জৌলস হারিয়ে জীর্ণশীর্ণ আওয়ামী লীগ কার্যালয়

  • রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জৌলস হারিয়ে জীর্ণশীর্ণ আওয়ামী লীগ কার্যালয়

জৌলস হারিয়ে জীর্ণশীর্ণ আওয়ামী লীগ কার্যালয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে আওয়ামী লীগের পতন ও তৎপরবর্তী আগুন সহিংসতায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, সভাপতির কার্যালয় পুরনো সেই জৌলস হারিয়ে এখন জীর্ণশীর্ণ অবস্থা। সপ্তাহে ৭ দিন, দিনে ২৪ ঘন্টা যেখানটা থাকতো লোকে লোকারণ্য হয়ে, আজ তা জনশূন্য।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে দলটির গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অবস্থিত কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমন্ডির সভাপতির কার্যালয়ে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। এসময় জনশূন্য এই ভবনগুলোকে তার অস্তিত্ব হারিয়ে এক জীর্ণশীর্ণ দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

এদিন গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গেলে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে কালো হয়ে আছে সব দেয়াল, ফ্লোর। আগুনে পোড়ার গন্ধে এখনো ভিতরে প্রবেশ করা দায়। মূল ফটকের সামনে দুই পাশে থাকা গাছগুলোরও নেই কোন অস্তিত্ব। হাতের বাম পাশে ছিলো নামফলক ও স্বাধীনতার চার মূল নীতি ফলক, ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে সে ফলকগুলোও। ডান পাশে থাকা বিভিন্ন সৌন্দর্যবর্ধক গাছগুলো প্রায় নিশ্চিহ্ন।

সামনে এগিয়ে মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই সোজা হাতের ডান পাশে চোখে পড়তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। কাঁচ ঘেরা সেই প্রতিকৃতির সামনে ছবি  তোলার জন্য ভিড় লেগে থাকাটাই ছিলো স্বাভাবিক বিষয়। তবে এখানে এমন কিছু ছিল তা আর বোঝার কোন উপায় নেই আজ। হাতের বাম পাশে থাকা অভ্যর্থনা কক্ষও অনুপস্থিত। আগুনে পুড়ে যাওয়া চেয়ার টেবিলের যেটুকু অংশ অবশিষ্ট ছিলো তাও নিয়ে গেছেন দুর্বৃত্তরা।

বিজ্ঞাপন

ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ছিলো কনফারেন্স কক্ষ। চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় সাজানো হয়েছিলো দলের অফিস, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও মিডিয়া রুম। ষষ্ঠ তলায় সম্মেলন কক্ষ; সপ্তম তলা বরাদ্দ ছিলো দলের কোষাধ্যক্ষের জন্য।

অষ্টম তলা বরাদ্ধ ছিলো দলের সাধারণ সম্পাদকের অফিসের জন্য। নবম তলা সাজানো হয়েছিলো দলের সভানেত্রীর জন্য। তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই ফ্লোরটি করা হয়েছিলো ‘বুলেটপ্রুফ’। আর সবার উপরে দশম তলায় ক্যাফেটেরিয়া। তবে সে সবই আজ রূপকথার মতো গল্প। ভবনটির স্ট্রাকচার দাঁড়িয়ে থাকলেও অবশিষ্ট নেই ভিতরের কিছু। আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলা হয়েছে সব কিছু। এরপরেও যা বাকি ছিলো, তা হাতুরি দিয়ে ভেঙে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

একই অবস্থা দেখা গেছে দলটির ধানমন্ডির সভাপতির কার্যালয়ে গিয়ে। মূলত এই অফিস থেকেই দলের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হতো। দলীয় সভা, প্রেস কনফারেন্স, নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কর্মীদের সংযোগ এই সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিলো এই অফিসটি। সভাপতির কার্যালয়ে থাকা তিনটি ভবনই আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। করা হয়েছে লুটপাট। ফলে ২৪ ঘন্টায় লোকে লোকারণ্য হয়ে থাকা এই অফিস আজ খাঁ খাঁ মরুভূমি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগুন লাগানো হয়েছিলো সবগুলো ভবনেই। সেই পোড়া গন্ধ ভবন পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে রাস্তায়। রাস্তার সাথে থাকা প্রথম ভবনটির নিচে সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দলটির সভাপতির অফিস যে ভবনটিতে তারও একই অবস্থা। তবে এখানে কিছু লোককে কাজ করতে দেখা যায়। তারা পুড়ে যাওয়া মালামাল সরাচ্ছিলেন। বেশ কয়েকবার ডাকাডাকি করলেও গেট খুলতে রাজি হননি কেউ। এর পিছনে থাকা দপ্তর ভবনেও দেখা যায় আগুন তান্ডবের চিহ্ন। তবে গেট বন্ধ থাকায় ডুকা যায়নি সেখানে।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান । এরপর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। করা হয় ভাংচুর, লুটপাট।