যে কথা ওই দুই বাক্যই। আর কোন কথা নেই। আসনসঙ্গীর সঙ্গে সচরাচর আলাপ জমাতেই পছন্দ করি আমি। কোন নারী সঙ্গে থাকলে কোন নারী আর তার সঙ্গে আলাপ জমাতে চায়! সে আলাপ বৃথা। আমি বামপাশে নিজ নারী, ডানপাশে পরনারীর মাঝখানে চিড়ে চ্যাপ্টা হচ্ছি। থিতু হয়ে জুস কফি খাওয়ার মধ্যেই ল্যান্ডিংয়ের জন্য নিচে নামতে শুরু করেছে বিমান।

শ্যাম্পু, কন্ডিশনার সম্ভার

ঘণ্টা দুয়েকের উড়ালশেষে সিয়াটল তাকোমা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নেমে আমি দ্রুত এক্সিটের দিকে হাঁটা শুরু দিই। জলি ও তুসুকে দ্রুত পা চালাতে বলি। কাস্টমস ইমিগ্রেশনের ঝামেলা আগেই গুজার গিয়া। বিমানের ভেতরে থাকতেই আলাস্কা এয়ারের কোকিলকণ্ঠি বলে দিয়েছে- থ্রি ফোর সিক্স ওয়ানের লাগেজ পাওয়া যাবে ১৫ ও ১৬ নম্বর বেল্টে। বেল্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতেই লাগেজ এসে হাজির। সেগুলো নামিয়ে এক জায়গায় জড়ো করে আমি মোবাইলে রোমিং নম্বরটি সচল করি। সিয়াটলে আমাদের মেজবান মি. পল কে বার্তা দিই-‘ উই হ্যাভ এ্যারাইভড’। পরক্ষণেই ফিরতি বার্তা পাই ‘আই এ্যাম ড্রাইভিং, জাস্ট ফাইভ মিনিটস’। টেনশনপ্রিয় মন আমার প্রশান্ত উপকূলের এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে শান্ত থাকে।

আজকাল ভ্রামণিকদের জন্য হোটেলের ঘড়িবাঁধা জীবন ছাড়াও এয়ার বিএনবি, কাউচ সার্ফিংয়ের মতো অ্যাপসভিত্তিক ব্যবস্থা বিদেশে বসবাসের নানারকম বন্দোবস্ত করেছে। তাতে দিন মাস ক্ষণ সময় বেঁধে থাকা যায়। হোস্টগণ এয়ারপোর্ট থেকে নবাগত ভ্রামণিককে রিসিভও করে থাকেন। আমাদের সম্পর্ক ভিন্নধর্মী, ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে’র মতো। সময়কেন্দ্রিক বাঁধাধরা নিয়ম সেখানে অচল। এসেছো যখন এ নগরে, থাকো যতোদিন ইচ্ছে- গোছের।  কিছুক্ষণ পরই মি. পলের উদয়। দীর্ঘ সম্পর্কের সূত্রধরে বিমানবন্দরের অগুণতি মানুষের ভিড়ের মধ্যেই অনায়াসে চিনতে পারি আমরা। কিছু সময় কাটে শুভেচ্ছা বিনিময়ে, আবেগমথিত মানবীয়বোধে। 

বাথরুম টয়লেট্রিজ

লাগেজসহ পলের সঙ্গে চৌদ্দ নম্বর এক্সিট দিয়ে বের হয়ে ড্রাইভওয়ের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই। পলের বন্ধু সিনা ও রকিও এসেছে আমাদের রিসিভে সহায়তা করতে।পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে এয়ারপোর্টের ভেতরে এসেছে সে আমাদের অভ্যর্থনায়। তার বন্ধুরা বাইরে চক্কর দিচ্ছিলো,, ফোন পেয়ে বিশালবপু গাড়ি নিয়ে হাজির চোখের পলকে। শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর সিনা-রকির গাড়ির পেছনে ছোট বড় নয়টি লাগেজ তোলা হয়। রকি আর পলই ধরাধরি করে লাগেজগুলো তোলে, আমাদের হাত লাগাতে হয়নি। ভাবটা এমন যে, সব ভার, চাপ আমাদের ওপর ছেড়ে দিন। বিশালবপু গাড়ি আপত্তি ছাড়াই ঢাউস লাগেজগুলো পেটে ভরে নেয় পরম যত্নে। সঙ্গের হাতব্যাগগুলো নিয়ে আমরা পলের সঙ্গে পার্কিংলটের দিকে হেঁটে চলি। অপেক্ষমান তার ব্রান্ডনিউ হুন্ডা। বাড়িতে স্বাগত জানাতে অপেক্ষমান গৃহবন্ধু মিসেস জেরিন। এ নগরে দম্পতির প্রার্থিত মেহমান আমরা। বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি-উবার আমাদের জন্য নয়, সিয়াটলে পৌঁছেই  পেতে শুরু করি রাজকীয় আতিথ্য।

তাকোমা থেকে সিয়াটল ডাউনটাউনকে বাইপাস করা ফ্রিওয়ে ফোর ও ফাইভ ধরে ড্রাইভ করে পল ১৮ নম্বর এক্সিট নেয়। আগে জানি তার বাসা স্নোহোমিশ কাউন্টির লিনউড নেইবারহুডে। পৌনে একঘণ্টর ড্রাইভে বাসায় পৌঁছে দেখি সিনা-রকি দম্পতি লাগেজ নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ল্যান্ডিংয়ের সময় আকাশ মেঘলা দেখেছি। আসার সময় গাড়ির গ্লাসেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে দেখেছি। লিনউডে সেই গুঁড়ি একটু বড় ও ঘন হয়েছে। ভাবি, প্রশান্ত মহাসাগরসংলগ্ন ওয়াশিংটন স্টেটের সিয়াটল শহরে বৃষ্টিপ্রবণ বলে শুনেছি, আজ সেই বৃষ্টি কি আমাদের স্বাগত জানাতে এলো?

লেখার টেবিল

ভ্রমণক্লান্ত শরীরকে বিশ্রামের সুযোগ দিয়ে বৃষ্টির মধ্যে সিনা ও রকি আর অপেক্ষা করলো না। ডুপ্লেক্স বাড়ির গ্যারেজটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গাড়ি পার্ক করে পল। লাগেজগুলো প্রশস্ত গ্যারেজে ঢুকিয়ে বামপাশে দরজা দিয়ে আমরা তার সঙ্গে বাড়িতে ঢুকি। নিচতলায় কাউকেই দেখতে পাই না। কয়েক মিনিটের মধ্যে দোতলা থেকে ত্রস্তপায়ে হৈ হুল্লোড় করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে গৃহকর্ত্রী জেরিন। জলিকে জরিয়ে ধরে। পল, তুসু আর আমি থ’ হয়ে যাই। যেন এ আবেগ জন্মজন্মান্তেরের সম্পর্কের।

ভ্রমণক্লান্ত শরীর, বাইরের বৃষ্টি আর রাতের আঁধারের কারণে মার্কিন মুলুকের এই অচেনা শহরে আমাদের নয়া অতিথিশালাটি পুরো দেখতে পারি না। ভ্রমণঘোরের মধ্যেই টেবিলে পরিবেশিত পাঁচপদের তরকারি দিয়ে রাতের খাবার খাই। গৃহকর্ত্রী জেরিন জলি আমার শয়ন কক্ষটি দেখিয়ে দেয়। দোতলার শয়ন কক্ষ আর বাথরুম দেখে আমাদের আশ্চর্য হওয়ার পালা। পেশাগত জীবনে পাঁচতারকা মানের হোটেল স্যুটের অতিথি হয়েছি অগুণতিবার। কিন্তু এই প্রশস্ত নতুন খাট, মোটা গদির পরিপাটি শুভ্র বিছানা, দুই আসনের সোফা, জানালা লাগোয়া রিডিং টেবিল, সবুজরঙা ভেলভেটে মোড়ানো চেয়ার, রিডিং লাইট, দেয়ালঘড়ি, এ্যালার্ম ক্লক, সবুজ ইনডোর প্ল্যান্ট, বড়সড় ক্লজেটে গোটা বিশেক হ্যাঙ্গার, লাইফসাইজ মিরর, খাটের দুই পাশে সাইডটেবিলে নতুন থার্মোফ্লাস্কে খাবার পানি, সবার জন্য আলাদা আলাদা ছোট ও বড় তোয়ালে, বাথরুমে সোপ, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, স্ক্রাব, ফেসওয়াস, লোশন, মাউথওয়াশ, সেন্ট, বডিস্প্রে, শেভিং ক্রিম, হ্যান্ডওয়াশের বিপুল সম্ভার কোন পাঁচতারকায় মেলে? উপর্যুপরি এখানে নেই ঘড়ি ধরে চেক ইন চেক আউটের তাড়া।

পল-জেরিনের অতিথিসেবার বিপুল আয়োজন দেখে আমাদের চোখে পানি চলে আসে। মেজবান দম্পতির বাড়ি ও মেহমানদারির আরও এন্তেজাম আগামীকালের জন্য তুলে রাখি। পঞ্চাশঘণ্টার পরিভ্রমণক্লান্ত শরীর এলিয়ে দেই কোমল বিছানায়।

   

ইতিহাস-ঐতিহ্যের শালবন বিহারে একদিন



মুহাম্মাদ মুনতাজ আলী, চবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
শালবন বিহারে চবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা

শালবন বিহারে চবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা

  • Font increase
  • Font Decrease

'বার্ষিক শিক্ষাসফর' শব্দটার সাথে ছোট থেকেই পরিচিত। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বয়স, পরিবর্তন হয়েছে শিক্ষার স্তর। তবুও পরিবর্তন হয়নি অতীতে শব্দটার সাথে কাটানো কৌতূহল। ক্লাস প্রতিনিধির কাছে বার্ষিক সফরের কথাটা শুনতেই মনটা নেচে উঠলো এক পরিচিত আনন্দে। তাই দেরি না করেই চাঁদা জমা দিয়ে নিশ্চিত করলাম নিজের আসনটি।

প্রতিক্ষিত দিনটি চলে এলো। পূবের সূর্যিমামার স্বরুপ ধারণের আগেই শেষ হলো প্রস্তুতি। ভোর ছয়টায় চলে এলাম স্পটে। সাথে বন্ধু, বড় ভাই ও বোন মিলে সর্বমোট ২২০ জন। এবং আরও আছেন ডিপার্টমেন্টের বশির আহমেদ স্যার ও সৈয়দ তৌহিদুল ইসলাম স্যার।

পাহাড় ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে এক সারিতে চারটি গাড়ি ছুটে চলছে বিরামহীনভাবে। গন্তব্য তার ইতিহাস ঐতিহ্যে মোড়ানো কুমিল্লার শালবহন বিহার ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)।

বাস চালু হওয়ার সাথে সাথে বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিভিন্ন গান ও বন্ধুদের নাচে সৃষ্টি হলো এক আনন্দ মুখর পরিবেশ। আমাদের মাঝে প্রশিক্ষিত কোন ড্যান্সার না থাকলেও আজ সকলে নেচে গেয়ে উপভোগ করছেন দিনটি। কেউবা হাতের ফোনটি দিয়ে মুহূর্তটুকু স্মরণীয় করে রাখতে তুলে রাখছেন কিছু ছবি। এভাবে নেচে গেয়ে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে যেন খুব দ্রুতই বার্ডের গেটে পৌঁছালাম আমরা। 

বাস  থেকে নেমে বার্ডের মুখে একটা গ্রুপ ফটো তুললাম। এ সময় শোভা পাচ্ছিল সকলের গায়ে একই রঙের টি-শার্ট। যেন মনে হচ্ছে কোন মায়ের জমজ সন্তান!

সবুজ গাছ গাছালি ও নিপুণ স্থাপত্য শৈলির সংমিশ্রণে শান্ত অথচ অসম্ভব সুন্দর বার্ড এলাকাটি। ধুলো-ধুঁয়োর শহর ছেড়ে স্বস্তির বাতাস নিতে আসা যে কারোর জায়গাটি ভালো লাগবে। আমরা কয়েজন বন্ধু মিলে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ফিরে দেখলাম আর ছবি তুললাম। এর মধ্যেই দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেলো তাই দেরি না করে চললাম বার্ডের ক্যাফেটেরিয়াতে। এখানে পূর্ব অর্ডার অনুযায়ী খাবার পরিবেশন করা হলো। খাবারের পর্বটি শেষ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাসে উঠে বসলাম। গন্তব্য এবার শালবন বিহার!

শালবনে পৌঁছে প্রথমেই ঢুকলাম ময়নামতি জাদুঘর। এর পর গেলাম শালবন বিহারে। দেখতে পেলাম শত শত প্রাচীন স্থাপনা। যেগুলো এতদিন বইয়ের পাতায় কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনে দেখেছি তা আজ চোখের  সামনে দেখতে পেয়ে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো।

শালবন বিহারটি বাংলার প্রাচীন ইতিহাসের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জানা যায়, প্রায় ১২শ বছর আগে বৌদ্ধরা এটি নির্মাণ করে। সারি সারি কক্ষ ও শক্তিশালী পাচীর গুলো দেখে সে সময়ের স্থাপত্যশৈলী কতটা উন্নত ছিল তা সহজেই অনুমেয়। আর আমরাও ইতিহাসের শিক্ষার্থী হওয়ায় খুটে খুটে সব দেখছিলাম, যেন ফিরে গেছি নয়শত শতাব্দির বৌদ্ধ রাজাদের আমলে।

এভাবে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ মাহবুব ভাইয়ার বাশিঁর সুর কানে আসল তার মানে সবাইকে একত্রিত হতে হবে। এবার পালা ফটোসেশন ও র‍্যাফেল ড্র। আনন্দপূর্ণ ভাবে পর্বটা শেষ হতে না হতেই দেখি সূর্যিমামা জানান দিচ্ছে সে আর বেশিক্ষণ ধরণীতে থাকবে না। তাই আমাদেরও আর বেশিক্ষণ থাকা হলো না। রওনা দিলাম বাসের দিকে। নিজর সিটট খুঁজে ক্লান্ত শরীরটাকে এলিয়ে দিলাম সিটের মধ্যে। চালু হলো বাস! এভাবে ইতিহাস ঐতিহ্যে ঢাকা কুমিল্লা শালবন বিহারকে পেছনে ফেলে  ক্ষণিকের সফর শেষে এগিয়ে চললাম নীড়ের উদ্দেশ্যে।

;

হিমালয়ের দুর্গম ফার্চামো চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
হিমালয়ের দুর্গম ফার্চামো চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা

হিমালয়ের দুর্গম ফার্চামো চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা

  • Font increase
  • Font Decrease

হিমালয়ের দুর্গম ফার্চামো চূড়ায় বাংলাদেশের ক্লাব বিএমটিসির দুই অভিযাত্রী এম এ মুহিত এবং কাজী বিপ্লব। হিমালয়ের ২০ হাজার ৩০০ ফুট উঁচু দুর্গম চূড়া ‘ফার্চামো’তে সফলভাবে আরোহণ করেছেন তারা। 

৩ নভেম্বর সকাল ৯টায় ‘ফার্চামো’র পর্বত চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন। দলের আরেক সদস্য নুরুননাহার নিম্নি অসুস্থতাজনিত কারণে সামিট সম্পন্ন করতে পারেনি। 

অভিযানের দলনেতা এম এ মুহিত জানান, ২৬ অক্টোবর আমরা রামেছাপ এয়ারপোর্ট থেকে লুকলার উদ্দেশ্যে বিমানে চড়ি। ওইদিনই আমরা পৌঁছাই এভারেস্ট অঞ্চলের প্রবেশ দ্বার খ্যাত হিলারি তেনজিং এয়ারপোর্টে। যেটি একই সাথে বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক বিমানরবন্দর হিসেবেও পরিচিত। ওইদিন আমরা ট্রেকিং শুরু করি, বিকেলে পৌঁছাই মঞ্জো। ২৭ তারিখ আমরা যাই নামচে বাজার। ২৮ তারিখে বিশ্রাম নিয়ে পরদিন পৌঁছাই থামে। পরের দিন বিশ্রাম নিয়ে ৩১ তারিখে পৌঁছাই থ্যাংবোতে। পরদিন আমরা ৪ হাজার ৮০০ মিটার উচুঁ বেসক্যাম্প পৌঁছাই। ২ তারিখে ৫ হাজার ৭০০ মিটার উচু তাশি ফুক হাই ক্যাম্পে যাই। 

হাইক্যাম্প থেকে ১০০ মিটার নিচে দলের এক সদস্য নিম্নির শরীর খারাপ লাগা শুরু হয়। প্রধান শেরপা দাওয়া তেনজিং তাকে নিয়ে ফিরে যায়। চিরিং ওয়াংচু শেরপা, ফুর কাঞ্চা শেরপা আমাদের সাথে হাই ক্যাম্পে যান। হাইক্যাম্প পৌঁছাতে দুপুর হয়ে যায়। দিবাগত রাতে অর্থাৎ তিন নভেম্বর রাত সাড়ে তিনটায় হেডটর্চের আলোয় আমরা চূড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। আধা ঘণ্টা পরে ক্র্যাম্পন পয়েন্টে পৌঁছি। ওই সময় তেমন বাতাস ছিল না। মেইন রোপে দেড় ঘণ্টা থাকি। 

তাশি লাপচা পাসকে ডানে আমরা এগিয়ে যেতে থাকি। দীগন্তে ভোরের লাল আভা দেখার সময় ফ্রিক্সড রোপে আমরা জুমার লাগিয়ে আরোহণ শুরু করি। তিনটি কঠিন জায়গায় ১০০ মিটার দড়ি লাগানো ছিল। সে জায়গাগুলো ৮০ থেকে ৯০ ডিগ্রি খাড়া ছিল। ছয়টার সময় জুমার শুরু করি যা শেষ হয় সকাল নয়টার দিকে সামিটে পৌঁছে। আমরা উড়িয়ে দেই বাংলাদেশের লাল সবুজ চূড়ায়। 

পা রাখার আগেই প্রচণ্ড বাতাস শুরু হয়, চূড়ায় ১৫ মিনিটের মতো ছিলাম। মনে হচ্ছিল সব জমে যাবে। হাইক্যাম্পে আসতে আসতে পৌনে এগারোটা বেজে যায়। ওইদনই বেসক্যাম্প হয়ে বিকেল পাঁচটার থ্যাংবো চলে আসি।

এর আগে বাংলাদেশের পর্বতারোহী দল গত ২৪ অক্টোবর নেপালের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করে। ২০ হাজার ৩০০ ফুট উঁচু ‘ফার্চামো’ পর্বতশিখর এভারেস্ট-এর দক্ষিণ-পশ্চিমে নেপালের রোলওয়ালিং হিমালয় অঞ্চলে অবস্থিত।

এ অভিযানের দলনেতা এম এ মুহিত দুই বার এভারেস্ট আরোহণ করেছেন। ‘ফার্চামো’ পর্বতশিখর অভিযানটি পরিচালনা করছে বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব এবং স্পনসর করছে ইস্পাহানী টি লিমিটেড। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেড ২০ শতাংশ ছাড়ে অভিযাত্রীদের ঢাকা-কাঠমুন্ডু-ঢাকা বিমান টিকেট দেয়।

;

থাইল্যান্ডের ক্রাবিতে এখন সবচেয়ে বেশি পর্যটক



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাউথ ইস্ট এশিয়া, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বছর না পেরোতেই থাইল্যান্ডের ক্রাবির পর্যটন এলাকা হাত নাপ্পারাথ থারা- মু কো ফি ফি ন্যাশনাল পার্ক থেকে আয় হয়েছে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা (২৭০ মিলিয়ন বাথ)৷ দেশটির যে কোন ন্যাশনাল পার্কের তুলনায় এই আয় বেশি।

ক্রাবি ন্যাশনাল পার্কের প্রধান রাচানক পাইনই বলেন, আগামী নভেম্বর থেকে পর্যটন মৌসুম শুরু হচ্ছে। দেশের মেরিন ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে সর্বোচ্চ আয় করবে ক্রাবি। পর্যটকদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্যের মধ্যেও এখন ক্রাবি, বলে জানান তিনি।

গত বছরের অক্টোবর থেকে এই অক্টোবর পর্যন্ত শুধু টিকিট বিক্রিতেই আয় হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। গত মাসে পার্কে প্রবেশের ই-টিকিটের তথ্য থেকে জানা যায়, টিকিট বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ৷


পার্কে এরই মধ্যে পর্যটন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। মায়া বে'তে শৌচাগার বাড়ানো হয়েছে এবং সংস্কার করা হয়েছে। সমুদ্রপাড়ে মুরিং বো বসানো হয়েছে পর্যটন জাহাজ ভেড়ার জন্য এবং সমুদ্র সৈকত এলাকাকে আরো শৃঙ্খল করা হয়েছে।

গত বছরের পর্যটন মৌসুমের চেয়ে আগামী মাস থেকে শুরু হওয়া পর্যটন মৌসুমে ক্রাবিতে আরো অনেক বেশি পর্যটক ভ্রমণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাচানক পাইনই।

আন্দানমান সাগর জুড়ে থাকা মেরিন ন্যাশনাল পার্কগুলোতে এই মৌসুমে পর্যটক আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছে থাইল্যান্ড পর্যটন কর্তৃপক্ষ।


সম্প্রতি দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ মন্ত্রী ফাতচ্রাবাত ওয়াংসুয়ান বলেছেন, ওয়ার্ল্ড বীচ গাইড অনুসারে পৃথিবীর সেরা ১০০ টি সমুদ্র সৈকতের মধ্যে ৫ টি রয়েছে থাইল্যান্ডের।

;

পর্যটনের অন্যতম স্থান হতে যাচ্ছে কাতার!



পিকলু চক্রবর্তী, কাতার করেসপেন্ডন্ট, বার্তা২৪.কম
পর্যটনদের জন্য অন্যতম স্থান হতে যাচ্ছে কাতার!

পর্যটনদের জন্য অন্যতম স্থান হতে যাচ্ছে কাতার!

  • Font increase
  • Font Decrease

কাতারে ক্রমশই বড় হচ্ছে পর্যটন খাত। বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা।দেশটিতে পর্যটক বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন। পর্যটন প্রেমীদের কথা মাথায় রেখে দোহা একের পর এক পর্যটনখাতকে উন্নত করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মরুর বুকে সবুজ পরিবেশ প্রচারের লক্ষ্যে ২ অক্টোবর থেকে কাতারে শুরু হয়েছে ছয়মাস ব্যাপী দোহা এক্সপো-২০২৩।

এক্সপো ২০২৩ দোহাতে সর্বাধিক পরিদর্শন এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ল্যান্ডমার্ক। এর ক্রিয়েটিভ বৈশিষ্ট্যগুলোর সংমিশ্রণ দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। আল বিদ্দা পার্কেটি প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এখানকার বিভিন্ন আয়োজন মুগ্ধ হওয়ার অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।

এদিকে, আল মুরজান গার্ডেনের শৈপ্লিক কারুকাজ দেখে দর্শনার্থীরা খুবই আনন্দিত। এখানে বিশাল হলুদ টেডি বিয়ার, হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিখ্যাত ল্যাম্প বিয়ার স্থাপন করা হয়েছে।


কাতার এয়ারওয়েজ গার্ডেনের মনোরম দৃশ্য এক্সপোতে আসা পর্যটকদের সুন্দর ক্যানভাসের অভিজ্ঞতা দেবে। এর প্রাণবন্ত সৌন্দর্যে মুগ্ধ হাজারো দর্শনার্থী।

এক্সপোতে কুরআনিক বোটানিক গার্ডেনে, একটি শিক্ষামূলক পরিবেশের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এখানে বন্যপ্রাণীর সাথে বাগানের দর্শকরা বিভিন্ন বিনোদনমূল ইভেন্টে অংশ নিতে পারে। কুরআনিক বোটানিক গার্ডেনের বিশেষ ফোকাস হচ্ছে- মরুকরণের বিরুদ্ধে লড়াই এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা। বাগানের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল হার্বেরিয়াম, যেখানে উদ্ভিদের নমুনাগুলি সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা এই প্রজাতির স্থায়ী রেকর্ড দেখানো হবে।

এই সংরক্ষণ বিভাগটি কাতারের স্থানীয় এবং বন্য উদ্ভিদ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতিকে আন্ডারলাইন করে। এক্সপো ২০২৩ দোহা বোর্ড গেমস, আর্ট ওয়ার্কশপ এবং মঞ্চে লাইভ পারফরম্যান্সসহ অন্যান্য বিনোদনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গন, কংগ্রেস কেন্দ্র, প্রদর্শনী কেন্দ্র, এবং পিকনিকসহ বিভিন্ন স্থান পর্যটকদের মুগ্ধ করবে।


উল্লেখ্য, চলতি বছরের আগস্টে পর্যটন খাতে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

আগস্টে ২ লাখ ৬৪ হাজার পর্যটক কাতার ভ্রমণ করেছে। অবশ্য পর্যটকের মোট সংখ্যা আগের মাস জুলাইয়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ কম। জুলাইয়ে গত বছরের তুলনায় পর্যটক বেড়েছিল ৯১ দশমিক ৪ শতাংশ। মোট পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৮৮ হাজার।

আগস্টের ৪৩ শতাংশ পর্যটকই ছিল উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে আসা। ফিফা বিশ্বকাপের সফল আয়োজনের ফলে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে, যা কাতারকে পর্যটনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্থান দিয়েছে।

কাতার ট্যুরিজমের চেয়ারম্যান এবং কাতার এয়ারওয়েজ গ্রুপের প্রধান নির্বাহী আকবর আল-বাকার বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া ইভেন্টের গতিকে কাজে লাগাতে কাতার পর্যটনের নতুন পরিকল্পনা ঠিক করেছে। যার ভালো ফল দেখা যাচ্ছে। অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে পর্যটন খাতকে বিশেষভাবে জোর দিচ্ছে সরকার।

;