রংপুরে বর্ষা মৌসুমেও কাঙ্খিত বৃষ্টির দেখা মেলেনি। কোন কোন স্থানে নিচে নেমেছে ভূগর্ভের পানি স্তর। সবমিলিয়ে মিলিয়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে খরার ঝুঁকিতে এ অঞ্চল। গত আগস্ট মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় ৯০ মিলিমিটার কম বৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমনচাষে পানি সংকটে কৃষি জমিতে খরা, ও সেচ ব্যবস্থায় বাড়তি টাকা গুনে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে কৃষকদের। পুরো আগস্ট মাস জুড়েই এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্ট মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও দেখা মিলেনি কাঙ্খিত বৃষ্টি। গত মাসে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৩৭৮ মিলিমিটার। তবে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৮৮ মিলিমিটার। যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৯০ মিলিমিটারেরও কম হয়েছে। এছাড়াও চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১০ দিন পার হলেও হঠাৎ দেখা দিয়েছে খনিকের অতিথি বৃষ্টি। যার পরিমাণ ৬ দিনে ৮২ মিলিমিটার। চাহিদা অনুযায়ী বৃষ্টিপাতের অপর্যাপ্ততা প্রভাব ফেলেছে জনজীবনে।
রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে চোখে পড়েছে, চাহিদামত বৃষ্টির অভাবে মাহিগঞ্জ, বোতলাপাড়া, তকেয়ারপার, বুড়িরহাটের কৃষিজমিগুলো পানির অভাবে চৌচির অবস্থা। নিম্ন-মধ্যবিত্ত কৃষক অর্থের অভাবে পর্যাপ্ত সেচের উপর নির্ভর হতে না পেরে ফসল নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা। এতে করে ফসল উৎপান নিয়ে পর্যায়ক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পরছে তাদের মাঝে। তবে গতকালকের একঘন্টা স্থায়িত্বের ১৩.২ মিলিমিটার বৃষ্টির ফলে জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরিছে।
নগরীর বোতলাপারার কৃষক জলিল মিয়া বলেন, ''আবাস সুবাদ করি হামরা প্যাটোত ভাত দেই। ওইদোত,ঝড়িত কাজ করি আবাদ করি প্যাটের খোরাক জোগাই আবার ব্যাচা খায়। কিন্তু যখসকার ঝড়ির তখনে না আসিয়া হামার মছিবত। ঝড়ি না হয়া এ্যালা মেলা ট্যাকা নাগে পাইপ দিয়া পানি দিবার জইনতে। আল্লার দানের ঝড়ির পানি আর কিনি দেওয়া পানির মধ্যে ফারাক আছে ভুইয়োত। পানি কিনি দেয়া নাগলে আবাদে বাড়তি ট্যাকা নাগেছে হামার গুলার আবাদ করিয়া লাভ হবার নায়৷ কোনমতে খ্যায়া দিন পার করা কথা হয়া দাঁড়াইবে৷''
দখিগঞ্জের কৃষক, তৈয়ব,হোসেন আলী, কবির মিয়া আলাপকালে বলেন, ''যত দিন যাইতাছে ততই গরম বাড়তাছে, কিন্তু কাজের সময় বৃষ্টি নাই। চাষের জমিত বৃষ্টির পানির কোন জুড়ি নাইগা। মটর দিয়া পানি কি আর পোশায় আমাগো? ধান লাগাইতেই যদি এক সেচে ৩-৫ হাজার খরচ হয় শ্যাষ পর্যন্ত কিছুই থাকবো না। বাপ-দাদার আমল থাইকা আবাদ কইরা অভ্যাস আমাগো, ছাড়তেও পারতাছে না। আবহাওয়া পরিবর্তন হইয়া ওহন আর আগের মত বৃষ্টি, ঠান্ডা কোনটাই নাইগা। কি করমু আমরাতো নিরুপায় করার কিছুই নাই।''
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৬ লাখ ৪০ হাজার ৪০৪ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রংপুর আঞ্চলিক অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, বলেন, আগস্ট মাসে স্বাভাবিকেরের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ৩৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভবনা থাকলেও হয়েছে ২৮৮ মিলিমিটার। ৯০ মিলিমিটার কম বৃষ্টিপাতের ফলে সেচ যন্ত্র দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলণ করা হচ্ছে। যার কারণে পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে কৃষি উৎপাদন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।