ময়মনসিংহের গফরগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বরখাস্তের দাবিতে তিনদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি করছেন একজন শিক্ষক। কলেজের কলা ভবনের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সামনে দিনরাত অবস্থান করছেন শিক্ষক শওকত আলী। বারান্দায় মাদুর পেতে দিনরাত কাটাচ্ছেন ওই শিক্ষক। শিক্ষকের অবস্থানের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে শনি ও রোববার শিক্ষার্থীরাও মিছিল করেছে কলেজে।
গফরগাঁও সরকারি কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান থেকে চলতি বছরের মার্চে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইমরান হোছাইন। তার বিরুদ্ধে রেড ক্রিসেন্ট, কলেজে শিক্ষার্থীদের মিলাদ মাহফিল ও বিএনসিসির বরাদ্দের টাকা অনিয়মের মাধ্যমে লুটপাটের অভিযোগ করেন কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক শওকত আলী। নিজ বিভাগের সামনে দেয়ালে একটি পোস্টার সাঁটিয়ে সেখানে অবস্থান করছেন তিনি। সে পোস্টারে লেখা রয়েছে- ‘দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের বরখাস্তের দাবিতে অবস্থান।’
শিক্ষক শওকত আলী রোববার (১১ আগস্ট) বিকেলে বলেন, আমি অধ্যক্ষের সঙ্গে ২০১৮ সাল থেকে কাজ করছি। তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব পাওয়ার পর আমাকে রেডক্রিসেন্টের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেন। রেড ক্রিসেন্টের টাকাগুলো অল্প পরিসরে খরচ করে বাকি টাকা অধ্যক্ষ তুলে নিতেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, দল গঠনের জন্য কোনো খরচ না হলেও দল গঠনের নামে তিনি ১৫ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের কোনো উপকরণ না দিয়েও রেডক্রিসেন্টের প্রশিক্ষণের জন্য ২৭ হাজার টাকার মতো তুলে নেওয়া হয়। এর মধ্যে যৌক্তিক খরচ ছিলো ১১ হাজার টাকা। আমার কষ্টের জায়গা হচ্ছে, আমি আলেম মানুষ, রেডক্রিসেন্ট দুঃস্থ মানবতার জন্য কাজ করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা একটা ক্যাপ পাবে না, একটু ভালো খাবার পাবে না, তা হয় না। তিনি দাবি করেন, নতুন বাংলাদেশে অধ্যক্ষের কাছে আমরা জিম্মি মনে হচ্ছে। কেউ কথা বললে তিনি থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ভয়ে অন্য সহকর্মীরা কথা বলে না, প্রতিবাদ করে না। তারপর চিন্তা করলাম যেহেতু স্বাধীন বাংলাদেশে পেয়েছি সিস্টেম ভাঙার জন্য চেষ্টা থেকে অবস্থান করছি। অবস্থানে বসার পর তিনি ফেসবুকে লাইভে এসেও অধ্যক্ষের অনিয়মের তথ্য প্রকাশ করেন।
তিনি কান্নাকাটি করে বলেন, আমাকে বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে নাজেহাল করা হচ্ছে। কাল থেকে ঘুমাতে পারছি না, শুধু কান্না আসছে। আমি সত্যের বিজয় চাচ্ছি। অধ্যক্ষ আমার কাছে এসে একবার সুযোগ চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি বলেছি, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমার কাছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসেও লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন।
শিক্ষকের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে শনিবারও রবিবার কলেজে বিক্ষোভ করে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করা হয় কলেজ প্রাঙ্গনে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, পরীক্ষার আগে তাদের মিলাদের নামে কলেজ ফান্ড থেকে টাকা উঠানো হয়েছে। কিন্তু মিলাদের কোন মিষ্টি বা সিংগারা পাইনি। কলেজ থেকে ফান্ড তোলা হলেও কোনো সুবিধা শিক্ষার্থীরা পায় না। কিন্তু অধ্যক্ষ টাকা তুলে আত্মসাৎ করছেন। তারা অধ্যক্ষে বরখাস্তের দাবি জানান।
শিক্ষার্থী মিফতাফুল ইসলাম সাহেদ বলেন, আমাদের পরীক্ষার জন্য মিলাদের নামে কলেজ ফান্ড থেকে টাকা উঠানো হয়েছে কিন্তু আমরা মিলাদের কোন মিষ্টি বা সিংগারা পাই নাই।
রোভার সদস্য নবী হোসেন বলেন, আমাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বাজেট থাকার পর ও আমরা ড্রেস বা অন্যন্য সুযোগ সুবিধা পাই না।
শিক্ষক না বুঝেই অবস্থানে বসেছে দাবি করে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইমরান হোছাইন বলেন, ফেসবুক লাইভে দেখার পর আমি শিক্ষকের কাছে গিয়ে কথা বলেছি। তার কিছু অভিযোগ রয়েছে- আমি টাকা-পয়সা খেয়ে ফেলেছি, অনেক লোপাট করে ফেলেছি। তার (শিক্ষকের) অভিযোগ রেডক্রিসেন্টের ১৫ হাজার টাকা ও মিলাদের ৬০ হাজার টাকার। তবে সেগুলো সত্য নয়।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকের কাছে গিয়ে আমি বলেছি, আমার বিচার হবে। তার (শিক্ষকের) যত অভিযোগ আছে দিতে বলেছি, আমি ফরওয়ার্ড করবো। সে জিহাদি স্টাইলে সেখানে গেছে। সে বলছে- আমার লাশ যাবে না হলে অধ্যক্ষের বরখাস্ত। এটি কোনো অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ হতে পারে না।
গফরগাঁওয়ের উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া ইয়াসমিন বলেন, শিক্ষক দাবি করছে অধ্যক্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত, এবং কিছু অভিযোগ আছে। শুক্রবার থেকে অভিযোগগুলো করলেও তা যথাযথ মাধ্যমে যেতে হবে। বিষয়টি শিক্ষা সচিব পর্যন্ত অবগত রয়েছে। আমার কিছু করার নেই এখানে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষককে বুঝানো হয়েছে, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আমার নেই। তার পরেও তিনি অবস্থান করে যাচ্ছেন। আমি শুক্রবার শিক্ষকের কাছে গিয়েছিলাম, শনিবার কিছু শিক্ষার্থী আসলে তাদেরও বুঝিয়ে পাঠানো হয়। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে লিখিত অভিযোগ ও তদন্তে প্রমাণিত হতে হবে এবং পরে ব্যবস্থা।