কোমরে অস্ত্র নেই, দেশে-বিদেশে উচ্চতর ট্রেনিং নেই, না আছে অভিজ্ঞতা, না আছে মামলা কিংবা জেলে ভরার ক্ষমতা। তবুও তারাই সফলভাবে সামলে নিচ্ছে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা।
বলা যায়, দারুণভাবে সামাল দিচ্ছে নগরীর যান চলাচল। কেউ কেউতো এমনও বলছেন পুলিশের চেয়ে ঢের ভালো করছে শিক্ষার্থীরা। পথ বন্ধ করে বাঁকা হয়ে দাঁড়ানো বাস ঠেকাতে গলদঘর্ম ছিল পুলিশ। মামলা, জেল-জরিমানার ভয় দেখিয়েও যাদের দমাতে ব্যর্থ ছিল পুলিশ। যে সব গাড়ির কারণে নগরজুড়েই থাকত ভয়াবহ যানজট। সেই পেছন বাঁকানো বাসগুলো সোজা হয়ে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছে।
আবার বামের লেন খোলা রাখতে প্রতিনিয়ত যারপরনাই দৌঁড়ঝাপ করতে দেখা যেতো ট্রাফিক পুলিশকে। ফলাফল কি হতো প্রায় সকলের জানা। নানা রকম বেরিয়ার তৈরি করেও বামের লেন ফাঁকা রাখা যেতো না। সেই বামের লেনও ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের হাতের ইশারায় অনায়াসে ব্যবহার করা যাচ্ছে। উল্টো দিকে যান চলাচলও নেই প্রধান সড়কগুলোতে।
ফলাফলে নগরীতে অসহনীয় যানজট চোখে পড়েনি বুধবার (৭ আগস্ট) কর্মব্যস্ত দিনেও। তবে এ কথা ঠিক অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রাস্তাঘাটে এখনও যানবাহনের চাপ সেভাবে লক্ষ্যণীয় নয়। সুজন নামের একজন বাসযাত্রী জানান, যানবাহনের চাপের পাশাপাশি শৃঙ্খলার অভাবে বেশি জট তৈরি হতো। আজকে ছাত্রদের কাছে জব্দ হওয়ার ভয়ে অনেকে লেন মেনে চলছে। এতে করে রাস্তার জট সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। আরেকটি সংকট হতো, অতিমাত্রায় ভিভিআইপি ও ভিআইপির চলাচল। তাদের পথ ফাঁকা রাখতে অন্যদের সড়ক ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা হতো।
বাংলামোটর মোড়ে ট্রাফিকের কাজ করছেন বিইউপির শিক্ষার্থী ফারজানা। সকাল থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন। ইস্কাটন এলাকার বাসিন্দা ফারজানা বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি এই পথদিয়ে প্রতিদিন বিইউপিতে যাতায়াত করি। অফিস সময় মগবাজারের দিক থেকে এসে ১ ঘণ্টার কম সময়ে সিগন্যাল পার হতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে আসতে পথেই ৬ ঘণ্টার মতো সময় চলে যায়। আজকেতো কারো এতো সময় লাগছে না। সব রুট সমানভাবে ছাড়ছি, বাসগুলোকে পথ আটকে রেখে যাত্রী নিতে দেওয়া হচ্ছে না। এতে করে যানবাহন দ্রুত পার হয়ে যেতে পারছে।
শিক্ষার্থী ফারজানাকে বামের লেন সচল রাখতে তৎপর দেখা গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ট্রাফিক পুলিশ আসলেই অনেক কষ্ট করে। আজকে আমি মর্মে উপলব্ধি করছি। আমাদের জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে যান চলাচল সুশৃঙ্খল, কোথাও কোন নিয়ম ভঙ্গ করা হয় না। বাইরে আমরা মানতে চাই না। যে কারণে জট তৈরি হয়, এতে করে সকলকেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন দমাতে পুলিশকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এতে শিক্ষার্থী ও পুলিশ উভয় পক্ষে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত জনরোষে পড়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেকগুলো থানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। অনেক হতাহতের ঘটনায় সব পুলিশকে লাইনে ক্লোজড করা হয়। এরপর থেকে নগরী চলছে পুলিশ শূন্য অবস্থায়। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বেও আর পুলিশকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না।
যানবাহনে শৃঙ্খলা রক্ষায় এগিয়ে আসে শিক্ষার্থীরা, যাদের কারোরই অভিজ্ঞতা নেই। বুধবার শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের কর্মীদেরও মাঠে দেখা গেছে। বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য বিপুল জনবল রয়েছে। যাদের প্রশিক্ষিত করার জন্য দেশে বিদেশে নানান ট্রেনিং দেওয়া হয়। নগরীর প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত রাস্তায় সময় কাটান। পুলিশের পাশাপাশি আনসার বাহিনীর সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ঝড়বৃষ্টি থেকে কড়ারোদেও তাদের রাস্তায় দেখা যায়।
অনেক সিগন্যালেই কার্যালয় রয়েছে পরিদর্শকদের। মিরপুর-১০, মৎস্যভবনসহ অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে আগন্তুক কেউ দেখলে মনে করবে যেনো বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিশ্বের আর কোন দেশে সম্ভবত মোড়ে মোড়ে এতো ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি থাকে না। উন্নত বিশ্বের মতো সিগন্যাল লাইট সচল থাকলেও, গুলশান ছাড়া আর কোথাও সেগুলো ব্যবহার করা হয় না।
পুলিশের হাতের ইশারায় চলে যানবাহন। নেপালের মতো অনেক দেশ রয়েছে যারা বাংলাদেশের মতো হাতের ইশারায় ট্রাফিক পরিচালনা করে। কিন্তু ঢাকার মতো তাদের মোড়ে মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয় নয়। কিন্তু অনেক সুশৃঙ্খল তাদের যান চলাচল।