অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আগামী ৭ দিনের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এই দাবিসহ তিনি সাত দফা দাবি জানিয়েছেন বর্তমান সরকারের কাছে।
রবিবার (৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মাহমুদুর রহমানের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব দাবি জানান।
মতবিনিময় সভায় মাহমুদুর রহমান বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে আসার পর যে ৫ দিন আমি কারাগারে ছিলাম আমার জন্য যে পরিমাণ ভালোবাসা দেশের মানুষ এবং দেশের বাহিরে থেকে মানুষ দেখিয়েছে তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমি এর যোগ্য নই। আমি বিশিষ্ট ব্যাক্তি নই, রাজনৈতিক ব্যাক্তি নই। এরকম কোনো আকাঙ্ক্ষা ও আমার নাই। আমি এদেশের আম জনতার বর্ষীয়ান একজন প্রতিনিধি মাত্র।
মৌলবাদ শব্দ ব্যবহার না করতে সরকারকে সতর্ক করে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ সরকারের একটি সংস্কার কমিটির দায়িত্বে থাকা ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন দেশে মৌলবাদের উত্থান হচ্ছে। সরকারে থেকে এধরনের ব্যক্তিগত কথা বলা যায়না। তার বক্তব্য সরকারের বক্তব্য হয়ে যায়। তিনি এই মৌলবাদ কোথায় পেলেন। এই মৌলবাদের কার্ড ব্যবহার করে আওয়ামীলীগ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে, এটি ব্যবহার করে আয়নাঘর হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। এখন ইফতেখারুজ্জামান আবার মৌলবাদের কার্ড ব্যবহার করছেন, এর পেছনে তার উদ্দেশ্য কি। আপনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলেন, আমরা আপনার সাথে আছি, মৌলবাদ শব্দ ব্যবহার করবেন না। তাই সরকারকে এ বিষয়ে আমি সতর্ক করে দিতে চাই।
সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যেও তিনি বলেন, অতি ইসলামিকও হবেন না। ফ্যাসিবাদের সময় আপনারা কিছু করতে পারেননি। এখন স্বাধীনতা পেয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। এর কারনে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। যারা বাড়াবাড়ি করছেন আস্তিক আর নাস্তিক, হিন্দু ধর্ম এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন এতে ভারতীয় যে কৌশল তা আপনারা বাস্তবায়ন করবে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে ক্ষমা চাইতে হবে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এতই পাওয়ারফুল যে তাকে এক এগারো সরকারের সময় আইন পরিবর্তন করে সরকারে নেয়ার জন্য। আর তিনি বর্তমানে সরকারের প্রধান ইউনুসের সাথে আমেরিকায় সফর সঙ্গী হিসেবে গিয়েছেন। এই দেবপ্রিয় ২০০৫ সাল থেকে এক এগারো সরকারের সময় দেশে ইন্ডিয়ান করিডোর দেয়ার জন্য প্রতিদিন ক্যাম্পেইন করতেন। বিদেশের টাকা নিয়ে প্রতিদিন ক্যাম্পেইন করেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, যে দলই ক্ষমতায় আসুক, বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত যারাই আসুক দিল্লির পক্ষে যারা কথা বলবে তাদের সাথে আমাদের লড়াই চলবে। আমি যতদিন জীবিত আছি ততদিন আমার লড়াই চলবে। আমি সবাইকে কথা দিচ্ছি জনগনের কাতারে থেকে জনগনের জন্য মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করবো।
মতবিনিময় সভায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মাহমুদুর রহমান ৭ দফা দাবি জানান দাবিগুলো হলো:
১. ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রাজনৈতিক সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করতে হবে।
২. বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এক সপ্তাহের মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩. যমুনা সেতুকে শহীদ আবু সাইদের নামে নামকরণ করতে হবে।
৪. ২০০৯ সালের পর থেকে ভারতের সাথে যতগুলো চুক্তি হয়েছে তার প্রত্যেকটা ধারা উপধারা জনসম্মুখ্যে প্রকাশ করতে হবে।
৫. বঙ্গবন্ধু এভিনিউকে শহীদ আবরারের নামে নামকরণ করতে হবে।
৬. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নমিনেশন অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
৭. আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলে হত্যাকান্ডের শিকার ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম এবং বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টুর হত্যাকাণ্ডের বিষয় তদন্ত করতে হবে।