ফেনী কলেজে লেজুড়বৃত্তি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফেনী কলেজে লেজুড়বৃত্তি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

ফেনী কলেজে লেজুড়বৃত্তি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

সম্পূর্ণ রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি ও কলেজের অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা সামাধানে ইতোমধ্যে ফেনী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় কলেজ ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তি সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে তারা। এ দাবিসহ অন্যান্য দাবি লিখিত আকারে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছে একাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী।

শনিবার (১০ আগস্ট) ক্যম্পাসে ছাত্রদলের কিছু নেতা অবস্থান নেয়। অভিযোগ আছে ফেকসু কার্যালয়সহ কলেজের একটি কক্ষ দখলে নেয়ার চেষ্টা করে তারা। তবে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করে প্রতিবাদ জানায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

একই দাবিতে রোববার (১১ আগস্ট) সকালে কলেজে ফের বিক্ষোভ করে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে কলেজে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেনীর সমন্বয়করা।

এ বিষয়ে কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে বার্তা২৪.কম। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ কলেজে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের চাটুকারিতা বন্ধ, ভর্তি বাণিজ্য বন্ধসহ কলেজের অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা সামাধানে শীগ্রই দাবি জানানো হবে বলে জানান তারা।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের একটি সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণের স্মরণে তার পরিবারের প্রত্যাশা ও কলেজের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, লেজুড়বৃত্তি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণসহ বেশ কিছু দাবিদাওয়া পেশ করা হয়।

কলেজ শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান নোমান জানান, অধ্যক্ষের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনায় ফেনী সরকারি কলেজের একটি ভবন শহীদ শ্রাবণ এর নামে নামকরন করা অথবা নির্মাণাধীন স্মৃতিস্তম্ভ নামকরণের মৌখিক প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।কলেজ থেকে সকালে লেজুড়বৃত্তি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়াও কলেজ ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে কলেজে বাউন্ডারি আরো মজবুত করা এবং উওবহিরাগত প্রবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়ে জানানো হয়। পাশাপাশি ফেনী সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে সব ক্লাব দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনর্গঠন করে কমিটি দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী বলেন, এতদিন শিক্ষকদের মধ্যে চাটুকারিতার অভ্যাস ছিল। কিছু হলেই অমুক নেতাকে ফুল দিতে চলে যেত। এখন সেগুলোর সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছে অনুতপ্ত হয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। একইভাবে আমরা সব শিক্ষকদের উপর নজর রাখব। যাতে কলেজে ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক রাজনীতি ও বন্ধ হয়।

ফাহিম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার ভাইদের মরদেহের ওপর দিয়ে আমার ক্যাম্পাসে কোনো দলীয় এবং লেজুড়বৃত্তি ছাত্ররাজনীতি চলবে না। ফেনী সরকারি কলেজের মাটিতে কোনো দলের কোনো দলীয় ছাত্র রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। সারাদেশে শিক্ষার্থীদের রাজনীতি চর্চা এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে হবে।

ফারজানা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘ অনেকদিন পর ফেনী কলেজে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। এতদিন সব এক কেন্দ্রিক ছিল, কেউ আওয়াজ কর‍তে পার‍ত না। এখন সবকিছু জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার।আমাদের দাবি আছে, দাবি নিয়ে শিক্ষকদের কাছে যাব। না মানলে আমরা আন্দোলনে যাব।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেনীর সমন্বয়ক মোহাইমিন তাজিম বলেন, ফেনী কলেজে একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন অবস্থান নিতে চেয়েছিল।আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ক্যাম্পাসে সব ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছি। পাশাপাশি কলেজে বিভিন্ন ভর্তি বাণিজ্যসহ অভ্যন্তরীণ সমস্যা সামাধানে কাজ করা হবে বলে জানান তিনি। এছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ফরিদ আলম ভুঞা জানান, শিক্ষার্থীরা একটা যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছে। তাদের সব যৌক্তিক দাবিতে আমাদের সমর্থন থাকবে। সরকারি চাকরিতে আমাদের কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। যেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব সে অনুযায়ী সামধান করার চেষ্টা আমরা করে যাব।

ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর দোলন কৃষ্ঞ সাহা বলেন, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত দিবে সে অনুয়ায়ী সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। যেহেতু এটি সরকারি কলেজ আমরা একক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এখন নতুন সরকার আসছে তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

তিনি বলেন, ছাত্রদের অনেকগুলো যৌক্তিক দাবি আছে।যা কলেজের ভবিষ্যতের জন্য ভালো। আমরা তাদের দাবির সঙ্গে সম্মতি জানাতে পারি তবে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। শিক্ষার্থীদের অনূকুলে থেকে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী দাবি পূরণ করার জন্য একাডেমিক কাউন্সিলে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।