বসন্ত উৎসব এবং ভালোবাসা দিবস, এই বিশেষ দুই দিন চট্টগ্রামের ফুল ব্যবসায়ীদের জন্য এক উৎসব। ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে ওঠে, আর গোলাপের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়ে উঠে দ্বিগুণ। তবে এবারের চিত্র ছিল কিছুটা ভিন্ন। ফুলের দোকানগুলো গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা ও অন্যান্য ফুলে সাজানো। ব্যবসায়ীরা ফুলের বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। ভালোবাসা দিবসের আগের দিনে গোলাপের জন্য অপেক্ষা করলেও, কেনাবেচায় ভাটা পড়েছে। আগের বছরগুলোতে যেখানে দেড়-দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল, সেখানে এবার বিক্রির পরিমাণ হয়তো ৫০ লাখের কাছাকাছি এমনটাই বলছেন ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে চেরাগী পাহাড় ও মোমিন রোডের ফুলের দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা এবং চায়না লিলিসহ নানা ধরনের ফুল সাজানো রয়েছে। দোকানগুলো সাজানো, ভাঁজ করা এবং কাচছাট করা ফুলে ভরা। কিন্তু ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল কম।
ফুল ব্যবসায়ীদের কাছে এবারের বাজার কিছুটা হতাশাজনক। চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতি বছর আমরা বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতি নিই। তবে এবার শবে বরাত, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের লগ্ন এবং শুক্রবার একসঙ্গে হওয়ায় বিক্রি আশানুরূপ হয়নি। চট্টগ্রামের চেরাগি, আগ্রাবাদসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক ফুলের দোকান আছে, এসব দোকানে সাধারণত এই দুই-তিন দিনে দেড়-দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়, কিন্তু এবার ৫০ লাখ টাকাও হবে কি না, সন্দেহ আছে।
অপরাজিতা পুষ্প বিতানের তৌসিফ উদ্দিনও একই ধরনের হতাশা ব্যক্ত করে বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল, তবে এবার বেচাকেনা একদম কম। বসন্তের আগের একদিন, মূল দিন ও পরের দিন এই তিনদিন ব্যবসা সবচেয়ে ভালো হয়। কিন্তু এবার শবে বরাত ও লগ্নের কারণে মানুষ ফুল কেনা কমিয়েছে।
এদিকে ফুলচাষি আবদুল কাদের জানান, প্রতি বছর এই সময়ের জন্য আমরা অপেক্ষা করি। এবার প্রচুর গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিওলাস ও রজনীগন্ধা উৎপাদন করেছি, কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীরা ফুল কিনছেন কম, দামও কম দিচ্ছেন। ফলে লোকসানের শঙ্কায় আছি।
তবে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা উচ্ছ্বাসও দেখা গেছে। ব্যাংক কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি আমার মায়ের জন্য সাদা চন্দ্রমল্লিকা কিনতে এসেছি। আগে দাম বেশি থাকলেও এবার তুলনামূলক কম মনে হলো।
ফুল কিনতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতি বছর এই দিনটায় বাজারে এত ভিড় থাকে যে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যায় না। এবার বাজার ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তবে দাম কিছুটা কম মনে হচ্ছে।
শিক্ষিকা তানিয়া রহমান এসেছেন মেয়ের জন্য কিছু ফুল কিনতে। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার মেয়ে গাঁদা ফুল পছন্দ করে, তাই কিছু কিনলাম। আগের মতো বাজারে কোলাহল নেই।
চেরাগী পাহাড় ও মোমিন রোডের পাইকারি ফুলের দোকানগুলোতে গোলাপের সব সময় বেশি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ২০-৪০ টাকায়, বিদেশি লাল, সাদা ও গোলাপি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ১০০-১৫০ টাকায়। রজনীগন্ধার স্টিক ১০-২৫, ১০ পিস সাদা চন্দ্রমল্লিকা ৫০-১০০, লাল-নীলসহ ভিন্ন রঙের চন্দ্রমল্লিকা ৪০-৫০, গ্লাডিওলাস ৩০-৫০, এক হাজার গাঁদা ৪০০-৫০০ টাকা ও জারবেরা ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ক্রাউনের পিস ৩০০-৪০০ টাকা এবং চায়না লিলি ফুল ৪৫০-৬০০ টাকা।
এদিকে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার জন্যও প্রচুর ফুল কেনাবেচা হয়। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে বিক্রি কম হলেও, তার কিছুটা ক্ষতি একুশে ফেব্রুয়ারিতে পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
তবে সামগ্রিকভাবে এবার বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে চট্টগ্রামের ফুল ব্যবসা আশানুরূপ হয়নি বলে মনে করছেন বিক্রেতারা।
২০২০ সালে বাংলা একাডেমির সংশোধিত বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ১৩ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ফাল্গুনের শুরু। ওই দিনে উদযাপিত হয় বসন্ত উৎসব। একই দিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ইতিহাসে যা সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে নামে পরিচিত। দিবসগুলো ঘিরে বেশি দামে ফুল বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।