৭২ সাল থেকে সব রাষ্ট্রীয় খুন ও গুমের বিচার করতে হবে: নুসরাত

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নুসরাত তাবাসসুম/ছবি: সংগৃহীত

নুসরাত তাবাসসুম/ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রীয় মদদে সংগঠিত ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সব ধরনের খুন, গুম ও রাষ্ট্রীয় অপরাধের তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম।

বুধবার (১৪ আগস্ট) সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে অনুষ্ঠিত “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ ও করণীয়” শীর্ষক এক ডায়ালগে নির্ধারিত আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

অতীতের অনেক ঘটনার প্রকৃত রহস্য জনগণ জানতে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক হওয়ায় চলমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে এটা করা সম্ভব।

রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

বিজ্ঞাপন

প্যানালিস্টের বক্তব্যে নুসরাত তাবাসসুম আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ঠিক করার বিষয়টিকে চলমান সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টায় এটা ঠিক করা গেলে যেন ২৫ ঘণ্টা লাগানো না হয়।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কারে সরকারের গোয়েন্দা বিভাগগুলোর আমূল পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে যখন নিয়ে যাওয়া হয়েছে, গোয়েন্দা বিভাগ কতটা দুর্নীতিগ্রস্ত ও দলীয়ভাবে দূষিত সেটা আমরা বুঝেছি।’


এ সময় তিনি বলেন, নাগরিক সমাজ আয়না ঘর ভেঙ্গে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, তবে একটা আয়না ঘরের কথা সবাই জানলেও সারাদেশে কতটা আয়না ঘর আছে এ বিষয়ে কেউ জানেন না।

তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় খুন, রাষ্ট্রীয় গুম ও রাষ্ট্রীয় অপরাধের বিচার হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ১৯৭২ থেকে শুরু করে বতর্মান পর্যন্ত সবগুলো দলের সময়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে সংগঠিত অপরাধ তদন্তের তাগিদ দেন তিনি।

আগামীতে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সুনাম পুনরুদ্ধারের তাগিদ দেন তাবাসসুম। তিনি বলেন, বিপ্লবের এক মাসে দেশের পরিচিতি বহির্বিশ্বে যথেষ্ট নষ্ট হয়েছে। এ সময়ে পরিকল্পিতভাবে জনগণকে ছোট করে বক্তব্য দেয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগ উঠার কারণেও দেশের সুনাম নষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এই ছাত্র নেতা।

আন্দোলন দমাতে গত সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কারণে দেশের সুনাম নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাত বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিং ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভবিষ্যতে ক্যাডারনির্ভর লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র সংগঠন গড়ে না তুলতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তাবাসসুম।

রাজনৈতিক দলগুলোকে তিনি বলেন, ‘ক্যাডার বাহিনী তৈরি করবেন না। দেশের মানুষের কাতারে নেমে আসুন।’ ভবিষ্যতে ক্যাডার বাহিনী তৈরি হবে না এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে তিনি বতর্মান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

শিক্ষার কারিকুলাম হালনাগাদে শিক্ষক, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের আরও যত দাবি:

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও এর পরিবর্তিত রূপ সাইবার সিকিউরিটি আইনের দ্রুত সংস্কারের তাগিদ দিয়েছেন ডেফোডিল ইন্টার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী খান মোহাম্মদ ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, একটি সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দেয়ার কারণে এই আইনের আওতায় খাদিজাতুল কোবরা নামের শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। মানুষের কথা বলার অধিকার ধরে রাখতে এই আইন সংস্কার করতেই হবে।

চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস ধরে রাখতে পুরো ডকুমেন্টেশন তৈরির তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, এর আগে আমরা ইতিহাস বিকৃত হতে দেখছি। সরকারিভাবে এটা করতে হবে, যেন আন্দোলনটা ইতিহাস থেকে হারিয়ে না যায়।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বাজারের সিন্ডিকেট ধ্বংস করা, আইটি ও ফ্রিল্যান্সিং খাতের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরিবার তন্ত্রের প্রবণতা কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ ইমন।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশে রাজনৈতিক চর্চা থাকলেও প্রধান দুই দল দুই পরিবারের কাছে বন্দি। এই প্রবণতা ভাঙতে পারলে সুস্থ ধারার অনেক রাজনীতিবিদ উঠে আসবে।