ঢামেকে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ, চিকিৎসায় সন্তুষ্ট রোগীরা

  • মেহেদী হাছান মাহীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪. কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

দেশজুড়ে দিন দিন বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুহারও। চলতি বছরে বিগত মাসগুলোর তুলনায় সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। তবে রোগীর চাপ বাড়লেও চিকিৎসায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন চিকিৎসা নেওয়া রোগী ও তাদের স্বজনরা।

ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, বিগত মাসগুলোতে খুব একটা ডেঙ্গু রোগীর চাপ না থাকলেও চলতি মাসের শুরু থেকেই বেড়েছে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। বর্তমানে এই হাসপাতালটিতে ৫৫ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা মেডিকেলের নতুন ভবনের চারতলায় ৪০২ নম্বর ওয়ার্ডে পুরুষ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপরদিকে ভবনটির আটতলায় ৮০১ এবং ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডে মেডিসিন ও ডেঙ্গু রোগীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের বাহিরে এবং ভেতরে রোগী ভর্তি ছিল। ওয়ার্ডের প্রতিটি জায়গা ছিল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।

ডাক্তার এবং নার্সরাও রোগীদেরকে যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করছেন। রোগীদের যেকোনো সমস্যায় নার্সরা গিয়ে তাদেরকে সাহায্য করছেন। যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সের রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। তবে দশ বছরের নিচে কোনো রোগীকে দেখা যায়নি।

নার্সদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ২০ থেকে ৪০ বছরের বয়সী রোগীদের সংখ্যা বেশি। দশ বছরের রোগীর সংখ্যা কম। তবে চলতি মাস থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান তারা।

নার্সরা আরও বলেন, ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে ঢাকার লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, সাভারের মানুষের সংখ্যা বেশি। এছাড়া নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

৪০২ নম্বর ওয়ার্ডের একজন নার্স বলেন, আমরা রোগীদেরকে সবসময় সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত আছি এবং সাহায্য করছি। তাদের ওষুধ খাওয়ার সময় হলে ইনফর্ম করছি। যথাসময়ে ইনজেকশন দিচ্ছি।

ওয়ার্ডগুলোতে কতজন ডেঙ্গু রোগী রয়েছে জানতে চাইলে তারা জানান, ৪০২ নম্বর ওয়ার্ডে পুরুষ রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৮ জন। এদের মধ্যে ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন ৮ জন এবং নিজ ইচ্ছায় চলে গেছেন ১ জন। আবার নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৫ জন। তাই এখন বর্তমানে রোগীর সংখ্যা রয়েছে মোট ৩৪ জন। অপরদিকে গতকাল রোগীর সংখ্যা ছিল মোট ৩১ জন। এদের মধ্যে ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন ৬ জন। নিজ ইচ্ছায় চলে গেছেন ২ জন। আবার নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ১৫ জন। সেজন্য রোগীর সংখ্যা ছিল মোট ৩৮ জন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৮০১ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমানে ১২ জন এবং ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডে ৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রাজধানীর হাজারীবাগ কোম্পানীঘাটের বাসিন্দা মো. আনিছ। পেশায় তিনি একজন রিকশাচালক। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত পাঁচদিন ধরে হাসপাতালে আছেন তিনি। তার এলাকায় মশার উপদ্রব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এলাকায় মশার উপদ্রব তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু কিভাবে যে ডেঙ্গু হলো জানি না।

ঢাকা মেডিকেলে এসে কেমন চিকিৎসা পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানকার নার্স এবং ডাক্তাররা আমাদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করেন। মাঝেমধ্যে কখন কোন ওষুধ খাবো এবং ওষুধের নাম ভুলে গেলে তাদের কাছে গেলে তারা আমাদেরকে বিনয়ের সাথে বুঝিয়ে দেন। এখানকার পরিবেশও অনেক ভালো। সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।

মো. আনিছ মিয়ার মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল থেকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে এসেছেন রাজিব। তিনিও আটদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন এখানে। এখানকার চিকিৎসার প্রশংসা করেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমার শরীরের কন্ডিশন অনুযায়ী যে চিকিৎসা নেওয়া দরকার সে চিকিৎসা আমি পাচ্ছি।

মো. আনিছ এবং রাজিবের মতো আরও অনেকের সাথে কথা বললে তারা ডেঙ্গু চিকিৎসার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

৪০২ নম্বর ওয়ার্ডের ডিউটিরত ডাক্তার উরমি রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। ভালো ট্রিটমেন্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি।

উল্লেখ্য, বুধবার রাতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার খোঁজ নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ। এসময় তিনি ডেঙ্গু রোগসহ অন্যান্য রোগের জন্য সমন্বিত হয়ে কাজ করার কথা বলেছেন। বন্যা ও বৃষ্টির কারণে জমে থাকা পানিতে জন্মানো মশার লার্ভা ধ্বংসের কথাও বলেছেন।