যশোরের হামিদপুরে অবস্থিত শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি দেশের ফুটবল প্রতিভা গড়ে তোলার মডেল প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। যশোর জেলার এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু ফুটবল প্রশিক্ষণের জন্য একটি কেন্দ্র নয়, বরং নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
যশোরের প্রখ্যাত ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক শামস-উল-হুদার স্মৃতিকে স্মরণ করে ২০১১ সালের ১৪ মে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যাল ও জাহেদী ফাউন্ডেশনের কর্ণধার মোঃ নাসের শাহরিয়ার জাহেদী একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে, একাডেমি থেকে ১৬ জন খেলোয়াড় জাতীয় দলসহ বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে অংশগ্রহণ করেছেন। ইংল্যান্ড, কাতার, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল ও মায়ানমারের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।
শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফুটবল প্রতিভা বিকাশের জন্য সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদান করা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক তরুণ আছেন যাদের ফুটবলের প্রতি প্রবল আগ্রহ এবং প্রতিভা থাকলেও, তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ সীমিত। একাডেমী সেই সুযোগ তৈরি করতে চায়, যেখানে এসব তরুণ প্রতিভা সঠিক প্রশিক্ষণ এবং নির্দেশনার মাধ্যমে দেশের ফুটবলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। একাডেমির মূল লক্ষ্য তরুণদের দক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা।
৬০ বিঘা জমির উপর অবস্থিত শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমিটিতে আছে দুইটি আন্তর্জাতিক মানের সবুজ মাঠ। নির্মাণাধীন আছে আরও দুটি মাঠ, সাথে বাড়ানো হবে আরও ২০ বিঘা জমি। সপ্তাহে ছয় দিন এখানে শিক্ষার্থীরা ফুটবলের আধুনিক প্রশিক্ষণ নিতে পারে। একাডেমীতে তিন জন প্রশিক্ষিত কোচ সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেন। তাদের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে শিক্ষার্থীরা হয়ে উঠছেন ভবিষ্যতের ফুটবলার । বর্তমানে ৪০ জন শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা থাকলেও একাডেমীটি আরও ২৪০ জন শিক্ষার্থীর আবাসনের জন্য ৬ তলা বিশিষ্ট “ভাষা সৈনিক মুসা মিয়া ভবন” নির্মাণের কাজ শুরু করেছে।
আবাসন ব্যবস্থা, জিমনেশিয়াম, মসজিদ, ক্যান্টিন এবং মৌলিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে তৈরি করা এ ভবনটি উদ্বোধন হবে খুব শীঘ্রই । আবাসিক শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে খাবার, পোশাক এবং অন্যান্য সুবিধা পায়, যা দেশের অন্য কোনো ফুটবল একাডেমীতে বিরল। প্রতি বছর শিক্ষার্থীরা দুটি জার্সি, প্যান্ট, ট্র্যাকস্যুট এবং স্কুল/কলেজ ইউনিফর্ম পেয়ে থাকে। আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহণ ভাতা ও স্কুল ফি একাডেমী বহন করে। একাডেমির খেলোয়াড়দের খেলার পাশাপাশি শিক্ষার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আবাসিক শিক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী স্কুল ও কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে তারা ফুটবলের পাশাপাশি শিক্ষার ক্ষেত্রেও এগিয়ে যেতে পারে।
একাডেমিটি প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১০০০-১২০০ জন তরুণ ফুটবল খেলোয়াড় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করে। সাত দিনের কঠোর পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের পর চূড়ান্তভাবে ১৫ জনকে একাডেমী তে ভর্তি করা হয়। খেলোয়াড়দের বয়সের ভিত্তিতে তিনটি গ্রুপে ভাগ করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যাতে তারা নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে পারে।
একাডেমি থেকে ইতোমধ্যে ১৬ জন খেলোয়াড় বাংলাদেশ জাতীয় দল এবং বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তারা ইংল্যান্ড, কাতার, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল ও মায়ানমারে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে একাডেমীর ছাত্র মিনহাজুল করিম স্বাধীন নামে আর্জেন্টিনার একটি স্বনামধন্য ক্লাবে খেলার আমন্ত্রণ পান যা এই একাডেমীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মানকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে প্রিমিয়ার লিগে ১৯ জন এবং চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৮ জন খেলোয়াড় এই একাডেমী থেকে উঠে এসেছে।
একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা মোঃ নাসের শাহরিয়ার জাহেদী (মহুল) এবং একাডেমির পরিচালনা পর্ষদের লক্ষ্য ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে কাজ করা এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এর কার্যক্রম বিস্তৃত করা। নতুন মাঠ নির্মাণ, আন্তর্জাতিক কোচিং স্টাফ নিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি এই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য খেলোয়াড়দের প্রস্তুত করা এবং দেশের ফুটবল মানচিত্রে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করা একাডেমীর অন্যতম লক্ষ্য।