অস্তিত্ব টিকে থাকার লড়াইয়ে বেতশিল্প

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

গৃহসজ্জায় নান্দনিক ও সৌখিন আসবাপত্রের মধ্যে নজর কাড়ে বেত শিল্প। সূক্ষ্ম হাতের নিপুণ ছোঁয়ার বেত দিয়ে তৈরি করা হয় নকশাখচিত বাহারি আসবাবপত্র। যা দেখে নজর কারে যে কারো। একটা সময় দেশে বেত চাষের আগ্রহ থাকায় আসবাবপত্রের চাহিদা অনুযায়ী বাজারে সাড়া ফেলেছিল এই শিল্প। তবে বর্তমানে এর কাঁচামালের সিংহভাগ বিদেশে আমদানি করায় তিনগুন দামে আসবাবপত্রের চাহিদা কমেছে। কালের পরিক্রমায় প্রযুক্তির এই যুগে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নিত্য নতুন আসবাবপত্র তৈরি করা হয় সল্প সময়ে। তাই মূল্য ও সময়সাপেক্ষের তৈরি বেতের শিল্পের চাহিদা কমেছে অনেকাংশেই। তাই অস্তিত্ব সংকটে দেশীয় বেত শিল্প।

সরেজমিনে গিয়ে রংপুর মহানগরীর বেতশিল্পের প্রায় ৭-৮ টি দোকানের মধ্যে কয়েকটি ঘুরে দেখা গেছে এখানে নেই আগের মত কাজের ধুম। বেশ ধীরে সুস্থে বিশ্রাম নিয়ে হাতের কাজ শেষ করছেন কারিগররা।

বিজ্ঞাপন

নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড়ের বেতশিল্প ব্যবসায়ী পিনাক ভৌমিক বলেন, আগে দেশে চাষ হতো বেত এর কাঁচামাল কমদামে দেশে পাওয়া যেত৷ কিন্তু এখন লোকসানের মুখে পরে চাষীদের আগ্রহ নাই । কাঁচামাল বাহির থেকে আসে দাম বেশি দিয়ে কিনে, কারিগরদের মজুরি দিয়ে পোসায় না। আসবাবপত্র বানাতে খরচ বেশি পরে, এজন্য দামে বিক্রি না করলে লোকসান হয় আমাদের। কিন্তু দাম শুনেই হাত সরিয়ে নেন ক্রেতারা। কম দামে পার্টেক্স, প্লাস্টিকের বিভিন্ন আসবাবপত্র বের হয়া বেতের কদর নাই৷ আমাদেরও ব্যবসা দরে রাখা মুশকিল হয়ে পরছে। আগের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ বিক্রি নাই।

নগরীর ধাপে বেতশিল্পের আসবাবপত্র ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, সময়ের ব্যবধানে আমদানি খরচ আমদানীকৃত বেতের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। আগে যে বেতের কেজিছিল ৩০০-৪০০ টাকা এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। আগে একসময় সিলেটের বালাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও সদর উপজেলায় প্রচুর পরিমাণ বেত চাষ হতো। সেই বেত সারা দেশের চাহিদা পূরণ করত। এখন কোথাও বৃহৎ আকারে বেত চাষ হয় না। লাগামহীন দামে কাঁচামাল কিনে দাম নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে মিলছে না।

গৃহসজ্জায় বেতশিল্পের আসবাবপত্রের মধ্যে সোফা, ডাইনিং,আয়না, ঝুড়ি, টব,পাটি, মোড়া, চেয়ার, আরামকেদারা, দোলনা, বুকসেলফসহ তৈরি করা হয় কারুখচিত বিভিন্ন জিনিস। যা সোনালী বেতে শোভা বৃদ্ধি করে গৃহসজ্জার। এসব আসবাবপত্রের দাম ৮ হাজার থেকে ২০-২৫ হাজারের ঊর্ধ্বে। লাগামহীন দামে এই পণ্য কিনতে ক্রেতাদের চাহিদা কমেছে।

কারিগর সূত্রে জানা যায়, সিলেটে এসব পণ্য তৈরির কাঁচামাল চাষ হতো। প্রকারভেদে চাষ হতো গোয়ে বেষ, মৃতম বেত, কেয়েক বেত, গুটা বেত ও ফালি।যা সিলেট,চট্টগ্রাম, বান্দরবানসহ দেশের গাঢ় ও পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হতো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বেত ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তারা জোরালোভাবে উদ্যোগ নিলে এখনো সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব। যদিও নতুনত্বে প্লাস্টিক, কাঠ, মেলামাইনগামী,পারটেক্স বাজার দখল করায় বেতশিল্প প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা সম্ভবও হচ্ছে না ব্যবসায়ীদের। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার হিসেবে বিপ্লব ঘটাতে উদ্যোগ প্রয়োজন। না হলে অদূরে ভবিষ্যতে বেতশিল্পের অবস্থান হবে জাতীয় জাদুঘরে।

তবে উৎপাদন কম, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে প্রধান কারণ হিসেবে মনে করেন উদ্যোক্তারা।