রেকর্ড ভারী বৃষ্টিপাতে অচল হয়ে পড়েছে কক্সবাজার। অবিরাম বর্ষণের কারণে হাজারো পর্যটক তাদের হোটেল কক্ষে বন্দী এবং কক্সবাজারের বাসিন্দারা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শহরের অধিকাংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে এবং নিচু এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানান, গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৩টা থেকে আজ (শুক্রবার) বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলমান মৌসুমে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড করা সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
কলাতলী রোড, সুগন্ধা রোড, সিগাল রোড জলাবদ্ধতায় ঝিনুক মার্কেটের শতাধিক দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে।
অনেক পর্যটককে হাঁটু কোমর গভীর পানিতে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। তবে তাদের বেশিরভাগই তাদের ঘরে অলস সময় কাটাচ্ছেন।
টানা বর্ষণে কক্সবাজার শহরের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। ব্যস্ততম পাঁচ কিলোমিটার প্রধান সড়ক ও সৈকত সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বাজারঘাটা, বড়বাজার, অ্যান্ডারসন রোড, টেকপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধ মন্দির রোড, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়া এলাকার শতাধিক দোকান-পাট, অফিস-আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার ঘরবাড়িও পানিতে তলিয়ে গেছে।
পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, বন্দরপাড়া, উত্তর নুনিয়াছড়া এলাকার শতাধিক বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। কলাতলী রোড, সুগন্ধা রোড, সিগাল রোড জলাবদ্ধতায় ঝিনুক মার্কেটের শতাধিক দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক পর্যটককে হাঁটু কোমর গভীর পানিতে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। তবে তাদের বেশিরভাগই তাদের ঘরে অলস সময় কাটাচ্ছেন।
কক্সবাজারের স্থানীয় ৭০ বছরের বৃদ্ধ রোশন আলী জানান, জন্মের পর থেকে এরকম বৃষ্টি দেখিনি। ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকার বাড্ডা এলাকার শফিক আহমেদ জানান, তারা পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে এসেছেন এবং টেকনাফ, রামুসহ কক্সবাজারের অনেক এলাকা ভ্রমণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু অবিরাম বৃষ্টিতে তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে বলে জানান তিনি।
১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আখতার কামাল জানান, টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এ ওয়ার্ডের অন্তত ১০ হাজার ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাবে। মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার হাজার হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু, যারা ১ নং ওয়ার্ডে বাস করে তারা এই এলাকায় অনেক কষ্টে আছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, গত ৫০ বছরে শহরে এমন বন্যা দেখেননি। অপরিকল্পিতভাবে সড়ক উন্নয়ন, ড্রেনগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা এবং পাহাড় কাটার কারণে এ ধরনের জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এগুলো থেকে পরিত্রাণ না পেলে পর্যটকরা কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।
এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধসে কক্সবাজারে পৃথক পাহাড় পাহাড় ধসের ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ট্রলার ডুবিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নে টানা বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই মেয়ে ও মায়ের মৃত্যু হয়েছে৷ এছাড়া উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসের ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।