দেশের উত্তরাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জীবন জীবিকা অনেকটাই তিস্তা নদীর ওপর নির্ভরশীল। ভারতের সঙ্গে অভিন্ন তিস্তা নদীর পানি বণ্টন বৈষম্য দীর্ঘদিনের। ভারতের বৈষম্যমূলক এমন আচরণে শুষ্ক মৌসুমে পানি শূন্যতায় ভোগে এই অঞ্চলের মানুষ। বর্ষায় অল্প পানিতে বন্যা, নদী ভাঙনে নিঃস্ব। আবার খরায় পানি স্বল্পতায় চাষাবাদ ব্যাহত হয় তিস্তার লাখ লাখ কৃষকের। তিস্তা নদীর এই পরিস্থিতি উত্তরণে দীর্ঘদিন ধরে দাবি উপস্থাপিত হলেও নদী শাসন বা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি কেউ।
দীর্ঘদিনের তিস্তার পানি বণ্টন ও নদীর প্রকল্প বাস্তবায়ন দেশের উত্তরাঞ্চলে জনদাবিতে পরিণত হয়েছে। ‘জাগো বাহে-তিস্তা বাঁচাও’ স্লোগান নিয়ে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে বিএনপির টানা দুই দিনের কর্মসূচিতে দলমত নির্বিশেষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছেন উত্তরের পাঁচ জেলা– লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারীর সাধারণ মানুষ।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) টানা ৪৮ ঘণ্টা জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদীর কাউনিয়া সেতু, মহিপুর সেতু এবং তিস্তা ব্যারাজসহ পাঁচ জেলার ১১ পয়েন্টে তাঁবু খাটিয়ে একই সময়ে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবন কাহিনী অর্থাৎ তাদের আনন্দ-বেদনার বিষয়গুলো নাটক ও সংগীতের মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী তুলে ধরা হচ্ছে।
তিস্তা চুক্তিসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান ও দেশের স্বার্থ রক্ষায় ভারতের ওপর চাপ বাড়াতে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
রংপুরের কাউনিয়ার তিস্তাপারের বাসিন্দা আশিকুর রহমান বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা একটি প্রকল্প ছিল। বিগত সরকার গড়িমসি করে তা বাস্তবায়ন করেনি। বর্ষার সময় ভারত পানি দিয়ে আমাদের ডুবিয়ে দেয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে চাষাবাদ করতে পারি না। আমরা তিস্তার পানির সমান অধিকার চাই।
কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা বলেন, রংপুরের গংগাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ৩টি পয়েন্টে লক্ষাধিক মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নেবে। তিস্তার কারণে এই তিনটি উপজেলার হাজার হাজার মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। খরার সময়ও মেলে না পানি। তাই এই অঞ্চলকে বাঁচাতে হলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
তিস্তাপাড়ের জেলে এনামুল হক জানান, বাপ দাদারা তিস্তা নদীতে সারা বছর মাছ ধরত। তিস্তা নদীর সুটকি সারা দেশে চলে যেত। এখন বর্ষার ২/৩ মাস মাছ ধরতে পারলেও বাকী সময় পরিবারের খাবার যোগানো কষ্ট হয়ে পড়ে। পানি না থাকায় অনেক জেলে তাদের পেশার পরিবর্তন করেছেন। আগের মত নেই তিস্তা নদীতে মাঝি মাল্লাদের ডাক হাক। তিনিও দাবি করেন দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু বলেন, তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠি বা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। এটি রংপুর বিভাগবাসীর আন্দোলন। এই আন্দোলন জনদাবীতে পরিণত হওয়ায় এতে তিস্তাপাড়ের মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ রয়েছে। আশা করছি দু’দিন ব্যাপক লোকসমাগম ঘটবে।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ১৮ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় ৫ জেলার ১১টি পয়েন্টে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৭ তারিখ তিস্তাপাড়ের সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সংহতি জানাতে তিস্তাপাড়ে আসবেন।